রেগুলার লাইফের স্ট্রেস, বাইরের ধুলোবালি, পল্যুশন এসব কারণে স্কিনের ন্যাচারাল গ্লো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয় না যে স্কিনটা যদি আরও একটু ব্রাইট হতো? দাগহীন ও সুন্দর ত্বক কে না চায়, বলুন তো? ইনস্ট্যান্ট গ্লোয়িং ও ফ্রেশ স্কিন পেতে অনেকেই পার্লারে মাসে ১/২ বার ফেসিয়াল করে। আচ্ছা, বাসায় বসে যদি খুব কম খরচে একদম সেইফ উপায়ে পার্লারের মতো হারবাল গ্লো ফেসিয়াল করে নেওয়া যায়, তাহলে কেমন হয়? পানাম কেয়ার হারবাল গ্লো ফেসিয়াল কিট রিসেন্টলি ট্রাই করলাম! সেটারই রিভিউ শেয়ার করবো আজ।
বাসায় বসে ফেসিয়াল কেন প্রিফার করি?
নামকরা বিউটি পার্লারে ব্রাইটেনিং বা গ্লো ফেসিয়ালগুলো বেশ এক্সপেনসিভ হয়, যা সবসময় অ্যাভেল করা পসিবল হয় না। আর লোকাল পার্লারগুলোতে কী প্রোডাক্ট দিয়ে ফেসিয়াল করা হচ্ছে, যিনি সার্ভিস দিচ্ছেন তিনি ঠিকভাবে ম্যাসাজ করছেন কিনা, হাইজিন মেনটেইন হচ্ছে কিনা- এসব নিয়ে আমার বরাবরই চিন্তা হয়। আবার ব্যস্ততার কারণে আসলে টাইম ম্যানেজ করতে পারি না। তাই প্রয়োজন হলে আমি বাসাতেই ফেসিয়াল করি।
মাত্র ৪টি ধাপে হারবাল গ্লো ফেসিয়াল
আমার এক কলিগের রিকমেন্ডেশনে পানাম কেয়ার হারবাল গ্লো ফেসিয়াল কিট কিনে নিলাম। স্পেশাল কোনো দিনে বা অকেশনের আগে বাসায় বসে ঝটপট ফেসিয়াল করে নেওয়া যাবে, এটা ভেবেই আসলে পারচেজ করা। আমি এর আগে পানামের ফেইস ওয়াশ ইউজ করেছি, বেশ ভালোভাবে সেটা আমাকে স্যুট করেছে, তাই ব্র্যান্ডের উপরও আমার ভরসা ছিল। ব্যস, ট্রাই করলাম! আমার এক্সপেরিয়েন্স কেমন ছিল, সেটা শেয়ার করবো আজ। জানি, অনেকেই আমার মতো বাসায় বসে ফেসিয়াল করতে চান। আশা করছি, এই রিভিউটি অনেকেরই কাজে আসবে।
প্রথমেই ব্র্যান্ড নিয়ে কিছু কথা
প্রোডাক্ট রিভিউতে যাওয়ার আগে পানাম কেয়ার ব্র্যান্ড নিয়ে কিছু ইনফরমেশন জেনে নেই চলুন। ঐতিহাসিক পানাম শহরের সাথে জড়িয়ে আছে রূপচর্চার অনেক গল্প। সেকালে পানামের অভিজাত পরিবারের নারীরা রূপচর্চায় ব্যবহার করতেন বিভিন্ন প্রাকৃতিক সামগ্রী। আর তাদের সেই বিউটি সেন্স থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়ে পানাম কেয়ার ব্র্যান্ড নিয়ে এসেছে স্কিন কেয়ার রেঞ্জ। কনসেপ্টটা বেশ ইনোভেটিভ, তাই না? ঐতিহাসিক শহরের নামে ব্র্যান্ড নেইম দেখে আমার বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে।
এই ফেসিয়াল কিটে কী কী আছে?
পানাম কেয়ার ফেসিয়াল কিটে ৪টি টিউব আছে- ম্যাসাজ ক্রিম, স্ক্রাব, ফেইস প্যাক ও ময়েশ্চারাইজার। পার্লারের মতো হারবাল গ্লো ফেসিয়াল মাত্র ৪টি ধাপেই বাসায় বসে করতে পারবেন! প্যাকেজিংটা বেশ সুন্দর। প্রতিটি টিউবে ২৫ গ্রাম প্রোডাক্ট থাকে। একটি কিট দিয়ে ইজিলি দু’বার ফেসিয়াল করা যাবে। টিউবের উপরে ১, ২, ৩, ৪ নম্বর দেওয়া আছে, কোন স্টেপে কোন প্রোডাক্ট ইউজ করতে হবে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন! এবার চলুন জেনে নেই কোন কোন ইনগ্রেডিয়েন্টস আছে এই ফেসিয়াল কিটে।
মেইন ইনগ্রেডিয়েন্টস
প্রোডাক্ট কেনার আগে আমি সবসময় উপাদান দেখে নেই। অনেক পার্লারে ফেসিয়ালের সময় স্কিনে কোনো পার্টিকুলার প্রোডাক্ট স্যুট করবে কি করবে না, তা না জেনেই প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করা হয়! কিন্তু যে প্রোডাক্টগুলো আমার ফেইসে অ্যাপ্লাই করা হচ্ছে সেগুলো স্কিনের জন্য সেইফ তো, এই চিন্তা আমাদের সবারই হয়, তাই না? পানামের এই ফেসিয়াল কিটের মেইন ইনগ্রেডিয়েন্টস হচ্ছে- অ্যালোভেরা, লিকোরিস, রোজ পেটাল ও দারুচিনি। এই হারবাল উপাদানগুলো স্কিনের জন্য যে কতটা বেনিফিসিয়াল, সেটা আমরা কম বেশি সবাই জানি।
- অ্যালোভেরা- স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকশন ইম্প্রুভ করে
- লিকোরিস বা যষ্ঠিমধু- স্কিনটোন ব্রাইট করে ও এজিং সাইনস কমিয়ে আনে
- রোজ পেটাল- একনে ও একনে স্পট কমিয়ে দেয়
- দারুচিনি- ওপেন পোরসের ভিজিবিলিটি কমিয়ে স্কিনকে স্মুথ রাখে
স্টেপ বাই স্টেপ ফেসিয়াল প্রসেস
স্টেপ ১- ম্যাসাজ ক্রিম
ক্লিন ফেইসে ম্যাসাজ ক্রিম দিয়ে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করে নিন ২ মিনিট। খেয়াল রাখবেন ফেসিয়াল ম্যাসাজ হবে নিচ থেকে উপরের দিকে। আলতো হাতে কাজটি করতে হবে। এরপর ভেজা টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে নিন বা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ম্যাসাজের ফলে স্কিনের ইলাস্টিসিটি ইম্প্রুভ হবে ও ব্লাড সার্কুলেশন বাড়বে। এই স্টেপটি ফেসিয়ালের পরবর্তী ধাপের জন্য স্কিনকে প্রিপেয়ার করে।
ম্যাসাজ ক্রিমে কী কী বেনিফিটস পাবেন?
এই ম্যাসাজ ক্রিমে আছে অ্যালোভেরা ও লিকোরিস এক্সট্র্যাক্ট। অ্যালোভেরাতে আছে ভিটামিন এ, সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে। আর লিকোরিসে আছে Glycyrrhizin, যা স্কিনে ব্রাইট ও হেলদি লুক আনে।
স্টেপ ২- স্ক্রাব
এবার পরিমানমতো স্ক্রাব নিয়ে ফেইসে আবারও ম্যাসাজ করতে হবে। সার্কুলার মোশনে ৪০ সেকেন্ড স্ক্রাবিং করুন। এর ফলে ত্বকে জমে থাকা ময়লা, ব্ল্যাকহেডস ইজিলি ক্লিন হয়ে যাবে। স্ক্রাবিং হয়ে গেলে পানি দিয়ে ফেইস ভালোভাবে ধুয়ে নিন। স্কিনে হেলদি গ্লো আপনি নিজেই দেখতে পাবেন।
এই স্ক্রাবটি কেন ডিফারেন্ট?
