অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী বর্তমানে আমাদের কাছে একটি পরিচিত নাম। প্রাচীনকাল থেকেই সৌন্দর্যচর্চা এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য অ্যালোভেরার ব্যবহার এত উপযোগী যে, প্রাচীন মিশরীয়রা অ্যালোভেরার নাম দিয়েছিল “Plant of Immortality”. অ্যালোভেরা হলো লিলিয়াক (Lilliaceae) পরিবারের অন্তর্গত ক্যাকটাস জাতীয় একটি উদ্ভিদ। অ্যালোভেরার ঔষধি গুণাগুণের কারণে যুগযুগ ধরে চুল এবং ত্বকের চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যালোভেরার ফ্রেশ পাতা কেটে তার ভিতর থেকে যে রংহীন থকথকে পদার্থ পাওয়া যায়, সেটাই হলো অ্যালোভেরা জেল। আর আজ কথা হবে স্কিন ক্যাফে অ্যালোভেরা জেল নিয়ে।
আমার স্কিন কেয়ার এবং হেয়ার কেয়ার রুটিনে অ্যালোভেরা জেল খুবই অ্যাসেনশিয়াল একটা জিনিস। এখন আমার বাসায় অ্যালোভেরা গাছ নেই। আর আমার বাসার আশেপাশে কোন সুপারশপ ও নেই যেখানে অ্যালোভেরার ফ্রেশ পাতা বিক্রি হয়। আমি প্রথমবার মার্কেট থেকে ন্যাচার্স রিপাবলিক ৯২% অ্যালোভেরা জেল কিনেছিলাম। ঐটা বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখন বাজারে এ প্রোডাক্টটার নকলে ছেয়ে গিয়েছে। আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে আমি স্কিন ক্যাফে অ্যালোভেরা জেল (Skin Cafe Aloe Vera Gel)-এর কথা জানতে পারি। স্কিন ক্যাফে বাংলাদেশের একটি প্রিমিয়াম স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ার ব্র্যান্ড। তাদের সবগুলো প্রোডাক্টই অর্গানিক বলে তারা দাবী করে। অ্যালোভেরা জেলটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
সাদা ট্রান্সপারেন্ট প্লাস্টিকের ২০০ এম.এল. কন্টেইনারে আসে অ্যালোভেরা জেলের প্যাকেজটি। এর উপরে লেখা আছে যে, এটি ৯৮% অ্যালোভেরা জেল যা অর্গানিক, পিওর এবং ন্যাচারাল। সব ধরণের স্কিনে ব্যবহারের উপযোগী। এটি ট্রান্সপারেন্ট হালকা টেক্সচারের জেল এবং মিষ্টি হালকা একটা স্মেল আছে এতে। কন্টেইনারের মুখ খোলার পর থেকে ১২ মাস পর্যন্ত নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যাবে। এটি প্যারাবেন, মিনারেল অয়েল এবং আর্টিফিশিয়াল রঙ মুক্ত। ন্যাচার্স রিপাবলিক এর অ্যালোভেরা জেলের মোড়কে তো সব ভিনদেশী ভাষা, যেহেতু সেটা কোরিয়ান প্রোডাক্ট, কিছুই বুঝিনি কী কী উপাদানে তৈরি। কিন্তু স্কিন ক্যাফেরটা ইংরেজিতে লেখা, তাই পড়েছি এবং জেনেছি। এখন আপনাদেরকে ও জানাচ্ছি এর উপাদানগুলো সম্পর্কে।
(১) পিওর অ্যালোভেরা জেল
(২) পানি
(৩) প্রপিলিন গ্লাইকল (Propylene Glycol) -এটি যেকোন তাপমাত্রায় প্রোডাক্ট এর স্বাভাবিক স্ট্রাকচার বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং স্কিনকে মসৃণ রাখার কাজটাও করে।
(৪) কার্বোমার (Carbomer) – প্রোডাক্টের ফ্লো এবং কনসিসটেন্সি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
(৫) অ্যালানটয়েন (Allantoin) – সমস্যাগ্রস্ত ত্বককে রক্ষা করে, নতুন স্কিন সেলস তৈরিতে সহায়তা করে, ত্বকের দাগ দূর করে, র্যাশ বা একনে দূর করে এবং কাটাছেঁড়া ঘা সারিয়ে তোলে।
(৬) পিইজি-৪০ (PEG 40) – হাইড্রোজেনেটেড ক্যাস্টর অয়েল (Hydrogenated Castor Oil)
(৭) সোডিয়াম হায়ালুরোনেট (Sodium Hyaluronate) – এতে আছে অ্যান্টি এজিং প্রোপার্টি।
(৮) ইমিডাজোল অ্যালকাইল ইউরিয়া (Imidazole Alkyl Urea) – ঈস্ট, ব্যাকটেরিয়া এবং মোল্ডযুক্ত ফর্মুলা থেকে প্রোডাক্টকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
(৯) ট্রি ইথানোল আমাইন (Tri ethanol amine) – প্রোডাক্টের PH বজায় রাখে।
(১০) হাইড্রোক্সাইল মিথাইল বেনজেন (Hydroxyl Methyl Benzene) – এটিও অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এজেন্ট।
(১১) গ্লাইকল (Glycol)
(১২) ফেনোক্সি ইথানল (Phenoxy ethanol) – প্রোডাক্টে যেন ব্যাকটেরিয়াল গ্রোথ না হয় তার জন্য ব্যবহার করা হয়।
