যুগযুগ ধরে চুল আর ত্বকের যত্নের জন্য কোকোনাট অয়েলের (নারিকেল তেল) ব্যবহার হয়ে আসছে। কোকোনাট অয়েলের উপযোগিতার কথা লিখে শেষ করা যাবে না। স্কিন এবং মাথার স্কাল্পকে ভিতর থেকে পুষ্টি যুগিয়ে প্রাণবন্ত করে তোলে কোকোনাট অয়েল। নিয়মিত কোকোনাট অয়েল ম্যাসাজের ফলে ভালোভাবে ব্লাড সার্কুলেশন হয়, ডেড স্কিন সেলস (ত্বকের মৃত কোষ) দূর হয়, চুল এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মেকআপ রিমুভার হিসেবে এবং ঠোঁটকে নারিশ করার জন্য ও কোকোনাট অয়েলটাকেই বেশি প্রেফার করি। স্কিন ক্যাফে কোকোনাট অয়েল এক্ষেত্রে খুবই উপকারী।
স্কিন ক্যাফে কোকোনাট অয়েল
এখন, আমরা অনেকেই রেগ্যুলার রিফাইন্ড কোকোনাট অয়েল আর এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েলের বেসিক ডিফারেন্সটা জানি না। টেকনিকালি যদি বলতে হয়, তাহলে পৃথিবীর সব কোকোনাট অয়েলই প্রাকৃতিকভাবেই রিফাইন্ড , কারণ তেলটা আমরা সরাসরি গাছ থেকে পাই না, নারিকেল থেকে এক্সট্রাক্ট করে বের করতে হয়। মূল পার্থক্যটাই হলো এই extraction procedure এ। রিফাইন্ড তেলে অনেক বেশি তাপ ও কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, ফলে তেলের প্রাকৃতিক গুণাগুণ অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েলটা কোল্ড প্রেসিং পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়, যাতে তেলের প্রাকৃতিক উপাদানগুলো নষ্ট হয় না।
কোল্ড প্রেসিং পদ্ধতি কী?
কোল্ড প্রেসিং পদ্ধতিতে নারিকেলকে প্রাকৃতিকভাবে শুকিয়ে তার মধ্যে থেকে তেলটা বের করা হয়, কোন প্রকার তাপ ব্যবহার না করে। ফলে তেলের প্রোটিন ও মিনারেলসগুলো প্রায় অক্ষুণ্ণ থাকে এবং হেলথ বেনেফিট ও বেশি পাওয়া যায়।মার্কেটে এখন যেসব কোকোনাট অয়েল কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলো কমবেশি সবই অনেক বেশি প্রসেসড, এবং অনেক বেশি মাত্রায় প্রিজার্ভেটিভ ব্যবহার করা হয়। এবং তাপ ব্যবহার করে প্রসেসিং করা হয় বলে কোকোনাট অয়েলের প্রাকৃতিক গুণাগুণগুলোও অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আমরা ফাইনাল প্রোডাক্ট হিসেবে যা হাতে পাই তা পিওর ভার্জিন কোকোনাট অয়েল না, এবং স্কিন আর হেয়ার বেনেফিট টাও তাই পরিপূর্ণ মাত্রায় পাই না। বিদেশী কিছু ব্র্যান্ডের অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল আছে মার্কেটে, কিন্তু সেগুলো মোটামুটি সবই অনেক বেশি এক্সপেনসিভ।
আমি আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে স্কিন ক্যাফে অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল এর কথা জানতে পারি। স্কিন ক্যাফে আমাদের বাংলাদেশি একটি প্রিমিয়াম স্কিন এবং হেয়ার কেয়ার ব্র্যান্ড। আমি প্রথমবার প্রোডাক্টটির প্যাকেজিং এবং আউটলুক দেখে ভেবেছিলাম এটা হয়তো বাইরের কোন প্রোডাক্ট, ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম এটা মেইড ইন বাংলাদেশ। প্যাকেজিং এ পরিমাণ ২৫০ এম.এল।
আমার চুল বরাবরই খুব সুন্দর, লম্বা, মসৃণ এবং ঘন ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এবং চাইল্ডবার্থের পর যত্নের অভাবে আমার চুলগুলো অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। যাই হোক, তেলটা আমি ব্যবহার করা শুরু করলাম। তেলটির টেক্সচার বেশ লাইট। শুধু পিওর কোকোনাট অয়েলের গন্ধ আছে এতে। বোতলের গায়ে লেখা আছে, এর উপাদান হলো ১০০% অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন পিওর কোকোনাট অয়েল, যা কোল্ড প্রেসড পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।
