কোনো পার্টি বা দাওয়াতে অন্যান্য খাবারের সাথে মূল আয়োজনে থাকে মাংসের বিভিন্ন পদ। দাওয়াত ছাড়াও রোজকার মেন্যুতে প্রায়ই মাংসের বিভিন্ন ধরনের আইটেম অন্তর্ভুক্ত থাকে। অতিরিক্ত রেড মিট খাওয়া হলে আমাদের স্বাস্থ্যের উপর কিন্তু বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বিফ, মাটন, অতিরিক্ত তেল ও মসলাদার খাবার আসলেই কতটা ক্ষতিকর, সে ব্যাপারে আমাদের অনেকেরই প্রোপার নলেজ নেই। চলুন জেনে নেই তাহলে।
অতিরিক্ত রেড মিট ও তেল-চর্বি খাওয়ার যত ঝুঁকি
১) কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
রেড মিটে বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত ও উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবারে কোলেস্টেরল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি মাত্রায় থাকে। যার কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেই সাথে থাকে মৃত্যুঝুঁকিও।
২) কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে রেড মিট বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে বিশেষ করে অতিরিক্ত তেল মসলা দিয়ে যখন প্রক্রিয়াজাত করে রান্না করা হয়, তখন তা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৩) ওজন বেড়ে যায়
যে খাবারে অস্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে, সেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরিও কিন্তু থাকে। অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার ওজন বৃদ্ধি, ওবিসিটি, ডায়াবেটিসের এর মতো অন্যান্য জটিল রোগের মূল কারণ হতে পারে। অনেকেই মাংসজাতীয় খাবার খাওয়ার পরে হজম প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য কোমলপানীয় বা সফট ড্রিংকস পান করেন, যা শরীরের জন্য একদমই ভালো নয়। এতে কিন্তু ওজন আরও বাড়তে পারে।
৪) কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়
অনেকেই এখন জানেন, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। অত্যধিক পরিমাণে তেল জাতীয় খাবার খাওয়া, বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ও ট্রান্সফ্যাট, এলডিএল (ব্যাড কোলেস্টেরল) হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
৫) উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থাকে
রেড মিটের অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে এবং হুট করেই প্রেশার বাড়াতে সোডিয়াম কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। প্রেশারের রোগীদের রেড মিট এড়িয়ে চলতে বলা হয়।
৬) হজমের সমস্যা দেখা দেয়
বেশি পরিমাণে বিফ ও অত্যধিক তেল মসলাদার খাবার খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে। যেমন- অ্যাসিডিটি, পেটের আলসার ইত্যাদি।
৭) কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
সাধারণত ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য (হোলগ্রেইন) ফাইবার সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। আর এই আঁশযুক্ত খাবার স্টুল স্বাভাবিক রাখতে হেল্প করে। কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে ফাইবারের ঘাটতির প্রথম লক্ষণ। অতিরিক্ত মাংস জাতীয় খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। তাই ডেইলি ফুড চার্টে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
৮) কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
অত্যধিক প্রোটিন কিডনির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে প্রাণীজ প্রোটিন পিউরিন নামক কম্পাউন্ডে পূর্ণ থাকে যা ভেঙে ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। আর অতিমাত্রার ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৯) পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়
অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার প্রতিদিন খেতে থাকলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবারের অভাব দেখা দিতে পারে। ব্যালেন্সড ডায়েটে অভ্যস্ত না হলে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়।
সুস্থ থাকতে করণীয় কী?
ডায়েট মডিফিকেশন
খাদ্য তালিকায় মাংস ও তেল-চর্বি জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব কমাতে চর্বিহীন মাংস বেছে নিতে হবে এবং অল্প মসলা দিয়ে রান্না করতে হবে।
খাদ্য তালিকায় বিচিত্রতা
পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে ফল, শাকসবজি, শস্য ও লো ফ্যাট প্রোটিনের মতো খাবার আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
রান্নার কৌশল
বেকিং, স্টিমিং বা অল্প তেল দিয়ে রান্না করা খাবারে অভ্যস্ত হতে হবে। কুকিং অলিভ অয়েল কিংবা সানফ্লাওয়ার অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। রান্নার সময় বেশি হিট দিলে ও সবজি অনেকক্ষণ ধরে রান্না করলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
প্রোটিনের বিকল্প উৎস
রেড মিটের বিকল্প হিসাবে উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন উৎস যেমন সয়া, টফু, মটরশুঁটি বা বিভিন্ন রকম ডাল জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। চিকেন, ফিশ এগুলোও ডায়েটে রাখতে পারেন। এক কথায়, লো ফ্যাট ফুড আপনাকে বেছে নিতে হবে।
খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়ে
দাওয়াতে গেলে খাবারের মেন্যুতে রেড মিট থাকলেই কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। মাঝে মধ্যে অল্প পরিমাণে খেতেই পারেন। ধরুন দুপুরে রিচ ফুড বেশি খাওয়া হয়ে গেলো, রাতে স্যুপ বা লাইট মিল রাখুন। পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য একটি সহজ গাইডলাইন হলো প্লেটে খাবার ভাগ করা। প্রোটিন জাতীয় খাবার প্লেটের এক-চতুর্থাংশের বেশি গ্রহণ করা উচিত নয়। সবজি ও সালাদ দিয়ে প্লেটের অর্ধেক পূর্ণ করে বাকি অংশে শুধু শস্য জাতীয় খাবার দিয়ে প্লেট সাজালে একটি আদর্শ সুষম খবারের প্লেট তৈরি হয়।
অতিরিক্ত রেড মিট খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর, সেটা আশা করি এখন বুঝতে পেরেছেন। হাই ব্লাড প্রেশার, হার্টের সমস্যা, ক্যান্সার এগুলো প্রিভেন্ট করতে খাদ্যতালিকায় নজর দেওয়া জরুরি। সময় থাকতেই সচেতন হোন! আজ তাহলে এই পর্যন্তই, আবারও চলে আসবো নতুন কোনো বিষয় নিয়ে। ভালো থাকবেন।
ছবি- সাটারস্টক