‘কয়েকদিন আগেই তো কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করলাম, এখনই চুল ফ্রিজি হয়ে যাচ্ছে কেন?তাহলে কি ট্রিটমেন্টটি করা উচিত হয়নি?’ কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করার পর যদি এই সমস্যা আপনারও হয়, তাহলে হতে পারে আপনি হয়তো সঠিকভাবে চুলের যত্ন নেননি। আমরা অনেকেই ভাবি, কেরাটিন করা চুলে আলাদাভাবে তেমন যত্ন নেয়ার প্রয়োজন নেই। আসলে ভুলটা আমাদের এখানেই হয়। ট্রিটমেন্ট নেয়ার পর দীর্ঘ সময়ের জন্য চুল ভালো রাখতে নিয়ম মেনে চুলের যত্ন নিতে হবে। নইলে সামান্য কিছু ভুলের কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে চুলের সৌন্দর্য। চলুন তাহলে জেনে নেই, কেরাটিন ট্রিটেড চুলের যত্ন নিতে কোন রুলসগুলো মেনে চলবেন।
কেরাটিন ট্রিটমেন্ট কী?
আমাদের চুল, ত্বক ও নখে থাকে কেরাটিন নামক এক ধরনের প্রোটিন। আমাদের শরীরে ন্যাচারালি এই প্রোটিনটি প্রোডিউস হয়। কিন্তু পল্যুশন, কেমিক্যাল প্রোডাক্টের ব্যবহার, ঘন ঘন হিট স্টাইলিং করার কারণে চুল থেকে কেরাটিনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে যায়। যার কারণে চুল ঝরে পড়া, আগা ফেটে যাওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। চুলের এমন বিভিন্ন ক্ষতি পূরণ করার জন্য কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করা হয়। এই ট্রিটমেন্টে চুলের গোড়া মজবুত হয়, চুল হয় স্ট্রেইট, সেই সাথে ফ্রিজিনেস দূর হয়ে চুল হয়ে ওঠে সফট ও শাইনি।
কেরাটিন ট্রিটেড চুলের যত্ন
হেলদি ও শাইনি চুল পাওয়ার জন্য কেরাটিন ট্রিটমেন্ট তো করলেন, কিন্তু রেগুলার হেয়ার কেয়ার না করা হলে বেশিদিন চুল ভালো থাকবে না। কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করা চুলের যত্ন নেয়ার উপায়গুলো চলুন জেনে নেই-
চুল শুকনো রাখুন
কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করার পর চুল ভালোভাবে সেট হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিতে হয়। এ কারণে তিন দিন পর্যন্ত চুল ধুতে মানা করা হয়। তবে এই ট্রিটমেন্ট যেহেতু কয়েক ধরনের হয়, তাই কোন ট্রিটমেন্ট অনুযায়ী কতদিন চুল ধোয়া যাবে না সে সম্পর্কে প্রফেশনাল হেয়ার স্টাইলিস্টের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। সেই সাথে স্ক্যাল্প যেন না ঘামে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যে কোনো ধরনের ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ অথবা সাঁতার কাটা থেকে কিছুদিন বিরত থাকুন। স্ক্যাল্প যদি ঘেমেও যায়, তাহলে সাবধানে পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। অনেকে বাড়িতেই কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করেন। চুল ভালো রাখার জন্য তারাও এই নিয়ম মেনে চলতে পারেন।
কেরাটিন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন
এই ট্রিটমেন্ট করার পর চুলের যত্নে ব্যবহার করতে হবে কেরাটিন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার। এ শ্যাম্পুগুলো চুলের গোড়া শক্ত করে, চুলের ফ্রিজিনেস কমায়, চুল ময়েশ্চারাইজড রাখে। কেরাটিন কন্ডিশনার চুলের ইলাস্টিসিটি বাড়ায়, হেয়ার ব্রেকেজ কমায় এবং চুলকে রাখে ম্যানেজেবল।
আপনাদের সুবিধার জন্য আমি কয়েকটি কেরাটিন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার সাজেস্ট করছি-
OGX Brazilian Keratin Smooth Shampoo
Tresemme Keratin Smooth Shampoo with Argan Oil
OGX Brazilian Keratin Smooth Conditioner
চুল শক্ত করে বাঁধবেন না
