এখনকার ডিজিটাল যুগে আমরা সবাই ব্যস্ত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু কাজই করে যাই আমরা। সেটা অফিসেই হোক বা ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই হোক। কাজের চাপে একটা সময় আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই, যার প্রভাব পড়ে আমাদের কাজের ওপর। দিনের শেষে মনে হয় যেন তেন ভাবে কাজটা শেষ হলেই বাঁচি। অনেকের আবার একটানা কাজ করে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তারা কাজের মাঝে বিরতি নিতে চান না। মনে করেন এতে সময় নষ্ট হয়। ব্যাপারটা কিন্তু আসলে উল্টো। একটানা কাজ করতে গেলে কাজে যেমন বিরক্তি আসে, তেমনি নিজের ওপরও চাপ পড়ে অনেক বেশি, যা থেকে তৈরি হয় ডিপ্রেশন। গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা কাজের পরিবর্তে বিরতি নিয়ে কাজ করলে তা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়ে থাকে।
বর্তমান সময়ে কর্ম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে “Pomodoro Technique” বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। “Pomodoro technique” এর আবিস্কার করেন নব্বই এর দশকের একজন উদ্যোক্তা এবং লেখক Francesco Cirillo ।
তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তখন নিজের কর্মপন্থা ঠিক রাখতে এক ধরনের টমেটো আকৃতির টাইমার ব্যবহার করতেন। এর ওপর ভিত্তি করেই তিনি এই পদ্ধতির নাম রাখেন “Pomodoro”। ইটালিয়ান শব্দ “Pomodoro” এর অর্থ হচ্ছে টমেটো।
এই পদ্ধতির মূল কথাটি হচ্ছে, যখনই কোন বড় কাজ হাতে নেবেন, তখন কাজটিকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন এবং এই প্রতিটি ভাগের মধ্যে ছোট বিরতি নিতে হবে। এতে করে মস্তিষ্ক ঐ স্বল্প কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে অনেক বেশি সক্রিয় থাকে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখে। এতে ক্রমান্বয়ে পুরো কাজটি শেষ করা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। মূলত এটি একটি সাইক্লিক্যাল পদ্ধতি, যা ব্যক্তিকে নিয়মিতভাবে প্রোডাকটিভ রাখে। সেই সাথে কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি একদিকে যেমন আপনাকে মোটিভেট করতে উৎসাহ যোগাবে, তেমনি আপনাকে অনেক বেশি সৃজনশীল করে তুলবে।
এবার জেনে নিই কীভাবে এই পদ্ধতি কাজ করে। এই পদ্ধতিতে কাজ করার ৫ টি ধাপ রয়েছে।
১। প্রথমেই কাজটির একটি তালিকা তৈরি করে, পুরো কাজটিকে কয়েকটি ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন।
২। এবারে ২৫ মিনিটের জন্য “Pomodoro” টাইমারটি সেট করুন।
৩। এবারে কাজ শুরু করুন এবং টাইমার বেজে ওঠার আগ পর্যন্ত কাজ করতে থাকুন।
৪। এবারে ৩-৪ মিনিটের একটি বিরতি নিন।
৫। এভাবে ৪ টি “Pomodoro” সেশন শেষ হবার পরে ৩০ মিনিট বিরতি নিন।
৪ টি “Pomodoro” সেশনে একটি সেট পুরো হয়। ৪ টি সেশন শেষ হবার পরে বিরতি নিন, এসময় আপনি চা বা কফি খেতে পারেন, কোন বন্ধুর সাথে কথা বলতে পারেন অথবা যা করলে কিছুক্ষণের জন্য আপনি রিলাক্স হতে পারবেন।
এখানে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরী যে, একটি “Pomodoro” সেশনকে ভাগ করা যায় না। সেশন চলা কালে যদি কোন ভাবে আপনার কাজে ব্যাঘাত ঘটে সেক্ষেত্রে ঐ সেশনটি সেখানেই বন্ধ করে দিয়ে পরে আবার নতুন করে শুরু করা উচিত। কেননা “ Pomodoro technique” মূল লক্ষই হচ্ছে কাজের ওপর বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ যেকোনো বাধাবিঘ্নের প্রভাবকে হ্রাস করা।
এছাড়াও যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে পুরো কাজটি শুরু করার আগেই তার একটি পূর্বপরিকল্পনা তৈরি করা, এবং মনে মনে সেটা ভিজুয়ালাইজ করে নেয়া।
“ Pomodoro technique” ব্যবহারের জন্য আপনি খুব সাধারণ টাইমার বা মোবাইলের এর সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়াও এখন ইন্টারনেটে “Pomodoro App” পাওয়া যায়। সেটার সাহায্য নিতে পারেন। পাশাপাশি কাজের তালিকা তৈরী করে নিন। প্রতিটি সেশন শেষ হলে, যতটুকু কাজ শেষ হল, তা চিহ্নিত করে রাখুন। এটা আপনাকে মানসিক ভাবে কাজের প্রতি আগ্রহী করবে।
লিখেছেনঃ মাহবুবা বীথি
ছবিঃ লাইফহ্যাকার.কম
তথ্যসুত্রঃ
১। উইকিপিডিয়া
২। The Pomodoro Technique, Francesco Cirillo.