ফলের জুস কার না ভালো লাগে? আর তা যদি হয় একদম ফ্রেশ ফল, তাহলে তো কথাই নেই। যেকোনো ওয়েদারে- বিশেষ করে গরমে তো ফলের জুসের চাহিদা বেশ বেড়ে যায়। অনেকেই আছেন যারা ফল খেতে পছন্দ করেন না, কিন্তু ফলের জুস তাদের বেশ পছন্দ। সব ফলই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তবে কিছু ফলের নিউট্রিয়েন্ট কনটেন্ট এত বেশি যে ডায়েটে ইনক্লুড করলে অনেক হেলথ বেনিফিট পাওয়া যায়। আনার তেমনই একটি ফল। আজকের ফিচারে জানাবো আনারের রসের গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত।
আনার এর নিউট্রিশনাল ভ্যালু জানেন কি?
ছোট ছোট দানা দিয়ে পরিপূর্ণ লাল রংয়ের ফল আনার দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি শরীরের জন্য বেশ উপকারী। চলুন দেরি না করে আনারের নিউট্রিশনাল ভ্যালু জেনে নেওয়া যাক।
প্রতিটি আনারে রয়েছে,
- ক্যালরি ২৩৪
- প্রোটিন ৪.৭ গ্রাম
- ফ্যাট ৩.৩ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৫২ গ্রাম
- ফাইবার ১১.৩ গ্রাম (ডেইলি ভ্যালু অনুসারে)
- ভিটামিন -সি ৩২%
- ভিটামিন কে ১৮%
- ভিটামিন বি৫ ১৩%
- ভিটামিন ই ৭%
- ফ্লোটেট ২৭%
- ম্যাগনেসিয়াম ৮%
- ফসফরাস ৮%
- পটাসিয়াম ১৩%
আমাদের ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য আনারের রসের গুণাগুণ
আনার এমন একটি ফল যেটি আমাদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে খুবই প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আমাদের ত্বক ভালো রাখতেও এটির জুড়ি মেলা ভার। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক আনারের রসের গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়
আনারের নিউট্রিয়েন্ট কনটেন্ট খেয়াল করলে দেখা যায়, এতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ অনেক বেশি। আমাদের শরীর শুধুমাত্র ৩% এর মতন আয়রন কনজিউম করতে পারে। এক্ষেত্রে ভিটামিন সি আমাদের শরীরে আয়রন অ্যাবজর্ব করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের হিমোগ্লোবিন লেভেল ঠিক থাকে এবং অ্যানিমিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ বৃদ্ধি করে
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এমন একটি কমপাউন্ড যা শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি রেডিক্যালের ড্যামেজ হতে রক্ষা করে। ফ্রি রেডিক্যাল শরীরে বিভিন্ন ক্রোনিক ডিজিজের সূত্রপাত ঘটায়। আনারের রসে আছে বিভিন্ন পলিফেনোলিক কম্পাউন্ডস, যেমনঃ পিউনিকালাজিনস, এনথোসায়ানিনস ও হাইড্রোলাইজেবল ট্যানিনস যেগুলো পাওয়ারফুল অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে পরিচিত। এগুলো শরীরকে ফ্রি রেডিক্যাল হতে রক্ষা করে। সেই সাথে এই দুইটি কমপাউন্ডস এজিং প্রসেস স্লো করতেও সাহায্য করে।
ইমফ্ল্যামেশন কমায়
আনারের রসে থাকা পলিফেনোলিক কম্পাউন্ডস শরীরের ইনফ্ল্যামেটরি কন্ডিশনকে সহজে ট্রিট করতে পারে।
স্কিন হেলদি রাখে
কোলাজেন এমন একটি উপাদান যা ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত রাখতে সাহায্য করে। আনারের রস কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়াতে সাহায্য করে। যার ফলে স্কিন হয় সুন্দর। সেই সাথে এটি ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকেও আমাদের ত্বককে প্রোটেক্ট করে।
ব্রেইনের কার্যকারিতা বাড়ায়
প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় আনারের জুস ব্রেইনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং মেমোরি ইমপ্রুভ করতে হেল্প করে।
হজমে সাহায্য করে
আনারে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য ন্যাচারাল রেমিডি হিসাবে কাজ করে৷ তাছাড়া এটি গাটে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে গাটকে হেলদি রাখে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
আনারের জুসে ন্যাচারাল সুগার কম্পাউন্ডস থাকায় এটি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং প্রি ডায়াবেটিস সিম্পটম আছে, তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
লো ক্যালরি ও হাই ফাইবার সমৃদ্ধ এই ফল ওয়েট ম্যানেজমেন্টে সাহায্য করে। এই ফল বারবার ক্ষিদে লাগার অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ওভার ইটিং কমায়। তাই ডায়েটে আনারের জুস রাখতে পারেন।
ক্যানসার থেকে প্রোটেকশন দেয়
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আনারের রসের নিউট্রিয়েন্ট কনটেন্ট ক্যানসার সেল গ্রোথে বাধা প্রদান করে। বিশেষ করে ব্রেস্ট ও প্রোস্টেট ক্যানসার নিরাময়ে এটি বেশ উপকারী।
পোস্ট ওয়ার্কআউট কন্ডিশন ইমপ্রুভ করে
যারা রেগুলার ওয়ার্কআউট করেন, তাদের জন্য ওয়ার্কআউটের পর এক গ্লাস আনারের জুস হতে পারে ক্লান্তিভাব দূর করার বেস্ট অপশন।
কিডনি হেলথ ইমপ্রুভ করে
আনারের রস কিডনি ফাংশনকে ইমপ্রুভ করে। এটি কিডনিতে স্টোন হতে বাধা দেয় এবং শরীর ডিহাইড্রেটেড হতে দেয় না।
এছাড়া আনারে থাকা ফ্লোটেট নিউট্রিয়েন্ট প্রেগন্যান্সির সময় ফিটাসের গ্রোথ ও ডেভেলপমেন্টে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আনারের রসে থাকা পটাশিয়াম ব্লাড প্রেশার রেগুলেশনে সাহায্য করে এবং হার্টের কন্ডিশনও ইমপ্রুভ করে।
এটুকুই ছিলো আনারের রসের গুণাগুণ নিয়ে আজকের আলোচনা। প্রতিদিন এক কাপ পরিমাণ আনারের রস আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী হতে পারে তা নিশ্চয়ই এই লেখা পড়ে বুঝতে পেরেছেন। শুধু মাত্র অসুস্থ হওয়া বা রক্ত কমে গেলেই যে এটি পান করতে হয় এমন কিন্তু নয়। বরং আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্যই এটি রেগুলার ডায়েটে ইনক্লুড করতে পারেন। আর এই ফলের সাইড ইফেক্ট নেই বললেই চলে, তাই ছোট বড় যে কেউ এই জুস পান করতে পারেন।
ছবিঃ সাটারস্টক, সাজগোজ