শাওয়ার নেয়ার পর প্রথমেই কোন কাজটি করার চিন্তা মাথায় আসে বলুন তো? শাওয়ার শেষেই একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করতে হবে! তাই না? স্কিন টাইপ যেমন-ই হোক না কেন, শাওয়ার নেয়ার পর আমাদের সবার স্কিনেই এক ধরনের শুষ্ক বা টান টান অনুভব হয়। এর কারণ কী? মূলত লম্বা সময় ধরে শাওয়ার নেয়ার ফলে আমাদের স্কিনের হাইড্রেশন লেভেল কমে আসে। এছাড়াও, আমরা যে সকল প্রোডাক্ট স্কিন ক্লেনজিং-এর জন্য ব্যবহার করি তাতে থাকা হার্শ কেমিক্যালও স্কিন খসখসে বা ড্রাই করে দেয়। স্কিন প্রোপারলি ক্লিন এবং ময়েশ্চারাইজড রাখার উপায় কী তাহলে?
কেমন হয় যদি এমন একটি শাওয়ার জেল পাওয়া যায় যা, স্কিন প্রোপারলি ক্লিন করার পাশাপাশি স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখতেও হেল্প করবে? খুবই ভালো হয়! তাই না? বিশেষ করে যাদের স্কিন এমনিতেই ড্রাই, তাদের জন্য তো কথাই নেই। তাই আজকে আমি শেয়ার করবো, স্কিন প্রোপারলি ক্লিন এবং ময়েশ্চারাইজড রাখতে বাজেট ফ্রেন্ডলি শাওয়ার জেল নিয়ে। যেটি আমার স্কিন কেয়ার রুটিনের রিসেন্ট খুবই পছন্দের একটি প্রোডাক্ট। চলুন তা হলে দেরি না করে শাওয়ার জেলটি নিয়ে জেনে নেওয়া যাক।
শাওয়ার জেলের কাজ কী?
আমাদের মাঝে অনেকের কাছেই “শাওয়ার জেল” শব্দটি একদম-ই নতুন! তাই, স্কিন কেয়ারে বাজেট ফ্রেন্ডলি শাওয়ার জেল নিয়ে জানার আগে শাওয়ার জেলের কাজ কী তা নিয়ে জেনে নেই চলুন।
স্কিন কেয়ার রুটিনে বেশিরভাগ সময়-ই আমরা কনসার্ন থাকি আমাদের ফেইস নিয়ে। অথচ, আমাদের শরীরের প্রত্যেকটা অংশের যত্ন নেওয়াই কিন্তু সমানভাবে জরুরি। আর শরীরের প্রত্যেকটা অংশের যত্ন নিতে স্কিন কেয়ার রুটিনে একটি শাওয়ার জেল-এর তুলনা হয় না। কারণ এটি-
১) বডিকে ক্লিন করার পাশাপাশি প্রোপারলি এক্সফোলিয়েট করতে হেল্প করে।
২) এতে থাকে ত্বকের যত্নে প্রয়োজনীয় বেশ কিছু ইনগ্রেডিয়েন্টস।
৩) স্বাস্থ্যসম্মত এবং সহজেই হাইজিন মেইনটেইন করা যায়।
৪) স্কিনকে সুদিং এবং রিফ্রেশিং ফিল দিতে এর তুলনা হয় না।
৫) বাবল বাথ প্রোডাক্ট এর পরিবর্তে ব্যবহার করা যাবে।
৬) এছাড়াও এটি ব্যবহার করা যায় প্রতিদিন।
এমন আরও অনেক বেনিফিটস রয়েছে শাওয়ার জেলের। আর এ কারণেই, আমাদের মধ্যে অনেকেই স্কিন প্রোপারলি ক্লিন এবং ময়েশ্চারাইজড রাখতে সাবান এর পরিবর্তে শাওয়ার জেল ব্যবহার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকে।
“বাজেট ফ্রেন্ডলি এবং মানেও ভালো” এমন শাওয়ার জেল কোনটি?
শাওয়ার জেলের গুনাগুণ কিন্তু অনেক। কিন্তু শাওয়ার জেল সিলেক্ট করার কথা ভাবতেই আমার মাথায় যে বিষয়গুলো এসেছিলো তা হলো,
- কোন ব্র্যান্ডের শাওয়ার জেলটি ভালো হবে?
