বিবাহিত জীবনের যৌন সমস্যা | প্রকারভেদ কারণ ও চিকিৎসা কী?

বিবাহিত জীবনের যৌন সমস্যা | প্রকারভেদ কারণ ও চিকিৎসা কী?

couple3

বিয়ে মানব জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ। বিয়ের পর স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক হয় আত্মিক, মানসিক ও শারীরিক। আত্মিক ও মানসিক সম্পর্কের সাথে সাথে এখানে শারীরিক সম্পর্ক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা বিষিয়ে যায় বিবাহিত জীবনের যৌন সমস্যা দেখা দিলে! আজকে আমরা নারী পুরুষের বিবাহিত জীবনের যৌন সমস্যা তথা শারীরিক কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো। আপাত দৃষ্টিতে এ সমস্যা পুরুষের মনে হলেও এর সাথে নারীর ভুমিকা অপরিসীম। নারীর সাহায্য ছাড়া পুরুষের এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া কখনই সম্ভব নয় । দুই জনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে, প্রয়োজনে কাউন্সিলিং বা চিকিৎসার মাধ্যমে সমস্যা থেকে উতরানো সম্ভব। নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই লজ্জায় পুরুষের সমস্যার কথা বলে না, ফলে সারা জীবন তাদের  কষ্টের মধ্যে সংসার করে যেতে হয় অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংসার ভেঙ্গেও যায়। তাই আজকের আলোচনা নারী ও পুরুষ উভয় এর জন্যই খুবই গুরুত্ব পূর্ণ।

বিবাহিত জীবনের যৌন সমস্যা

এখন আমরা পুরুষের দুইটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো পরবর্তীতে নারীর সমস্যা নিয়েও আলোচনা হবে।

Sale • Acne Treatment, Dull Skin Treatment, Anti Aging

    পুরুষের দুটি সমস্যা হল –

    ১. লিঙ্গ যথেষ্ট শক্ত না হওয়া বা ইম্পটেনসি।

    ২. দ্রুত বীর্যপাত হওয়া বা প্রিমাচ্যুর ইজাকুলেশান।

    লিঙ্গ যথেষ্ট শক্ত না হওয়া বা ইম্পটেনসি কী?

    এটা এমন একটি অবস্থা যখন একজন পুরুষের লিঙ্গ সফল ভাবে যৌন মিলন করার মত যথেষ্ট শক্ত হয় না বা বেশিক্ষণ শক্ত থাকে না বা যৌন মিলন করার ইচ্ছা জাগে না ।

    উপরের তিনটির যে কোনও একটা হলেই তাকে আমরা ইম্পটেনসি এর রোগী বলব।

    কী কী কারণে হতে পারে সমস্যাটি?

    ১. মস্তিষ্ক

    ২. আবেগ

    ৩. স্নায়ু

    ৪. হরমোন

    ৫. রক্তনালী

    ৬. মাংসপেশি

    এ ছাড়াও কিছু শারীরিক সমস্যাও থাকে, যেমন-

    ১. হৃদরোগ, রক্তের চর্বি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওজন আধিক্য, ধূমপান, মদপান, পুরুষ হরমোন এর স্বল্পতা, পারকিনসন, মাল্টিপল এসকলেসীস, জেনিটাল এরিয়াতে অসুখ বা বিভিন্ন যৌন রোগ ইত্যাদি।

    ২. মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা, মানসিক রোগ, পার্টনারের সাথে মানসিক দূরত্ব, পার্টনারের অসহযোগিতা, মনে মনে অন্য কারোর প্রতি আকর্ষিত হওয়া ইত্যাদি।

    পরীক্ষা

    মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শারীরিক পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা ইত্যাদি ।

    চিকিৎসা

    ১. ধূমপান, মদপান ত্যাগ করা।

    ২. ওজন কমানো।

    ৩. নিয়মিত ব্যায়াম করা।

    ৪. পার্টনারের সাথে গভীর মানসিক সম্পর্ক বজায় রাখা।

    ৫. পার্টনারকে যথেষ্ট ভাবে সহায়তা করা (নারীদের করনীয়)

    ৬. পার্টনারের প্রতি অনুগত থাকা।

    এছাড়াও-

    রোগ নির্ণয় ও তার চিকিৎসা যেমন-

    -ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল কমানো।

    -হৃদরোগের চিকিৎসা করা।

    -প্রয়োজনে হরমোন ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশান নেওয়া।

    -চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী – সিল্ডিনাফিল, টাদালাফিল জাতীয় ঔষধ খাওয়া।

    -প্রয়োজনে রক্তনালির অপারেশন ইত্যাদি।

    দ্রুত বীর্যপাত বা প্রিমাচ্যুর ইজাকুলেশান

    দ্রুত বীর্যপাত বা প্রিমাচ্যুর ইজাকুলেশান কি?

    যৌন মিলনের সময় যখন একজন পুরুষের বীর্যপাত তার বা তার পার্টনারের চাওয়ার আগেই হয়ে যায় তখন তাকে দ্রুত বীর্যপাত বা প্রিমাচ্যুর ইজাকুলেশান বলে।

    এই সমস্যা হঠাৎ হঠাৎ হলে সমস্যা নাই কিন্তু যদি প্রায় বা সব সময় ঘটে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে।

    প্রিমাচ্যুর ইজাকুলেশান সাধারণত ২ প্রকার।

    ১। প্রাইমারি।

    ২। সেকেন্ডারি।

    প্রাইমারি প্রিমাচ্যুর ইজাকুলেশান- প্রায় বা সবসময় যদি যোনীতে লিঙ্গ প্রবেশের ১ মিনিট বা তারও কম সময়ে বীর্যপাত হয় তবে তাহাকে  প্রাইমারি প্রিমাচ্যুর ইজাকুলেশান বলে।

    সেকেন্ডারি প্রিমাচ্যুর ইজাকুলেশান- যোনীতে লিঙ্গ প্রবেশের ১ মিনিট বা তারও কম সময়ে বীর্যপাত হওয়া (যার পূর্বে সফল ও আনন্দময় যৌন মিলনের রেকর্ড আছে)

    যৌন মিলনের আসল সময় কত?

    সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে প্রচুর ভুল ধারণা আছে। কেউ মনে করেন ১০ মিনিট বা তার বেশি, কেউ মনে করেন ২০ মিনিট বা তার বেশি সময় যৌন মিলন করতে হয়। আসলে এগুলো ভুল ধারণা। বেশির ভাগ মহিলাই মানসিক ভাবে ইনভল্ভ না থাকায় বা অতিরিক্ত লজ্জার কারনে বা সঠিক ভাবে উপভোগ করতে না জানায় সঠিক সময়ে তৃপ্ত হতে পারেন না। অনেক সময় পুরুষের অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণেও আগে বীর্যপাত হয়ে যেতে পারে। ফলে বেশির ভাগ সময় স্বাভাবিক সময়কেও দ্রুত বীর্যপাত বলে ধরে নেওয়া হয়।

    ডাক্তারি মতে যৌন মিলনের সময় লিঙ্গ প্রবেশের পর থেকে বীর্যপাত পর্যন্ত সাধারণত ৫ মিনিট বা তার বেশি।

    দ্রুত বীর্যপাত কাদের হতে পারে?

    -যাদের মানসিক রোগ আছে।

    -যারা তামাক, মদ, মাদক গ্রহণ করে।

    -যাদের বড় ধরনের শারীরিক রোগ আছে।

    -বিবাহ বহির্ভূত যৌন মিলনে।

    -অতিরিক্ত উত্তেজনার সহিত মিলনে।

    -অতিরিক্ত ভয় বা টেনশান থাকলে।

    -পার্টনারের সাথে যথেষ্ট মানসিক মিল না থাকলে।

    এটি একটি কমন ও সমাধান যোগ্য রোগ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যথাযথ কাউন্সেলিং এর মাধ্যমেই ভালো হয়ে যায়।

    এছাড়া-

    -মাদক কে না বলতে হবে।

    -মদ তামাক থেকে দূরে থাকতে হবে।

    -বিবাহ বহির্ভূত যৌন মিলন থেকে দূরে থাকতে হবে।

    -পার্টনারের সাথে যথেষ্ট মনের মিল থাকতে হবে।

    -নারীকেও তার পার্টনার কে যথেষ্ট সাহায্য করতে হবে।

    -মানসিক চাপ মুক্ত থেকে যৌন মিলনকে উপভোগ করতে হবে।

    সর্বোপরি এরপরেও সমাধান না হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কখনই রাস্তার পাশের বা গলির ভেতরের কারও কাছ থেকে কোনও ঔষধ খাওয়া চলবে না।

    লিখেছেনঃ ডাঃ এম এম রহমান রাজীব

    মেডিসিন, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ (খিলগাঁও ডায়াবেটিক ও স্পেশালাইজড ডক্টর’স চেম্বার)

    ছবিঃ সাটারস্টক

     

     

    37 I like it
    4 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort