‘ঘুরে এলাম পানাম, সাথে নিয়ে এলাম পানাম’। কী অবাক হচ্ছেন কথাটি শুনে? ভাবছেন পানাম ঘুরে কী করে পানাম সাথে নিয়ে এলাম? এখানে কিন্তু পানামের স্মৃতির কথা মোটেও বলছি না আমি! বলছি, ‘পানাম’ ব্র্যান্ডের নতুন ফেইস ওয়াশের কথা। কিছুদিন হলো মার্কেটে এসেছে দেশীয় নতুন এই স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডটি। সত্যি বলতে, দেশের ঐতিহ্যের সাথে মিলিয়ে ব্র্যান্ডের এমন নামের কারণে শুরুতেই পানাম এ জন্য আমার কাছে আলাদা লেগেছিল। কিছুদিন আগেই সোনারগাঁয়ের বিখ্যাত পানাম নগরী থেকে ঘুরে আসার পরই নতুন পানামের সাথে আমার পরিচয়। পানাম নিয়ে আগ্রহের আরও একটি কারণ ছিল অল স্কিন টাইপে এর ব্যবহার। যারা ক্লেনজিং এর পর স্কিনে ব্রাইট ইফেক্ট চান তাদের জন্য এটি বেস্ট একটি প্রোডাক্ট হতে পারে। আজ আমি আপনাদের জানাবো অল স্কিন টাইপের জন্য স্যুইটেবল ব্রাইটেনিং এই ফেইস ওয়াশটি সম্পর্কে।
প্রাচীন রূপচর্চায় বিটরুট
রূপচর্চায় আধুনিক যত উপাদানই যুক্ত করা হোক না কেন, প্রাকৃতিক উপাদানের কিন্তু জুড়ি নেই। এমনই একটি প্রাকৃতিক উপাদান বিটরুট। লাল রঙের এই সবজিটি শুধু খাদ্য তালিকাতেই নয়, বরং প্রাচীন সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম একটি উপাদান ছিল। ত্বক উজ্জ্বল করতে, ব্রণ দূর করতে, ঠোঁটে গোলাপি আভা ফিরিয়ে আনতে, চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করতে, এমনকি মেকআপ সামগ্রীতেও বিটরুটের ব্যবহার ছিল। সময় বদলেছে। কিন্তু এখনও স্কিন কেয়ারে বিটরুটের জনপ্রিয়তা রয়েছে আগের মতোই। আর তাই তো, নতুন রূপে পানাম বিটরুটকে ইনক্লুড করেছে স্কিন কেয়ারে। পার্থক্যটা শুধু আগে যেখানে বিটরুট বিভিন্নভাবে প্রসেস করা হতো, পানাম সেই কাজটিকে বেশ সহজ করে দিয়েছে।
ত্বকের জন্য বিটরুট কেন বেনিফিসিয়াল?
একনে ও পিম্পলস দূর করে
বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ ও জিংক। এই প্রতিটি উপাদান অয়েলি স্কিনের জন্য খুবই বেনিফিসিয়াল। কারণ এই সবগুলো উপাদান একসঙ্গে মিলে অয়েলি স্কিন থেকে একনে ব্রেকআউট হওয়া কন্ট্রোল করে।
হাইপারপিগমেন্টেশন কমায়
বিটরুটে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় মেলানিন প্রোডাকশন কমিয়ে হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতেও হেল্প করে।
এজিং সাইনস ও রিংকেলস কমায়
ভিটামিন সি এর পাশাপাশি বিটেইন নামে এক ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড আছে বিটরুটে। এই উপাদানটি স্কিনের জন্য খুবই বেনিফিসিয়াল। এটি সাইনস অফ এজিং ও রিংকেলস দূর করতেও হেল্প করে।
পানামের এই ফেইস ওয়াশটি কেন স্পেশাল?
ফেইস ওয়াশটি আমি প্রথম ইউজ করার পর বেনিফিট পাওয়ায় আমার ছোট বোনকেও সাজেস্ট করেছিলাম। আমার স্কিন নরমাল, কিন্তু ওর অয়েলি। অথচ একটি ফেইস ওয়াশ আমরা দু বোন খুব সহজেই ইউজ করতে পেরেছি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, এটি অল টাইপ স্কিনের জন্য স্যুইটেবল। এছাড়া এটি-
- বেশ জেন্টল হওয়ায় স্কিনে একদম হার্শ ফিল হয় না
- অ্যালকোহল ফ্রি
- প্যারাবেন ফ্রি
সাধারণত একটি ফেইস ওয়াশ এক ধরনের স্কিনের জন্যই ইউজ করা হয়। আর এটি ব্যবহার করা যাবে অল টাইপ স্কিনে। পানাম এখানেই অন্য অনেক ফেইস ওয়াশ থেকে আলাদা।
কী কী বেনিফিট দিবে?
