চুল শুকানোর জন্য আমরা অনেকেই রেগুলার হেয়ার ড্রাইয়ার ব্যবহার করে থাকি। আর বাসায় বসে যদি চুলে হিট দিয়ে স্টাইলিং করা যায়, তাহলে পার্লারে যাওয়ার কি দরকার! কোথাও যেতে হলে আমি তো ঝটপট স্ট্রেইটনার মেশিন দিয়ে চুল সোজা করে নেই বা নিচে হালকা করে কার্লস করি। যারা অনেক দিন ধরে চুলে হিট প্রয়োগ করছেন, হয়তো খেয়াল করেছেন চুল অনেক ড্যামেজ হয়ে গেছে! “এই ড্যামেজ থেকে তো চুলকে রক্ষা করা যাবে না” এটাই ভাবছেন, তাই না? হিট স্টাইলিংয়ের আগে হিট প্রোটেক্টরের ব্যবহার এই ড্যামেজ থেকে চুলকে অনেকটাই সুরক্ষা দিয়ে থাকে। আজকে আমি ৩টি অসাধারণ হিট প্রোটেক্টর সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো যেগুলো আমি নিজে ইউজ করে বেনিফিট পেয়েছি। কিন্তু তার আগে তো জানা দরকার হিট কীভাবে চুলকে রাফ ও ড্যামেজ করছে। চলুন এখনই জেনে নেই।
হিট প্রয়োগে চুলের ক্ষতি হচ্ছে কি?
আমাদের শরীরে চুল এবং নখে সবশেষে পুষ্টি পৌঁছায়। আর এই চুলের উপরই চলে আমাদের নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট! আচ্ছা হিট স্টাইলিংয়ে চুলের উপর কী প্রভাব পরে সেটা জানা আছে? স্টাইলিং করতে মোটামুটি ২৬৬-৪৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি তাপ দেওয়া হয় চুলে। আপনিই ভাবুন, আপনার এই নরম চুল কী এই তাপ নিতে পারে? ফলে চুলের কিউটিকল দুর্বল হয়ে যায়, চুল পড়া শুরু হয়ে যায়, চুল ভেঙ্গে যায় খুব দ্রুতই। আর এই তাপে চুলের আর্দ্রতা কমে গিয়ে চুল হয় শুষ্ক আর নির্জীব। এছাড়াও চুলে বিভিন্ন প্রবলেম দেখা দেয়। যেমন-
(১) যাদের চুল কালার করা, হিট প্রয়োগ করলে চুলের কালার খুব সহজেই ফেইড হতে থাকে অথবা রঙটাই বদলে যায়।
(২) চুলের ন্যাচারাল কেরাটিন প্রোটিন আস্তে আস্তে কমতে থাকে। এর ফলে চুলে রাফনেস দেখা দেয়, চুলের আগা ফেটে যায়।
(৩) ভেজা চুলে যখন হিট প্রোটেক্টর ছাড়া হিট দেয়া হয়, তখন চুলের স্বাভাবিক ময়েশ্চার লেভেল নষ্ট হয়ে যায়।
হিট প্রোটেক্টর কীভাবে কাজ করে?
চুল তো ড্যামেজ হবে, কিন্তু তাই বলে কি স্টাইলিং করবো না? হিট প্রোটেক্টর চুলের উপর একটি শেইল্ড বা ছাতা হিসেবে কাজ করে। চুলে যখন সরাসরি হিট দেয়া হয়, তাপে চুল অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর হিট প্রোটেক্টর দেয়া থাকলে সেটা চুলের সুরক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। স্প্রে বা সিরাম হিসেবে হিট প্রোটেক্টর পাওয়া যায়। হিট প্রোটেক্টর চুলের ফ্রিজিনেস কাটিয়ে ময়েশ্চার লক করে। চুলের উপরের সার্ফেস কিউটিকলকে সফট এবং স্মুথ করে থাকে। আর এতে বিভিন্ন ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকে যা চুলের অন্যান্য প্রবলেমগুলোকে টার্গেট করে কাজ করে। সেই সাথে চুলে হাইড্রেশন প্রোভাইড করে। কতগুলো বেনিফিট পাচ্ছেন, দেখলেন তো?
