সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস | নেতিবাচক খবর যখন দুশ্চিন্তার কারণ

সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস | নেতিবাচক খবর যখন দুশ্চিন্তার কারণ

Untitled design (3)

সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস সম্পর্কে শুনেছেন কখনো? আজকের পৃথিবীতে একবার খবরের কাগজের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে—গাজায় বোমা হামলা, ইউক্রেনে যুদ্ধ, আফ্রিকায় সহিংসতা, দেশে খুন, ধর্ষণ, দুর্যোগ, শিশু নির্যাতন- একটার পর একটা খারাপ খবর। এগুলো হয়তো আমাদের জীবনে সরাসরি ঘটছে না, কিন্তু মনের ওপর একটা চাপ, অস্বস্তি, এমনকি ভয় তৈরি করে। এই অবস্থা থেকে অনেকেই ভেতরে ভেতরে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন—যাকে বলা হয় সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস।

সাধারণত যেকোনও নেতিবাচক খবর- হোক সেটি পত্রিকা, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানা, কিংবা পরিচিত অপরিচিত কারও দুঃখ দুর্দশার খবর জেনে সেটি নিজের জীবনের সাথে মেলাতে শুরু করেন তখনই এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

চলুন, সহজভাবে বুঝে নিই এই বিষয়টি, আর জেনে নিই কীভাবে নিজেকে ভালো রাখা যায়।

সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস আসলে কী?

যখন আপনি কারো কষ্টের কথা শুনে বা দেখে নিজে কষ্ট পান, আতঙ্কিত হন, তখন সেটি আপনার উপর মানসিক প্রভাব ফেলে। এ কারণে আপনার মধ্যেও ট্রমার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

যেমন প্রতিদিন যুদ্ধের ছবি দেখে মনে হতে পারে, “আমার দেশেও যদি এমন হয়?” অথবা শিশু নির্যাতনের খবর শুনে আপনার নিজের সন্তানকে নিয়ে ভয় পেতে পারেন।

সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস যাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়

অতিরিক্ত নেতিবাচক খবর শুনলে যে কারও মধ্যেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে কারও কারও মধ্যে সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেস দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

১) আগে কোনো দুর্ঘটনা বা ট্রমার শিকার হয়েছেন যারা

২) শিক্ষক, ডাক্তার, সাংবাদিক বা মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীরা, যাঁরা নিয়মিত এসব ঘটনা শোনেন

৩) আইনজীবী যারা নির্যাতনের মামলায় কাজ করেন

৪) সহিংসতা বা যুদ্ধপীড়িতদের সাথে কাজ করা যেকোনো পেশাজীবী

সেকেন্ডারি ট্রমাটিক স্ট্রেসের লক্ষণ

১) মন খারাপ থাকে, কিছুতেই ভালো লাগে না

২) আবেগের ওঠা নামা

৩) রাতে ঘুমাতে সমস্যা হয়

৪) বারবার সেই ঘটনার কথা মনে পড়া

৫) সবসময় অসহায় মনে হয় নিজেকে

এছাড়াও কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে যাওয়া, সবসময় দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকার মতো লক্ষণও থাকতে পারে। সহজ ভাষায় যুদ্ধ বা সহিংসতার ভিডিও দেখার পর রাতে বারবার সে ছবি মনে পড়া, খাওয়াদাওয়া বা কাজে মন না বসা—এসবই লক্ষণ।

কীভাবে নিজেকে ভালো রাখবেন?

১. খবর দেখায় সীমা টানুনঃ প্রতিদিন আধাঘণ্টার বেশি সময় না। বারবার একই খারাপ খবর দেখা থেকে বিরত থাকুন।

২. “নিউজ ডিটক্স” করুনঃ কিছুদিনের জন্য খবর দেখা একদম বন্ধ করুন। বই পড়ুন, প্রকৃতিতে হাঁটুন, প্রিয় গান শুনুন।

৩. অনুভূতিগুলোকে স্বীকার করুনঃ নিজেকে বলুন—“হ্যাঁ, আমি ভীত/কষ্টে আছি।” এটি লুকানোর কিছু নয়।

৪. নিজের পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানঃ কাজ শেষে একটু হাসি, গল্প, আড্ডা মানসিক শান্তি দেয়।

৫. নীরব না থেকে প্রতিবাদে যুক্ত থাকুনঃ যুদ্ধ বা সহিংসতার প্রতিবাদ করতে পারেন পোস্ট লিখে, সচেতনতা বাড়িয়ে, কিংবা দান করে।

৬. প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিনঃ এই অনুভূতি যদি আপনার কাজে বা ঘুমে প্রভাব ফেলে, মানসিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

মনে রাখবেন—আপনি একা নন

আজকের দুনিয়ায় প্রায় সবাই কমবেশি এই মানসিক চাপে ভুগছেন। এটি দুর্বলতা নয়, বরং মানবিকতার পরিচয়। খারাপ কিছু দেখলে কষ্ট পাওয়া আমাদের হৃদয়ের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু নিজের যত্ন না নিলে আপনি ভেঙে পড়তে পারেন। এই পৃথিবীতে যুদ্ধ চলছে, মানুষ কাঁদছে, নিষ্পাপ শিশুরা হারাচ্ছে তাদের পরিবার—এসব দেখে চোখ ভিজে ওঠা অর্থ আপনি একজন মানবিক অনুভূতি সম্বলিত মানুষ। কিন্তু আপনি যদি ভেতর থেকে ভেঙে পড়েন, তাহলে কাউকে সাহায্য করাও সম্ভব হবে না। সবসময় যে কোনও নেতিবাচক খবর শুনে নিজের সাথে মেলাতে যাবেন না, মনে রাখবেন আপনি একজন ভিন্ন মানুষ, আপনার পরিস্থিতি আলাদা। জরুরি নয় যে একই ঘটনা আপনার জীবনেও ঘটবে।

বৈশ্বিক বিষয়গুলো নিয়ে জ্ঞান রাখতে খবর তো দেখতেই হবে। কিন্তু খবর দেখুন সচেতনভাবে, নয়নে জল আসলে আসুক, কিন্তু নিজের মনকে ভালো রাখার চেষ্টাটা করুন। আপনি ভালো থাকলে, আপনার আশেপাশের মানুষগুলোও একটু ভালো থাকবে। আপনার সুস্থ মনই একদিন শান্তির পৃথিবী গড়ার অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে।

ছবি- সাটারস্টক

0 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort