প্রাচীনকালে রূপচর্চার অন্যতম প্রধান উপকরণ ছিল নারকেল তেল। এখনো কিন্তু এর কদর একটুও কমেনি! চুলের যত্ন নিতে সবার আগে কোন জিনিসটার নাম মাথায় আসে, বলুন তো? নারকেল তেল! আমরা জানি, নারকেল তেলে ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের পাশাপাশি অ্যাসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তাই চুলের যত্নে এটি অতুলনীয়। আজ শেয়ার করবো হেয়ার গ্রোথ ও ড্যামেজ রিপেয়ারে নারকেল তেলের ৩টি DIY হেয়ার মাস্কের রেসিপি। অল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে কীভাবে সহজেই চুলের যত্ন নেওয়া যায়, চলুন জেনে নেই।
নারকেল তেল আজও অনন্য
চুলের যত্নে কিছু করা হোক বা না হোক, তেল তো দেওয়া হয়! ছোটবেলায় মা চুলে তেল দিয়ে বেণি করে দিতো। আসলে তখন মোটামুটি বাঁধাধরা নিয়ম ছিল যে চুলে তেল লাগাতেই হবে। ছোট থেকেই দেখে এসেছি আমাদের নানী-দাদিরা চুলের পরিচর্যায় শুধুমাত্র নারকেল তেল ব্যবহার করতেন, আর তাদের চুলও কিন্তু ছিল কালো, ঘন ও মজবুত। চুলের যত্নে যুগ যুগ ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে নারকেল তেল। এই তেলে আছে লরিক অ্যাসিড যা চুলে পুষ্টি যোগায়, চুল পড়া কমায় ও চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে। হেয়ার কনসার্ন অনুযায়ী নারকেল তেলের সুপার ইফেক্টিভ ৩টি DIY হেয়ার মাস্ক দেখে নিন তাহলে।
কোকোনাট অয়েল হেয়ার মাস্ক
১) হেয়ার গ্রোথ বুস্টার মাস্ক
যা যা লাগছে-
- নারকেল তেল- চুলের লেন্থ অনুযায়ী
- আমলা গুঁড়ো– ৩ চা চামচ
- অ্যালোভেরা জেল– ২ চা চামচ
সব উপকরণগুলো একসাথে মিক্স করে স্মুথ পেস্ট বানিয়ে নিন এবং চুলের গোড়া থেকে লেন্থ অবধি ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করুন। ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই হেয়ার মাস্ক সপ্তাহে অন্তত একদিন ব্যবহার করুন। নারকেল তেলে আছে প্রয়োজনীয় মিনারেলস ও ফ্যাটি অ্যাসিড যা চুলের দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। আমলাতে আছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস যা স্ক্যাল্পের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়িয়ে হেয়ার ফলিকলস স্টিমুলেট করে। আর অ্যালোভেরাতে আছে মিনারেলস, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিনস যা চুলকে হেলদি রাখে।
২) ড্যামেজ রিপেয়ার মাস্ক
যা যা লাগছে-
- ডিম- ১টি
- নারকেল তেল- ৩ চা চামচ
- টকদই- ২ চা চামচ
সব উপাদান একসাথে মিক্স করে চুলে অ্যাপ্লাই করুন এবং ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে। ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ার করতে এই প্রসেস ফলো করে সপ্তাহে অন্তত একদিন চুলে মাস্ক ব্যবহার করুন। টকদই চুলের ন্যাচারাল ময়েশ্চার রিস্টোর করে। এগ প্রোটিন হেয়ার রুট স্ট্রং করে, চুলকে কোমল করে তোলে এবং আগা ফাটা রোধ করে। এই মাস্কে নারকেল তেল ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যায়, বিশেষ করে ফ্রিজি ও ড্রাই হেয়ারের জন্য খুবই ভালো কাজ করে।
৩) অ্যান্টি হেয়ার ফল মাস্ক
যা যা লাগবে-
- নারকেল তেল- চুলের লেন্থ অনুযায়ী
- পেঁয়াজের রস- ২ টেবিল চামচ
- কালোজিরা- সামান্য
প্রথমে একটা ছোট বাটিতে নারকেল তেল নিয়ে তাতে কালোজিরা দিয়ে হালকা গরম করে নিন। একটা বড় বাটিতে ফুটন্ত গরম পানি নিয়ে তার উপরে তেলের বাটিটা কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখলেই তেল গরম হয়ে যাবে। অথবা আপনি ওভেনে তেল হালকা গরম করে নিতে পারেন। এবার এতে মিক্স করুন পেঁয়াজের রস। এই তেল দিয়ে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করুন এবং ৩০ মিনিট রেখে চুল ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ওয়াশ করে নিন। পেঁয়াজে আছে সালফার যা চুল পড়ার সমস্যা কমিয়ে আনে অল্প সময়েই। আর কালোজিরাতে আছে অসাধারণ কিছু উপাদান যা স্ক্যাল্পে পুষ্টি যুগিয়ে নতুন চুল গজাতে হেল্প করে।
আমার পছন্দের কোকোনাট অয়েল
চুলের টোটাল কেয়ারে নারকেল তেলের ম্যাজিকাল সল্যুশন সম্পর্কে তো জানলাম। মার্কেটে তো কত ধরনের কোকোনাট অয়েল পাওয়া যায়, কিন্তু চুলের যত্নে কোনটি হবে রাইট চয়েজ, এটা নিয়ে কনফিউশন তো থেকেই যায়। চলুন জেনে নেই একটি অ্যামেজিং কোকোনাট অয়েল নিয়ে। Skin Cafe Coconut Oil আমার হলিগ্রেইল প্রোডাক্ট। আমার এক ফ্রেন্ডের সাজেশনে এই কোকোনাট অয়েল আমি প্রথম পারচেজ করি। আর এখন তো এটা ছাড়া আমার চলেই না!