যেহেতু বিটরুট ফেইস ওয়াশের কথা বলছি তাহলে বুঝতেই পারছেন এর মূল উপাদান হচ্ছে বিটরুট। এতে থাকা হাই অ্যামাউন্ট অফ ভিটামিন সি স্কিনের পিগমেন্টেশন প্রিভেন্ট করে ফেয়ার কমপ্লেক্সন প্রোভাইড করে। তাছাড়া ভিটামিন সি এর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ স্কিনের এক্সট্রা মেলানিন প্রোডাকশনকে কমিয়ে দিয়ে একনে, একনে স্কারস রিমুভ করে। ফলে স্কিন দেখায় ভেতর থেকে ব্রাইট। যারা ক্লেনজিং এর পরে ব্রাইটেনিং ইফেক্ট চান তাদের জন্য এটি হতে পারে অ্যামেজিং ও মাস্ট হ্যাভ একটি প্রোডাক্ট। এই ফেইস ওয়াশটি ক্রিম বেইজড হওয়ায় স্কিনে হার্শ ফিল হয় না।
এর আরও কিছু বেনিফিট রয়েছে। যেমন-
- স্কিন ডিপলি ক্লিন করে ভেতর থেকে ডার্ট ও ইমপিওরিটিস রিমুভ করে
- স্কিনের ন্যাচারাল রেডিয়েন্স এনহ্যান্স করে
- স্কিনকে ফ্রেশ ও সফট রাখে
যেভাবে ব্যবহার করবেন
১) হাতের তালুতে অল্প পরিমাণ ফেইস ওয়াশ নিয়ে নিন।
২) জেন্টলি ফেইসে ম্যাসাজ করে নিন।
৩) পানি দিয়ে ধুয়ে টিস্যু বা নরম কাপড় দিয়ে ভালো করে মুখ মুছে নিন।
৪) ভালো ফলাফলের জন্য দিনে দুইবার ব্যবহার করুন।
৫) ফেইস ক্লিন করার পর স্কিনের জন্য স্যুইটেবল ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
সতর্কতা
১) শুষ্ক ও ঠান্ডা স্থানে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন।
২) শুধুমাত্র বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য প্রযোজ্য। চোখ থেকে দূরে রাখুন। চোখের সংস্পর্শে এলে তাৎক্ষণিকভাবে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন।
৩) শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
প্যাকেজিং ও দাম
পানামের এই ফেইস ওয়াশটির প্যাকেজিং বেশ আকর্ষণীয়। বিটরুটের সাথে মিলিয়ে এর কালার লালচে মেরুন। আর ক্রিমি ফেইস ওয়াশের কালার হালকা গোলাপি। ফেইস ওয়াশটির দামও বেশ রিজনেবল। বাজেট ফ্রেন্ডলি হওয়ায় এটি সবাই কিনতে পারবে।
টেক্সচার ও স্মেল
বিটরুট ফেইস ওয়াশের ঘ্রাণ বেশ হালকা আর মিষ্টি। ব্যবহারের সময় এক ধরনের রিফ্রেশ ফিল হয়।
পানাম ব্র্যান্ড নিয়ে কিছু কথা
ঐতিহাসিক নগরী পানামের প্রাচীন রূপচর্চার সামগ্রী এবং বিউটি সেন্স থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়ে ইস্টাব্লিশ হয়েছে ‘পানাম’ ব্র্যান্ড। হিস্টোরিকাল নামের সাথে মিলিয়ে নাম বলে শুরুতেই আলাদাভাবে নজর কাড়ে। বিটরুটের পাশাপাশি অ্যাপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে তৈরি পানামের আরও একটি ফেইস ওয়াশ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এটি অয়েলি স্কিনের জন্য বেস্ট। দেশীয় ব্র্যান্ড হলেও সাধ্যের মধ্যে বেস্ট কোয়ালিটিটাই এনশিওর করে পানাম।
আমার এক্সপেরিয়েন্স
সত্যি বলতে প্রথম পারচেজটা আমি করেছিলাম পানামের নাম দেখে। তবে ব্যবহারের পর আমি খুবই স্যাটিসফাইড। আমার কাছে যেমন ফিল হয়েছে-
১) মাইল্ড ক্লেনজার হিসেবে এটি বেশ ভালো লেগেছে আমার। সকালে ও রাতে আমি সাধারণত দুইবার ফেইস ওয়াশটি দিয়ে ফেইস ক্লিন করি।
২) এটি খুব সহজেই ডার্ট, ইমপিওরিটিস দূর করে স্কিনে ব্রাইট ফিল নিয়ে আসে।
৩) ফেইস ওয়াশটির বেশ মিষ্টি একটি ঘ্রাণ আছে। ব্যবহারের সময় এই ঘ্রাণই বেশ খানিক রিফ্রেশমেন্ট এনে দেয়।
৪) এর প্যাকেজিংটা দারুণ। লিকপ্রুফ ওভাল শেইপের হওয়ায় সহজে লিক হওয়ার ভয় নেই।
৫) লাইট ওয়েট হওয়ায় ব্যাগে খুব সহজে ক্যারি করতে পারি। ট্রাভেলে যাওয়ার সময় ফেইস ওয়াশ কোনটা নেবো, কীভাবে নেব, সেটা নিয়েও এখন আমি একদম নিশ্চিন্ত!
এই তো ছিল আমার এক্সপেরিয়েন্স। নেক্সট টাইম আমি অবশ্যই আবার পারচেজ করবো। বিটরুট তো সব স্কিন টাইপেই ব্যবহার করা যাবে। আবার, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার যেহেতু অয়েলি স্কিনের জন্য, আমি সাজেস্ট করবো যারা একনে প্রবলেমে ভুগছেন, তারা এটি ইউজ করতে পারেন। স্কিন কেয়ারসহ সেলফ কেয়ারের যে কোনো প্রোডাক্টের জন্য আমার ভরসার জায়গা হচ্ছে সাজগোজ। অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম অথবা ফিজিক্যাল শপ থেকে আপনি আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি কিনতে পারেন। সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত।
ছবিঃ সাজগোজ