এই পৃথিবীতে সব ক্ষেত্রেই আছে বৈচিত্র্য। ভিন্নতা নেই কোথায়, বলুন তো? আমাদের স্কিনটোন ও স্কিন টাইপেরও আছে বিভিন্ন ধরন। নিশ্চয়ই খেয়াল করে দেখেছেন, আমাদের থেকে আফ্রিকান মহাদেশের মানুষদের স্কিনটোন ও ফেইস ফিচারে বেশ বড় তফাৎ আছে। আবার মিশরীয়দের ফেইস কাটিং ও স্কিনটোন আমেরিকান বা অস্ট্রেলিয়ানদের সাথে ম্যাচ করে না। খুবই স্বাভাবিক! ঠিক একইভাবে ভৌগোলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোর মানুষের স্কিন টাইপে ও টোনে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তবুও কিছু কমন ফ্যাক্ট আছে এশিয়ান স্কিনের! আজ আমরা জানবো এশিয়ানদের স্কিন কেন ডিফারেন্ট এবং কোন স্কিন কনসার্নগুলো অন্যদের তুলনায় বেশি দেখা দেয়। চলুন শুরু করি তাহলে।
এশিয়ান স্কিনের ৬টি কমন কনসার্ন
একই মহাদেশের হলেও জাপান, কোরিয়ার সাথে ইন্ডিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মানুষের স্কিনটোন, ফেইস ফিচারে কিন্তু ভিন্নতা আছে। তারপরও কমন কিছু বিষয় আছে যা মোটামুটি সব ক্ষেত্রে মিলে যায়। সাউথ এশিয়ার দেশগুলোতে আবহাওয়া, জীবনযাত্রার ধরন মোটামুটি একই। জাপানিজ, কোরিয়ানদের স্কিন টেক্সচার আমাদের থেকে আলাদা। লাইফস্টাইল, ফুড হ্যাবিট, পল্যুশন লেভেল, জেনেটিক্যাল ইস্যু সব কিছু মিলিয়ে এই বৈচিত্র্য দেখা যায়। চলুন আজ কিছু ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট জেনে নেই।
১) এশিয়ানদের স্কিনে এজিং প্রসেস স্লো
ককেশিয়ানদের তুলনায় এশিয়ানদের ত্বকে সাধারণত বয়সের ছাপ একটু দেরিতে ভিজিবল হয়। কারণ এশিয়ানদের ডার্মিস লেয়ার তুলনামূলক থিক। ডার্মিস হলো আমাদের স্কিনের লেয়ার যেখানে কোলাজেন ও ইলাস্টিন প্রোটিন থাকে। কোলাজেন ও ইলাস্টিনের পরিমাণ বেশি থাকলে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস কম ভিজিবল হয়। তাই বলা যেতে পারে এদিক দিয়ে এশিয়ানরা কিন্তু বেশ লাকি।
২) স্কারস সহজে বসে যায়
সুবিধা যেমন আছে, তেমনি আছে কিছু অসুবিধা! এশিয়ান স্কিনে স্পটস, স্কারস খুব ইজিলি বসে যায়। স্পেশালি ব্রণের দাগ! কারণ আমাদের স্কিনের এপিডার্মিস লেয়ারের একদম বাইরের আবরণে পাতলা স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম থাকে (যেখানে ডেড স্কিন সেলস জমা হয়)। তুলনামূলক পাতলা স্তর হওয়ার কারণে স্কারস সহজে বসে যায়, হিলিং প্রসেসে একটু সময় বেশি লাগে।
৩) এশিয়ানদের স্কিন একটু বেশিই সেনসিটিভ
একটু আগে যে থিন লেয়ারের স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম এর কথা বললাম, এটি স্কিন সেনসিটিভিটির একটি কারণ। হিট, কোনো স্পেসিফিক কেমিক্যাল খুব সহজেই স্কিনকে ইরিটেড করতে পারে। ড্রাই বা অয়েলি- স্কিন টাইপ যেমনই হোক, সেনসিটিভিটির সমস্যা হতে পারে যে কারোরই। জেনেটিক, এনভাইরনমেন্ট, লাইফস্টাইল এখানে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। এশিয়ানদের মধ্যে এই স্কিন কনসার্ন একটু বেশি দেখা যায়।