এর বিশেষত্ব কী?
বাজারে তো কত তেলই আছে, কিন্তু আলাদা করে এটা রেকমেন্ড কেন করছি, নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন এসেছে! চলুন জেনে নেই এই নারকেল তেলের বিশেষ কিছু গুণাগুণ সম্পর্কে।
- ফার্স্ট অ্যাবজর্বিং ফর্মুলা হওয়াতে খুব দ্রুত স্ক্যাল্পে ও হেয়ার শ্যাফটে পেনিট্রেট হয়
- চুলের রাফনেস কমিয়ে চুলকে শাইনি ও সিল্কি করে তোলে
- হেয়ার গ্রোথ বাড়ায় ও চুল পড়া কমায়
- চুলের পাশাপাশি বডির স্কিনের যত্নেও ব্যবহার করা যায় নিশ্চিন্তে
- নতুন প্যাকেজিংয়ে ২৫০ মি.লি ও ১০০ মি.লি দু’টি সাইজে এখন অ্যাভেইলেবল
- সুঘ্রাণেই বোঝা যায় এই তেল একদম খাঁটি
আমার এক্সপেরিয়েন্স
বেসিক হেয়ার কেয়ারের একটি স্টেপ হচ্ছে অয়েলিং। সপ্তাহে অন্তত দু’বার চুলে তেল দেওয়া উচিত। এমনিতে ইদানিং পল্যুশন এত বেশি যে খুব দ্রুতই হেয়ার ড্যামেজ হয়ে যায়। আর আমাদের বিজি লাইফস্টাইলে চুলের যত্নের জন্য আলাদা করে সময় বের করা টাফ! তাই নারকেল তেলই ভরসা। নারকেল তেল ছাড়া তো আমার হেয়ার কেয়ার রুটিনই ইনকমপ্লিট। আমার সবথেকে ভালো লেগেছে এর ঘ্রাণ! একদম খাঁটি নারকেল তেলের স্মেল, যেটা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। এই কোকোনাট অয়েল ব্যবহারে আমার চুলের ফ্রিজিনেস অনেকটাই কমে এসেছে, হেয়ার ফল আগের থেকে এখন কম হচ্ছে।
কীভাবে ব্যবহার করি?
এই তেল আমি হেয়ার মাস্কের সাথে ব্যবহার করি। আর হট অয়েল ম্যাসাজের সময় তো নারকেল তেল লাগেই। আরেকটি বিষয়, আমার হাত ও পায়ের স্কিন খুবই ড্রাই, আমি কিন্তু এই অয়েল বডি ময়েশ্চারাইজারের সাথে মিক্স করে হাতে আর পায়েও ইউজ করি। এটি লং টাইম ধরে স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড ও হাইড্রেটেড রাখে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, কেন এটি আমার ফেবারিট!
হেয়ার গ্রোথ ও ড্যামেজ রিপেয়ারে নারকেল তেলের হেয়ার মাস্ক সম্পর্কে জানালাম। সেই সাথে আমার হলিগ্রেইল নারকেল তেলের ছোট্ট রিভিউও শেয়ার করলাম। আশা করছি, আপনাদের জন্য হেল্পফুল ছিলো। সেলফ কেয়ার প্রোডাক্টের জন্য আমার ভরসার জায়গা হচ্ছে সাজগোজ। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