প্রেগনেন্সি সময় হুট করে ওজন অনেক বেড়ে যায়, তাই চামড়ায় টান পড়ে দাগ হয়ে যায় যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে striae gravidarum। সময়ের সাথে কিছু দাগ চলেই যায় আবার অনেক সময় শিশু জন্মের পরেও দাগ থেকে যায়। মায়েরা তাই চিন্তিত হয়ে পড়েন অথচ একটু সচেতন হলে দাগ পড়া ভাবটা কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা যাবে। শুধু পেট নয়, স্তন বা উরুতেও দাগ পড়তে দেখা যায়। ৭০-৯০% মায়েদের পেটে দাগ পড়ে, আর ৯০% এর শরীরের কোন না কোনও অংশে দাগ পড়ে। ত্বকের ডার্মিস ছিড়ে গিয়ে পড়া এই দাগ গর্ভাবস্থার একটি লক্ষণও বটে। চলুন জেনে নেই পেটে মাতৃত্বকালীন দাগ পড়ার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা বিস্তারিত।
পেটে মাতৃত্বকালীন দাগ পড়ার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা
পেটে মাতৃত্বকালীন দাগ পড়ার লক্ষণসমূহ
১. লাল রঙের ক্ষত দাগ।
২। জ্বালাপোড়া ও চুলকানি।
৩. পিগ্মেন্টেশন কম হওয়া।
৪. দাগের অংশটুকু গর্তের মত হয়ে যাওয়া।
৫. লম্বালম্বিভাবে নাভির উপরের অংশ থেকে নিচ পর্যন্ত দুই সাইডেই হতে পারে।
পেটে মাতৃত্বকালীন দাগ পড়ার কারণ
কারণ খুব একটা জটিল নয়। পেটের চামড়া চাপের কারণে ফেটে যায়। রিলাক্সিন, ইস্ট্রজেন ও করটিসল হরমোন বেড়ে গিয়ে মিউকোপলিসেকারাইড জমা করে যা যোজক কলা থেকে পানি শোষণ করে। ফলে যখন টান পড়ে তখন সহজেই ঐ স্থানে দাগের সৃষ্টি হয়ে যায়। যাদের বডি মাস ইনডেক্স বেশি বা যাদের বাচ্চা বড় তাদের দাগ হবার প্রবণতা বেশি। কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে মাতৃত্ব কালীন দাগ খুব সহজেই পড়ে।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
অলিভ ও ক্যাস্টর অয়েল
সবচেয়ে ভালো কাজ করে মূলত অলিভ তেল। আজকালকার যুগে ক্রিম জাতীয় অনেক কিছুই ব্যবহার করে মায়েরা। আপনি যখনই গর্ভধারণ করবেন আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিবেন, কোন ক্রিম বা তেল আপনার জন্যে প্রযোজ্য হবে। 0.১ % ট্রেটনইন ক্রিম, লোশন, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া ক্যাস্টর অয়েলও ভালো কাজ করে।
লেজার থেরাপি
দাগ হয়ে গেলে ২০% গ্লাইকলিক এসিড, ১০% এস্করবিক এসিড এর সাথে জিঙ্ক সালফেট ও টাইরোসিন ব্যবহার করা যায়। Bio skin care (বায়োলজিক্যাল একটিভেটর) ব্যবহার করলে রেজর এর বার্ন নিরাময় করতে সাহায্য করবে। এতে আছে ত্বকের গ্রোথ ফ্যাক্টর। ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের কোলাজেন কোষকেও দূর করে। এর সাইড ইফেক্ট নেই, এমনকি আপনার শিশুর ত্বকে লাগলেও ক্ষতি করবে না আশা করা যায়। লেজার থেরাপি অনেকের ক্ষেত্রেই ভালো কাজ করে। কিন্তু নিজে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভালো একজন ডার্মাটলজিস্ট দেখাতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কিছুই করা যাবে না। মানসিিভাবে ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই। নিজেকে বোঝাবেন এটি খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। সকল মায়েরই এটি হয়। দেখতে খারাপ লাগলেও এই নিয়ে চিন্তা করবেন না।
আপনার দুশ্চিন্তা আপনার সন্তানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সুন্দর কথা ভাবুন। কীভাবে সন্তানের সঠিক যত্ন নেয়া যায় তাই নিয়ে ভাবুন। যে আপনাকে ভালোবাসবে সে যে কোনও পরিস্থিতিতে ভালোবাসবে। মন ছোট করার কিছু নেই এখানে। আপনি চিন্তা করে দেখুন পৃথিবীতে কত নিঃসন্তান মা আছেন। আপনি কত সুখী! আল্লাহর এই অশেষ নিয়ামত পেতে কিছু ছাড় দিতে হতেই পারে। নিজেকে নিজে বোঝানোর থেকে ভালো কোন উপায় হতে পারে না।
মুখে ও গলায় কালো দাগ পড়ে কেন?
অনেক মায়ের মুখে ও গলায় কালো দাগ পড়ে। একে cholasma বা melasma-ও বলে। stress এর কারণে যে কারো এই দাগ পড়তে পারে। তবে মহিলাদের গর্ভকালীন stress এর কারণে এটি বেশি হতে দেখা যায়। এই সময় মহিলাদের শরীর থেকে নিঃসরিত হরমোনের প্রভাবে মেলানোসাইটগুলো স্টিমুলেট হয়ে বেশি পরিমাণে মেলানিন তৈরি করে। প্রশ্ন হতে পারে কখন? যখন সূর্যের আলোর স্পর্শে আসে। হালকা বাদামি রঙের ব্যাক্তিদের ত্বকে cholasma বেশি হয়। এছাড়া অনেকের জেনেটিক কিছু কারণেও এমনটি হতে পারে। থাইরয়েড ডিজিজে আক্রান্ত মায়েদের এটি হবার সম্ভাবনা আরও বেশি। stress এ Melanocyte Stimulating Hormone নিঃসরিত হয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
cholasma এর চিকিৎসায় Azelaic acid, কেমিক্যাল পিল , microabrasion, dermabrasion, galvanic acid, ultrasound facials, topical ক্রিম – জেল , laser , IPL বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করা হয় । Hydroquinone ও ব্যবহার করা হয়, এটি টাইরোসিনেজ এনজাইমকে বাঁধা দেয় ফলে মেলানিন তৈরি হতে পারে না। মূলত, একজন ভালো ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। আর সবচেয়ে বড় যেটা দরকার সেটা হল সেলফ কাউন্সেলিং। অনেকেই ত্বকের পরিবর্তনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। নিজেকে বোঝালেই অনেক মানসিক প্রশান্তি পাবেন।
আজকের লেখাটি সেসব মায়েদের জন্যে উপকারী হবে যারা গর্ভধারণ করেছেন বা প্রসব করেছেন। সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন নিন। শিশু মা উভয়েই সুস্থ থাকুক।
ছবিঃ ব্লগ.ক্রোন.কম