- বেশিরভাগ শাওয়ার জেল-এরই তো দাম অনেক! সাধ্যের মধ্যে রেগুলার ইউজের জন্য কোনটি সিলেক্ট করবো?
- আমার স্কিনের সমস্যা কে টার্গেট করে কাজ করবে তো?
- আমার স্কিন-এ স্যুট করবে তো?
- কোয়ালিটি ভালো হবে তো?
- স্কিনকে অতিরিক্ত ড্রাই করবে না তো?
প্রশ্নগুলো একটু চেনা চেনা লাগছে, তাই না? শুধু আমার ক্ষেত্রে এমন হয় তা কিন্তু নয়। নতুন কোন প্রোডাক্ট কিনতে গেলে কম বেশি আমাদের সবার মাথায়-ই কিন্তু এ প্রশ্নগুলো খেলে যায় স্বাভাবিকভাবেই। এ সব কিছু মাথায় রেখেই সল্যুশন হিসেবে কিছুদিন আগে আমি সিলেক্ট করি, “রাজকন্যা ময়েশ্চারাইজিং শাওয়ার জেল”-টি! এটি একই সাথে বাজেট ফ্রেন্ডলি এবং মানেও ভালো। এমন কেন বলছি? প্রোডাক্টটি নিয়ে জানার আগে চলুন “রাজকন্যা” ব্র্যান্ড বেছে নেয়ার কারণ ছোট্ট করে জেনে নেই।
“রাজকন্যা ব্র্যান্ড” নিয়ে কিছু কথা!
স্কিন কেয়ারে বরাবর-ই আমার কাছে হার্মফুল কেমিক্যাল ফ্রি প্রোডাক্ট-এর প্রাধান্য আগে। আর, রাজকন্যা বাংলাদেশী একটি জনপ্রিয় অরগানিক ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি। এই ব্র্যান্ডের প্রতিটি প্রোডাক্টেই রয়েছে লোকাল হার্ব যুক্ত উপাদানের অসাধারণ ব্লেন্ডিং। স্কিন ও হেয়ারের স্পেসিফিক প্রবলেমের সল্যুশনে এই ব্র্যান্ডের প্রতিটি প্রোডাক্ট দারুণ কাজ করে। আর যে কারণে রাজকন্যা ব্র্যান্ডটি আমার কাছে বেস্ট মনে হয় তা হলো, এই ব্র্যান্ডের প্রতিটি প্রোডাক্ট-ই ক্ষতিকর উপাদান যেমন প্যারাবেন, অ্যালকোহল বা কোনো নন-হালাল উপাদান ফ্রি। আর দেশীয় ব্র্যান্ড হওয়াতে দামটাও থাকে সাধ্যের মধ্যে। তাই রেগুলার ইউজের জন্য এটি আমার কাছে বেস্ট অপশন!
রাজকন্যা ময়েশ্চারাইজিং শাওয়ার জেল রিভিউ
প্রথমেই শেয়ার করবো, “আমি কেন এই শাওয়ার জেলটি সিলেক্ট করেছি?” মূলত প্রথম কারণ-ই হচ্ছে, “রাজকন্যা ব্র্যান্ড”। ব্র্যান্ড নিয়ে অনেক কথাই শেয়ার করেছি আগে। পাশাপাশি এই ব্র্যান্ড-এর বেশ কিছু প্রোডাক্টও আমি ব্যবহার করেছি। ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই স্যাটিসফাইড। কারণ-
- এই ব্র্যান্ড এর প্রতিটি প্রোডাক্ট-ই বাজেট ফ্রেন্ডলি
- রেগুলার ইউজের জন্য পারফেক্ট
- প্রাইস অনুযায়ী পরিমাণে যথেষ্ট থাকে
- এর রিভিউ খুবই ভালো
- যেকোনো ধরনের স্কিনে স্যুট করে সহজেই
এছাড়াও অন্য আরেকটি বড় কারণ হল, আমি গত ২ থেকে ৩ মাস ধরে রাজকন্যার আরেকটি শাওয়ার জেল “রাজকন্যা হোয়াইট গ্লো শাওয়ার জেল” প্রোডাক্টটি ব্যবহার করেছি। এই শাওয়ার জেলটি আমার এত বেশি ভালো লেগেছিলো যে, ব্যবহারের এক সপ্তাহের মাথায়-ই আমি আমার পরিবারে বাকি সবার জন্য একটি করে অর্ডার করি। তাই রাজকন্যার নতুন শাওয়ার জেলটি আসার সাথে সাথে অর্ডার করতে আমি একটুও দেরি করিনি এবারও।
কী কী ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করা হয়েছে এতে?
ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক গুণাগুণে ভরপুর রাজকন্যা ময়েশ্চারাইজিং শাওয়ার জেল-এ একই সাথে রয়েছে রোজ এক্সট্র্যাক্ট বা গোলাপ ফুলের নির্যাস আর আরগান অয়েল এর মত উপাদান। চলুন অল্প করে জেনে নেয়া যাক এই উপাদানগুলো স্কিনে কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে।
স্কিনের যত্নে রোজ এক্সট্র্যাক্ট এর কাজ
- গোলাপের নির্যাসে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ত্বকে এক ধরনের সুদিং অনুভূতি দেয়
- এতে রয়েছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি আমাদের স্কিনের কোলাজেন বুস্টিং-এ হেল্প করে
- পাশাপাশি রোজ এক্সট্র্যাক্টে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখতে অতুলনীয়
- এছাড়াও এটি স্কিনকে ক্লিন এবং ব্লেমিশ ফ্রি রাখতে হেল্প করে।
স্কিন প্রোপারলি ক্লিন এবং ময়েশ্চারাইজড রাখতে আরগান অয়েল এর কাজ
- আরগান অয়েল ত্বকের যত্নে একটি মাল্টি-পারপাস উপাদান। এটিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ত্বকের হাইড্রেশন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- আরগান অয়েল প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ, যা স্কিনের খসখসে ভাব দূর করে স্কিনকে সফট করে।
রাজকন্যা ময়েশ্চারাইজিং শাওয়ার জেল কেন অন্য শাওয়ার জেল থেকে আলাদা?
১) এটির লাইট টেক্সচার এবং সুদিং স্মেল
ক্রিম বেইজড ফর্মুলার চেয়ে প্রতিদিনের শাওয়ারে আমার লাইট বেইজড কিছু পছন্দ। এই শাওয়ার জেলটির টেক্সচার এবং সুদিং স্মেল আপনাকে মুগ্ধ করবেই। পাশাপাশি যারা খুব বেশি কড়া স্মেল নিতে পারেন না, তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে সেরা চয়েজ।
২) খুব অল্প পরিমাণে নিয়েও স্কিনকে করবে ভেতর থেকে পরিষ্কার
সাধারণত ৩ থেকে ৪ পাম্প পরিমাণে রাজকন্যা শাওয়ার জেল নিয়ে ব্যবহার করলেই তা আমার জন্য একবারের শাওয়ারে যথেষ্ট। এটি একদমই স্টিকি ফিল দেয় না। উল্টো ব্যবহারের পর আমার কাছে দারুণ রিফ্রেশিং একটা ফিল আসে। এটি খুব সহজেই আমার স্কিনের জমে থাকা ডার্ট বা ময়লা দুর করে ফেলে।
৩) ত্বকের রুক্ষভাব দুর করার পাশাপাশি স্কিনকে রাখবে ময়েশ্চারাইজড
শাওয়ার জেল ব্যবহারের পর পর-ই প্রথম যেই সমস্যাটি কম বেশি আমরা অনেকেই ফিল করি তা হলো, স্কিনে অতিরিক্ত খসখসে বা রুক্ষভাব। কিন্তু রাজকন্যা শাওয়ার জেলে থাকা রোজ এক্সট্র্যাক্টে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, যা স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখতে অতুলনীয়।
৪) বাজেট ফ্রেন্ডলি এবং মানেও ভালো
বাজারে অন্যান্য শাওয়ার জেলগুলোর প্রাইস সাধারণত অতিরিক্ত বেশি হয়ে থাকে। আবার পরিমাণেও খুব বেশি থাকে না। রাজকন্যা শাওয়ার জেলটি বাজেট ফ্রেন্ডলি এবং মানেও ভালো।
৫) এটি হার্মফুল কেমিক্যাল ফ্রি এবং সব ধরনের স্কিনের জন্য উপযোগী
এই শাওয়ার জেলটি সিলেক্ট করার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, রাজকন্যা ব্র্যান্ড ক্লেইম করে তাদের প্রোডাক্টগুলো হার্মফুল কেমিক্যাল ফ্রি এবং যেকোনো স্কিনের সাথেই মানিয়ে যাবে সহজেই।
কাদের জন্য ব্যবহার উপযোগী?