কেরাটিন ট্রিটমেন্টে চুল স্ট্রেইট ও সফট হয়। এই চুল ভালো রাখতে যতটা সম্ভব চুল খোলা রাখতে হবে। পনিটেইল বা শক্ত করে বেণী করা যাবে না। যদি চুল বাঁধতেই হয় তাহলে সফট হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে আলতো করে বেঁধে নিতে পারেন। তবে বেশিক্ষণ বেঁধে না রাখাই ভালো। সেই সাথে হেয়ার ক্লিপ বা অন্যান্য হেয়ার এক্সেসরিজও অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য ব্যবহার করা বন্ধ রাখতে হবে।
সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করুন
কটন পিলো কভার চুলের ন্যাচারাল অয়েল অ্যাবজর্ব করে নেয়, যার কারণে চুল ফ্রিজি ও ড্রাই হয়ে যায়। এতে চুলে জট লাগতে পারে। আর এমন হলে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট বেশিদিন নাও টিকতে পারে। কটনের বদলে সিল্কের পিলো কভার ইউজ করুন। সিল্কের কভার ব্যবহারে হেয়ার ড্যামেজ কমে এবং স্মুথ থাকে। কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করার পর এমন কভার ব্যবহার করা আরও বেশি জরুরি।
হিট স্টাইলিং টুলস ইউজ করবেন না
এই ট্রিটমেন্ট করার পর চুল স্ট্রেইট ও স্মুথ রাখতে হিট স্টাইলিং টুলস ইউজ না করাই ভালো। যদি ইউজ করতেই হয় তবে অবশ্যই হেয়ার প্রোটেক্টিং সিরাম বা স্প্রে অ্যাপ্লাই করে নিতে হবে।
কেরাটিন হেয়ার মাস্ক অ্যাপ্লাই করুন
কেরাটিন ট্রিটেড হেয়ারকে স্মুথ ও শাইনি রাখার জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারেন কেরাটিন হেয়ার মাস্ক। এই মাস্কগুলো চুলে প্রোপার নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে, চুলকে ময়েশ্চারাইজড রাখে এবং চুলের ফ্রিজিনেস কমায়। মাস্কের প্যাকেজিং এ ইউজ প্রসেস লেখা থাকে। ব্যবহারের আগে প্রসেসগুলো ভালোভাবে পড়ে নিন।
আমি দুটো কেরাটিন মাস্ক আপনাদের জন্য সাজেস্ট করছি-
Tresemme Keratin Smooth Deep Smoothing Mask
LIL’AFIX Premium Hair Care Mask Keratin Complex
কেরাটিন ট্রিটেড চুলের যত্নে ঘরোয়া উপায়
৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস, ১ টেবিল চামচ আদার রস, ১টি পাকা কলা ও ১ টেবিল চামচ মধু একসাথে ভালোভাবে মিক্স করে নিন। চুলের লেন্থ অনুযায়ী পরিমাণ কিছুটা কমবেশি হতে পারে। প্যাকটি স্ক্যাল্পে অ্যাপ্লাই করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। কেরাটিন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ১ বার প্যাকটি চুলে অ্যাপ্লাই করলে চুল ভালো থাকবে। এছাড়া মাসে ১ বার হেয়ার স্পা করিয়ে নিতে পারেন। কেরাটিন ট্রিটেড চুলের জন্য এটাও বেশ ভালো।
কোন বিষয়গুলোতে নজর রাখতেই হবে?
- চুলের গোড়া ভেজা রাখবেন না
- চুল ভালো রাখতে অন্তত ৫/৬ মাস চুলে মেহেদি ব্যবহার না করাই ভালো
- হেয়ার কালার করাতে চাইলে অন্তত দুই সপ্তাহ পর করাতে হবে
- চুল আঁচড়াতে বড় দাঁতের বা কাঠের চিরুনি বেছে নিন
- ক্লোরিন বা সল্টি ওয়াটার অ্যাভয়েড করুন
- রোদে বের হওয়ার সময় পাতলা কাপড় বা স্কার্ফ দিয়ে চুল ঢেকে নিন
- খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখুন
চুল ভালো রাখার জন্যই কিন্তু কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করা হয়। নিয়ম না মানার কারণে অল্প সময়ে চুল নষ্ট হয়ে যাবে, এমনটি নিশ্চয়ই আপনিও চান না? তাই সময় থাকতেই কেরাটিন ট্রিটেড চুলের যত্ন নিন। স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের অথেনটিক বিভিন্ন প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন সাজগোজে। অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম অথবা সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক