যেকোনো নারীর জন্য মাতৃত্ব অনেক কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়। সকল নারীর জীবনে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত। গর্ভবতী হওয়া থেকে শুরু করে একটি শিশুর আগমন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে একজন নারীকে অনেক কিছুর সম্মুখিন হতে হয়। প্রেগনেন্সির সময়টা ছাড়াও শিশু জন্মগ্রহণের পরও নারীকে বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। প্রেগনেন্সির পর পেটের মেদ কমিয়ে ফেলা খুব কঠিন একটি বিষয়।
সবচেয়ে সাধারণ একটি সমস্যা হলো পেটে মেদ জমা হওয়া। বাড়তি ওজন নিয়ে নারীরা সবসময়ই সচেতন। সন্তান জন্মদানের পরের সময়টি নারীরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে ওজন বেড়ে যাওয়া অন্যতম। তারপর সেইসময় চাইলে জিম শুরু করতে পারেন না, এমনকি হুট করে ডায়েটও শুরু করে দিতে পারেন না। তাহলে উপায়? প্রেগনেন্সির পর পেটের মেদ কমাবেন কিভাবে? একটু সচেতন হয়ে ৬টি সহজ ব্যায়াম করলেই আপনি পেতে পারেন এই সমস্যার সমাধান! তাহলে চলুন এবার বিস্তারিত জানা যাক!
প্রেগনেন্সির পর পেটের মেদ কমাতে ৬টি সহজ ব্যায়াম
যেসকল মায়েরা বাচ্চা হওয়ার পরবর্তিতে সময়ের ওজন তথা পেটের মেদ নিয়ে চিন্তিত। তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। ওজনটাকে বধ করার সহজ কিছু ব্যায়াম জানতে পারবেন আজকের আর্টিকেল থেকে। তবে আমরা প্রসব পরবর্তী সময়ে সতর্কতার সাথে ব্যায়াম করার জন্য ৩টি লেভেল বা ধাপের কথা আলোচনা করেছি। এই ৩ ধাপের মাধ্যমেই আপনাকে ৬টি ব্যায়াম অনুসরণ করতে হবে।
১. বিগেনার লেভেল
এক্সারসাইজে যদি আপনি একদম নতুন হয়ে থাকেন তাহলে এই ব্যায়ামটা আপনার জন্য। এই ব্যায়ামগুলো আপনার পেটের পেশীগুলো চলাচল করে মেদ কমাতে সাহায্য করবে। এটি আপনি চাইলে সন্তান জন্ম দেওয়ার দুই সপ্তাহের পর থেকে শুরু করতে পারবেন।
১) বেলি ব্রিদিং (Belly breathing)
সোজা হয়ে বিছানায় অথবা ইয়োগা ম্যাটের উপর শুয়ে পড়ুন। হাঁটু দুইটি ভাঁজ করে পেটের কাছে নিয়ে আসুন। এই অবস্থায় শ্বাস বন্ধ করুন। এবার আঙ্গুল দিয়ে নাভীর মাঝ দিয়ে পেটে চাপ দিন। এই অবস্থায় ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। আবার শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। এটি করার সময় শ্বাস ৫ সেকেন্ড বন্ধ রাখুন। তারপর আবার ছাড়ুন। এটি কয়েকবার করুন। এটি প্রতিদিন ৩০ সেকেন্ড করুন। পেট প্রসারিত এবং সংকোচনের মাধ্যমে এটি আপনার পেটের উপর চাপ ফেলবে যা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করবে।
২) কেগেল (Kegel)
বিগেনার লেভেলের আরো একটি ব্যায়াম আছে, যা আপনার মেদ ঝড়াতে সাহায্য করবে। এই ব্যায়ামটি পেলভিক মাসেল অর্থাৎ নিতম্বের মেদ কমাতে সাহায্য করে। একটি বেঞ্চে বা চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন। এবার বেঞ্চ বা চেয়ার থেকে উঠে আধা বসা অবস্থার মত দাঁড়ান। এভাবে কয়েক সেকেন্ড থাকুন। এটি ১০-২০ রেপস করুন।
এই ব্যায়ামটি আরো একটু কঠিনভাবে অর্থ্যাৎ অ্যাডভান্সড লেভেলে করতে পারেন। বেঞ্চের উপর আগের মত সোজা হয়ে বসুন। আগের মত বেঞ্চ বা চেয়ার থেকে উঠে আধা বসা অবস্থার মত দাঁড়ান। এবার ডান পা-টি সোজা করুন, বাম পা-টি ভাঙ্গা অবস্থায় রাখুন। এরপর বাম পা সোজা করে উঠে দাঁড়ান। এটি ১২ রেপস করুন। প্রয়োজনে পা পরিবর্তন করে ব্যায়ামটি করুন।
