‘পোস্টপার্টাম’ সদ্য মা হওয়ার নারীর কাছে পরিচিত একটা শব্দ। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পরের সময়কে পোস্টপার্টাম বলা হয়। এই সময় একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক অনেক পরিবর্তন আসে। তাকে অনেক স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। দুর্বল লাগা, পেশিতে ব্যথা, অবসাদ লাগা, একটুতে বিরক্ত হওয়া এইসব কিছু নতুন মায়ের নিত্যদিনের সঙ্গী। এর মাঝে তিনি আয়নায় নিজেকে দেখে হয়তো ডুবে যাচ্ছেন হতাশায়! তাই নতুন মায়েদের বলছি, দিনের একটা ঘন্টা নিজেকে সময় দিন। নিয়ম করে ইয়োগা করুন, দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে ফিরে পাচ্ছেন হারিয়ে যাওয়া নিজেকে। ইয়োগা আপনার পোস্টপার্টাম ওয়েট গেইন কন্ট্রোল করার পাশাপাশি এনার্জি বৃদ্ধি করবে, পেশি ব্যথা কমাবে, এমনকি আপনার হতাশাও কমিয়ে দিবে অনেকখানি। নতুন মায়েদের টেনশন ফ্রি রাখতে ৭টি পোস্টপার্টাম ইয়োগা নিয়ে আজকের ফিচার। এই ইয়োগাগুলো খুব সহজে নতুন মায়েরা করতে পারবে। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ইয়োগাগুলো সম্পর্কে।
পোস্টপার্টাম ইয়োগা
সদ্য যারা মা হয়েছেন, তাদের জন্য ভারী এক্সারসাইজ করা কিছুটা কঠিন। তাই এ সময় শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য ইয়োগা করা যেতে পারে। নতুন মায়েরা যে ৭টি পোস্টপার্টাম ইয়োগা করতে পারেন-
১) চাইল্ড পোজ
এই ইয়োগা পোজ অনেকটা বাচ্চাদের মতো করে বসতে হয়। দুই পা পিছনের দিকে ভাঁজ করে বসে দুই হাত সোজা করে সিজদাহর মতো করে বসুন। পেট ও হাঁটু যেন একসাথে মিশে থাকে (ছবির মত করে) সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
এই ইয়োগা আপনার ব্যাক, চেস্ট, নেক ও মাথাব্যথা কমাবে। এটি পেলভিসের পেশিগুলো স্ট্রং করবে। ইয়োগাটি আপনি ইয়োগা ম্যাট অথবা বিছানার উপর বসেও করতে পারবেন। লক্ষ্য রাখবেন, এই ইয়োগা করার সময় পেটের উপর যেন খুব বেশি চাপ না পড়ে।
২) ব্রিজ পোজ
এই পোজটি একটু কঠিন। তাই এটি প্রথম দিনেই করার চেষ্টা করবেন না। প্রথমে অল্প অল্প করে করার পর, এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে এই পোজটি করতে পারবেন।
এটি করার জন্য প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। তারপর দুই পা গুটিয়ে নিন এবং দুই হাত সোজা রাখুন। এরপর ধীরে ধীরে কোমর যতটা সম্ভব উঁচু করার চেষ্টা করুন। এভাবেই কোমর ভাসমান অবস্থায় উপরের দিকে ধরে রাখুন। এভাবে ১০-১৫ সেকেন্ড থাকুন এবং কয়েকবার রিপিট করুন। এটি মেরুদন্ডের ব্যথা কমানোর সাথে সাথে আপনার অ্যাংজাইটি কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া এটি হিপ থেকে পায়ের পেশি পর্যন্ত মজবুত করে।
৩) মোডিফাইড নাভাসন বা বোট পোজ
নতুন মায়েদের মধ্যে যারা আগে কেগেল ব্যায়াম করেছেন তাদের জন্য এই ইয়োগাটা একটু সহজ হবে। এই ইয়োগা পেটের নিচের পেশি শক্ত করতে এবং পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। ইয়োগাটি করার জন্য হাঁটু ভাঁজ করে সোজা হয়ে বসুন। এবার পিঠ সামান্য পেছন দিকে বাঁকিয়ে দুই হাত সোজা করে সামনের দিকে রাখুন। একইভাবে হাঁটুও সোজা উঁচু করে সামনের দিকে রাখুন। অর্থাৎ আপনার পুরো শরীর ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে থাকবে। এই পজিশনে ৫-১০ সেকেন্ড থাকুন। ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে ২০/৩০ সেকেন্ড করতে পারেন।
এটি করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ইয়োগা শুরুর প্রথমদিন এই পোজটি করার ট্রাই করবেন না। ধীরে ধীরে প্রতিদিন করতে করতে আপনি ৯০ ডিগ্রী এঙ্গেলে বসতে পারবেন।
৪) মাউন্টেইন পোজ