আমার পছন্দের ৩টি হিট প্রোটেক্টর
প্রফেশনের জন্য আমাকে প্রায়ই চুলে স্ট্রেইটনার ইউজ করতে হয়। বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলে বা কোনো অকেশনের জন্য রেডি হওয়ার সময় চুলে ঝটপট স্টাইলিং করতে ড্রাইয়ার বা স্ট্রেইটনার তো ব্যবহার করতেই হয়। তো রেগুলার হিট স্টাইলিংয়ের জন্য আমার চুল যাতে রাফ ও ড্রাই না হয়ে যায়, তাই আমি হিট প্রোটেক্টর ইউজ করাটা প্রেফার করি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার পছন্দের কিছু হিট প্রোটেক্টরের রিভিউ শেয়ার করবো।
ট্রেসেমি কেয়ার এবং প্রোটেক্ট হিট ডিফেন্স (TRESemme Care & Protect Heat Defence)
ট্রেসেমি কেয়ার এবং প্রোটেক্ট হিট ডিফেন্স ব্যবহার করে আপনি ঘরে বসেই প্রফেশনাল কোয়ালিটির আউটপুট পাবেন। চুলে স্টাইলিংও হবে, সাথে চুল ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
(১) এটি সরাসরি হিট ড্যামেজ থেকে চুলকে রক্ষা করে।
(২) অতিরিক্ত হিট রেগুলার ব্যবহার করলে চুলের আগা ফাটা বেড়ে যায় ও চুল মাঝখান দিয়েও ভাঙতে থাকে। এই হিট প্রোটেক্টর চুলের আগা ভাঙ্গা কমাতে হেল্প করবে।
(৩) চুলকে সফট এবং স্মুথ করতে সাহায্য করে।
(৪) চুলকে শাইনি রাখে।
(৫) আর সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এই হিট প্রোটেক্টরে ইউ ভি ফিল্টার থাকার কারণে চুলকে হাই টেম্পারেচার থেকেও সুরক্ষা দেয়।
ট্রেসেমি কেরাটিন স্মুথ হিট প্রোটেক্টশন সাইন স্প্রে (TRESemmé Keratin Smooth Heat Protection Shine Spray)
এই স্প্রের বেস্ট পার্ট হচ্ছে এই হিট স্প্রে ৪৫০ ডিগ্রি ফরেনহাইট হিট পর্যন্ত প্রোটেক্টশন দিতে পারে। আর এই ব্র্যান্ডটি নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। ট্রেসেমি কেরাটিন স্মুথ রেঞ্জটি অলরেডি হাইপড এবং এর রিভিউ বেশ ভালো।
(১) ফ্রিজি ও রাফ হেয়ারের জন্য বেশ ভালো কাজ করে।
(২) সরাসরি হিট ড্যামেজ থেকে চুলকে রক্ষা করে। রেগুলার বেসিসে ইউজ করা যায়।
(৩) চুলকে সিল্কি এবং স্মুথ করে।
ভিও ফাইভ হিট প্রোটেক্ট সিরাম (VO5 Heat Protect Serum)
হিট ড্যামেজ থেকে চুলের সুরক্ষায় এই সিরামটি খুব ভালো কাজ করে থাকে। আর ড্রাই হেয়ারের জন্য তো এই সিরামটি একদম পারফেক্ট। আমি রিসেন্টলি ইউজ করছি এবং বেশ ভালো কাজ করছে এটা আমার চুলে।
(১) উচ্চমাত্রার তাপ থেকে চুলকে প্রোটেক্ট করে।
(২) ড্যামেজ হেয়ারকে রিপেয়ার করতে সাহায্য করে।
(৩) চুলের ফ্রিজিভাব দূর করে স্মুথ করে, সেই সাথে চুলের শাইনিভাব ধরে রাখে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
হিট স্টাইলিং টুলস যেটাই ব্যবহার করেন না কেন এর আগে কিন্তু হিট প্রোটেক্টর ব্যবহার করতে হবে। চুলে স্প্রে করে নিন বা সিরাম দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে তারপর হিট টুলস ব্যবহার করুন। হিট প্রোটেক্টর ব্যবহার করার পর নিজেই চুলের পরিবর্তন বুঝতে পারবেন। তাহলে এবার নিশ্চিন্তে চুল স্ট্রেইট করে নিন! তবে প্রয়োজন ছাড়া চুলে তাপ দেয়া উচিত না, রেগুলার বেসিসে চুলে হাই টেম্পারেচারে স্ট্রেইটনার ইউজ না করাই বেটার, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। আর যদি করতে হয় তবে ভালোমানের স্ট্রেইটনার ইউজ করুন, সাথে চুলের এক্সট্রা কেয়ারও করুন।
বোনাস টিপস
যারা রেগুলার হিট স্টাইলিং টুলস ব্যবহার করেন, তাদের চুলকে ড্যামেজ ফ্রি করতে সপ্তাহে একদিন ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। চুলের রাফনেস দূর করে চুলকে ঝলমলে করতে নানা ধরনের হেয়ার মাস্ক আছে, আপনার প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো একটি বেছে নিতে ভুলবেন না।
তাহলে হিট স্টাইলিংয়ের আগে হিট প্রোটেক্টর অ্যাপ্লাই করা যেন মিস না হয়! এসবই পেয়ে যাবেন সাজগোজে। অথেনটিক স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে আমার সবসময়ই ভরসা শপ.সাজগোজ.কম। অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে যাই। তাছাড়া সাজগোজের দুইটা আউটলেট আছে, যেটা যমুনা ফিউচার পার্ক আর সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ছবি- সাজগোজ