হার্ট বা হ্নদপিন্ড আমাদের শরীরের অন্যতম একটি প্রধান অঙ্গ। আজকে আমি এই অঙ্গটির একটি অসুখ নিয়ে আলোচনা করব। তা হলো হার্ট এ্যাটাক।
প্রথমেই আমাদের জানতে হবে হার্ট এ্যাটাক কী ?
হার্ট কে যেসব আর্টারী বা ধমনী রক্ত সরবরাহ করে, সেসব ধমনীতে কোন কারণে ব্লকেজ বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে, হার্টে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একে
হার্ট এ্যাটাক বলে।
উপসর্গ কী ?
টিভি সিনেমা দেখে আমাদের অনেকের একটা ভুল ধারনা আছে, তা হলো হার্ট এ্যাটাক মানেই বুকের বাম পাশে হঠাত্ করে অনেক ব্যথা হওয়া। যদিও বুকে ব্যথা
হার্ট এ্যাটাকের অন্যতম প্রধান উপসর্গ, তারপরেও গবেষণায় দেখা গিয়েছে এক তৃতীয়াংশ বা ৩০% মানুষের হার্ট এ্যাটাকের সময় বুকে কোন ব্যথা হয়না বিশেষ
করে মহিলা ,বয়স্ক ও ডায়াবেটিস রোগীদের। মানুষ থেকে মানুষ উপসর্গ গুলোর মাঝে পার্থক্য দেখা যায়। যদি আপনার ইতঃপূর্বে একবার হার্ট এ্যাটাক হয়ে থাকে তাহলে পরের বার একই উপসর্গ নাও হতে পারে। তারপরও সাধারণ কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ নীচে দেয়া হলোঃ
০১. বুকে ব্যথাঃ
সাধারণত বুকের মাঝখানে শুরু হয় ব্যথা। বাম পাশেও ব্যথা হতে পারে। হঠাত্ করে অথবা ধীরে ধীরে শুরু হয় ব্যাথাটা। মনে হয় ব্যথাটা বুকে চাপ দিয়ে হচ্ছে বা চিপে ধরা ব্যথা বা বুক জ্বালাপোড়া অথবা ভারী ভারী লাগা। ব্যথাটা ক্রমশ শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে যেতে পারে, যেমন – দুই হাতে , গলায় ,ঘাড়ে ,পিঠে , চোয়ালে ও পাকস্থলির উপরের অংশে এবং ব্যথাটা বেশ অনেক সময় ধরে থাকে। শুয়ে থাকলেও এই ব্যথা কমেনা।
০২. দুশ্চিন্তা গ্রস্থ লাগে এবং মনে হয় মারা যাচ্ছি।
০৩.দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মনে হয়।
০৪. বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
০৫.অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
এছাড়াও মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘামা , শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
উপরের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে সাথে সাথে নিকটস্থ হাসপালাতে বা চিকিত্সা কেন্দ্রে যান। অবহেলা করবেন না। একটু অবহেলার কারণে আপনার মূল্যবান
জীবনটা মৃত্যুর মুখে যেতে পারে।
হার্ট এ্যাটাকের কারণ কী ?
০১. ধুমপান করাঃ
যারা দিনে ২০ অথবা এর বেশি সিগারেট খায় তাদের হার্ট এ্যাটাক হবার সম্ভাবনা ৬০-৯০% বেশি থাকে। যারা দিনে ১টা সিগারেট খায় তাদের হার্ট এ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা ৩০% বেশি থাকে অধূমপায়ী একজন মানুষের চেয়ে।
০২.অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে। এতে রক্তের কোলেস্টেরল বাড়বে। হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ে।
০৩.উচ্চ রক্তচাপ।
০৪.ডায়াবেটিস থাকলে হার্ট এ্যাটাক হবার সম্ভাবনা অনেক থাকে।
০৫. অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে।
০৬.শারীরিক কাজ কম করলে।
০৭. অতিরিক্ত মদ্যপান করলে।
০৮. মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের ২ থেকে ৩ গুণ বেশি হয়। বয়স্কদের বেশি হয়ে থাকে।
০৯. পরিবারে বাবা, মা, ভাই, বোন কারো হার্ট এ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে , তার হার্ট এ্যাটাক হবার সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি থাকে।
হার্ট এ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়ঃ
যেকোনো রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা উত্তম।
০১.প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম করুন। অতন্ত সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করুন। হাঁটুন।
০২. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
০৩. স্বাস্থ্যকর খাবার খান। চর্বি জাতীয় খাবার যত পারেন কম খাবেন। প্রচুর শাক সবজি , রঙ্গিন ফলমূল খান। অয়েলি মাছ, অলিভ অয়েল ও সূর্যমুখী তেল স্বাস্থের জন্য খুবই ভালো।
০৪.রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন ।
০৫.রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন ।
০৬.পাতে অতিরিক্ত লবণ বা কাঁচা লবণ খাওয়া বাদ দিতে হবে ।
হার্টের যত্ন নিন। ভালো থাকুন।
লিখেছেনঃ মৌসুমী
ছবিঃ হেলথকেয়ার.ডায়ালরিকোয়েস্ট.কম