৪) অন্যদের তুলনায় সেবাম প্রোডাকশন বেশি হয়
এশিয়ানদের মধ্যে অয়েলি স্কিন টাইপই বেশি লক্ষ্য করা যায়। সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে প্রোডিউস হওয়া সেবাম স্কিন সারফেসকে স্মুথ রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত সেবাম প্রোডিউস হওয়া মানেই পিম্পলস, এনলার্জড পোরসের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া। এশিয়ার দক্ষিণ অঞ্চলে হিউমিডিটি, ওয়েদার, ফুড হ্যাবিট মোটামুটি একই ধরনের। আর এই এরিয়াতেই বেশিরভাগ মানুষের স্কিন টাইপ অয়েলি।
৫) হাইপারপিগমেন্টশন ও মেলাজমা বেশি দেখা দেয়
পশ্চিমাদের (যাদের স্কিনটোন লাইট) থেকে এশিয়ানদের মেছতা, পিগমেন্টেশন এই ধরনের স্কিন প্রবলেম একটু বেশি দেখা যায়। কিন্তু কেন? মেলানিন শব্দটি তো বেশ পরিচিত, তাই না? মেলালিন ত্বকের রং নির্ধারণ করে, আমরা অনেকেই জানি। এশিয়ানদের স্কিনে মেলানিনের (Eumelanin – ব্রাউন ব্ল্যাক পিগমেন্ট) পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে। সূর্যের UV রশ্মির সংস্পর্শে আসলে এবং অন্যান্য কারণে যখন মেলানিন প্রোডাকশন বেড়ে যায়, তখন ত্বকে ধীরে ধীরে হাইপারপিগমেন্টশন ও মেলাজমা দেখা দেয়।
৬) দ্রুত ময়েশ্চার লস হয়
ডার্মাটোলজিস্টরা একটি টার্ম ব্যবহার করেন তা হলো ‘ট্রান্স এপিডার্মাল ওয়াটার লস’, যার মানে নন সোয়েটিং কন্ডিশনে স্কিন থেকে কতটুকু ময়েশ্চার লস হচ্ছে সেটির পরিমাণ। কিছু কিছু রিসার্চে এটি লক্ষ্য করা যায় যে এই রেট এশিয়ানদের ক্ষেত্রে বেশি। আমাদের ওয়েদার কন্ডিশন, জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশন অনেক কিছুই এর সাথে রিলেটেড।
কয়েকটি ইফেক্টিভ স্কিনকেয়ার টিপস
- অয়েল কন্ট্রোল ও পোরস মিনিমাইজের জন্য নিয়াসিনামাইড ইনক্লুড করুন স্কিনকেয়ার রুটিনে
- প্রোপার সান প্রোটেকশন হাইপারপিগমেন্টেশন, সানবার্ন প্রিভেন্ট করে; তাই দিনের বেলা সানস্ক্রিন মাস্ট
- স্কিনের হাইড্রেশন লেভেল ব্যালেন্স করতে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
- সেনসিটিভ স্কিনের যত্নে মাইল্ড, অ্যালকোহল ফ্রি, প্যারাবেন ফ্রি স্কিনকেয়ার রেঞ্জ বেছে নিন
- একনে স্কারস প্রিভেন্ট করতে একনে পপ করা থেকে বিরত থাকুন
- স্কিন টাইপ, বয়স, সিজন, কনসার্ন সবকিছু বিবেচনায় রেখে সঠিক প্রোডাক্ট বেছে নিন
এশিয়ানদের স্কিন কেন ডিফারেন্ট এবং কোন কনসার্নগুলো বেশি দেখা যায়, সেটা নিয়ে অনেক কিছুই আজ আমরা জানলাম। বেশ ইন্টারেস্টিং ছিলো আজকের টপিক, তাই না? আবারও চলে আসবো নতুন কোনো টপিক নিয়ে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস অ্যাভেইলেবল আছে সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ, ওয়েবসাইট ও অ্যাপে। সাজগোজের ফিজিক্যাল শপের লোকেশনগুলো হলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার। এছাড়াও অনলাইনে পারচেজ করতে চাইলে ভিজিট করুন শপ.সাজগোজ.কম এ।
ছবি- সাটারস্টক, envato