মা হওয়ার মধ্য দিয়ে নারীর জীবনের পূর্ণতা আসে। গর্ভধারণ ব্যাপারটা প্রত্যেক নারীর জন্য আনন্দের। কিন্তু আনন্দের পাশাপাশি প্রত্যেক ‘মা’-কেই পুরো গর্ভাবস্থায় কিছু ছোট খাটো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কোন সমস্যা ছাড়া পুরো গর্ভাবস্থা শেষ করেছেন এমন ‘মা’ খুব কমই পাওয়া যাবে। গর্ভাবস্থা একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। ভ্রূণ ধীরে ধীরে বাড়ার সাথে সাথে মায়ের শরীরে কিছু পরিবর্তন আসে। এ সময় অনাগত সন্তানের কথা ভেবে মাকে নিতে হয় বাড়তি যত্ন। বাড়তি যত্ন বলতে সবাই বুঝে খাওয়া দাওয়ার কথা। কিন্তু গর্ভবতী মায়ের চুলের যত্নের কথা যেন সবাই ভুলে যান।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন গর্ভবতী মায়ের আবার চুলের যত্ন! এ সময়তো খাওয়া দাওয়াই মূখ্য। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন গর্ভাবস্থায় একজন মেয়ের চুলের বারোটা বেজে যায় আর এই সমস্যা অনেক সময় স্থায়ী হয়ে যায়। প্রেগন্যান্সি (pregnancy)-তে হরমোনের অন্তঃপ্রবাহের কারণে শারীরিক পরিবর্তন ঘটে এবং চুলের ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং ঐ বিশেষ মাসগুলোতে আপনার চুলে কিছু বাড়তি যত্ন প্রয়োজন হতে পারে। তবে দেখে নিন কেমন হবে গর্ভাবস্থায় চুলের যত্ন!
গর্ভাবস্থায় চুলের যত্ন নিয়ে বিস্তারিত
কী ধরনের পরিবর্তন আসে?
শুষ্ক চুলের অধিকারিণীদের গর্ভাবস্থায় চুল তৈলাক্ত হয়ে যেতে পারে। আবার অনেকে ঘটনা চক্রে ঘন চুল পেয়ে যেতে পারেন যেখানে অন্যদের চুল পড়ে টাক হওয়া বাকি থাকে। অনেকে এই পরিবর্তনগুলোর জন্য হরমোন (hormone)-কে দোষারোপ করে থাকেন আবার অনেকে ভাবেন এই পরিবর্তনগুলো অধিকাংশই অস্থায়ী। এখন জেনে নিন গর্ভকালীন সময়ে চুলের বিভিন্ন সমস্যার আসল কারণ। এই সময়ে ইস্ট্রোজেন (estrogen) এবং রক্তের ভলিউম (volume)-এর মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় সেই সঙ্গে বেড়ে যায় প্রোটিন-এর চাহিদা আর এসবই মহিলাদের গর্ভাবস্থায় চুলের সমস্যা/পরিবর্তনের মূল কারণ। কিছু সহজ টিপস আপনাকে এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দেবে।
গর্ভাবস্থায় চুলের যত্ন নিতে ৮টি টিপস
১) হেয়ার অয়েল ব্যবহার
গর্ভাবস্থায় চুলের যত্ন নিতে তেলের ব্যবহার সবচেয়ে ভালো উপায়। সপ্তাহে ৩/৪ দিন চুলে তেল লাগান। হালকা গরম তেল দিয়ে আপনার চুল ম্যাসেজ করুন এবং কয়েক মিনিটের জন্য এটি এভাবেই রাখুন। একটি গরম তোয়ালে দিয়ে চুলটি মুড়িয়ে নিন। এই পদ্ধতিতে চুল থেকে মাথার তালু তেল শুষে নিবে এবং চুলের গোঁড়া মজবুত হবে।
২) হেয়ার কালার থেকে বিরত থাকুন
আপনি যদি চুলে রঙ করানোর ব্যাপারে সৌখিন হয়ে থাকেন তবে এই সময়ে সেই হবি (hobby)-টিকে সাময়িক বিসর্জন দিতে হবে। কেননা রাসায়নিক পদার্থ সাধারণত বিষাক্ত হয় এবং তা আপনার অনাগত শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যদি একান্তই চুল রঙ করতে চান, তবে মেহেদির দ্বারস্থ হওয়ায় ভালো।
৩) হেড ম্যাসাজ
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই সময়ে আপনি অধিকাংশ সময়ই চিন্তিত থাকেন, ফলশ্রুতিতে স্ট্রেস লেভেল থাকে চরমে। তাই মাঝে মাঝে হেড ম্যাসাজ আপনার জন্য ফলপ্রসূ হবে। অলিভ অয়েল-এর সাথে বাদামের তেল মিশিয়ে নিন। তারপর চুলের গোঁড়ায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। গর্ভাবস্থায় চুলের যত্ন নেয়ার সাথে সাথে এটি আপনার মানসিক চাপও শিথিল করবে।
৪) সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচন
গর্ভাবস্থায় চুলের যত্ন নিতে এ সময়ে মাইল্ড শ্যাম্পু (mild shampoo) দিয়ে চুল পরিষ্কার করবেন এবং শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার (conditioner) প্রয়োগ করতে ভুলবেন না।
৫) ভেজা চুল আঁচড়াবেন না
গর্ভাবস্থায় যদি আপনি চুলের যত্নে মনযোগী হতেই চান তবে, সবার আগে ভেজা চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানো বন্ধ করতে হবে। শুধু প্রেগনেন্ট (pregnant) থাকা অবস্থায় কেন, কোন সময়ই ভেজা চুলে চিরুনি দিতে হয় না। কেননা ভেজা অবস্থায় চুলের গোঁড়া থাকে অনেকটাই নরম। তাই টানা হেঁচড়া করলে চুল পড়ার পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যায়।
৬) পরিবর্তনটিকে উপভোগ করুন
গর্ভকালীন সময়ে চুলের টেক্সচার (Texture)-এ পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। কারও স্ট্রেট চুল (straight hair) হয়ে যেতে পারে বাউন্সি (bouncy) বা কার্লি (curly)। এই পরিবর্তন আপনাকে দেবে নিউ লুক আর এটি ভেবেই মন খারাপ না করে তা উপভোগ করুন। পরিবর্তনের সাথে মিল রেখে নিজের চুলের সাজেও নতুনত্ব আনুন।
৭) হেয়ার মাস্ক
আমলকী, হরিতকি, টক দই, ডিম, কাঁচা মেহেদি দিয়ে চুলের প্যাক তৈরী করে ১০ দিন অন্তর ব্যবহার করলে চুল ঝরঝরে থাকবে ও চুল পড়া কমে যাবে। এছাড়াও কলা, মধুর মতো প্রাকৃতিক উপাদানগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। আমরা সবাই জানি এগুলোকে পুষ্টির শক্তিঘর বলা হয়। এই উপাদানগুলো আপনার স্বাস্থ্যের উপরতো কোন প্রভাব ফেলেই না উপরন্তু চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়।
৮) নিয়মিত চুলের আগা ছাঁটুন
এমনিতেই ৩ মাস পরপর চুলের আগা ট্রিম (trim) করার কথা বলা হয়ে থাকে। এতে চুলের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। হবু মায়েদের বলছি নিয়ম করে চুল ট্রিম করুন। চাইলে নতুন কোন হেয়ার স্টাইল (hair style)-ও ট্রাই করতে পারেন।
সবশেষে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং সুষম খাদ্য গ্রহনের পরামর্শ দিব আমি। সেই সঙ্গে যথেষ্ট পানি পান করবেন। গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রোটিন-এর প্রয়োজন বেড়ে যায় কিন্তু আপনি যদি যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ না করেন তবে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে আপনার চুলের উপর। সুতরাং আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য এবং ভিটামিন গ্রহণ করুন। এতে আপনার হরমোনাল পরিবর্তন হবার পরেও আপনার চুল থাকবে ঘন, লম্বা আর ঝলমলে। তবে এই সময়ে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য পর্যাপ্ত ব্যায়াম এবং পরিমিত বিশ্রাম নেয়াও জরুরী। সব হবু মায়েদের জন্য শুভ কামনা রইল।
ছবিঃ সাটারস্টক