অনেকদিন ধরে ভাবছি ‘রেটিনল’ নিয়ে অবশ্যই কিছু লিখব, কিন্তু যেহেতু আমাদের ম্যাক্সিমাম পাঠক রেটিনলের একেবারে বেসিক সম্পর্কে অবহিত নন তারা একে তোঁ এটা খুঁজে পাবেন না, আর পেয়ে গেলেও ‘ইউজ-এর বদলে অ্যাবিউজ’-টাই হবে বেশি! কিন্তু তাই বলে অন্যরা স্কিনকেয়ার-এর এই অসামান্য আবিস্কার থেকে কেন বঞ্চিত হবেন? তাই ভাবলাম যা আছে কপালে!! লিখেই ফেলি!
তো চলুন ‘অ্যান্টি-এজিং’ স্কিন কেয়ারের ‘হিরো’ রেটিনল (RETINOL) কে চিনে নেই!
কি এই ‘রেটিনল’ ??
খুব সহজে বলতে গেলে রেটিনল বলতে এক কথায় দুটি যৌগকে বোঝানো হয়-
১. রেটিনল
২. রেটিনয়েডস: এর আন্ডারে আছে-
- রেটিনয়িক এসিড
- রেটিনাইল পালমিটেট
সমস্ত রেটিনল বা রেটিনয়েডই কোন না কোনভাবে ‘ভিটামিন-এ’ থেকে পাওয়া যায়। ভিটামিন এ দেহের সেল তৈরির হার নিয়ন্ত্রণ করে। আর সেই সূত্র ধরেই হঠাৎ কি আবিস্কার হল জানেন? ভিটামিন-এ-এর ভাতিজা- ভাতিজি রেটিনল যখন স্কিনে ইউজ করা হয়, তখন স্কিনে-এর সেল টার্নওভার-ও একইভাবে বেড়ে যায়!!!
তো এই আবিষ্কারের পর তো বিজ্ঞানীদের মাথা খারাপ! তারা ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন টেস্ট চালাতে রইল রেটিনলকে নিয়ে, শেষ মেশ কী কী গুণাগুণ বের হল এই ছোট্ট যৌগের?
** ত্বকের সেল রিনিউ করে রিঙ্কেল, ফাইন লাইন ‘প্রিভেন্ট’ করে এবং একটা লেভেল পর্যন্ত দূরও করে!! এমন অনেক অনেক উদাহরণ আছে যেখানে ১০ বছর ধরে রেটিনল ইউজ করছে এমন ৫০ বছর বয়স্ক মানুষের ত্বক দেখে টেনে টুনে লাগে ৩৫!!
** ত্বকের ব্রনের হার কমায়। ব্রনের দাগ দ্রুত হালকা করে। ব্রনের জন্যই মূলত আমাদের দেশের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা রেটিনল সাজেস্ট করেন। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে জাদুর মতো কাজ করে এই প্রোডাক্ট।
** ত্বকের সেল দ্রুত রিনিউ হয় বলে ডার্কপ্যাচ, সানড্যামেজ ইত্যাদি দ্রুত কমে! রেটিনলেরই খুব কার্যকরী কয়েকটা রুপ- যেমন ট্রেটিনোইন (ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে) + প্রপার সানপ্রটেকশন খুব গাঢ় মেছতাও হালকা করে দিতে পারে (অবশ্যই লেজার বা প্রফেশনাল কেমিক্যাল পিলের মতো রেজাল্ট হবে না! বাট বেশ ভালো রেজাল্ট দেয়)!
কি? ভাবছেন এক জিনিসে এতো প্রবলেম সল্ভ হলে এক্ষুনি স্ক্রল করে প্রোডাক্ট-এর নাম দেখে দৌড়ে কিনে এনে দিনে রাতে মুখে মাখা শুরু করবেন?? এখানেই যত সমস্যা…
রেটিনল ভয়ঙ্করী!!
রেটিনল- যেহেতু বেশ একটিভ উপাদান, এর আছে বেশ কিছু ড্রব্যাক… যেমন?
১. রেটিনল-এ স্কিন প্রচণ্ড সানসেনসিটিভ হয়ে যায়, দিনের বেলায় তাই রেটিনলযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না!!
২. যেদিন রাতে রেটিনল ইউজ করলেন, তার পরদিন সানস্ক্রিন+ ছাতা দুই-ই ইউজ না করলে ত্বক রোদে / চুলার তাপে পুড়ে পর্যন্ত যেতে পাড়ে! তাই সানস্ক্রিন-এ স্কিন ডুবিয়ে রাখার অভ্যাস না থাকলে রেটিনলের দিকে ‘চোখ তুলেও তাকানো যাবে না’!!
৩. স্কিন রিনিউ করে রেটিনল, বলেছিলাম রাইট? রিনিউ করা মানে ত্বকের ডেড সেলের হারও বেড়ে যাওয়া কিন্তু! তাই রেটিনল ইউজ-এ ত্বক থেকে এতো বেশি পরিমাণে ডেড সেল ওঠে যে স্কিন-এ খুশকি হয়েছে মনে হয়। এই ডেড সেল ক্লিন করতে আর নতুন গজানো ‘বেবি’ স্কিনের যত্ন নিতে স্কিন-এর পেছনে প্রচুর টাইম আর এনার্জি দিতে হবে।
৪. সবচেয়ে বড় কথা এতো গুণের রেটিনলের ব্যবহার খুব সাবধানে করতে হয় বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব দ্রুত রেজাল্ট দেয় এমন কার্যকরী পরিমাণের রেটিনল যুক্ত প্রোডাক্ট ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেনা যায় না !!
বিভিন্ন রেটিনল টাইপ, কোন ধরনের রেটিনল কসমেটিক-এ আর কোন রেটিনল প্রেসক্রিপশন মেডিকেশন হিসেবে পাওয়া যায় সেটা নিচের ইজি চার্ট-টা থেকে খুব সহজে বুঝতে পারবেন-
দেখছেন? উচ্চশক্তির রেটিনল গুলো ‘সেফটি’ মেইনটেইন করার জন্য অনলি ‘প্রেসক্রিপশন’-এ অ্যাভেইলেবল করা হয়েছে?
এটুকু পড়ে নিশ্চয়ই গালি দিচ্ছেন?
‘আরে, প্রেসক্রিপশন-ই যদি লাগবে তাহলে এতো কথা বাড়ালেন কেন?? ধুর আজাইরা !!!’
লেডিস অ্যান্ড জেনটলমেন, কথা বাড়ালাম কারণ রেটিনল ফ্লাইওভার থেকে নামা বাসের মতই ‘ভয়াবহ’ না হলেও এক্কেবারে কম রিস্কি নয়! আর এটা সবার জন্যও নয়, ধরুন ৫০% রেটিনল কোন প্রবলেম ছাড়া ইউজ করতে পাড়বে বাকি ৫০% এর স্কিন-এ এটা স্যুট-ই করবে না।
আমি চাই না রেটিনলের ধাক্কায় আপনার বড় একটা ক্ষতি হয়ে যাক! ক্লিয়ার?
বেশ, বুঝলাম অনেকের কাছেই লেখাটা ইউজলেস মনে হল, বাট তারপরেও কেউ যদি জানতে চান বাজারে কম পার্সেনটেজের রেটিনল প্রোডাক্ট কোনগুলো, সেগুলো কোথায় কিনতে পাওয়া যায়, কিভাবে সেফলি এসব রেটিনল ইউজ করবেন আর কারাই বা ইউজ করবেন? তবে অবশ্যই চোখ রাখুন পরের পর্বে।
লিখেছেন- তাবাসসুম মীম
ছবিঃ সাটারস্টক