গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছের প্রতি ভালোবাসা তাই আমাদের প্রকৃতিগত। বাইরে বাগান করার পাশাপাশি ঘরেও গাছ লাগিয়ে শোভাবর্ধনের সাথে সাথে অনেকরকম উপকারও পাওয়া যায়। শখের বশে ঘরে বা বারান্দায় ফুলগাছ, ক্যাকটাস, বিভিন্ন জাতের মানিপ্ল্যান্ট, পাতাবাহার, লাকি ব্যাম্বু লাগানো ছাড়াও অনেকে স্বল্প পরিসরে সবজি চাষও করেন। শহুরে বাসাবাড়িতে জায়গা কম থাকায় আমরা খুঁজি অল্প জায়গায় কীভাবে গাছগুলোকে সুন্দরভাবে লাগানো ও সাজানো যায়৷ সব সময় দামি পট দিয়েই যে প্ল্যান্টিং করতে হবে এমন কিন্তু মোটেও নয়! ঘরের ফেলনা জিনিস দিয়েই বানিয়ে ফেলা যায় ডিফারেন্ট টাইপের পট। আজকে আমরা সেরকমই কিছু আইডিয়া দেখে নিব, যেন ফেলনা জিনিস থেকে কম খরচে অল্প সময়ে আমরা গাছ লাগানোর ও সাজানোর জন্য টব বানাতে পারি।
ঘরের ফেলনা জিনিস দিয়ে প্ল্যান্ট হোল্ডারস বানানোর আইডিয়া
বোহো স্টাইল প্ল্যান্ট হ্যাংগার
ঘরের যে কোনো রুমের ফাঁকা দেয়ালে এই চমৎকার ওয়াল হ্যাংগিংটা যেমন শোভা বাড়াবে, তেমনই দিবে সবুজের প্রশান্তি। একদম অল্প খরচে, ঘরে পড়ে থাকা জিনিস দিয়েই বানিয়ে নিতে পারেন এই আকর্ষণীয় হ্যাংগারটি।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- মোটা, শক্ত শুকনো গাছের ডাল
- মাঝারি মোটা দড়ি
- কাঁচের বোতল
যেভাবে বানাবেন
১) প্রথমে মোটা, শক্ত দেখে একটি গাছের ডাল বাছাই করুন। ডালটিকে ভালো করে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন। লিকুয়ার স্প্রে করে দিন তাতে পরবর্তীতে পোকামাকড় ও ছত্রাকের আক্রমণ হবে না।
২) কাঁচের বোতলগুলোকে সুন্দর করে পরিষ্কার করে নিন, যেন কোনো লেবেল, স্টিকার বা আঠার দাগ না থাকে।
৩) কাঁচের বোতলগুলোর মুখে দড়ি দিয়ে কয়েকটি রাউন্ড পেঁচিয়ে শুকনো ডালের সাথে ঝুলিয়ে দিন। বোতলগুলোর মাঝে এমনভাবে ফাঁকা রাখবেন যেন ওজনের ভারসাম্য থাকে। এটি জরুরি একটি বিষয় এই ওয়াল হ্যাংগিং এর ক্ষেত্রে। ডালে কয়টি বোতল কতটা দূরত্বে ঝোলাবেন তা অবশ্যই ভারসাম্যতা দেখে ঠিক করে নিবেন।
৪) এবার মোটা দড়ি কেটে নিন, ঝুলানোর জন্য কতটুকু রাখবেন মেপে নিন। শুকনো ডালের যে পাশে বোতল আছে তার অন্যপাশে মোটা দড়ির সাহায্যে দুই মাথায় ভালো করে গিঁট দিলেই তৈরী হয়ে যাবে বোহো স্টাইলের প্ল্যান্ট হোল্ডার।
জিনিসটিকে আরেকটু রঙিন আর আকর্ষণীয় করতে কাঁচের বোতলগুলোকে পাটের দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে দিতে পারেন৷ এর গায়ে লাগাতে পারেন রঙিন পুঁথি বা ঝিনুক অথবা স্প্রে রঙ দিয়ে রঙ করে নিতে পারেন।
প্লাস্টিক বোতলের রঙিন প্ল্যান্টার
এই মজার প্ল্যান্টার বা টবগুলো বানাতে যেমন মজা, দেখতেও তেমন রঙিন আর আকর্ষণীয়। ঘরে থাকা নানারকম প্লাস্টিকের বোতল হয়ে উঠতে পারে আপনার প্রিয় গাছের জন্য আকর্ষণীয় টব। চলুন জেনে নেই কীভাবে এগুলো বানানো যাবে-
