মাসখানেক আগের কথা। রোজকার ব্যস্ততায় স্কিনের আলাদাভাবে তেমন যত্ন নেওয়া হচ্ছিল না। এদিকে ত্বকের গ্লো ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছিল। যেহেতু আমি প্রতিদিন বেশ ব্যস্ত থাকি, তাই আমার দরকার ছিল ত্বকের ব্রাইটনেস ও গ্লো ফিরিয়ে আনার ইনস্ট্যান্ট কোনো সল্যুশন। তখনই খোঁজ পেলাম ডার্মালজিকার Glass Complexion Brightening and Rejuvenating Sheet Mask এবং Instant Glow Glowing and Detoxifying Sheet Mask এর। সত্যি বলতে এ দুটো শিট মাস্ক ব্যবহারের পর রেজাল্ট ছিল অবিশ্বাস্য! আজকে আপনাদের জানাবো গ্লাস স্কিন ও ইনস্ট্যান্ট গ্লোয়িং ইফেক্ট পাওয়ার জন্য শিট মাস্ক দুটো ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নিয়ে।
শিট মাস্ক কী?
কোরিয়ান স্কিন কেয়ার রুটিনের অ্যাসেনশিয়াল একটি পার্ট শিট মাস্ক। বর্তমানে বিউটি ওয়ার্ল্ডে এর জনপ্রিয়তা অনেক। শিট মাস্ক হচ্ছে মুখের আদলে তৈরি করা একটি মাস্ক। এটি মূলত ফেব্রিকের একটি কাট আউট। প্যাকেটের মধ্যে লিকুইড বা তরলে এই কাট আউটটি ভেজানো থাকে। এই তরলটি হচ্ছে এক ধরনের সিরাম যেটাতে ত্বকের জন্য উপকারী বিভিন্ন উপাদান থাকে। স্কিন ময়েশ্চারাইজড রাখতে, ফেইসে গ্লো ফিরিয়ে আনতে শিট মাস্ক বেশ কার্যকর।
গ্লাস স্কিন ও ইনস্ট্যান্ট গ্লোয়িং ইফেক্ট পেতে শিট মাস্ক
Glass Complexion Brightening and Rejuvenating Sheet Mask
‘গ্লাস’ শব্দটা শুনে প্রথম কী ভাবনায় আসছে বলুন তো? গ্লাস স্কিনের মতো ব্রাইটনেস, তাই না? আমিও ব্যবহারের শুরুতে এই ভাবনা মাথায় রেখেই শিট মাস্কটি কিনেছিলাম।
এ শিট মাস্কে যে যে উপাদান রয়েছে
এই শিট মাস্কের প্রধান দুটো উপাদান ইথাইল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ও ব্ল্যাকবেরি। স্কিন ব্রাইট করার জন্য এ দুটো উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
ইথাইল অ্যাসকরবিক অ্যাসিডঃ স্কিন ব্রাইট করার জন্য ভিটামিন সি সবচেয়ে কার্যকরী। আর ভিটামিন সি এর শক্তিশালী রূপ হচ্ছে ইথাইল অ্যাসকরবিক এসিড। এটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ত্বককে আরও ভালো সেল টার্নওভারে সাহায্য করার জন্য কোলাজেন গঠনকে বাড়িয়ে তোলে এই উপাদানটি।
ব্ল্যাকবেরিঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি চমৎকার উৎস ব্ল্যাকবেরি। যা ত্বককে ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং স্কিনের সেল ড্যামেজ হওয়া কমায়।
উপকারিতা
Dermalogika Glass Complexion Brightening and Rejuvenating Sheet Mask টি স্কিনকে ব্রাইট করে খুব অল্প সময়ে গ্লো ফিরিয়ে আনে এবং স্কিনের হাইড্রেশন ধরে রাখে। শিট মাস্কটির আরও বেশ কয়েকটি উপকার রয়েছে। সেগুলো হচ্ছেঃ
- স্কিনের কমপ্লেকশন ব্রাইট করে
- স্কিনকে সফট রাখে
- আন ইভেন স্কিনটোন রিপেয়ার করে এবং টেক্সচার ইমপ্রুভ করে
- ডার্ক স্পটস ফেইড করে এবং হাইপারপিগমেন্টেশন কমায়
- কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়াতে সাহায্য করে
Instant Glow Glowing and Detoxifying Sheet Mask
এবার আসি সেকেন্ড শিট মাস্কের কথায়। স্কিনের উপর দিয়ে প্রতিদিন অনেক ধকল যায়। যেমন- ধুলোবালি, সূর্যরশ্মি, ঘাম ইত্যাদি। প্রতিদিন শুধু ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়েও কিন্তু চেহারায় গ্লো আনা সম্ভব হয় না। এজন্য অবশ্যই স্কিনের একটু বাড়তি কেয়ারের প্রয়োজন।
এ শিট মাস্কে কী কী উপাদান রয়েছে?