৩) ক্রাঞ্চ বিট (Crunch Beat)
এই ব্যায়ামটি পেট এবং পায়ের মাংসপেশীর মেদ ঝড়াতে বেশ কার্যকর। সোজা হয়ে ইয়োগা ম্যাটের উপর শুয়ে পড়ুন। পা দুটি ম্যাট থেকে উপরে দিকে তুলুন। হাত দুটি মাথার পিছনে নিয়ে যান। পা দুটি প্রসারিত করুন, এবং তার সাথে সাথে হাত দুটিও মাথার উপর প্রসারিত করুন। এইভাবে ৮ বার করুন।
২. ইন্টারমেডিয়েট লেভেল
ব্যায়াম শুরু তো করলেন, প্রাথমিক লেভেলও ভালোভাবে পার করে ফেললেন। চলুন, এবার নেক্সট লেভেলে যাওয়া যাক। সন্তান জন্মগ্রহণের দুই তিন মাস পর এই ব্যায়ামটি করতে পারেন।
৪) প্ল্যাঙ্ক (Plank)
যারা ব্যায়াম করেন কম বেশি সবাই প্ল্যাঙ্ক সম্পর্কে জানেন। প্ল্যাঙ্ক হলো এক ধরনের আইসোমেট্রিক বা স্ট্যাটিক ব্যায়াম, যার মূলনীতি হলো শরীরটাকে একটা নির্দিষ্ট ভঙ্গিমায় ধরে রাখা। প্ল্যাঙ্ক এবং সাইড প্ল্যাঙ্ক আপনার ঘাড় এবং পিঠের মেদ কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও প্ল্যাঙ্ক করলে আপনার পেটের পেশীর উপরও টান পড়ে। ফলে পেটের মেদ কমে।
মেঝেতে বা ইয়োগা ম্যাটের উপর প্ল্যাঙ্ক পজিশনে শুয়ে পড়ুন। পিঠ এবং পা বাঁকা না করে একদম এক লাইনে রাখুন। এভাবে ৩০-৬০ সেকেন্ড থাকুন। তবে লক্ষ্য রাখবেন পিঠ এবং হিপ একদম সোজা যেনো থাকে। একবার প্ল্যাঙ্ক করার পর হাঁটুটি রেস্টের জন্য মেঝেতে রাখুন ৩০ সেকেন্ড। তারপর আবার প্ল্যাঙ্ক শুরু করুন। এই প্ল্যাঙ্কটি ৪-৫ বার করুন। এই প্ল্যাঙ্কটি করার পর আপনি সাইড প্ল্যাঙ্ক করা শুরু করতে পারেন। বাম হাত ভাঁজ করে ইয়াগো ম্যাটের উপর শুয়ে পরুন। ডান হাত সোজা রাখুন, দুই পা ভাঁজ করা থাকবে। ধীরে ধীরে শরীরটি ম্যাট থেকে উপরে রাখুন। এভাবে ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড থাকুন। এটি করা হয়ে গেলে বাম দিক থেকে ফিরে ডান দিকে প্ল্যাঙ্ক করুন।
৩. অ্যাডভান্সড লেভেল
এই লেভেলে আপনি আপনার রেগ্যুলার ব্যায়ামে চলে যেতে পারবেন। ছয় মাস বা আরো পর থেকে এই ব্যায়ামগুলো শুরু করুন।
৫) ওয়াইড স্ট্যান্স ডেডলিফটস (Wide stance deadlifts)
প্রতিটি হাতে ২ কেজি ওজনের হালকা ড্যাম্বেল ধরবেন। পা দুটি কিছুটা ছড়িয়ে দাঁড়ান, এবং হাঁটু ভাঁজ করে কিছুটা বাঁকা হয়ে দাঁড়ান। এই পজিশনে মাটির সাথে শক্ত হয়ে দাঁড়ান। এবার ড্যাম্বল দুটি উঠা নামা করুন। এটি কয়েকবার করুন। লক্ষ্য রাখবেন আপনার পেটে খুব বেশি যেন চাপ না পড়ে।
৬) সম্মুখে হাঁটা (Walking Lunges)
প্রথমে পা দুটি সমানভাবে রাখুন। এবার কোমড়ে হাত দুটি রাখুন। সামনের দিকে একটি পা এগিয়ে দাঁড়ান। লক্ষ্য রাখবেন সামনে এবং পিছনে হাঁটু যেন ৯০ ডিগ্রীতে থাকে। এবার পিছনের পা’টি হিল করে সামনের দিকে চাপ দিন, ফিরত এসে সোজা হয়ে দাঁড়ান। ডান পায়ের পর পা পরিবর্তন করুন। এটি ১০-২০ রেপস করুন।
যেকোনো ব্যায়াম করা আগে সচেতন থাকুন। যদি ব্যায়াম করতে কষ্ট হয়, সেটি করা থেকে বিরত থাকুন। পেট বা শরীরে চাপ পরে এমন ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন। নিজের দিকে লক্ষ্য রাখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; নিউট্রিটিভাহ.কম; মাইফিটনেসপ্যাল.কম; এক্সপেরিয়েন্স লাইফ.কম; ভেরিঅয়েলফিট.কম