যারা পড়াশোনা করেন তাদের বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থাকতে হয় । ঘরে এসে ক্লান্ত শরীরে সব কাজ গুছিয়ে উঠলেও ত্বক চর্চার দিকে আর নজর দেওয়া হয় না। অনেকেই ভাবি এতো কিছুর সময় কোথায়? আপনার শরীরে যেমন পুষ্টির প্রয়োজন আছে ঠিক তেমনি ত্বক সুস্থ রাখতে হলে প্রয়োজন নিয়মিত ত্বকের যত্ন। আপনি চাইলেই খুব কম সময়ে এবং খুব সহজে হাতের কাছে থাকা উপাদান দিয়েই করে ফেলতে পারেন আপনার ত্বকের যত্ন।
ক্লিঞ্জিং
যারা পড়াশুনা করেন অথবা বাইরে কাজ করেন তাদের প্রতিদিন ত্বক পরিষ্কার করা প্রয়োজন এবং ত্বক পরিষ্কার করতে ক্লিঞ্জিং এর ভূমিকা অপরিসীম । বাজারে অনেক দামী ক্লিঞ্জার পাওয়া যায় কিন্তু প্রাকৃতিক উপাদান ক্লিঞ্জার হিসেবে ব্যবহার করা যেমন বেশী উপকারী তেমনি সাশ্রয়ী এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া মুক্ত।
(১) ক্লিঞ্জার হিসেবে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ত্বকে জাদুর মতো কাজ করে । নিয়মিত ব্যবহারে এর ত্বকের মরা কোষ এবং ত্বকের ময়লা দূর হয়।
(২) মধু একটি প্রাকৃতিক ক্লিঞ্জার। মধুর সাথে লেবুর মিশ্রণ ব্যবহারে ত্বক পরিষ্কার হয় ।
(৩) প্রাচীনকাল থেকে ক্লিঞ্জার হিসেবে তেলের ব্যবহার দেখা যায় । অলিভ অয়েল এবং নারিকেল তেল দুটি তেলই কিঞ্জার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে । এমনকি ভারী মেকাপ তুলতেও এর ব্যবহার করা হয় ।
(৪) টক দই এ আছে প্রচুর পরিমান প্রোটিন এবং লেকটিক এসিড যা ত্বকের ভেতর থেকে ময়লা দূর করে ত্বক পরিস্কার করে ।
(৫) টমেটো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ক্লিঞ্জার । টমেটোর রস ব্যবহারে ত্বক পরিষ্কারের সাথে সাথে রোদে পোড়া ভাব কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।
[picture]
স্ক্রাবিং
(১) যারা প্রতিদিন ঘরের বাইরে কাজ করেন তাদের জন্য নিয়মিত স্ক্রাবিং খুবই জরুরি। কফি গুড়ো, দারুচিনি গুড়ো এবং চিনির সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে খুব সহজেই তৈরি করে নিতে পারেন এই স্ক্রাবটি । মুখে,ঘারে,হাতে,পায়ে মিশ্রণটি লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। এই স্ক্রাবটি সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করতে পারেন।
কফিতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরি, যা ত্বককে উজ্জল এবং প্রাণবন্ত করে, ত্বকের মৃত কোষ এবং বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। দারুচিনি মসলা হিসেবে সুপরিচিত হলেও রূপচর্চায় এর ব্যবহার অতুলনীয়। এতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, প্রোটিন, ফ্যাট,পটাশিয়াম,সোডিয়াম এবং কার্বোহাইড্রেট। ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে এটি এক্সফলিয়েটিং স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে। চিনি মৃত কোষ দূর করে ত্বকে উজ্জলতা ফিরিয়ে আনে। নারিকেল তেল শুধু চুল নয় ত্বকেও ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এর ব্যবহারে মুখে ছোপ ছোপ দাগ, ব্রণের দাগ দূর হয়। এর নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয় কোমল এবং প্রাণবন্ত।
(২) খুব সহজে ঘরে তৈরি করে ফেলতে পারেন অ্যালোভেরা স্ক্রাব। অ্যালোভেরার সাথে চিনি এবং লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করে ফেলতে পারেন এই স্ক্রাব। অ্যালোভেরা ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে, লেবু রোদে পোড়া ভাব দূর করবে এবং চিনি মরা চামড়া দূর করতে সাহায্য করে।
(৩) চালের গুঁড়োর সাথে দুধ মিশিয়ে সহজেই তৈরি করে ফেলতে পারেন এই স্ক্রাব । দুধ ত্বক উজ্জ্বল করে এবং চালের গুড়ো মেলানিন উৎপাদনের হার কমিয়ে ত্বক ফর্সা করে , ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন বাঁড়ায় এবং রোদে পোড়া ভাব দূর করে ।
ময়েশ্চারাইজিং
(১) ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। সারাদিন কাজের চাপে, রোদে – বৃষ্টিতে, ধুলাবালিতে ত্বকের যে ক্ষতি হয় সেই ক্ষতি পূরণের জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ময়েশ্চারাইজারের প্রধান কাজ ত্বকে আদ্রতা ফিরিয়ে আনা। এর নিয়মিত ব্যবহার ত্বককে বার্ধক্যজনিত ছাপ পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে। তাই ত্বকের নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
(২) শুষ্ক ত্বকের জন্য অলিভ অয়েল,গ্লিসারিন অথবা ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ক্রিম উপকারী। এছাড়াও প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে নারিকেল তেল,মধু ব্যবহার করতে পারেন।
(৩) তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কলা খুব উপকারী। কলাতে আছে ভিটামিন সি যা ত্বকের উজ্জলতা ধরে রাখে। এছাড়াও টমেটোর রস অথবা লেবু ও মধুর মিশ্রণও ব্যবহার করতে পারেন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে।
(৪) স্বাভাবিক ত্বকের জন্য আমন্ড অয়েলের সাথে গোলাপ জলের মিশ্রণ, শসার রস অথবা ভিনেগারের সাথে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ভালো ব্রান্ডের ময়েশ্চারাইজার রয়েছে। রাতে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে আমন্ড অয়েল, গ্লিসারিন, অলিভ অয়েল, পেট্রোলিয়াম জেলিও, বডি মিল্কও ব্যবহার করতে পারেন। তবে কৃত্রিম ময়েশ্চারাইজারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা বেশী উপকারী।
মডেল – আতোকিয়া
লিখেছেন – হৃশিতা