সুন্দর চোখ সবসময়ই চিত্তাকর্ষক হয়। সুতরাং, চোখের চারপাশের ত্বক স্বাস্থ্যকর এবং দীপ্তিশীল হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাই হোক, আমাদের যাচ্ছেতাই লাইফস্টাইল-এর কারণে এবং দিনের পর দিন বিভিন্ন পরিবেশ দূষণের পাল্লায় পড়ে শেষ পর্যন্ত আমাদের চোখ নিস্তেজ ও ক্লান্ত হয়ে আকর্ষণ হারায়। তারই সাথে চারপাশে দেখা দেয় অনাকাঙ্ক্ষিত ডার্ক সার্কেল বা চোখের নিচে কালো দাগ। অতঃপর শুরু হয় এই ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পাওয়ার নিদারুণ চেষ্টা!
এই ডার্ক সার্কেল বা চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার জন্য অনেকেই বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করেন বা চিকিৎসার আশ্রয় নিচ্ছেন কিন্তু তেমন কোন ফল পাচ্ছেন না। অথচ আপনার হাতের কাছে থাকা আমন্ড অয়েল ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি দিতে খুব ভালো এবং দ্রুত কাজ করে। আমন্ড অয়েল-এ থাকা পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন ডার্ক সার্কেল-সহ ত্বকের বিভিন্ন ক্ষতি সারিয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটি ত্বক উজ্জ্বল করার পাশাপাশি ত্বকের নিস্তেজভাব দূর করে।
তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক, ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে বা চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে বাদাম তেল কিভাবে ভূমিকা রাখে।
ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে আমন্ড অয়েল-এর ভূমিকা
আমন্ড অয়েল বা বাদাম তেল খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। চোখের চারপাশের ত্বক খুব সংবেদনশীল এবং সূক্ষ্ম তাই এখানে ক্ষতিকর কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার না করাই উচিত বরং এই সংবেদনশীল স্থানে প্রাকৃতিক উপাদান বা হালকা প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন স্কিন বিশেষজ্ঞরা।
১) ডিহাইড্রেশন-এর কারণে চোখের নিচের ত্বক ড্রাই ও ডাল হয়ে পড়ে এমনকি চোখের নিচে ব্ল্যাকিশ/ব্লুইশ টোন দেখা যায়। আমন্ড অয়েল-এ আছে ফ্যাটি এসিড যা চোখের চারপাশের স্কিনের সফটনেস বজায় রাখে ও ময়েশ্চারাইজড করে।
২) আমন্ড অয়েল হলো একপ্রকার ন্যাচারাল ব্লিচিং এজেন্ট। এটি চোখের নিচের পিগমেন্টেশন দূর করতে সাহায্য করে।
৩) চোখের আরেকটি বড় সমস্যা হলো, চোখের চারপাশে রিংকেল তৈরি হওয়া বা ভাজ পড়া। আমন্ড অয়েল-এ আছে ভিটামিন ই, এটি চোখের চারপাশের ত্বকের রিংকেল হওয়া থেকে বাঁচায় এবং ত্বক টানটান করে।
ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে আমন্ড অয়েল-এর প্যাক
আসুন তাহলে এবার আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেই চোখের চারপাশের কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল দূর করতে আমন্ড অয়েলের কিছু ব্যবহার।
১. মধু ও আমন্ড অয়েল প্যাক
আপনার প্রয়োজন হবে
– হাফ চা চামচ মধু
– হাফ চা চামচ আমন্ড অয়েল
আপনাকে যা করতে হবে
মধু এবং বাদাম তেল ভালোভাবে মিশ্রিত করুন। তারপর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই মিশ্রণটি চোখের নিচে ভালোভাবে প্রয়োগ করুন। আপনি চাইলে সারারাত এটি রাখতে পারেন, এতে ভালো কাজ দেবে বা কিছুক্ষণ রেখে ধুয়েও ফেলতে পারেন।
প্রতিদিনই এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
মধু ত্বকে তারুণ্য বজায় রাখে এবং স্কিন হাইড্রেটেড রাখে। এটি আমন্ড অয়েলের সাথে যুক্ত হয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও ত্বক টানটান হতে সহায়তা করে।
২. গোলাপ জল ও আমন্ড অয়েল
আপনার প্রয়োজন হবে
– কয়েক ড্রপ আমন্ড অয়েল
– পরিমাণমত গোলাপ জল
– কটন বল
আপনাকে যা করতে হবে
গোলাপ জলে তুলা ডুবিয়ে নিয়ে আপনার চোখের নিচে বা চারপাশে ম্যাসাজ করুন। এবার স্বাভাবিকভাবেই এটি শুকিয়ে যেতে দিন। তারপর কয়েক ফোটা আমন্ড অয়েল নিয়ে ২-৩ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এভাবে সারারাত রেখে দিন।
সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য আপনি প্রায় প্রতিদিনই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
গোলাপ জল স্কিনকে রিফ্রেশ করে এবং হাইড্রেটেড করে। গোলাপ জল দিয়ে ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং স্কিন উজ্জ্বল হতে সাহায্য করে।
৩. অলিভ অয়েল ও আমন্ড অয়েল
আপনার প্রয়োজন হবে
– ১ চা চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
– ১ চা চামচ আমন্ড অয়েল
আপনাকে যা করতে হবে
দুটি তেল আপনার আঙ্গুলের সাহায্যে মিশিয়ে নিন। তারপর দু’আঙ্গুলে কিছুক্ষণ ঘষে তেলটা একটু গরম করে নিন। এবার আপনার চোখের নিচে আস্তে আস্তে ২-৩ মিনিট বৃত্তাকার গতিতে ম্যাসাজ করুন। এবার সারারাত এভাবেই রেখে দিন।
ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে আপনার প্রতিদিনই এটি ব্যবহার করা উচিত।
অলিভ অয়েলে আছে আমন্ড অয়েলের মতই ফ্যাটি এসিড যা ত্বকে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় ও ত্বকের কালো দাগ দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৪. আমন্ড অয়েল ও ভ্যাসলিন
আপনার প্রয়োজন হবে
– সামান্য একটু ভ্যাসলিন
– কয়েক ফোটা আমন্ড অয়েল
আপনাকে যা করতে হবে
ভ্যাসলিন-এর সাথে বাদাম তেল ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এটি চোখের নিচে ১-২ মিনিট ম্যাসাজ করে লাগিয়ে রাখুন প্রায় ২০-২৫ মিনিট। ভালো ফলাফলের জন্য সারারাত রেখে দেয়া ভালো হবে।
বেঁচে যাওয়া ভ্যাসলিন ঠোঁটে এবং ঠোঁটের চারপাশে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঠোঁট আদ্র হবে চারপাশের রিংকেল কমাবে।
প্রতি রাতে এই প্যাকটি পুনরাবৃত্তি করুন। ভ্যাসলিন ত্বকে আর্দ্রতা লক করে যা স্কিনকে নমনীয় রাখে । এছাড়াও ভ্যাসলিন ত্বকের ফাইন লাইনস, রিংকেলস এবং কালো দাগ দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে খেয়াল রাখতে হবে ভ্যাসলিন যেন আপনার চোখের ভেতর প্রবেশ না করে, এতে চোখ জ্বালা করতে পারে। তাই এটি ব্যবহার করার সময় সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। কোনভাবে চোখে চলে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
কিছু টিপস এবং সতর্কতা
(১) ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে ও স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য পরিমাণমত ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম আপনাকে ডার্ক সার্কেল এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
(২) ডার্ক সার্কেল দূর করতে পর্যাপ্ত পানি পান অপরিহার্য। যথেষ্ট পানি পান করলে ত্বকও সুস্থ থাকে।
(৩) চোখের কালো দাগ দূর করার পাশাপাশি ফাইন লাইন, রিংকেল বা বলিরেখা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনি এই আর্টিকেল-এ উল্লিখিত রেমেডিগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে একইসাথে অনেকগুলো সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
(৪) একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আপনাকে সুস্থ দেহের পাশাপাশি সুন্দর ত্বক এনে দিতে পারে। ফল, সবজি, এবং চর্বিহীন মাংস আপনার নিত্যদিনের খাওয়ার রুটিনে রাখুন। এতে ত্বক থেকে যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে যাবে এবং স্কিনের নিস্তেজভাব এবং চোখের রিংকেল ও কালো দাগ দূর হবে।
দীর্ঘদিন যাবৎ যারা ডার্ক সার্কেল বা চোখের নিচের কালো দাগের সমস্যায় ভুগছেন আশা করি আজকের লেখাটি তাদের উপকারে আসবে। উপরে উল্লিখিত আমন্ড অয়েলের হোম রেমেডিগুলো নিয়মিত ব্যবহার করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন এবং পর্যাপ্ত ঘুমান, দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেক্টিক প্রোডাক্ট চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন। যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম তো আছেই। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিয়মিত নিজের যত্ন নিতে অনীহা করবেন না।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; সাটারস্টক