অনেক পার্লারে যে স্ক্রাব ইউজ করা হয়, সেগুলো বেশ হার্শ ও স্কিনের জন্য হার্মফুল হতে পারে। কিন্তু পানামের এই স্ক্রাবটিতে যে বিডস আছে, সেগুলো খুবই মাইল্ড। স্কিনে কোনো ইরিটেশন হবে না। এতে আছে cinnamon বা দারুচিনির নির্যাস। ওপেন পোরসের ভিজিবিলিটি কমাতে, এজিং সাইনস দূর করতে এই উপাদানটি খুবই ইফেক্টিভ।
স্টেপ ৩- ফেইস প্যাক
ফেইস ম্যাসাজের পর রিল্যাক্সিং একটি স্টেপ হচ্ছে প্যাক অ্যাপ্লাই করা। টিউব থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে জাস্ট অ্যাপ্লাই করবেন, সিম্পল! কোনো কিছু মিক্স করার ঝামেলা নেই। ফেইস প্যাক পুরোপুরি শুকানোর দরকার নেই, হালকা একটু টানটান ফিল হলেই কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
ফেইস প্যাকের বিশেষত্ব কী?
পানাম কেয়ার হারবাল গ্লো ফেসিয়াল কিটে যে ফেইস প্যাক দেওয়া থাকে, তাতে আছে রোজ পেটাল ও লিকোরিস এক্সট্র্যাক্ট। এই উপাদানগুলো একনে প্রিভেন্ট করে, স্কিনে গ্লোয়িং ইফেক্ট দেয়, রেডনেস কমাতে হেল্প করে। সেই সাথে স্কিনে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে। এই স্টেপটির পর আপনি নিজেই ফিল করবেন স্কিন বেশ স্মুথ ও সফট লাগছে।
স্টেপ ৪- ময়েশ্চারাইজার
এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এর টেক্সচার একদমই লাইট ও জেল বেইজড। স্কিনে অ্যাপ্লাই করার সাথে সাথে সুদিং ও কুলিং ফিল পাবেন। এটি স্কিনের হাইড্রেশন ও ময়েশ্চার লক করে স্কিনকে হেলদি রাখতে হেল্প করবে। এতে আছে রোজ এক্সট্র্যাক্ট ও অ্যালোভেরা, সব ধরনের ত্বকে এই ময়েশ্চারাইজারটি স্যুট করবে।
আমার এক্সপেরিয়েন্স
এতক্ষণ আমরা জানলাম কীভাবে এই কিট ইউজ করতে হয়। পারসোনালি আমি খুবই স্যাটিসফাইড, ডেফিনেটলি আবারও পারচেজ করবো। আমার অবজারভেশনগুলো শেয়ার করছি-
- বাজেট ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্ট
- হার্মফুল কোনো কেমিক্যাল নেই
- মাত্র ১০ মিনিটেই বাসায় বসে ফেসিয়াল করে নেওয়া যায়
- ফেসিয়ালের পর স্কিন বেশ ব্রাইট ও ফ্রেশ দেখায়
তো এই ছিল আজকের রিভিউ। মাসে দুইবার এভাবে বাসায় বসে ফেসিয়াল করে নিতে পারেন। দেখলেন তো মাত্র ৪টি স্টেপসে পার্লারের মতো হারবাল গ্লো ফেসিয়াল বাসাতেই করে নেওয়া যায়। সাজগোজে পেয়ে যাবেন এই ফেসিয়াল কিট। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর ( জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