‘বডি লোশন শুধু শীতকালেই ব্যবহার করতে হয়। বছরের অন্যান্য সময় স্কিন এমনিতেই নারিশড থাকে। তাই আলাদা করে লোশনের দরকার নেই।’ আপনিও কি এই কথাগুলোর সাথে একমত? যদি তাই হয় তবে বলুন তো, আপনার স্কিন কি শুধু শীত এলেই ড্রাই হয়? বছরের অন্যান্য সময় স্কিনে ড্রাইনেস ফিল হয় না? সত্যি বলতে, শীত এলে আমরা যেভাবে ত্বকের যত্ন নেই, বছরের অন্যান্য সময় স্কিন ময়েশ্চারাইজড রাখার কথা মোটেও সেভাবে ভাবি না। আমাদের দেশের আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এক সময় হয়তো শরীর ঘামছে, আবার পরক্ষণেই স্কিন ড্রাই হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যাটি বেশি হয় যারা অফিসে এসিতে বসে কাজ করেন। আর এই ড্রাইনেসের কারণে স্কিন রাফ হয়ে যায়, দেখা দেয় ইচিনেস ও ডার্ক প্যাচের মতো সমস্যা। এই সমস্যাগুলো কমানোর জন্য এমন একটি বডি লোশন ইউজ করতে হবে যেটি বছরের পুরোটা সময় স্কিনকে রাখবে নারিশড, ময়েশ্চারাইজড এবং স্কিনকে করে তুলবে ব্রাইট। চলুন চটজলদি আপনাদের এমনই একটি বডি লোশনের রিভিউ জানিয়ে দেই আজকে।
Rajkonna Brightening Body Lotion Super Radiant
আমি বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের লোশন ইউজ করেছি। সেগুলো ব্যবহারে আমার স্কিন আরও বেশি গ্রিজি লেগেছে। রাজকন্যা ব্র্যান্ডের বেশ কিছু প্রোডাক্ট ব্যবহারে নতুন করে ভরসার একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। এই ভরসা থেকেই তাদের Rajkonna Brightening Body Lotion Super Radiant টি ইউজ করে ফেললাম। কেমন লাগলো, কী কী বেনিফিট পেয়েছি এসব নিয়েই জানাবো আজকে। আপনাদের জানিয়ে রাখি, জনপ্রিয় এই ব্র্যান্ডটি Rajkonna Brightening Body Lotion Super Moisture নামে আরও একটি বডি লোশন বাজারে নিয়ে এসেছে। স্কিন টাইপ ও কনসার্ন বুঝে যে কোনোটি আপনি বেছে নিতে পারেন।
কী কী উপাদান আছে এই লোশনে?
যে কোনো প্রোডাক্ট কেনার আগে সবার আগে সেটিতে থাকা ইনগ্রেডিয়েন্ট সম্পর্কে জানা জরুরি। ফেইসের মতো হাত পায়ের স্কিন ব্রাইট করে তুলতে এতে কী কী উপাদান আছে চলুন জেনে নেই-
আলফা আরবুটিন
আলফা আরবুটিন একটি সেইফ ব্রাইটেনিং ইনগ্রেডিয়েন্ট। আরবুটিন প্রাকৃতিকভাবে Bearberry, Cranberry ও Mulberry প্ল্যান্ট থেকে পাওয়া যায়। এই প্ল্যান্ট এক্সট্র্যাক্টটি মেলানিন প্রোডিউস হতে বাঁধা দেয়। সান ড্যামেজ ও ব্রেকআউট থেকে যে সান স্পটস, পিগমেন্টেশন ও স্কারস হয়, সেগুলোকে লাইট করে স্কিন ব্রাইট করে তুলতে এই ইনগ্রেডিয়েন্টটি খুবই হেল্পফুল। অ্যান্টি এজিং এর বিভিন্ন প্রোডাক্টসে এটি বেশ কমন একটি ইনগ্রেডিয়েন্ট।
রাইস ওয়াটার
স্কিন কেয়ার রুটিনে ইউজ করা প্রোডাক্টগুলোর অনেকগুলোতেই রাইস ওয়াটার কমন একটি ইনগ্রেডিয়েন্ট। এতে আছে কোজিক অ্যাসিড, ফেরুলিক অ্যাসিড, ভিটামিন ই ও অ্যালানটয়েন (Allantoin)। এই উপাদানগুলোরও আছে আলাদা আলাদা কাজ। যেমন-আমাদের স্কিনে মেলানিন প্রোডাকশন বাড়াতে হেল্প করে Tyrosine নামক এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড। এই অ্যাসিডের প্রোডাকশন কমিয়ে স্কিন ব্রাইট করে তুলতে হেল্প করে কোজিক অ্যাসিড। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে স্কিনকে বাঁচিয়ে অ্যান্টি এজিং এ হেল্প করে ফেরুলিক অ্যাসিড। ইউভি রে’র ড্যামেজ থেকে স্কিনকে সুরক্ষা দেয় ভিটামিন ই। অ্যালানটয়েন এর উপস্থিতির কারণে স্কিনে সুদিং ফিল হয় এবং স্কিন সফট লাগে।
এক নজরে রাইস ওয়াটারের বেনিফিটস –
- স্কিন রেডিয়েন্ট করে তোলে
- স্কিনের ন্যাচারাল ব্যারিয়ার ইমপ্রুভ ও রিপেয়ার করে
- রেডনেস, ইনফ্ল্যামেশন, ইচিং এর মতো সমস্যাগুলো কমিয়ে সুদিং ফিল দেয়
- স্কিনের ইলাস্টিসিটি বাড়িয়ে এজিং প্রসেস ডিলে করে
ভিটামিন ই
স্কিন কেয়ারে ভিটামিন ই এর অনেক বেনিফিটস আছে। আমাদের অনেকেরই বয়সের আগে স্কিনে এজিং সাইনস চলে আসে। এই সাইনগুলোর ভিজিবিলিটি কমাতে হেল্প করে ভিটামিন ই। যার কারণে স্কিন ইয়াংগার লুকিং লাগে। আমাদের স্কিনের ডিপ লেয়ারে গিয়ে স্কিনকে ডিপলি ময়েশ্চারাইজড রাখতেও এটি বেশি হেল্পফুল। এর ব্যবহারে স্কিনে আসে ন্যাচারাল গ্লো। ভিটামিন ই মূলত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে বডি সেলকে সান ড্যামেজ থেকে প্রোটেক্ট করে।
বডি লোশনটি কি ফেইসে অ্যাপ্লাই করতে পারবো?
আমাদের ফেসিয়াল ও বডি স্কিন কিছুটা আলাদা। তাই ফেইসে যে ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করা হয়, সেটা কিন্তু বডিতে ইউজ করা হয় না। ঠিক একইভাবে বডির জন্য যে লোশন তৈরি করা হয়, সেটা ফেইসে রেগুলার অ্যাপ্লাই করা ঠিক নয়।
সত্যিই কি এটি স্কিন ব্রাইট করবে?
হ্যাঁ। এই লোশনে থাকা তিনটি ইনগ্রেডিয়েন্টের কম্বিনেশন স্কিন টোন ব্রাইট করে তুলতে হেল্প করে। লোশনটি রেগুলার ইউজ করলে স্কিনে ধীরে ধীরে চেঞ্জ ভিজিবল হবে। স্কিন ব্রাইট ও ময়েশ্চারাইজড রাখার জন্য প্রতিদিন লোশনটি ব্যবহার করুন।
প্যাকেজিং ও টেক্সচার
রাজকন্যার এই বডি লোশনটি পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ মি.লি. এর বোতলে। কালো রঙের বোতলটি দেখতে বেশ আই ক্যাচি। বোতলটি পাম্প সিস্টেমের। শুরুতে আমার কাছে এই সিস্টেমটা একটু হ্যাসেল মনে হয়েছিল, কিন্তু ইউজ করার পর মনে হয়েছে এটাই ভালো। পাম্প সিস্টেম বলে লোশন লিক হওয়ার সম্ভাবনা কম। ক্রিমি টেক্সচারের এই লোশনের ফ্রেগ্রেন্সটা মাইল্ড। আমার স্কিনে ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হতে ১০-১৫ সেকেন্ড সময় নেয়। আপনার স্কিনে এর চেয়েও কম সময় লাগতে পারে।
ব্যবহারের নিয়ম
- হাতের তালুতে পরিমাণমতো লোশন নিয়ে শরীরে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন
- শরীরের যে স্থানগুলো বেশি ড্রাই মনে হয়, সেখানে রি অ্যাপ্লাই করতে পারেন
- সব ধরনের স্কিনে ব্যবহার করা যাবে
- নারী ও পুরুষ সবাই ব্যবহার করতে পারবে
খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়ে
- সূর্যালোক থেকে দূরে শুষ্ক ও ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করুন
- হাত পায়ে ব্যবহারের সময় চোখ ও মুখের সংস্পর্শে এলে তাৎক্ষণিকভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
- কোনো ধরনের ইরিটেশন হলে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
- প্রেগনেন্ট নারীরা ব্যবহার করতে পারবেন, তবে কোনো সন্দেহ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন
বডি লোশনটি আমার কেমন লেগেছে?
সত্যি বলতে আমারও শুধু শীতকাল এলেই হাত পায়ের ত্বকের যত্ন নেয়ার কথা মনে হয়! সারা বছর যে ত্বকের অযত্ন করি সেটা যেন বেমালুম ভুলে যাই। কিছুদিন আগে বাসায় ফিরে শাওয়ার নেয়া শেষে খেয়াল করলাম হাতের ত্বক অন্য সময়ের তুলনায় একটু যেন বেশি রুক্ষ লাগছে। সেই সাথে ফেইসের আর হাতের স্কিনের পার্থক্যটাও চোখে পড়লো। বুঝলাম, এখন আর শুধু একটি সিজনের অপেক্ষা করলেই হবে না। সফট ও রেডিয়েন্ট স্কিন পেতে হলে সারা বছরই যত্ন নিতে হবে।
সাজগোজের অ্যাপ ভিজিট করে নতুন এই প্রোডাক্টটির খোঁজ পেলাম। সাথে সাথে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ঘরে বসেই হাতে পেয়ে গেলাম লোশনটি। ব্যবহারের পর থেকে পরিবর্তনটা বেশ ভালোভাবেই চোখে পড়ছে। স্কিন আগের চেয়ে অনেকটাই সফট ও ব্রাইট হয়েছে। তাই লোশনটিকে এখন স্কিন কেয়ার রুটিনে অ্যাড করে নিয়েছি। অনেকেই ভাবেন লোশন ব্যবহারে স্কিন শুধু ময়েশ্চারাইজড থাকে, ব্রাইট হয় না। রাজকন্যার এই লোশনটি ব্যবহারে সেই ধারণা কিছুটা হলেও বদলাবে।
এই তো ছিল রাজকন্যা ব্রাইটেনিং বডি লোশনের রিভিউ। আপনি যদি স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের জন্য অথেনটিক প্রোডাক্ট খুঁজে থাকেন, তাহলে সাজগোজ থেকে কিনতে পারেন। সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