আমার এক্সপেরিয়েন্স
আমি প্রথমে শুধু মাথার স্কাল্পসহ চুলে ব্যবহার করতে শুরু করলাম। একদিন পরপর রাতে ঘুমানোর আগে মাথার স্কাল্পসহ পুরো চুলে আগাগোড়া ভালোভাবে তেলটা ম্যাসাজ করে ঘুমিয়ে যেতাম এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিতাম। কোন বাড়তি কন্ডিশনার ব্যবহার করতাম না। আসলে কখনো প্রয়োজনই মনে হয়নি। কারণ এই তেল ব্যবহার করে চুল ওয়াশের পর আমার চুলগুলোর শুষ্কতা (dryness), রুক্ষতা (roughness), এলোমেলোভাব (frizziness) সবকিছু লক্ষ্যণীয় মাত্রায় কমে গিয়েছে। তেলের ডীপ কন্ডিশনিং ইফেক্টের কারণে চুল ভিজ্যুয়ালি অনেক বেশি সফট, সিল্কি, শাইনি আর হেলদি দেখাচ্ছে। চুল পড়ার হারও অনেকটাই কমে গিয়েছে।
আমি রাতে ঘুমোতে যাবার আগে এক ফোঁটা তেল নিয়ে ঠোঁটে ও ব্যবহার করছি এবং রেগ্যুলার ভ্যাসলিনের চেয়ে এ গরমে ঐ এক ফোঁটা তেল আমার কাছে বেটার অপশন মনে হয়েছে।
কিছুদিন আগে অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটির কারণে আমার পায়ের গোড়ালি ফেটে গিয়ে বেশ ব্যথা করছিল, আমি কিছুদিন রাতে পা ধুয়ে এই তেল ভালোভাবে ম্যাসাজ করে পরদিন সকালে শ্যাম্পুসহ কুসুম গরম পানিতে পিউমিস স্টোন দিয়ে পা ঘষে ধোয়ার পর আমার পায়ের গোড়ালিও ঠিক হয়ে গিয়েছে।
আমি এটা আমার তিন বছর বয়সী বেবির চুলে এবং ডায়পার এরিয়াতে ও ব্যবহার করেছি এবং আমার কাছে ভালো লেগেছে, কোন সাইড ইফেক্ট নেই।
স্কিন ক্যাফে কোকোনাট অয়েল কেন রেকমেন্ড করছি?
(১) স্কিন ক্যাফে কোকোনাট অয়েলের প্যাকেজিংটা আমার বেশ পছন্দের। এত সুন্দর প্যাকেজিং করা হয়েছে যেটা দেখে আমি প্রথমবার ভেবেছিলাম এটা বিদেশি কোন ব্র্যান্ড। কিন্তু এইটা ১০০% বাংলাদেশি প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট।
(২) এর লাইট টেক্সচার এবং সুদিং স্মেলটাও আমার ভালো লেগেছে।
(৩) এটাকে আমি মাল্টিপারপাস অয়েল বলবো, কারণ- আমি এটাকে স্কিন এবং হেয়ার কেয়ারের ভিন্ন ভিন্ন রেজিমেনে ইফেক্টিভলি ব্যবহার করতে পেরেছি।
(৪) স্কিন ক্যাফে কোকোনাট অয়েল হেয়ারফল কমিয়েছে।
(৫) স্কিন ক্যাফে কোকোনাট অয়েল অর্গানিক এবং চাইল্ড ফ্রেন্ডলি। আপনি বাচ্চাদের চুল এবং ত্বকে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। আমি কোন সাইড ইফেক্ট পাইনি।
যে যে দিকগুলো ভালো লাগেনি
সত্যি বলতে কি, এই প্রোডাক্টটির ভালো লাগেনি সেকশনে লেখার জন্য আমি কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। অনেকের কাছে হয়তো প্রোডাক্টটি প্রাইসি মনে হতে পারে, কিন্তু মার্কেট ঘুরে আপনি যদি দেখেন তাহলে দেখবেন যে বাইরের দেশের আমদানিকৃত অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েলগুলো এর দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হয় এবং কোয়ান্টিটি ও এর চেয়ে কম থাকে।
রেটিং এবং প্রাপ্তিস্থান
ব্যক্তিগতভাবে আমি একে রেটিং দিবো ৯.৫/১০
বর্তমানে দেশের বেশ কিছু বড় বড় কসমেটিক্সের দোকানে, ফার্মেসিতে, অনলাইন শপ-সহ যমুনা ফিউচার পার্ক এবং সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত সাজগোজ শপ –এ পেয়ে যাবেন অরিজিনাল প্রোডাক্টটি। চাইলে ঘরে বসে অনলাইনেও অর্ডার করে নিতে পারেন। আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার এ অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
Stay Beautiful, Stay Gorgeous.
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