এসো হে বৈশাখ গানের সুরে বাংলায় আরো একটি পহেলা বৈশাখ পা রাখতে চলেছে। আসছে নতুন এক বঙ্গাব্দ। এই সময়ের বৈশাখী উৎসব, বর্ষবরণের আয়োজন খুব মেকি লাগে, সবকিছুই কেমন যান্ত্রিক, প্রাণহীন রং আর লোকদেখানো আলোয় ভরপুর। প্রাণের উৎসবে প্রচুর রোশনাই, জাঁকজমক আছে, আছে ভরপুর কর্পোরেট আমেজ, কেবল প্রাণটুকুই মিইয়ে গেছে। তবুও, বর্ষবরণ তো হবেই। যে যেমন চায়, যার যেমন সাধ্য তেমন করেই হবে। তাই বঙ্গদেশের জায়গায় জায়গায় প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়ে গিয়েছে এর মধ্যেই। প্রস্তুতি নিয়ে নিন আপনিও। বৈশাখের প্রথম দিনটা ঝলমলিয়ে আসুক জীবনে।
[picture]
শাড়ি ঠিকঠাক করে রাখা হয়েছে অনেকেরই। আবার কারো কারো শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো চলবে শাড়ি বাছাই করার। আচ্ছা ভাবুন তো, যে কয়টা বর্ষবরণ উৎসব করেছেন এই অবধি, কখনো একদম সাদামাটা লাল পাড় সাদা শাড়ি পরা হয়েছে কি? না হলে এবার তেমন শাড়িতেই নতুন বছরের শুরুটা করতে পারেন। এটা ট্রেন্ড বলে নয়, বাংলার ট্রেডিশন মেনেই একবার এই সাজ ধারণ করা যেতে পারে। বিশ্বাস রাখতে পারেন, যেকোন মেয়েকে এই রকম শাড়িতে স্নিগ্ধ সুন্দর লাগবে, লাগতেই হবে! তো হয়ে যাক এবার চিরায়ত লাল পেড়ে সাদা শাড়ি?
ভরপুর গরমের সময়টার কথা ভুলে গেলে চলবে না। শাড়ি যাই হোক, হতে হবে সর্বোচ্চ আরামদায়ক। ভারী যেকোন কাপড়, সিল্ক বা জর্জেটের মতন উপাদানগুলি একেবারেই নিষেধ এই গরমে। সুতি তো গরমের আদর্শ কাপড়, সুতির কাছাকাছিই হোক আপনার শাড়ির উপাদান। তাঁতের শাড়ি, টাঙ্গাইল বা হালকা গোছের সুতি কাতানও চলতে পারে উৎসবের আয়োজনে। কাপড়টা একটু জমকালো হয়ই যদি তো নকশা থাকুক সাদামাটা। অন্যদিকে হালকা উপাদানের কাপড়ে কিছুটা ভারী নকশা মন্দ হবে না। মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি।
এই ঋতুতে সবচেয়ে মানানসই রঙ হলো নরম ধাঁচের রঙগুলি। হালকা কিন্তু উজ্জ্বল, কড়া ভাব না থাকলেও ঝলমল করবে তেমন সব রঙ এই সময়ের উপযোগী। নরম সবুজ, মিষ্টি বাদাম রঙ, পেঁয়াজ রঙ, হালকা হলুদ, হালকা কমলা, চাপা সাদা বা ঘিয়া রঙ এসব হলো উপযুক্ত গ্রীষ্মকালীন রঙ।
পুরো লাল-সাদার বাইরে কিছু ভাবতে চাইলে এসব রঙে শাড়ি পছন্দ করুন। তাতে নকশা থাকতে পারে গাঢ় রঙের, তবে জমিনে এমন হালকা রঙই বেশি ফুটে থাকবে এসময়।
হ্যান্ডপেইন্ট করে নিজেও বানিয়ে নিতে পারেন নিজের বৈশাখি শাড়ি। শাড়ির মাপে গজ কাপড় কিনবেন। দরকারের রংতুলি নিয়ে কাজে নেমে পড়বেন, ব্যাস! পুরো শাড়ি একরঙের রেখে আঁচলটা ভরিয়ে দিলেন ফুল আর লতাপাতায়। ডালা, কলস, ডুগডুগি এসমস্ত উপকরণ নকশা হয়ে উঠে আসতে পারে শাড়ির পাড়ে। কিংবা কেবল কাঁধ আর কুচিতে জ্যামিতিক আঁকিবুকি করা কাজ। নিজের করা নকশায় সাদামাটা শাড়িটাই অনন্য লাগবে। চেনা কেউ হ্যান্ডপেইন্টের কাজ করলে ফরমায়েশ দিয়েও তৈরি করিয়ে নিতে পারেন শাড়ি।সময় খুব বেশি লাগে না এভাবে শাড়ি বানিয়ে নিতে।
শাড়ি পরার আছে নানা রকম ঢঙ, নানান রকমফের। এক প্যাঁচে পরা শাড়ি আপনার বৈশাখি সাজে দারুণ মানিয়ে যেতে পারে। তবে, এই ধরনটা সবাইকে মানায় না। আপনাকে কেমন দেখাবে তা নিশ্চিত হয়ে নিন আগেই। ভিন্ন ঢঙে প্রায়শই শাড়ি পরার অভিজ্ঞতা থাকলে বরং খুব সাধারণ করেই পরুন এবার। মোট কথা, আগের বছরগুলির চেয়ে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা রাখুন শাড়ি পরার ঢঙে।
বাংলার উৎসব, আমাদের সংস্কৃতির উৎসব এই পহেলা বৈশাখ। উৎকট সাজগোজে এমন দিন একদমই মানায় না। শাড়ি যেমন হালকা গোছের হলেই সবচেয়ে ভালো দেখাবে, সাথে সাজসজ্জাও তেমন ছিমছাম থাকলেই বেশি মানানসই হবে।
এই দিনে বাইরে বের হলে একটা জিনিষ খুব বিচ্ছিরি ভাবে চোখে পড়ে, সকালে কয়েক পরত সাজ চড়িয়ে আসা রমণীদের সাজগোজ সব গলে গলে পড়ছে আর ত্বক ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে পুরো মুখে অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি করছে। নিজেকে সেভাবে ভাবতে কেমন লাগবে? ভালো তো লাগার কথা নয়! কাজেই চড়া সাজ এড়িয়ে যান। যতোটা সম্ভব হালকা সাজে বের হবার কথা ভাবুন। এই গরমে সারাটা দিন সতেজ থাকবেন কেমন করে সেটা মাথায় রাখুন। পহেলা বৈশাখ পথের উৎসব, বিয়েবাড়ি নয়।
কয়েকগাছি চুড়ি, কানে ছোট্ট ঝুমকো বা দুল, গলায় মালা, চুলে কিছু ফুল আর সাধের শাড়িটা, এতেই পরিপূর্ণ হয় এমন উৎসবের সাজ। শাড়ির রঙ গাঢ় হলে ফুল কেবল সাদা রঙের পরতে পারেন। কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় চুল বেঁধে রাখুন। আবার হালকা রঙের শাড়ির সাথে রঙিন সব ফুল মানিয়ে যাবে মাথায়। অযথা অনুষঙ্গের বোঝায় স্বস্তি সব জলাঞ্জলি দিয়ে সঙ না সাজলেও চলে। স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে থাকুক পহেলা বৈশাখের সারাটা দিনে, বাকি সারা বছরেও।
নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা রইলো!
মডেল – সানজিদা তন্বী
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব