পবিত্র রমজান মাসে আমাদের খাদ্যাভ্যাস হুট করেই বদলে যায়। রোজা রাখার জন্য আমাদের সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়। এতে অনেকেই মনে করে থাকেন এতেই ওজন কমে যাবে। ক’দিন যেতেই চোখ কপালে উঠে যায় ওয়েট মেশিনে দাড়ালে। ভাবেন এমন অকারণে ওজন বাড়ছে? সারাদিন না খেয়েও? তার মানে রমজানে আপনার পরিকল্পিত ডায়েট হচ্ছে না।
জ্বী,আপনার অকারণের কারণটি হল- আপনার ভোজন বিলাসিতা। সারাদিন না খেয়ে থাকছেন ঠিকই, কিন্তু ইফতারিতে নানান স্বাদের কত পদের আয়োজন থাকে তার সবটাই যে খেতে চান। যার বেশিরভাগ খাবারই থাকে ওজন বৃদ্ধিকারক তেলে ভাজা– বেগুনী, পিয়াজু , আলুর চপ, ডিম চপসহ আরো অনেক কিছু। আর দিন শেষে তৃষ্ণা মেটাতে মিষ্টি শরবত না খেলেতো পিপাসাই মেটে না। স্বাভাবিকভাবেই সারাদিনের রোজায় যেটুকু ক্যালরি বার্ন হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি আমরা প্রতিদিন ইফতারে খেয়ে থাকি। ফলাফলে, ওজন কমার জাগায় হু হু করে বেড়ে চলে। আবার অনেকেই ইফতারিতে বেশি খেয়ে থাকেন বলে রাতে এবং সেহরিতে কিছুই খেতে চান না। সেহরিতে হয়তো একটি খেজুর খান কেবল। এই অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য আরো খারাপ। তাই আসুন জেনে নেই, রমজানে পরিকল্পিত ডায়েট করতে খাবার কেমন হওয়া উচিত?
রমজানে পরিকল্পিত ডায়েট প্ল্যান যেমন হওয়া উচিত
১) ইফতার
সারাদিন রোজা রাখার জন্য আমাদের শরীর বেশ দীর্ঘ সময় খাবার ছাড়া তার নিজস্ব নিয়মে শারীরবৃত্তীয় কাজ পরিচালনা করতে থাকে। তাই রমজানে পরিকল্পিত ডায়েট করতে ইফতারিতে আমাদের চাই পরিমান মতো পুষ্টিকর খাবার। সে কারণে প্রথমেই সাধারণ খাবার পানি দিয়ে রোজা ভাঙ্গতে হবে। এরপর আমরা পানীয় যেমন- ডাবের পানি, ইসুবগুল, গুড়ের ও নানা রকম মৌসুমি ফলের শরবত বা জুস খেতে পারি। তবে পানীয় অবশ্যই চিনি ছাড়া হতে হবে। জুস বা শরবত ছাড়াও ইফতারে বেশি বেশি পানি জাতীয় ফল রাখা ভালো। পুষ্টিবিদের মতে, ইফতারিতে ডাল জাতীয় খাবার কম রাখাই শ্রেয়। ছোলা,পিয়াজু, ঘুগনি- এদের যে কোন একটি থাকলে বাকিগুলো বাদ দিতে হবে। যদি সম্ভব হয় তবে বেগুনী বেসন ছাড়া ডিম বা ময়দা দিয়ে ভাজা উচিত। ডিম ও ময়দা থেকেই শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে। মোদ্দাকথা, রমজানে পরিকল্পিত ডায়েট করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, ইফতারির খাবার ভারী হওয়া যাবে না।
২) রাতের খাবার
রমজানে পরিকল্পিত ডায়েট করতে হলে রাতের খাবার খেতেই হবে এবং রাতের খাবারে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকতে হবে। রাতে খেতে পারেন একটি রুটি, এক বাটি সবজি, ওটস বা স্যুপ, আম, দুধ, চিড়া ইত্যাদি। এর ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিনের ঘাটতি হবে না। খাবার পর ঘরেই খানিক হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। তবে ভারী ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। রোজায় পরিমাণমত খাবারের সাথে নামাজই উত্তম ব্যায়াম।
৩) সেহরি
ঘুম ভেঙ্গেই সেহরি করা সত্যি বেশ অলসতার কাজ। সেজন্য অনেকেই সেহরি গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেন বা আলসেমির কারণে শেষে খুব তাড়াহুড়া করেন। সেহরি খেতে হবে ধীর গতিতে ভালো করে। আমাদের সারাদিনের রোজা রাখার সকল শক্তি আমরা পাই সেহরির খাবার থেকেই। রমজানে পরিকল্পিত ডায়েট করতে তাই সেহরিতে দেড় কাপ ভাত, এক টুকরা মাছ, এক টুকরা মুরগির মাংস ও সবজি রাখতে পারেন। উল্লেখ্য যে, সেহরির ভাত যেন একটু নরম হয়। এতে খাবার সহজেই হজম হবে। খাবার শেষে এক গ্লাস ইসুবগুলের শরবত খেলে পেটে গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকা যাবে।
তাই বারবার বলছি, রোজায় সুস্থ থাকুন ও রমজানে পরিকল্পিত ডায়েট খাবার গ্রহণ করুন। আর সুস্থ থাকতে প্রতিদিন ইফতার থেকে সেহরির মধ্যকার সময়ে প্রচুর পানি পান করুন। সবাইকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছ।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