আমলকী আমরা সবাই কমবেশি চিনি বা খেয়েছি। এটি কাঁচা বা আচার দিয়ে অথবা চাটনি বা মোরব্বা করেও খাওয়া যায়। তবে এটি কাঁচা খেতে তেমন মুখরোচক না হলেও এর গুণের কিন্তু শেষ নেই। এটি এমন একটি উপকারী ফল যা শারীরিক বিভিন্ন উপকারের পাশাপাশি রূপচর্চায়ও সমান প্রশংসার যোগ্য। প্রোটিন, মিনারেলস, কার্বহাইড্রেটস এবং ফাইবার-এ সমৃদ্ধ এই ফলটি নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে ত্বক এবং চুলের বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এবার আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক আমলকীর কিছু গুণ এবং রূপচর্চায় এর ব্যবহার!
রূপচর্চায় আমলকী যেভাবে ব্যবহার করবেন
১) ত্বকের যত্নে আমলকী
১. আমলকীতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকে রিংকেল, ফাইন লাইন্স পড়তে দেয় না।
২. আমলকী খুব ভালো এক্সফলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা অ্যাস্ট্রিনজেন্ট প্রোপার্টিজ ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বক মসৃণ করে তোলে।
৩. আমলকীর আরেকটি বিশেষ গুণ হলো এটি সব ধরনের ত্বকেই ব্যবহার করা যায়। কোন ত্বকেই এটি কোন ধরনের ইরিটেশন তৈরি করে না।
৪. ত্বকের পিগমেনটেশন দূর করতে আমলকী খুব ভালো কাজ করে থাকে। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ত্বকের নিস্তেজ ভাব দূর করে ত্বক প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল করে।
ত্বকের যত্নে আমলকী স্ক্রাব
ত্বকের যত্নে আমলকী স্ক্রাব বানাতে যা লাগবে-
১) কাঁচা হলুদ বাটা- ১ চা চামচ
২) আমলকী পাউডার- ১ চা চামচ
এই মিশ্রণটি সারা মুখে সার্কুলার মোশন-এ মাখিয়ে নিন। ১০ মিনিট রেখে মুখ ভালোমতো ধুয়ে নিন। এই স্ক্রাবটি ত্বকের মরা কোষ দূর করে ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে। আর যেহেতু এতে কাঁচা হলুদ বাটা রয়েছে তাই এই স্ক্রাব-টি রাতে ব্যবহার করবেন। দিনের বেলা কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে সূর্যের আলোতে ত্বক পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ত্বকের যত্নে আমলকী ফেসিয়াল
ত্বকের যত্নে আমলকী ফেসিয়াল করতে যা লাগবে-
১) টক দই– ২ চা চামচ
২) মধু- ১ চা চামচ
৩) আমলকী পেস্ট- ১ চা চামচ
উপরের সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে নিন। সারা মুখে ভালোমতো লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসিয়াল-টি সপ্তাহে ২ দিন করতে পারেন। এটি ত্বকে সতেজ ভাব নিয়ে আসে এবং সব ধরনের ত্বকের জন্যই এই ফেসিয়াল-টি উপযুক্ত।
ত্বকের যত্নে স্কিন ব্রাইটেনিং মাস্ক
এই মাস্ক-টি বানাতে যা লাগবে-
১. পেঁপে পেস্ট- কয়েক টুকরার
২. আমলকী পেস্ট- ১ চা চামচ
৩. মধু– ১/২ চা চামচ
উপরের সবগুলো উপকরণ মিশিয়ে এবার এটি মুখে মাখিয়ে ১৫ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুহূর্তের মধ্যেই ত্বকে উজ্জ্বল ভাব নিয়ে আসতে এই মাস্ক-টি বেশ উপকারী। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ত্বকের পিগমেনটেশন এবং কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।
২) চুলের যত্নে আমলকী
১. শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাবে চুল পড়া বেড়ে যায় এবং চুল ভেঙ্গে পড়ে। আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। তাই নিয়মিত আমলকী খাওয়ার মাধ্যমে চুলের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব।
২. আমলকীতে থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অকালে চুল পাকা রোধ করে।
৩. আমলকীর রস চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করলে স্ক্যাল্প-এর রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং চুলের বৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হয়।
৪. এছাড়াও আমলকী চুলের ফলিকল শক্ত করে যার ফলে চুল পড়া কমে গিয়ে চুল নরম ও সিল্কি হয়।
চুলের যত্নে আমলকী ও মধু প্যাক
১. আমলকী পাউডার- ২ চা চামচ
২. টক দই- ২ চা চামচ
৩. মধু- ১ চা চামচ
উপরের আমলকী পাউডার হালকা গরম পানিতে পেস্ট বানিয়ে নিন। এরপর টক দই ও মধু এই পেস্ট-এ যোগ করুন। এবার মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোমতো লাগিয়ে নিন। তারপর ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এই প্যাক-টি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের রুক্ষভাব দূর করে চুল নরম ও সুন্দর করে তোলে। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করুন।
অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ প্যাক
১) আমলকী- ২ চা চামচ
২) শিকাকাই পাউডার- ২ চা চামচ
৩) টক দই- পরিমাণমতো
উপরের সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে প্যাক বানান। তারপর সারা চুলে ভালোমতো লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করুন। এই প্যাকটি স্ক্যাল্প-এর খুশকি দূর করার সাথে সাথে চুলের প্রাকৃতিক কালার বজায় রাখে।
প্রাকৃতিক শ্যাম্পু
পরিমাণমতো শুকনো আমলকী, শিকাকাই এবং রিঠা একসাথে পানিতে মিশিয়ে সারারাত রেখে দিন। ব্যবহারের আগে একসাথে ভালোমতো মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি পিচ্ছিল হবে। এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে দানাগুলো আলাদা করে নিন। এটি চুলে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রাকৃতিক শ্যাম্পু হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। সপ্তাহে ১ বার এটি ব্যবহার করুন। চাইলে একসাথে বেশি পরিমাণে বানিয়ে রেফ্রিজারেটর-এ সংরক্ষণ করতে পারেন।
তো এবার দেরি না করে আমলকী দিয়ে ত্বক ও চুলের যত্ন শুরু করুন প্রাকৃতিকভাবে আর বাড়ান ত্বক ও চুলের জেল্লা!
ছবি- সংগৃহীত: Shutterstock