ইয়োগা ম্যাটের উপর একদম সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং হাত দুটো নিচে মেঝের দিকে টানটান রাখুন (ছবির মতো)। এভাবে ৩০ সেকেন্ড থাকুন। এই ইয়োগাটি পেটের নিচের অংশ, পিঠ ও পেলভিসের পেশিগুলো টোনিং করতে এবং পিঠের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করবে।
৫) ক্যামেল পোজ
এই ইয়োগাটি করার জন্য আপনাকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হতে হবে। আপনি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই ইয়োগাটি করতে পারেন। এটি করার সময় পেটের নিচের অংশ এবং মেরুদন্ডে কিছুটা চাপ পড়ে। এটি পেশি মজবুত করবে এবং বডি ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়াবে।
ইয়োগাটি করার সময় ম্যাটের উপর পা পেছন দিকে রেখে হাঁটুতে ভর দিয়ে সোজা হয়ে বসুন। এবার বডি পেছনের দিকে বেন্ড করে প্রথমে ডান হাত ডান পায়ের গোড়ালির সাথে এবং বাম হাত বাম পায়ের গোড়ালির সাথে টাচ করুন। কয়েক সেকেন্ড এভাবে থাকুন। এবার ঠিক একইভাবে আগের জায়গায় ফিরে আসুন।
৬) ফরোয়ার্ড বেন্ড
ইয়োগা ম্যাটের উপর সোজা হয়ে দাঁড়ান, ধীরে ধীরে কোমর সামনের দিকে নিচু করুন। বাঁকা থাকা অবস্থায় পায়ের আঙুল বা গোড়ালি স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। প্রথমদিনই হয়তো স্পর্শ করতে পারবেন না। প্রতিদিন আস্তে আস্তে করতে করতে স্পর্শ করা আর কঠিন মনে হবে না। এই পজিশনে থাকার সময় লক্ষ্য রাখবেন পা দুটি যেন কাছাকাছি থাকে আর শ্বাস ছাড়তে থাকুন। এভাবে ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড থাকুন। ৪/৫ বার একইভাবে করুন। এতে বডি অনেকটাই শিথিল হবে।
৭) ওয়ারিয়র পোজ
যাদের ঘাড় ও হাতের পেশিতে ব্যথা রয়েছে তাদের জন্য এই ইয়োগাটি বেশ কার্যকর। প্রথমে শরীর একপাশ করে বাঁকা হয়ে দাঁড়ান, হাত দুটি দুই পাশে প্রসারিত করুন (ছবির মতো)। এভাবে থেকে নিঃশ্বাস গ্রহণ করুন আর ছাড়ুন। এভাবে কিছুক্ষণ থাকুন। শরীরের ব্যথা কমানোর জন্য এই ইয়োগাটি নিয়মিত করতে পারেন।
ইয়োগার উপকারিতা
ইয়োগার উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানি। ইয়োগা শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনই মানসিক সুস্থতার জন্যও বেশ ভালো। এছাড়া আরো কিছু উপকার আছে, আসুন জেনে নেয়া যাক।
১) শরীরের সাথে মনের সম্পর্ক তৈরি করে
ইয়োগা শরীরের সাথে মনের সুন্দর সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে। ইয়োগা করার সময় ব্রিথিং এক্সারসাইজটাও হয়ে যায় বলে মনে প্রশান্তি আসে। এটি শরীরকে মনের সাথে টিউন করতে সাহায্য করবে। এছাড়া ইয়োগা করলে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়।
২) স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে
নিঃশ্বাস ত্যাগ করা এবং শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে ভিতরের স্ট্রেস অনেকখানি কমে আসে। এছাড়া ইয়োগা রাগ সংযম করতেও সাহায্য করে। অনেক ডাক্তাররা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কমাতে ইয়োগা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৩) পেশির ব্যথা কমায়
বেশ কিছু ইয়োগা আপনার পেশি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং পেশিকে প্রসারিত করে। বিশেষ করে যাদের ঘাড়, হাঁটু ও পিঠের ব্যথা আছে তারা ইয়োগা করলে বেশ উপকার পাবেন।
নতুন মায়েদের একেকজনের স্ট্যামিনা একেক রকম হয়। তাই সব ইয়োগা একসাথে শুরু করার প্রয়োজন নেই। প্রথমদিকে অনেক সময় নিয়ে না করে, ধীরে ধীরে ইয়োগার সময় বাড়ান। সদ্য যারা মা হয়েছেন তাদের টেনশন কমানোর জন্য এই ইয়োগাগুলো বেশ হেল্পফুল। তবে ইয়োগা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।
ছবিঃ সাটারস্টক