ভীষণ গরমের পরে বর্ষাকাল নিয়ে আসে স্বস্তি। কিন্তু বৃষ্টি হোক বা না হোক বর্ষাকাল হলো এমন একটা সময় যে সময়ে ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে শুরু করে আরও অনেক রকমের সমস্যায় পড়তে হয়। এই সময়ে তাই একটু বেশি সাবধানতা বজায় রাখতে হবে। কিছু অভ্যাস বদলে ফেলে, কিছু নিয়ম মেনে চললেই কিন্তু বর্ষাকালটা হয়ে উঠবে আরও বেশি সুন্দর। বর্ষায় যত্নআত্তি কিভাবে নিলে জীবন হবে ঝামেলাহী, চলুন সেটাই জেনে নেয়া যাক!
বর্ষায় যত্নআত্তি নেবার উপায়
১) গোসল
বর্ষায় যত্নআত্তি নেবার সময় প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে যে, যদি বৃষ্টিতে ভিজে থাকেন, তাহলে ঘরে ফিরে আগেই নিজের মাথাটা ভালো করে মুছে ফেলতে হবে। আর তারপরে একটু গোসল করে নিতে হবে এতে ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে না। বর্ষাকালে ঈষদুষ্ণ পানিতে স্নান করা ভালো কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই গরম জল ত্বককে লাল করে করে দেয় সে ক্ষেত্রে ট্যাপ-এর জলে স্নান করা ভালো। এতে স্কিন-এর কোন ক্ষতি বা ড্যামেজ হবে না।
২) ফেসিয়াল ওয়াইপ ব্যবহার করবেন না
আজকাল আমাদের সব কিছুতেই তাড়া। তাই নিজের জন্য সময় দেওয়ার সময়টাও কমে যাচ্ছে। আজকাল মুখ পরিষ্কারের নতুন ট্রেন্ড হলো ফেসিয়াল ওয়াইপস (facial wipes), যা প্যাকেট-এর মধ্যে পাওয়া যায়। এটা ক্যারি করা সুবিধা আর জল ছাড়াই যেখানে ইচ্ছে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু বর্ষায় যত্নআত্তি নিতে এই সময় ফেসিয়াল ওয়াইপ ব্যবহার না করাই ভালো। ফেসিয়াল ওয়াইপ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে তাতে যদি মুখ ঠিকমতো পরিষ্কার না হয়, তাহলে কিন্তু ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন (bacterial infection), ত্বক ফেটে যাবার সম্ভবনা থাকে।
৩) পায়ের যত্ন
বর্ষায় যত্নআত্তি নেবার সময় পায়ের যত্নের কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। কারণ, এই সময় পায়ের সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়। বর্ষাকালে পেডিকিউর (pedicure) করতে হবে নিয়ম করে। ভালো হয় যদি আপনি পেডিকিউর বাড়িতেই করতে পারেন। তবে পেডিকিউর করার সময় খেয়ালে রাখতে হবে পেডিকিউর করার সমস্ত জিনিস যেন স্টেরিলাইজ করা থাকে। স্টেরিলাইজ (sterilize) করার জন্য সমস্ত উপকরণকে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিতে পারেন। যদি আপনি পার্লার-এ পেডিকিউর করান তাহলে খেয়াল রাখতে হবে সেখানে সব জিনিসগুলো স্টেরিলাইজড করা কিনা। এই সময় স্বাস্থ্যের দিকটা খেয়াল রাখতেই হবে। চেষ্টা করবেন পায়ের কিউটিকল (cuticle)-টা না উঠাতে।
৪) জুতা নির্বাচন
বর্ষাকালে সঠিক জুতা নির্বাচন করাটা খুবই জরুরি। বর্ষাকালে অনেকেই পা ঢাকা জুতো পরেন কিন্তু সেটা সঠিক নয়। কারণ ,বর্ষাকালে রাস্তায় ময়লা, জল কাঁদা এবং আর্দ্রতার ফলে পা ভিজে ও চটচটে হয়ে যায় আর সেই ভেজা জুতা পায়ে নিয়ে সারাদিন অফিসে বা কলেজে থাকলে পায়ের গোড়ালি ফেটে যায় ও দুর্গন্ধও বের হতে থাকে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বাড়িতে ফিরে পা খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এই সময়ে পা খোলা ওয়াটারপ্রুফ জুতা (waterproof shoe) পরতে হবে তাহলে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এখন কম-বেশি সব দামেই দারুন উজ্জ্বল রঙের ওয়াটারপ্রুফ জুতা পাওয়া যায় যা পরলে দেখতেও ভালো লাগবে আর এই সমস্যাগুলোও হবে না।
৫) পোশাক
এবার আসি পোশাকের কথায়। বর্ষাকাল মানেই সর্দি, কাশি, জ্বর আর ইনফেকশন (infection)। এই সময়ে টাইট পোশাক পরবেন না, কারণ টাইট পোশাক ত্বকের খুব কাছাকাছি থাকে। আর তাই যত টাইট ড্রেস পরিধান করবেন, বর্ষার নোংরা জল, ধূলা, জামাতে লেগে ইনফেকশন-এর চান্স আরও বাড়িয়ে দেবে। এই সময়ে তাই ঢিলে সিল্ক (silk) বা সিনথেটিক (synthetic)-এর পোশাক পরা দরকার। কারণ, এগুলো খুব সহজে শুকিয়ে যায়।
৬) মেকআপ
বর্ষার সময়ে বাতাস খুব আর্দ্র হয়। তাই মেকআপ (make up) কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভবনা থাকে। তাই ভালো ব্র্যান্ড-এর মেকআপ ব্যবহার করুন।
৭) ত্বকের যত্ন
এই সময়ে রোদ অনেক কম থাকে আর আকাশের মুখ থাকে ভার। তাই অনেকেই সানস্ক্রিন (sunscreen) লাগান না। রোদ উঠলেই যে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে, তা কিন্তু একদম ভুল ধারণা। রোদ না থাকলেও সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। সূর্যের ইউভি (UV) রশ্মির থেকে বাঁচতে। তাই আকাশ যতই মেঘলা থাকুক না কেন, বাহিরে বের হবার আগে মনে করে সানস্ক্রিন লাগাতেই হবে। এছাড়াও সানট্যান দূর করতে বাড়িতে ফিরে মুখ ধোবার সময়, একটা পাতিলেবুর রসের সাথে জল মিশিয়ে সেটা দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন এতে সারাদিনের ট্যান চলে যাবে আর মুখের চটচটে ভাবও দূর হবে।
সবশেষে বলি স্বাস্থ্যের দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। বাইরের খাবার ও পানি যতটা পারবেন কম খাবেন। এই সময়টা পেট খারাপ, ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। তাই হাত পরিষ্কার রাখবেন। সবসময় সাথে ছাতা রাখতে হবে। আর এভাবেই সুস্থ ও সুন্দরভাবে বর্ষাকে উপভোগ করুন।
ছবি – সংগৃহীত: সাজগোজ; ইমেজেসবাজার.কম