পরিবারে যাদের মানুষ বাদে অন্য জাতের সদস্যও আছে, আছে দুপেয়ে প্রাণীর পাশাপাশি চারপেয়ে প্রাণীর বসবাস, লেখাটা তাদের জন্য। পোষাপ্রাণীর সার্বিক দেখভাল সঠিক উপায়ে হচ্ছে কিনা তার দিকনির্দেশনা নিয়েই টুকিটাকি কথা বলা হচ্ছে এখানে।
বাসার ভেতর সাধারণত বিড়াল, খরগোশ কিংবা কুকুর পোষা হয় অনেক পরিবারে। পাখি, মাছ, কাছিমও আছে অনেক ঘরেই। পাখি খাঁচার ভেতরেই থাকে, মাছ রাখা হয় ছোট্ট জলাধারে। কিন্তু বিড়াল, কুকুর বা খরগোশ, তারা ঘরময় ছুটে বেড়ায়। নিজেদের হুটোপুটি ছড়িয়ে দেয় সবার মাঝে। তাই তাদের খেয়াল রাখার ধরণটাও আলাদা হতে হয়, একটু বেশি সতর্কতার দরকার পড়ে।
[picture]
- খাবার হোক বুঝে-শুনে
দিনে কয়বার খাবার দেবেন, কী পরিমাণে দেবেন তার একটা মোটামুটি মাপকাঠি থাকা চাই। যেমন অনেক বেশি বার খাবার দেয়া কোন মতেই ঠিক নয়। তিন থেকে চার বার তাদের খাবার দেয়া যেতে পারে, নির্দিষ্ট সময় মেনে। পরিমাণ নির্ভর করবে আপনার আন্দাজ কিংবা আপনার পোষাপ্রাণীটির খিদের মাত্রার উপর।
নিজেদের জন্য রান্না করা সব খাবার অবশ্যই আপনার পোষাপ্রাণী খেতে পারবে না। অতিরিক্ত মশলাদার খাবার, কাঁচা মাছ-মাংস, চকোলেট দেয়া কেক বা রুটির টুকরো যদি কুকুর বা বিড়ালকে দেয়ার অভ্যাস থেকে থাকে, তবে তা পরিহার করুন। পানি পান করা নিয়ে তাদের বিশেষ অনীহা থাকতে পারে, সেটা খেয়াল রাখুন এবং পানি পান করানোর চেষ্টা করুন।
- জন্মনিরোধ প্রক্রিয়া
জন্মনিরোধ ব্যবস্থা নেয়াটা অতি জরুরী বিষয়গুলির মাঝে একটি। বাসার কুকুর বা বিড়ালকে জন্মনিরোধী করিয়ে নেয়া তাদের জন্যই সর্বাত্মক মঙ্গলের। এতে করে তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়, এবং অনেকগুলি ছানা জন্ম দিয়ে সেই বাচ্চাগুলিকে অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দেয়ার অঘটনও চিরতরে দূর হয়। অনেকেই জন্মনিরোধ করানোর ঘোর বিরোধী। এটা তো মানবেন, আপনার আদরের প্রাণীটা তার জীবনে সর্বমোট যে কয়টি বাচ্চার জন্ম দেবে, তাদের সবাইকে লালনপালন করা আপনার পক্ষে অসম্ভব? তবে কেনো তাকে সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বারবার যেতে দেবেন? এতো বেশি সন্তানের জন্ম দেয়া তার শরীরের পক্ষেও ভালো কিছু নয়, প্রতিবার নিজের বাচ্চাদের থেকে বিচ্ছেদও তার জন্য কষ্টের। এবার ভাবুন, তবে কেনো জন্মনিরোধের কথা ভাববেন না?
- টিকাদান সময় মতো
অনেকেই এটাকে জরুরী মনে করে, অনেকে করে না। আপনি নিজের পোষাপ্রাণীকে টিকা দেবেন কিনা তা আপনিই ঠিক করবেন, তবে সাবধানের মার নেই নীতি মাথায় রেখে টিকা দিয়ে আনলেই ভালো করবেন। তাদের এবং আপনার সুরক্ষার জন্যই টিকাদান দরকার।
- ওষুধপথ্য খুব সাবধানে
প্রাণী যখন, অসুখবিসুখ তো থাকবেই। সচেতন হলে তার ডাক্তারও নিশ্চয় দেখাবেন। সেটাই করা উচিৎ আসলে। অনেকে হেলাফেলা করে নিজেরাই ওষুধ দিয়ে দেয় পোষাপ্রাণী অসুস্থ হলে। এটা করা মোটেও ঠিক নয়, কেননা মানুষের সব ওষুধ তাদের জন্য প্রযোজ্য না। যারা দীর্ঘদিন ধরে পশূপ্রাণী পালছেন তারা হয়তো অভিজ্ঞতা থেকে ওষুধের পরামর্শ নিজেরা দিতে পারেন, তাই বলে সবাই নয়। এমন পরিস্থিতিতে চেষ্টা করুন ভেট মানে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে। কিংবা চেনাজানা অভিজ্ঞ কেউ থেকে থাকলে তার কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। ওষুধ দিতে গিয়ে বিষ দিয়ে বসবেন না আদরের প্রাণীটাকে! এই যেমন, প্যারাসিটামল কিন্তু তাদের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর, অথচ যারা জানেন না তারা অনেকেই জ্বর বা ব্যাথার জন্য দিব্যি এই ওষুধ গেলানোর বুদ্ধি দিয়ে দেবে!
- গোসল করানো ভারী মুশকিল
খরগোশের বা বিড়ালের বাচ্চাটা পানিকে ভালোবেসে একদম হাবুডুবু খাবে, এমন আশা আপনি করছেন নাকি? তারা পানি থেকে দূরে থাকবে এটাই স্বাভাবিক! আদরের কুকুরছানাটাও গোসলের আশঙ্কায় গা ঢাকা দিতে পারে। তাদের এই ভীতি তাড়াতে হবে আপনাকেই। গোসল প্রক্রিয়াটা মজাদার করে তুলুন। খেলতে খেলতে গোসল করান তুলার পুতুলগুলাকে, আদর দিতে থাকুন যাতে তা্রা গোসল বিষয়টাকে অত্যাচার না মনে করে।
বিড়ালকে গোসল করানো বেশিই কঠিন হয়, সেক্ষেত্রে নিয়মিত ভেজা কাপড়ে পুরো শরীর মুছিয়েও রাখতে পারেন। তাতেই পরিষ্কার থাকবে। আর গোসল করালেও প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে দুইদিনই যথেষ্ট হবে।
- নখের ধার সামলানো চাই
নখ তো থাকবেই, মাঝেমাঝে আঁচড় খেতেও হবে বটে। তাই বলে কি ধরে নখ কেটে দেবেন? মোটেও নয়, বরং নখ ছেঁটে দেয়াটা হলো আপনার করণীয় কাজ। সামান্য একটু কাটবেন নখের ডগা। ধারটা কমে যাবে তাতে। ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় এটা করতে পারেন কেননা সজাগ থাকলে তারা এই কাজ করতে দিতে একটুও খুশি হবে না!
এই বিষয়গুলি একটু নজরে রাখুন, তাদের সাবধানে রাখুন আর নিজেরা সতর্ক থাকুন। পশমিনা বাচ্চাগুলি মানুষের ঘরে অফুরান আনন্দের ঝুলি নিয়েই আসে। ভালো থাকুক আপনার ঘরের খুশির ঝুলিটাও!
ছবি – পপস্ক্রিন ডট কম
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব