চারকোল বা কয়লা কে না চেনে? দাঁত সাদা করার জন্য দাদি-নানিদের ছোটবেলায় দেখতাম কয়লা দিয়ে দাঁত মাজতে। কিন্তু আপনি জানেন কি কয়লা এখন সৌন্দর্যচর্চার কাজেও ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে বিভিন্ন স্কিনকেয়ার সামগ্রীতে মূল উপাদান হিসেবে কয়লা যুক্ত করার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন?
আক্টিভেটেড চারকোল বা কার্বন কি?
যে কোন জৈব পদার্থ(যা একসময় জীবিত ছিল) পুড়িয়ে কয়লা বানানো যায়। এটা কাঠ, নারিকেলের ছোবড়া কিংবা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পাওয়া যায়। কয়লার উৎস যেটাই হোক, একে অ্যাক্টিভেটেড বা সক্রিয় কার্বন তখনই বলা যাবে যখন অনেক উচ্চতাপে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে এর অভ্যন্তরীণ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো হয়। অ্যাক্টিভেটেড চারকোল বা অ্যাক্টিভেটেড কার্বন বলতে একই জিনিস বোঝায়।
[picture]
কেন ব্যবহার করবেন?
সারাদিন ধরে চারপাশের টক্সিক বা দূষিত উপাদানগুলো আমাদের লোমকূপ বন্ধ করে ফেলে। লোমকূপের গোঁড়া পরিষ্কার না থাকলে মুখের রঙ ডার্ক লাগে। অ্যাক্টিভেটেড চারকোল-সমৃদ্ধ মাস্ক মুখে অ্যাপ্লাই করলে সেটা মুখের লোমকূপ বা পোরস এর ভিতরের ধুলা-ময়লা, মৃতকোষে আটকে যায়। এরপর সেই মাস্ক টেনে তোলার সময় তা ঐসব উপাদান সহ উঠে আসে। এর ফলে লোমকূপগুলো বেশি বড় দেখা যায় না।
ত্বকের ধরনের উপর নির্ভর করে এসব মাস্ক সপ্তাহে ১ থেকে ৩বার ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এর বেশি ব্যবহার করা কোনভাবেই ঠিক হবে না। কারণ তাহলে এটা স্কিনের ন্যাচারাল তেল ও আদ্রতা শুষে নেয়।
অ্যাক্টিভেটেড চারকোল ত্বক থেকে ব্যাকটেরিয়া, কেমিক্যাল, দূষিত পদার্থ, ধুলাবালি এবং অন্যান্য মাইক্রো-পারটিকেল শুষে নেয়। এই চারকোল শরীরে শোষিত হয় না সুতরাং শরীরে এর কোন বিরূপ প্রভাব ও পড়ে না।
সাইড-ইফেক্টস
আজকাল অনলাইনে বা ইউটিউবে আমরা অনেক ভিডিও দেখি যেখানে এই চারকোল পিল-অফ মাস্ক ইউজ করা হয়। ওখানে দেখা যায় মুখে এই মাস্ক দিয়ে কিছুক্ষণ পর শুকালে তা টেনে তোলা হচ্ছে। এই প্রসেসটা যে কি পেইনফুল, তা ভিডিও দেখলেই বোঝা যায়। মাস্কের সাথে ফেসিয়াল হেয়ার উঠে আসে তখন ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে তারা মাস্ক টেনে তোলে। এতে স্কিনের অনেক ক্ষতি হয়। এখানে কিন্তু অ্যাকচুয়ালি স্কিনের ওপরের লেয়ার ছিলে ফেলা হয় সাথে পশম (ভেলাস হেয়ার) তো আছেই। এজন্যই ব্যবহারের পর স্কিন এত সফট আর স্মুদ ফিল হয়। কিন্তু বারবার এটা ব্যবহারে স্কিনে লং-টার্ম ড্যামেজ হয়।
ডারমাটোলজিস্টদের মতে এসব মাস্ক যখন ব্ল্যাকহেডস তুলে আনে, স্কিনের সেবেস্কাস ফিলামেন্টস থেকে তেল এই মাস্কের সাথে উঠে আসে যা কিনা স্কিনের অয়েল ব্যালেন্স কন্ট্রোল করার জন্য জরুরী উপাদান। এই সমস্যা থেকে স্কিন দ্রুতই রিকভার করে ফেলে কিন্তু নিয়মিত ব্যবহারে স্কিনে যে পরিমাণ তেল থাকা প্রয়োজন, তা কমে যায়। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, অকালে চামড়া কুঁচকে বয়সের ছাপ পড়ে যায়।
তাহলে কি চারকোল/কার্বন ইউজ করবেন না?
অবশ্যই করতে পারেন, তবে তা যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত না হয়। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সপ্তাহে ২বার এবং সাধারণ ত্বকের জন্য ১বারই এসব মাস্ক ব্যবহার করা যথেষ্ট।
কোন প্রোডাক্টগুলো অ্যাভয়েড করবেন?
মার্কেটে অথবা অনলাইনে অহরহ মেলে এমন কিছু চাইনিজ/থাই ব্র্যান্ড, নন-ব্র্যান্ডেড ব্ল্যাকহেডস রিমুভাল ও ফেসিয়াল মাস্ক আছে। চটকদার ভিডিও আর বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে এসব ভুলেও ব্যবহার করতে যাবেন না। এগুলোতে থাকা উপাদান স্কিনের ওপরের লেয়ারটা ড্যামেজ করে ফেলে। এগুলো দেখতে যতই কালো হোক, এতে কার্বন নেই বললেই চলে।
কোনগুলো ইউজ করবেন?
বেশ কিছু বিখ্যাত ব্র্যান্ড আছে যাদের ফেস মাস্ক, ক্লিনজার এবং স্ক্রাবে অ্যাক্টিভেটেড কার্বন দেয়া আছে। এসব মাস্ক এবং ক্লিনজার মুখ ক্লিন করে আর স্ক্রাব স্কিনকে খুব ভাল এক্সফলিয়েট করে। যেমন ফ্রীম্যান (Freeman), দা বডিশপ (The Bodyshop), বিউটি ফর্মুলা (Beauty Formula), অরিজিন (Origin), বিয়োরে (Bioré) ইত্যাদি। এগুলো অনেক বিখ্যাত ব্র্যান্ড এবং এদের ইউজার রিভিউ ও অনেক নির্ভরযোগ্য। উল্লেখিত সবগুলো প্রোডাক্ট যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত শপ.সাজগোজ.কম-এ পেয়ে যাবেন অথবা তাদের মাধ্যমে অনলাইনে হোম ডেলিভারিও নিতে পারবেন।
লিখেছেন- ফারহানা হক অনি