চুল পড়ার সমস্যায় নারী-পুরুষ সবাই কম বেশি ভুগে থাকেন। পুরো বিশ্বজুড়েই একটি পরিচিত সমস্যা। এই চুল পড়ার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশন। অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকলেও জানেন না এটি কেন হয় এবং কীভাবে এটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশনের লক্ষণ নিয়ে বেশিরভাগ এর পরিষ্কার ধারণা নেই। তাই আজকের ফিচারে বিস্তারিতভাবে আপনাদের জানাবো স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশন নিয়ে।
স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশনের লক্ষণ কী কী?
স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশন বলতে মূলত আমাদের স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বকের প্রদাহকে বোঝানো হয়ে থাকে। এই সমস্যাটির লক্ষণগুলো হলো-
১. মাথার ত্বকে পিম্পল হওয়া
মুখের ত্বকের মতো মাথার ত্বকেও কিন্তু পিম্পল হতে পারে। যখন আমাদের হেয়ার ফলিকলগুলো তেল বা ডেড সেলস দিয়ে ক্লগড হয়ে যায়, তখনই এ পিম্পল হয়ে থাকে, যা আমাদের স্ক্যাল্পে ইনফ্ল্যামেশন তৈরি করে। তখন স্বাভাবিকের চাইতে চুল পড়ার পরিমাণ কিছুটা বেড়ে যায়।
২. মাথার ত্বকে ইচিনেস
মাথার ত্বকে ইচিনেস বা চুলকানিও কিন্তু স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশনের অন্যতম একটি লক্ষণ। অ্যালার্জি, ড্রাইনেস অথবা ফাংগাল ইনফেকশন থেকে স্ক্যাল্পে ইচিনেস হয়। আর এই ইচিনেস থেকেই সৃষ্টি হয় প্রদাহ।
৩. স্ক্যাল্পে লালচে ভাব
স্ক্যাল্পে রেডনেস বা লালচে ভাব দেখা যাওয়া ইনফ্ল্যামেশনের একটি লক্ষণ। ইনফ্ল্যামেশনের এরিয়াতে রক্ত প্রবাহ বেড়ে গেলে মাথার ত্বকে লালচে ভাব নজরে আসে। এমন হলে বুঝে নিতে হবে আপনার স্ক্যাল্প ইনফ্লেমড হয়ে আছে।
৪. স্ক্যাল্পে ইরিটেশন হওয়া
মাঝেমধ্যে অনেকের মাথার তালুতে হঠাৎ করেই জ্বালাপোড়ার অনুভূতি বা ইরিটেশন দেখা দেয়। এই অনূভুতিও ইনফ্ল্যামেশনের লক্ষণ।
৫. পুঁজ বের হওয়া
পিম্পল থেকে অথবা স্ক্যাল্প চুলকানোর পর যদি পুঁজ বা সাদা ধরনের তরল নির্গত হয় প্রদাহের স্থান থেকে, তবে তা স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশনের একটি লক্ষণ বলে ধরে নিতে হবে।
এটি কেন হয়?