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- বড় প্লাস্টিকের বোতল
- ধারালো ছুরি, কেঁচি
- মার্কার, স্প্রে পেইন্ট, অ্যাক্রেলিক পেইন্ট
যেভাবে বানাবেন
১) বড় বোতলের গায়ে মার্কার দিয়ে আপনার পছন্দের যে কোনো শেইপ যেমন- বিড়াল, টেডি বিয়ার, ড্রাগন ইত্যাদি এঁকে নিন। এবার সামনে কান ও মুখ এবং পেছনে লেজ এঁকে নিন। বোতলের দৈর্ঘ্যের অর্ধেক বা তার একটু বেশি রাখবেন আঁকানোর ক্ষেত্রে।
২) শেইপ অনুযায়ী কেঁচি বা ধারালো ছুরি দিয়ে বোতলটিকে কেটে নিন সাবধানে।
৩) স্প্রে পেইন্ট দিয়ে রঙ করে নিন। এর উপর মার্কার বা অ্যাক্রেলিক পেইন্ট দিয়ে ডিটেইলিং করুন। বর্ডার দিন, চোখ, মুখ, গোঁফ ইত্যাদি আঁকান।
৪) এবার বোতলের এই অংশটির মাঝে মাটি ভরে গাছ লাগিয়ে দিন।
এটিকে এভাবে টেবিলে রাখতে পারেন। আবার গরম কোনো ভোমর বা লোহার জিনিস দিয়ে চারদিকে চারটে ফুটো করে দড়ির সাহায্যেও ঝুলিয়ে দিতে পারেন। মজার এই প্ল্যান্টারগুলো আপনার ঘরকে আরো রঙিন করে তুলবে।
মাল্টিপল বোতল হ্যাংগিং
এই হ্যাংগিংটির ক্ষেত্রে একসাথে ৩টি গাছ লাগাতে পারবেন। ব্যালকনি বা জানালায় ঝোলানোর জন্য ঘরে পড়ে থাকা বোতলের সাহায্যেই বানিয়ে নেওয়া যায় এটি।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- কেঁচি
- একটু মোটা সুতা বা চিকন দড়ি
- প্লাস্টিক বোতল
যেভাবে বানাবেন
১) প্রথমে দুইটি বোতল নিন এবং মুখের থেকে ১০ সে.মি. কেটে নিন।
২) বোতলের মুখ লাগানো অবস্থায়ই, মুখটিতে কেচি একটু গরম করে ফুটো করে নিন যেন পানি ড্রেইন হতে পারে। আর তিনপাশে তিনটি ফুটো করে নিন।
৩) বোতলের মাঝের অংশ বাদ দিয়ে নিচের অংশটি কেটে নিন।
৪) নিচের অংশটিতে গরম কেচি বা ভোমর দিয়ে তিনকোনায় তিনটি ফুটো করে দিন।
৫) নিচের অংশের ফুটোগুলোয় দড়ি ঢুকিয়ে গিট দিয়ে নিন। একটি দড়ি দিয়ে আগে থেকে প্রস্তুত করা মুখের অংশের ফুটোগুলোয় দড়ি ঢুকিয়ে কানেক্ট করে দিন। দড়িগুলোকে গিঁট দিয়ে সিকিউর করুন। দড়ি তিনটিকে একটু পছন্দমতো লম্বা মেপে নিয়ে গিঁট দিয়ে ঝুলিয়ে দিন। এবার এগুলোতে মাটি ভরে গাছ লাগিয়ে দিন।
তৈরি হয়ে গেলো মাল্টিপল প্ল্যান্ট হ্যাংগিং। চাইলে এগুলোকে স্প্রে পেইন্ট দিয়ে রঙ করে নিতে পারেন। অথবা পাটের দড়ি, রঙিন পুঁথির সাহায্যে সাজিয়ে নিতে পারেন।
ঘরে গাছ লাগাতে অনেক দামি টব না কিনে ঘরের ফেলনা জিনিস দিয়ে নিজেই পছন্দমতো সাইজে বিভিন্ন টব বানিয়ে নেয়া যায়। পরিবারের সবাই মিলে যদি এই কাজগুলো করেন তাহলে বেশ আনন্দের মুহূর্তও কাটবে সবার সাথে। আর রিসাইক্লিং মানে পরিবেশ ভালো রাখাতেও অবদান রাখা। রিসাইক্লিং করুন, সুস্থ রাখুন পরিবেশ। হ্যাপি গার্ডেনিং!
ছবিঃ Toys From Trash, DreamsTime.com, owensboroparent.com