(১৩) ন্যাচারাল অ্যাসেন্স
রোদে পোড়া ত্বক এবং একনে ও র্যাশ ইরিটেশনের সমস্যাগ্রস্ত সেনসিটিভ ত্বকের জন্য খুবই উপযোগী। আমার পুরানো একনের দাগগুলোও অনেকটাই কমেছে বলে মনে হয়েছে। আর নতুন করে কোন একনে বের হলে সেটার রেডনেস আর চুলকানো ভাবটাও কমে যায়।
এটাই আমার নাইট ময়েশ্চারাইজার এবং স্লিপিং মাস্ক ও বটে, আমার সেনসিটিভ একনে প্রোন কম্বিনেশন স্কিনে আমি নিশ্চিন্তে রাতে এটা মেখে ঘুমিয়ে যাই। পরদিন সকালে উঠে মুখ ধোয়ার পর স্কিনটা একদম সফট আর ফ্রেশ দেখায়। হাতে শেষ যে একটু জেল লেগে থাকে সেটুকু চুলের আগায় ব্যবহার করি, চুলের আগা ফেটে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
স্কিন ক্যাফে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করে যা যা ভালো লেগেছে
(১) এর মাল্টিপারপাস অ্যাবিলিটি। ত্বক হোক আর চুল হোক, আমি যেসব স্কিন আর হেয়ারকেয়ার প্যাক তৈরি করি প্রায় অধিকাংশতেই এই অ্যালোভেরা জেলটা ব্যবহার করি। হোক সেটা আমার হেয়ার স্ট্রেইটেনিং মাস্ক , কিংবা ফেসিয়াল গ্লো সিরাম, এই অ্যালোভেরা জেলটা আমার লাগবেই।
(২) এর সুদিং ফিলিং এবং মিষ্টি স্মেল আমার ভালো লেগেছে।
(৩) এর টেক্সচারটা হালকা এবং এটা খুব সুন্দরভাবে স্কিনের সাথে মিশে যায়।
স্কিন ক্যাফে অ্যালোভেরা জেল যেভাবে ব্যবহার করতে পারেন
১) যখন হাতের কাছে চুলের হিট প্রোটেক্টিং স্প্রে পাওয়া যায় না , তখন অল্প একটু জেল হাতে নিয়ে চুলের উপর হাত বুলিয়ে নিশ্চিন্তে হেয়ারস্টাইলিং করুন , ব্লো ড্রাই , স্ট্রেইটেনিং কিংবা কার্ল।
২) মেকআপ রিমুভার হিসেবে ও ব্যবহার করতে পারেন। পরিমাণ মতো জেল হাতে নিয়ে মুখ আর গলায় আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করতে থাকুন , তারপর টিস্যু দিয়ে আলতো করে চেপে চেপে মেকআপ তুলে ফেলুন এর আপনার রেগ্যুলার ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ব্যস, ক্লিন আর ক্লিয়ার ফেইস ইন্সট্যান্টলি পেয়ে যাবেন।
৩) শেভিং জেল হিসেবে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ করবে, ইরিটেশন দূর করবে, জ্বালাপোড়া দূর করবে এবং মসৃণ করে তুলবে।
৪) হালকা কাটাছেঁড়ায় ও এই জেল ব্যবহার করতে পারেন, সেরে যাবে, কারণ এতে আছে natural wound healing properties.
৫) এই গরমের প্রখর রোদে বাইরে থেকে ফিরে সানবার্ন দূর করার জন্য শুধু এই অ্যালোভেরা জেলটাই মাস্ক হিসেবে মুখে দিয়ে রাখুন আধ ঘণ্টা (আমি তো জেলটা আরো ঠাণ্ডা ফিল আনার জন্য ফ্রিজে রেখে দেই, তো আরো সুদিং লাগে)। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। রোদে পোড়া ভাব অনেকটাই কমে যাবে।
৬) ম্যানিকিওর এবং পেডিকিওরের পর ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
৭) আমার যখন কোথাও যাবার তাড়া থাকে, কিন্তু হাতে যখন একদমই সময় থাকে না, তখন আমি চট করে অল্প অ্যালোভেরা জেল নাক আর অন্যান্য ব্ল্যাকহেডস আর হোয়াইটহেডসের জায়গাগুলোতে লাগিয়ে হাতে অল্প চিনি নিয়ে ঝটপট স্ক্রাবিং করে মুখ ধুয়ে তারপর মেকআপ করি। এতে করে মেকআপ সুন্দর করে স্কিনে বসে এবং স্কিনে কোন ইরিটেশন হয় না।
রেটিং এবং প্রাপ্তিস্থান
আমি ব্যক্তিগতভাবে একে রেটিং দিবো ৯.৫/১০। বাড়িয়ে বলছি না, আপনি একবার ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন এবং আবার কেনার কথা ডেফিনিটলি ভাববেন বলে আমার মনে হয়েছে। আর আমাদের দেশে যে আন্তর্জাতিক মানের এত দারুণ স্কিন অ্যান্ড হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্ট আছে, এটা দেখে আসলে মনটাই ভালো হয়ে গিয়েছে।
বর্তমানে দেশের বেশ কিছু বড় বড় কসমেটিক্সের দোকান, ফার্মেসীসহ রাইফেল স্কয়ারে ও যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত শপ.সাজগোজ.কম-এ পেয়ে যাবেন এই প্রোডাক্টটি। চাইলে ঘরে বসে অনলাইনেও অর্ডার করে নিতে পারেন।
Stay Beautiful, Stay Gorgeous.