স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন-
১. ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা ইস্টের সংক্রমণ
সাধারণত গরম বা হিউমিড আবহাওয়ায় মাইক্রো অর্গানিজমগুলোর সংক্রমণের হার বেশি থাকে। তেল চিটচিটে ও অপরিষ্কার স্ক্যাল্পে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ইস্ট ইত্যাদি মাথার ত্বককে আক্রমণ করে বেশি। যার ফলে দেখা দেয় ইনফ্ল্যামেশন।
২. ভাইরাসের সংক্রমণ
বিভিন্ন ভাইরাস, যেমন ব্লিস্টার, মিজেলস( measles) ইত্যাদি দ্বারা মাথার ত্বক সংক্রমিত হলে স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশন ঘটে থাকে।
৩. উকুন ও পোকামাকড়ের কামড়
মাথার ত্বক ও চুলে উকুনের সংক্রমণ হলে বা স্ক্যাল্পে কোনো পোকামাকড় কামড়ালে মাথার ত্বকে ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ দেখা দেয়। এর ফলে স্ক্যাল্পে রেডনেস দেখা দেয় এবং হেয়ার ফলিকলগুলো ড্যামেজ হয়।
৪. একজিমা ও সোরিয়াসিসের মতো চর্মরোগ
স্ক্যাল্পে যদি একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো জটিল চর্মরোগের সংক্রমণ হয়, তাহলে সেখান থেকে মাথার ত্বকে ইনফ্ল্যামেশন তৈরি হয়। এ ধরনের সমস্যায় অবশ্যই দেরি না করে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
৫. অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন
কোনো ধরনের হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট বা স্টাইলিং প্রোডাক্ট ব্যবহারে যদি মাথার ত্বকে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ঘটে, তাহলে সেটিও স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশনের একটি কারণ। আবার কিছু প্রোডাক্ট স্ক্যাল্পে বিল্ড আপ ও হেয়ার ফলিকল ক্লগ করার সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা থেকেও স্ক্যাল্পে ইনফ্ল্যামেশন দেখা দেয়।
স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
স্ক্যাল্প ইনফ্ল্যামেশন বেশ অস্বস্তিকর একটি সমস্যা। এই সমস্যার প্রতিকার করার জন্য যা করতে পারেন সেগুলো হলো-
১. স্ক্যাল্প সবসময় পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখতে হবে। ভেজা বা তেল চিটচিটে স্ক্যাল্পে বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোঅর্গানিজমের সংক্রমণ ঘটে। তাই চুলে তেল দেয়ার পর স্ক্যাল্পের জন্য মানানসই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে এবং অবশ্যই স্ক্যাল্পসহ চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
২. স্ক্যাল্প ম্যাসাজ একটি ভালো পদ্ধতি যা স্ক্যাল্পে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়াতে সাহায্য করে এবং স্ক্যাল্প ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই নিয়মিত স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে পারেন।
৩. ইনফ্ল্যামেশন কমাতে অ্যালোভেরা, অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ও নারিকেল তেল ভালো কাজ করে। এই উপাদানগুলো ব্যবহার করে হেয়ার প্যাক বানিয়ে স্ক্যাল্পে ব্যবহার করলে উপকারিতা পাওয়া যাবে।
৪. স্ক্যাল্পে বিল্ড আপ থাকলে অবশ্যই সপ্তাহে একদিন ক্ল্যারিফায়িং শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। কারণ বিল্ড আপ থেকেই পরবর্তীতে ইনফ্ল্যামেশনের সমস্যা দেখা দেয়৷ আর যদি খুশকির সমস্যা থাকে, তাহলে অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
৫. নখ দিয়ে মাথার ত্বকে খুঁটানো বা চুলকানো বন্ধ করতে হবে। কারন নখ থেকে মাথার ত্বকে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে পরবর্তীতে ইনফ্ল্যামেশন ঘটায়।
৬.উকুনের সমস্যা থাকলে তা রোধ করতে হবে কারণ উকুন স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েল খেয়ে ফেলে। তাই বাজারে বিভিন্ন উকুন নাশক শ্যাম্পু পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করলে উকুন থেকে মুক্তি মিলবে।
৭.মাথার ত্বকে প্রদাহ বেশি বেড়ে গেলে দ্রুত ডার্মাটোলজিস্ট দেখিয়ে ওষুধ বা ওরাল সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। ইনফ্ল্যামেশন থেকেই চুল পড়া, চুল ড্যামেজ হওয়া, পাতলা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয় তাই এ ব্যাপারে মোটেও হেলাফেলা করা যাবে না।
পরিশেষে বলতে চাই, স্ক্যাল্প থেকেই আমাদের চুলের উৎপত্তি ও বৃদ্ধি ঘটে। তাই স্ক্যাল্প হেলদি রাখা অত্যন্ত জরুরি। সুতরাং স্ক্যাল্পকে ভালো ও সুরক্ষিত রাখতে হবে, তবেই চুলও সুন্দর থাকবে। যেকোনো অথেনটিক মেকআপ, স্কিনকেয়ার ও হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্টসের জন্য আমি সবসময়ই সাজগোজ এর উপর ভরসা রাখি। আপনারাও ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। সাজগোজের বেশ কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। এ শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টারে অবস্থিত। এই শপগুলোর পাশাপাশি চাইলে অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার দরকারি বা পছন্দের সব প্রোডাক্টস।
ছবিঃ সাটারস্টক, সাজগোজ