“আমার ত্বক খুব তৈলাক্ত কিন্তু রুক্ষ!”, “ত্বক খুব সেনসিটিভ, কিছু ব্যবহার করতে গেলেই দানা ওঠে, চুলকুনি হয়!”, “এত তেলতেলে স্কিন কিন্তু কোন গ্লো নেই, উল্টো বয়সের আগেই ফাইন লাইনস দেখা যাচ্ছে!”, “আমার স্কিন তো একেবারেই ড্রাই, তাও আমার মাঝে মাঝেই রুক্ষ ও নিষ্প্রভ ত্বকের ব্রণ উঠে!”
আপনাদের মাঝে হয়ত অনেকেই আছেন যারা ভাবছেন “আরে এটা তো আমার সমস্যা”! আমরা কমবেশি সবাই ত্বকের যে ৪ টি ধরন আছে (শুষ্ক, তৈলাক্ত, নরমাল এবং মিশ্র), এ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তবে উপরোক্ত সমস্যাগুলোতে যারা ভুগছেন তারা অনেক সময়ই তাদের ত্বকের ধরন নিয়ে বেশ কনফিউজড থাকেন। সাধারণত শুষ্ক ত্বকের অধিকারীগণ সারাবছরই ত্বকের পর্যাপ্ত তেলের অভাব বা সেবাম এর অভাবে ভোগেন। ফলে তাদের স্কিনের ন্যাচারাল গ্লো নরমাল বা অয়েলি স্কিনের তুলনায় কম থাকে। কিন্তু এর ভালো দিক হচ্ছে এ ধরনের স্কিন টাইপে ব্রণের ঝুঁকি অনেকটাই কম থাকে। তবে অন্য স্কিন টাইপ যাদের, তাদের স্কিন কি কখনোই ড্রাই হয় না? আপনাদের মাঝেই হয়ত অনেকে আছেন, যাদের স্কিন খুব তেলতেলে কিন্তু তারপরও স্কিনের ময়েশ্চার লেভেল অনেক কম এবং ত্বকে কোন ঔজ্জ্বল্য তো নেই-ই, বরঞ্চ অকালেই যাদের মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যাচ্ছে।
রুক্ষ ও নিষ্প্রভ ত্বকের কারণ
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন কেন হয়?
কারণটি হচ্ছে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেটেড স্কিন। এ ধরনের স্কিনের সমস্যায় ত্বকের পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। আর সুস্থ ত্বকের জন্য ত্বকের গভীরে পানি ও তেলের ভারসাম্য বজায় থাকা জরুরী। পানিশূন্যতার ফলে ত্বকের যে নরমাল ব্যারিয়ার ফাংশন বা বাইরের ধূলোবালি, জীবাণু ত্বকের গভীরে ঢুকতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকে সেটি মূলত নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি ত্বকের নরমাল সেল টার্নওভার বা ডেড সেল রিমুভালের যে স্বাভাবিক ক্ষমতা সেটিও নষ্ট হয়ে যেতে থাকে।
ফলাফল?
- বাইরের পদার্থ ত্বকে সহজেই ঢুকে গিয়ে ইরিটেশন করা এবং ত্বককে সেনসিটিভ করে ফেলা।
- যেকোনো মেকআপ বা প্রসাধনী ব্যবহারে সেনসিটিভিটি, চুলকোনি বা র্যাশ হওয়া।
- ত্বকের টাইটনেস ও সহজেই চামড়া ওঠা।
- ত্বকের গ্লো কমে যাওয়া, ডালনেস।
- ত্বকের ময়েশ্চার লেভেল কমে যাওয়ার দরুন আরো বেশি সেবাম নিঃসরণ, ফলস্বরূপ ব্রণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া (এমনকি শুষ্ক ত্বকেও)।
- ত্বকে একইসাথে শুষ্ক এবং তৈলাক্তবোধ হওয়া।
এবার বুঝলেন তো, শুরুতেই আমরা যে সমস্যাগুলোর কথা বলেছিলাম তার পেছনে মূল কারণটি কী…
এবার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার ত্বক কি শুষ্ক নাকি পানিশূন্য তা কিভাবে বুঝবেন?
উত্তরটি হচ্ছে পিঞ্চ টেস্ট (Pinch Test)। শরীরের পানিশূন্যতার মাত্রা মাপার জন্য যে টেস্ট করা হয় এক্ষেত্রেও সেই একই টেস্ট করতে হবে। হাতের ওপরের পৃষ্ঠে চামড়া ধরে ছেড়ে দিবেন। যদি চামড়া সহসাই আগের অবস্থানে চলে আসে তবে আপনার ত্বকের ময়েশ্চার বা পানির পরিমাণ ঠিক আছে, শুধু আপনার ত্বকের ধরন হয়ত শুষ্ক। আর যদি চামড়া ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে আসে তবে বুঝতে হবে আপনার ত্বক ডিহাইড্রেটেড বা পানিশূন্য।
নিষ্প্রভ ত্বকের প্রতিকার কিভাবে করবেন?
(১) নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন:
অনেকেই ভাবেন- “আমার ত্বক তো তেলতেলে, তাহলে ময়েশ্চারাইজারের কাজ কি?” আসলে সারাবছর স্কিন ময়েশ্চারাইজড রাখা সমানভাবে জরুরী। কেননা একটি ভাল ময়েশ্চারাইজার ত্বকের ভেতরে পানি সিল করে রাখে। ফলে একদিকে যেমন পানির লেভেল ঠিক থাকে তেমনি স্কিন হাইড্রেটেড থাকার দরুন সেবাম নিঃসরণ কন্ট্রোলে থাকে। গ্রীষ্মকালে ওয়াটার বেইজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
(২) ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ করুন:
বিশেষত ভিটামিন বি৩ ও বি৫ ডিহাইড্রেশন ও রিংকেলস-এর বিরুদ্ধে অনেক ভাল কাজ করে। মুরগীর বুকের মাংস, যকৃৎ, টুনা মাছ বা মটরশুঁটি থেকে ভিটামিন বি৩-এর অভাব পূরণ করা সম্ভব। অন্যদিকে মুরগীর যকৃতের পাশাপাশি ভুট্টা, ফুলকপি, লেটুস এমনকি দই হতে পারে ভিটামিন বি৫ এর আদর্শ উৎস।
(৩) প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন:
দীর্ঘক্ষণ সূর্যের আলোতে থাকার ফলে ত্বকের উপরিভাগের পানি বাষ্পায়িত হয়ে যায় ফলে সানবার্ন ত্বকে ময়েশ্চারাইজেশন বেশি জরুরী হয়ে পড়ে। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে নিয়মিত একটি ব্রড স্পেকট্রাম সানব্লক ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
স্পেশাল কোন স্কিনকেয়ার রুটিন বা দামী কোন পণ্য নয়, আপনার একটু নিয়মিত যত্নেই পেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ত্বক।
লিখেছেন- ডাঃ তাসনিম তামান্না হক, ডার্মাটোলজিস্ট, স্কিনেজ ডার্মাকেয়ার