উত্তরের ঝিরি ঝিরি বাতাস বইতে শুরু করেছে; যদিও শীতের আগমন ঘটেনি এখনো তবে আর বোধ হয় খুব একটা দেরিও নেই। অন্তত দিনপঞ্জি তো তাই বলছে। শীত পড়ার সাথে সাথেই ত্বক ও চুলে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে থাকে। শীতের রুক্ষতা শুধু পাতা ঝরার দিনই নিয়ে আসে না, নিয়ে আসে চুল পড়ার দিনও। চুল পড়ার চিন্তায় অনেকে হয়ত শীতের পিঠা পুলিতেও সেই স্বাদ পান না। আর অপেক্ষায় থাকেন কবে শেষ হবে ভয়ঙ্কর শীতকাল। সমস্যাটি নিশ্চয়ই অনেকের সাথেই মিলে গেছে, নয় কি? আমিও একই সমস্যার সম্মুখীন। শীত এখনো জেঁকে না বসলেও অপরিমিত চুল পড়া শুরু হয়ে গেছে তাই ভাবলাম একটা এন্টি হেয়ার ফল শ্যাম্পু ব্যবহার করে দেখি। বাসার পাশের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কিনে আনলাম ক্লিয়ার অ্যান্টি হেয়ারফল শ্যাম্পু। তিন সপ্তাহ ব্যবহার করার পরে ভাবলাম এটা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতাটা সাজগোজের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি।
শুরুতেই বলে রাখি আমার চুল স্বাভাবিক ধরনের। গরমে প্রচুর ঘাম হয় আর শীতে শুষ্ক হয়ে যায়। গরমে হয়ত তৈলাক্ততার কারণে অনেকের স্ক্যাল্পেই খুশকি দেখা যায় না, যা কি না শীত আসতে না আসতেই চোখে পড়ে। আর খুশকি হল চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এ ব্যাপারটি হয়ত অনেকেই জানেন না বা জানলেও সেই ভাবে আমলে নেন না। প্রস্তুতকারক কোম্পানির দাবি এটি যেমন খুশকিনাশক শ্যাম্পু তেমনি চুল পড়াও কমাবে। এটাইতো আমার চাই! তবে দাবী করলেই তো হবে না কথায় এবং কাজে মিল থাকতে হবে তো। এবার ব্যবহারের পালা।
প্রথমত গন্ধটা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। শ্যাম্পুটি অন্যসব খুশকি নাশক শ্যাম্পুর মত চুলকে রুক্ষ-শুষ্ক করে দেয় নি। খুশকিও বেশ পরিষ্কার করে আর সেই সাথে চুলকে নরম ও কোমল করতে সাহায্য করে। আমি ৩ সপ্তাহ ব্যবহারের পর দেখলাম যে চুল পড়াও কিছুটা কমেছে। আমি আগেই বলেছি যেহেতু খুশকি চুল পড়া তরান্বিত করে আর শ্যাম্পুটি খুশকির বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর তাই স্বভাবতই চুল পড়া কমার কথা। বিশ্বজুড়ে এন্টি ড্যানড়্রাফ শ্যাম্পুগুলোতে যে সকল একটিভ উপাদান ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে Zinc pyrithione বেশ কার্যকরী। ক্লিয়ার অ্যান্টি হেয়ারফল শ্যাম্পুর লেভেলে দেয়া ইনগ্র্যাডিয়েন্ট লিস্টে Zinc pyrithione দেখে খুশিই হলাম। যেহেতু ইউনিলিভার বিশ্বজুড়ে অনেক নামীদামি কোম্পানি তাই আশাকরি Zinc pyrithione সঠিক মাত্রাই ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া sodium loreal sulphate যা কিনা ফেনা হতে সাহায্য করে কিন্তু মাত্রাত্রিরিক্ত থাকলে চুলে, চোখ এবং স্কাল্পের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর। এই উপাদান পরিমাণে বেশি থাকলে চোখে এবং মাথার তালুতে এক ধরনের ইরিটেসন হয় তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন কিছু ফিল করিনি তাই আমার ধারণা মাত্রা ঠিকই আছে।
শ্যাম্পুটি ব্যবহার করে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট। বোনাস হিসেবে প্রতিবার চুল শুকানোর পর দেখি চুলের ভলিউমটাও একটু বেড়েছে।
যেভাবে ব্যবহার করেছিঃ
শ্যাম্পুটিকে অন্য সব শ্যাম্পুর মতই ব্যবহার করেছি । ভেজা চুল ও স্ক্যাল্পে পরিমাণমত শ্যাম্পু নিয়ে, আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ২-৩ মিনিট ম্যাসাজ করে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলেছি এবং প্রতিবার ব্যবহারের পর-পরই ক্লিয়ারের কন্ডিশনারও ব্যবহার করেছি। কেননা প্রত্যেকটি শ্যাম্পুই তার কন্ডিশনারের সাথে বেস্ট কাজ করে এবং এটার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়।
ভালো ফলাফল পেতে নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহারের পাশাপাশি যে অভ্যাসগুলো করা জরুরীঃ
-পরিমিত ঘুম, ৮-১০ ঘণ্টা।
-প্রচুর পানি পান করা।
-দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা।
-চিরুনি, তোয়ালে ও বালিশের কভার পরিষ্কার রাখা।
মাসে ৩-৪ বার হেয়ার প্যাক ব্যবহার
যেমন-
১. মধু,ডিম,কলা আর ভিনেগারের হেয়ার প্যাক।
২. মেয়নিজ,তেল,গ্লিসারিন ও ভিট ই ক্যাপের হেয়ার প্যাক
৩. অ্যালোভেরার হেয়ার প্যাক
৪. মেহেদী পাতা বাটা, টকদই ও চায়ের লিকারের হেয়ার প্যাক
৫. মেথি গুঁড়া, পাকা কলা ও নারিকেল তেলের হেয়ার প্যাক
৬.আমলকির রস ও নারিকেলে তেলের হেয়ার প্যাক।
পছন্দমত যে কোনো একটি প্যাক বা একেক সময়ে একেকটা ব্যবহার করেও দেখতে পারেন, যেটা সবচেয়ে বেশি মানিয়ে যাবে সেটাই কন্টিনিউ করতে পারেন।
লিখেছেনঃ রোজা স্বর্ণা
মডেলঃ সারাহ
ছবি -টাইমস স্টুডিও