ডার্ক চকলেট নিয়ে প্রচলিত আছে নানা মিথস। কেউ বলেন ”এটা খেলে ঘুম হবে না!’‘ কেউ আবার বলেন, ”চকলেট মানেই খারাপ, খেলে দাঁত নষ্ট হয়ে যাবে!” ডার্ক চকলেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই খোঁজেন। ডার্ক চকলেটের আছে কিছু উল্লেখযোগ্য হেলথ বেনিফিটস। বিশেষ করে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের উৎস হিসেবে ডার্ক চকলেটের জুড়ি মেলা ভার। আমাদের হার্ট, ব্রেইন ফাংশন, স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ও ত্বকের সুস্থতা- সবকিছুর উপরই পজেটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলে এই উপাদানটি।
চকলেট ভালোবাসে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, তাই না? কথা হচ্ছে, চকলেট কতটা স্বাস্থ্যকর? কোন চকলেট বেশি ভালো? মিল্ক চকলেটের সাথে ডার্ক চকলেটের কিন্তু পার্থক্য আছে! এই ডার্ক চকলেট নিয়ে হয়েছে বিস্তর গবেষণা। এতে পাওয়া গেছে দারুণ সব তথ্য। তাহলে চলুন চটজলদি জেনে নেওয়া যাক ডার্ক চকলেট খাওয়া আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিনা!
ডার্ক চকলেট নাকি মিল্ক চকলেট?
যেসব চকলেটের ৭০ শতাংশই কোকোয়া দিয়ে তৈরি, সেগুলোকে বলা হয় ডার্ক চকলেট। মূলত তৈরি করার প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে কোন চকলেটে কী পরিমাণ কোকোয়া থাকবে। ভালো মানের ডার্ক চকলেটে থাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কোকোয়া, এই কোকোয়াতে আছে প্রয়োজনীয় মিনারেলস। মিল্ক চকলেটের সাথে এখানেই কিন্তু পার্থক্য।
প্রতি ১০০ গ্রাম ৭০-৮০% কোকোয়া সমৃদ্ধ ডার্ক চকলেটে আছে দৈনন্দিন চাহিদার (হেলথলাইন এর তথ্য অনুসারে) –
- ১১ গ্রাম ফাইবার
- ৬৬% আয়রন বা লৌহ
- ৫৭% ম্যাগনেশিয়াম
- ৮৫% ম্যাঙ্গানিজ
এছাড়াও রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক ও সেলেনিয়াম। তবে প্রতিদিনের হিসেবে ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খাওয়া কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত। এটি মিনারেলস এর সাথে সাথে প্রায় ৬০০ ক্যালরির যোগান দেয় এবং এতে কিছু পরিমাণ সুগারও থাকে। সুতরাং খুব বেশি না, নির্দিষ্ট মাত্রায় ডার্ক চকলেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড
১) কোকোয়াতে পাওয়া ফ্যাট মূলত ওলিক অ্যাসিড (Oleic acid), যা কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রেখে হার্টের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই হেলদি ফ্যাটি অ্যাসিড অলিভ অয়েলেও পাওয়া যায়।
২) এতে আরও আছে স্টিয়ারিক অ্যাসিড (Stearic acid) যা আমাদের ত্বক সুন্দর ও কোমল রাখতে সহায়তা করে।
৩) এতে বিদ্যমান পালমিটিক অ্যাসিড (Palmitic acid) আমাদের শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখে। ড্যামেজড স্কিন রিপেয়ারে অর্থাৎ ত্বকের সুস্থতায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডার্ক চকলেট খাওয়া উচিত কেন?
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে এই ডার্ক চকলেট। এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আছে পলিফেনল, ফ্ল্যাভানল। এমনকি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল হিসেবে পরিচিত ব্লুবেরি, আসাই বেরির চেয়েও এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে!
হেলথ বেনিফিটস
১) ফ্ল্যাভানল আমাদের হার্টের ধমনীগুলোকে সচল রাখতে সাহায্য করে এবং ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও ফ্ল্যাভানল ব্যাড কোলেস্টেরল LDL ও ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
২) চকলেটে ফিনাইল ইথাইলামাইন নামক উপাদান আছে, যাকে বলা হয় ‘লাভ কেমিক্যাল’। সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে।
৩) পলিফেনল হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়, ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, হজম ক্ষমতা ঠিক রাখে।
৪) ডার্ক চকলেট খাওয়া শরীরের জন্য ভালো, কেননা এতে থাকা উপাদান মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। বয়স্কদের ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কমাতেও সাহায্য করে। নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেলে মনোযোগ দিয়ে কাজ করার সক্ষমতা বাড়ে, বিভিন্ন রিসার্চে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
৫) অনেকেই জানেন, এটি বিষণ্নতা দূর করতে দারুণ কাজ করে। চকলেটে থাকা ট্রিপটফেন নামের একটি উপাদান স্ট্রেস কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি মস্তিষ্কে ডোপামিন বাড়িয়ে শরীর ও মনে আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে।
ডার্ক চকলেট কি ঘুম কমায়?
ডার্ক চকলেট নিয়ে প্রচলিত সবচেয়ে কমন মিথ সম্ভবত এটি! এর কারণ হিসেবে অনেকে বলে থাকেন যে এতে ক্যাফেইন থাকে, তাই খেলে ঘুম আসে না! কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে এই ক্যাফেইনের পরিমাণ এতই কম যে ঘুম না আসার পেছনে একে কোনোভাবেই দায়ী করা যায় না।
সাধারণত প্রতি ১০০ গ্রাম কফিবিনে ১৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে যেখানে প্রতি ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেটে আছে মাত্র ৭০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন। তাই কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইনের সাথে একে তুলনা করা একেবারেই ঠিক না। উল্লেখ্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ক্যাফেইন এর হেলদি লিমিট ৪০০ মিলিগ্রাম বলে ধরে নেওয়া হয়। অল্প পরিমাণ ক্যাফেইন থাকার কারণে ডার্ক চকলেট সাময়িক ব্রেইন ফাংশন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
বেশি পরিমাণে খেলে কী হবে?
হেলদি ও ফিট থাকার জন্য ডেইলি ৫০-৬০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে। ডার্ক চকলেট উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন হওয়ায় বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। ক্যালরির চাহিদা ডার্ক চকলেটের মাধ্যমে ক্রস করে গেলে তা ওজন বাড়িয়ে স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই নিজের স্বাস্থ্য ও ডায়েটের কথা মাথায় রেখে চকলেট খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত আমাদের সবারই। বেশি পরিমাণে খেলে ডিহাইড্রেশন, ইনসমনিয়া, মাইগ্রেন, হার্টরেট বেড়ে যাওয়া এই সমস্যাগুলো হতে পারে।
চকলেটপ্রেমীরা জেনে খুশিই হচ্ছেন যে, সীমিত পরিমাণে ডার্ক চকলেট খাওয়া আপনার চকলেট ক্রেভিং মেটানোর পাশাপাশি শরীর ও মন সুস্থ রাখবে। ব্যাপারটা দারুণ না? তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মিল্ক চকলেটে থাকে দুধ ও চিনি। মিষ্টি স্বাদের বা ফ্লেবার দেওয়া কোকোয়া বাটার, চিনি ও ফ্যাটসমৃদ্ধ প্রসেসড চকলেট শরীরের জন্য উপকারী নয়। নিশ্চয়ই পার্থক্যটা ধরতে পেরেছেন। কোনো কিছুই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত না, এটা আমরা সবাই জানি। আজ এই পর্যন্তই, ভালো থাকুন।
ছবি- সাটারস্টক