রাজকন্যা ময়েশ্চারাইজিং শাওয়ার জেলটি ব্যবহার করতে পারবে সব ধরনের স্কিন টাইপের অধিকারীরাই। পাশাপাশি পরিবারের ছোট থেকে বড় অথবা ছেলে কিংবা মেয়ে, যে কেউ এটি ব্যবহার করতে পারবে নিশ্চিন্তে। আরও সহজ করে বলতে গেলে, যাদের বয়স ৮ বা তার অধিক এমন যে কেউ এটি ব্যবহার করতে পারবে।
এটি কীভাবে ব্যবহার করতে হয়?
আমরা যেভাবে সাবান বা সোপ বার ইউজ করি তেমনি শাওয়ার জেল ব্যবহারের নিয়মও খুবই সিম্পল। লুফাহ তে ২ থেকে ৩ বার জেল পাম্প করে নিন। এবার হাত দিয়ে ফেনা তৈরি করে নিন। এরপর ভেজা শরীরে আলতো ভাবে রাব করে নিন। শেষে, ভালোভাবে পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে ফেলুন। ব্যস! প্রতিবার শাওয়ারে পেয়ে যাবেন ক্লিন এবং ময়েশ্চারাইজড ত্বক।
টেক্সচার কেমন?
রাজকন্যা ময়েশ্চারাইজিং শাওয়ার জেল-এর টেক্সচার অনেকটাই লাইট ওয়েট ফর্মুলায় তৈরি। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এটি একটি জেল বেইজড শাওয়ার জেল। হাতে নেয়ার পর কালারটা আমার কাছে অনেকটাই ল্যাভেন্ডার কালার লেগেছে।
প্যাকেজিং এবং পরিমাণে কতটুকু থাকবে?
আমার কাছে বরাবরই সিম্পল সুদিং প্যাকেজিং খুবই পছন্দ। রাজকন্যা ময়েশ্চারাইজিং শাওয়ার জেল-এর প্যাকেজিং এক কথায় আমার খুবই ভালো লেগেছে। ৩৩০ মিলি এর একদম সিম্পল সাদা কালার বোতলে লাল, গোলাপি আর ল্যাভেন্ডার কালারের ফ্লোরাল প্রিন্টের খুব সুন্দর করে কাজ করা। আমি নিশ্চিত শুধু আমার নয়, বাকি সবার কাছেই এটি ভালো লাগবে।
দাম কেমন?
৩৩০ মিলি বোতলে এই শাওয়ার জেলটি পেয়ে যাবেন রিজেনেবল প্রাইসে, দাম একদমই হাতের নাগালে। রাজকন্যার বিশেষত্বগুলোর মধ্যে এটি একটি, যেখানে আপনি গুণগত মানের পণ্য পেয়ে যাবেন একদম সাধ্যের মাঝেই।
“স্কিন প্রোপারলি ক্লিন এবং ময়েশ্চারাইজড রাখতে বাজেট ফ্রেন্ডলি শাওয়ার জেল!” কি? এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কেন শুরুতেই এমনটি বলা হয়েছিল? রাজকন্যার এই ময়েশ্চারাইজার শাওয়ার জেলটি স্কিন প্রোপারলি ক্লিন করতে যেমন দারুণ কাজ করে, তেমনি স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখার পাশাপাশি দেয় সুদিং ইফেক্ট। আমি নিশ্চিত বলতে পারি, শাওয়ারে যাদের প্রতিদিনের ব্যবহারে শাওয়ার জেল বা বডি ওয়াশ পছন্দ তাদের জন্য এটি একটি মাস্ট হ্যাভ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। এছাড়াও “দামে কম মানে ভালো” প্রোডাক্ট যারা খুঁজছেন তাদের জন্য রাজকন্যা ব্র্যান্ড-এর প্রতিটি প্রোডাক্ট-ই হতে পারে রাইট চয়েজ।
অথেনটিক প্রোডাক্টস কিনতে আপনারা চাইলে সাজগোজের সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর ( জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি- সাজগোজ