প্রায় সবারই মোটামুটি বাইরে ২-৩ বার ইফতার করা হয়ে থাকে আমাদের, তাই না? আর সেই সাথে ভুঁড়িভোজের ব্যাপারটা তো আছেই! অতিরিক্ত আবোল-তাবোল খাওয়ায় কিন্তু অনেকেরই বুক-গলা জ্বলে, পেট কামড়ায় ও গ্যাসের প্রবলেম হয়। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার পরিমিত ও সঠিক নিয়মে খাওয়াটা খুব জরুরী। আজ রামাদান হেলথ কেয়ার ২ পর্বে আরও কিছু টিপস জানবো।
রামাদান হেলথ কেয়ার ২ পর্বের টিপসসমূহ
১) সিঁড়ি ব্যবহার করুন
এলিভেটর বা লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করুন অথবা বহুতল ভবনে লিফটে একটু আগেই নেমে যান এবং কয়েকটা ফ্লোর সিঁড়ি বেয়ে উঠুন। অফিসে হাঁটাহাঁটি করুন। সিঁড়ি বেয়ে উঠলে এলিভেটরে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালোরি বার্ন হয় (৪.৮ কিলোক্যালোরি/মিনিট ভার্সাস ২.৩ কিলোক্যালোরি/মিনিট)।
২) হাঁটুন
রমজানে সেহেরী ও ইফতার খেয়ে নামায শেষে এবং নরমাল সময়ে দুপুরের খাবারের পর ১৫-৩০ মিনিট হাঁটুন। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, খাওয়াদাওয়ার পরপর ১৫-৩০ মিনিট হাঁটলে ব্লাড সুগার লেভেল অনেকটাই ভালো হয়। এমনকি ধীরে ধীরে হাঁটলেও আনুমানিক ২.৮ কিলোক্যালোরি/মিনিট বার্ন হয়।
৩) অতিরিক্ত বসে থাকা যাবে না
সারাদিন, বা একটানা ৫-৬ ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকলে সেটা অস্বাস্থ্যকর তো বটেই, আপনার জন্য সারাজীবনের ঝুঁকিও। অতিরিক্ত বসে থাকা দেহের মেটাবলিজম স্লো করে দেয়, দাঁড়িয়ে থাকার তুলনায় অন্ততপক্ষে ৫০ ক্যালোরি কম বার্ন হয়, ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না, এবং দেহের পেশি আর হাড় ও দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায়।
৪) স্ট্রেচিং করুন
মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। ডেস্কে ঝুঁকে বসবেন না। কিছু সহজ ধাপে স্ট্রেচিং করতে পারেন। গলা স্ট্রেচ করতে উপরে, নিচে, ডানে, বামে ঘাড় ঘোরান। হাতের কবজি, হাত, বাহু, পা কিছু সময় পরপরই স্ট্রেচ করতে পারেন।
৫) কিছু সময় সূর্যালোকে থাকুন
প্রতিদিন সূর্যালোকে ২০ মিনিট থাকলে দেহে নাইট্রিক এসিডের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৬) সবুজ শাকসবজি খান
যারা প্রতিদিন সবুজ শাকসবজি খান, তাদের হার্টবিট অন্যদের তুলনায় ১২% বেশি অ্যাকটিভ থাকে। গবেষণায় এমনটা জানা গিয়েছে বলে বর্তমানে অনেকেই নিরামিষাশী হবার দিকে ঝুঁকছেন।
৭) হাসি-খুশি থাকুন
সবসময় পজিটিভ থাকা এবং হাসিখুশি থাকা আপনার ব্যক্তিত্বকেই শুধু আকর্ষণীয় করে তুলবে না, সেইসাথে আপনার স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটাবে। আপনার স্ট্রেস কমাবে এবং আপনার হার্ট ভালো থাকবে।
৮) মিষ্টিজাতীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন
সন্ধ্যার পর মিষ্টি, চিনি, মিষ্টিজাতীয় খাবার, অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন– চিপস, বিস্কিট ইত্যাদি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। বরং একমুঠ বাদাম, ছোলা বা ফল খেতে পারেন।
৯) রঙিন সবজি খান
রঙিন সবজি খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলুন। কমলা এবং সবুজ রঙের সবজি রক্তচাপ নিরন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হার্ট-এর কন্ডিশন ভালো রাখে।
১০) সাইক্লিং করুন
ঘরে কিংবা বাইরে সাইক্লিং করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন যাতায়াতের জন্য যদি সাইকেল ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে আরো ভালো। বাসাতেও চালাতে পারেন। প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট সাইকেল চালানো আপনার হার্টের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে।
ওমেগা ৩ (পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড) এবং অরিয্যানল সমৃদ্ধ কুকিং অয়েল খান। এটি আপনার শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করবে। স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখাটাও আজকাল আমাদের হয়ে ওঠে না ব্যস্ততার কারণে! তবুও রাখতে হবে। দিনের কিছুটা সময় অন্তত ব্যয় করতেই হবে এর পেছনে। নাহলে সুস্থ জীবনযাপনটাও কিন্তু অনিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সুস্থ থাকুন- এটাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কথা।
এরপর আবার নিয়ে আসব রামাদান হেলথ কেয়ার টিপস। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
ছবি- সংগৃহীত: britishcouncil