গোল্ডঃ শিট মাস্কে গোল্ড? অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার একদম কিছু নেই। স্কিন কেয়ারে গোল্ড প্রাচীন সময় থেকেই ব্যবহার করা হতো। স্কিনের কোলাজেন ও ইলাস্টিসিটি বাড়িয়ে ত্বককে তারুণ্যময় করে তুলতে গোল্ড বেশ কার্যকর। এই শিট মাস্কে কলোইডাল (Colloidal) অর্থাৎ গোল্ডের ন্যানো পার্টিকেলস ফ্লুইড আকারে রয়েছে।
অ্যাকটিভেটেড চারকোলঃ ন্যাচারাল পোরস ক্লিন করতে এবং অয়েল ব্যালেন্স করতে অ্যাকটিভেটেড চারকোল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এটি স্কিনের ইমপিওরিটিস দূর করে স্কিনকে হেলদি করে তোলে।
উপকারিতা
Dermalogika Instant Glow Glowing and Detoxifying Sheet Maskটি স্কিনকে ডিটক্সিফাই করে। সাথে স্কিন হাইড্রেটেড রেখে ইনস্ট্যান্ট গ্লো ফিরিয়ে আনতে এর জুড়ি নেই। মেকআপ করার আগে এই শিট মাস্ক ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্কিন ড্রাই ফিল হবে না। স্কিন হাইড্রেটেড রাখবে অনেকটা সময়।
এর আরও কিছু উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
- স্কিন ক্লিন করে ভেতর থেকে ইমপিওরিটিস দূর করে
- স্কিন এক্সফোলিয়েট এবং পোরস আনক্লগ করে
- সিবাম প্রোডাকশন কন্ট্রোল করে
- স্কিন সফট, প্লাম্প এবং গ্লোয়িং করে
- কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়
মাস্কের সাথে থাকা এসেন্সের টেক্সচার ও স্মেল
১। মাস্কটি মুখে লাগানোর সাথে সাথে বেশ কুলিং একটা ইফেক্ট দেয়।
২। এসেন্সটুকু অ্যালোভেরা জেলের মতো কিছুটা আঠালো।
৩। এতে কোনো স্মেল নেই। যার কারণে স্মেল ইরিটেশন নিয়ে যারা দ্বিধায় আছেন তারা নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন।
কীভাবে অ্যাপ্লাই করবেন?
দুটো শিট মাস্কের ব্যবহারবিধি একই রকম। তাই একসাথেই বলে দিচ্ছি।
১। শিট মাস্ক ইউজ করার আগে অবশ্যই স্কিন ও হাত ভালোভাবে ক্লিন করে নিতে হবে।
২। প্যাকেট থেকে মাস্কটি বের করে মুখের উপর থেকে আস্তে আস্তে নিচ পর্যন্ত অ্যাপ্লাই করতে হবে। স্কিনের সাথে যেন কোনো গ্যাপ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
৩। শিট মাস্ক ছাড়াও প্যাকেটের ভেতর বাড়তি কিছু পরিমাণে এসেন্স থাকে। সেটুকু গলায়, ঘাড়ে, কনুই ও হাঁটুতে ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করে নিন।
৪। ১৫/২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
৫। এবার মাস্কটি উঠিয়ে হাত দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে নিন। ফেইসে রয়ে যাওয়া এসেন্সটুকু আস্তে আস্তে অ্যাবজর্ব হয়ে যাবে।
৬। মাস্কটি ইউজ করার পর আলাদা করে মুখ ধোয়ার প্রয়োজন নেই।
৭। এবার স্কিন টাইপ অনুযায়ী একটি ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
৮। গরমের সিজনে ব্যবহারের আগে ১০-১৫ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিলে কুলিং ও সুদিং ইফেক্ট দিবে।
৯। সপ্তাহে ১/২ দিন শিট মাস্ক ব্যবহার করার সাথে সাথে অবশ্যই ডেইলি স্কিন রুটিন মেনটেইন করতে হবে।
কারা ব্যবহার করতে পারবেন?
১। সব ধরনের স্কিনেই ব্যবহার করা যাবে। তবে সেনসিটিভ স্কিন হলে আগে প্যাচ টেস্ট করে নিলে বেটার।
২। প্রেগনেন্ট মহিলারাও ইজিলি এটি ইউজ করতে পারবেন। তবে যে কোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সতর্কতা
- ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিলে দুশ্চিন্তা থাকবে না
- শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন
- সূর্যের আলো ও তাপ আসে এমন জায়গা থেকে দূরে ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে রাখুন
- শুধুমাত্র বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য প্রযোজ্য
প্যাকেজিং
দুটো মাস্কের প্যাকেটই বেশ হালকা। Glass Complexion শিট মাস্কটির কালার হালকা পিংক। Instant Glow শিট মাস্কটি গোল্ডেন কালারের। দুটোই ফেব্রিক কাট আউট এবং সিরামে ডুবানো থাকে।
ডার্মালজিকা ব্র্যান্ডের শিট মাস্কই কেন ব্যবহার করছি?
বাজারে ডার্মালজিকার বেশ কয়েকটি প্রোডাক্ট আছে। এই ব্র্যান্ডের স্লোগান হচ্ছে ‘ক্লিন বিউটি উইথ পিওর সায়েন্স’। তারা এখন পর্যন্ত যে কয়টি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেছে তার সবগুলোতেই প্রোপার সায়েন্স অ্যাপ্লাই করা হয়েছে। আর এ জন্য তাদের এই শিট মাস্কটা আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে।
এই তো জানিয়ে দিলাম দুই ধরনের শিট মাস্কের কথা। আপনার প্রবলেমের ধরন বুঝে আপনিও বেছে নিতে পারেন শিট মাস্কগুলো। অনেকে ভাবেন শিট মাস্কের দাম বেশি। আচ্ছা একটা কথা বলুন তো, আপনার স্কিন সারাদিন যে ধকলগুলো সহ্য করে তার জন্য সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কিনকে কিছুটা প্যাম্পার করা যায় কিনা? এতে শুধু যে স্কিন ভালো থাকবে তা কিন্তু নয়। পাশাপাশি আপনার মনও ভালো থাকবে। সেলফ কেয়ারের বিভিন্ন অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। এই শপগুলো থেকে অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে দরকারি প্রোডাক্টগুলো কিনতে পারেন।
ছবিঃ সাজগোজ