হাজার হাজার টাকা দিয়ে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কিনে সেগুলো ইউজ করার পরেও অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, আমাদের স্কিনই কোনো কেয়ার করছে না, তাই না? প্রায়ই অনেক আপুদেরই মজার ছলে এই কথাটা বলতে শুনি। এর পেছনে অনেক কারনই থাকতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম একটি কারন হচ্ছে, আপনার ত্বকে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট এর লেয়ারিং সঠিকভাবে না করা।
কি? কথাটা একটু কঠিন লাগছে শুনতে? আচ্ছা, তবে সহজ করেই বুঝিয়ে দেই।
প্রোডাক্ট লেয়ারিং বলতে কী বোঝায়?
স্কিনকেয়ারের জন্য আমরা ক্রিম, সিরাম, টোনার, ফেসিয়াল অয়েল ইত্যাদি তো ব্যবহার করেই থাকি। প্রত্যেকটা প্রোডাক্টেরই আলাদা আলাদা কাজ থাকে এবং এসব প্রোডাক্টের মলিকিউল সাইজও কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন, সিরামের মলিকিউল সাইজ ফেসিয়াল অয়েলের থেকে ছোট। ফেসিয়াল অয়েলের মলিকিউল আকারে বড় হয় এবং এটা সিরামের থেকে থিক হয়। আপনি যদি, প্রথমেই স্কিনে ফেসিয়াল অয়েল লাগিয়ে ফেলেন, এরপর সিরাম বা ময়েশ্চারাইজার লাগাতে যান তবে, কিন্তু ফেসিয়াল অয়েলের মলিকিউল ভেদ করে সিরাম স্কিনের ভেতরে ভালোভাবে যেতে পারবে না। মানে সিরাম স্কিনের গভীরে ঢুকতে বাঁধাগ্রস্ত হবে। যার ফলে, টাকা খরচ করে যে সিরাম টি কিনলেন সেটা তেমন কোনো কাজেই দিবে না। তাহলে লাভ কি হলো? কি আর?! শুধু শুধু টাকাগুলোই নষ্ট হচ্ছে আর আপনিও স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এর উপরে ফেড আপ হয়ে যাচ্ছেন।
তাহলে কী করবেন?
স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট সঠিকভাবে লেয়ারিং করতে জানতে হবে। মানে, কোন প্রোডাক্টটি আগে এবং কোনটি পরে অ্যাপ্লাই করতে হবে তা সম্পর্কে জানতে হবে। কিন্তু, কিভাবে? সেটা নিয়েই আমার আজকের আর্টিকেল। চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই, ৮ টি সঠিক ধাপে আপনার ত্বকে কিভাবে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট লেয়ারিং করবেন!
ত্বকে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট লেয়ারিং করার ৮ টি সঠিক ধাপ
১. ক্লেঞ্জার :
স্কিন কেয়ারের প্রথম ধাপ হচ্ছে ক্লেঞ্জিং। ক্লেঞ্জিং এর মাধ্যমে আমরা স্কিনে জমে থাকা ডার্ট, অয়েল,মেকআপ ইত্যাদি দূর করি। ময়লা জমে থাকা ত্বকে স্কিন কেয়ার করে তো কোনো লাভ হবে না বরং আরো ক্ষতিই হতে পারে। তাই, শুরুতেই ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটা ক্লেঞ্জারের মাধ্যমে স্কিনটা ভালোভাবে ক্লিন করে নেয়া জরুরী। এরপর চাইলে এক্সফোলিয়েটর ইউজ করতে পারেন। তবে, এটা প্রতিদিন করার দরকার হয় না। সপ্তাহে ২-৩ বার ত্বক এক্সফোলিয়েট করাই যথেষ্ট। এরপর আসি এক্সট্রা একটা স্টেপে। সেটা হচ্ছে মাস্ক। সপ্তাহে ১-২ দিন আপনার পছন্দমত একটা মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
২. টোনার :
স্কিন ক্লিন করে নেয়ার পরেই ব্যবহার করতে হবে টোনার। টোনার অনেকেই স্কিপ করে যান। অথচ, টোনার কিন্তু স্কিন কেয়ারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টোনার স্কিনের এক্সট্রা ময়লা, মেকআপ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া টোনার আমাদের পোরগুলোকে টাইট করে এবং স্কিনের পি এইচ লেভেলকে ব্যালেন্স করে। একটা কটন প্যাডে টোনার নিয়ে পুরো মুখটা মুছে নিবেন।
৩. শীট মাস্ক :
আজকাল স্কিন কেয়ারে শীট মাস্ক তো বেশ জনপ্রিয়। তাই না? আমার তো বেশ পছন্দ শীট মাস্ক ইউজ করা। শীট মাস্ক মেইনলি সিরামে ভেজানো থাকে এবং এটি ব্যবহারে স্কিন ব্রাইট এবং হাইড্রেটেড হয়ে যায়। যারা শীট মাস্ক লাগাতে চান, তারা টোনারের পরেই শীট মাস্ক লাগিয়ে ফেলবেন। এবং শীট মাস্ক তুলে ফেলার পর আর মুখ ধোয়ার প্রয়োজন নেই। সরাসরি নেক্সট স্টেপে চলে গেলেই হবে। আর আপনি যদি আপনার একনে বা স্পটের জন্য কোনো ট্রিটমেন্ট নিয়ে থাকেন তবে টোনার বা শীট মাস্ক এর পরে সেটা অ্যাপ্লাই করে নিলেই হবে।
৪. সিরাম :
শীট মাস্কের পরের স্টেপ হচ্ছে সিরাম ব্যবহার করা। যারা শীট মাস্ক ব্যবহার করবেন না, তারা টোনারের পরেই সিরামে চলে যাবেন। সিরাম বেসিক্যালি খুবই লাইটওয়েট হয় এবং এর মলিকিউলস গুলো অনেক ছোট থাকার ফলে এটা স্কিনের একদম গভীরে চলে যেতে পারে। সিরাম স্কিনের বিভিন্ন ইস্যু যেমন একনে, রিংকেল, ড্রাই স্কিন ইত্যাদির কারনে ব্যবহার করা হয়। স্কিনে অল্প একটু সিরাম লাগানোই কিন্তু যথেষ্ট।
৫. আই ক্রিম :
বয়স ২০ হবার পরে প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আই ক্রিম লাগানোটা খুবই ইম্পরট্যান্ট। খুব আর্লি এজে চোখের এরিয়ার স্কিনে ফাইন লাইন পরা এবং কোলাজেন লসের প্রবনতা এটা অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়। এছাড়াও আই ক্রিম আমাদের আন্ডারআইকে ব্রাইট করে, চোখের ফোলাভাব দূর করে এবং আই এরিয়াকে হাইড্রেশন দেয়। ফেইসে সিরাম অ্যাপ্লাই করার পর এখন সময় হচ্ছে আই ক্রিম ব্যবহার করার। সবসময় আই ক্রিম রিং ফিংগার দিয়ে অ্যাপ্লাই করতে হবে। কারন আমাদের রিং ফিংগার অন্যসব আঙুলের থেকে একটু উইক হয়। যার ফলে আই এরিয়াতে প্রেশার কম পড়ে। আই এড়িয়াতে কখনোই প্রেশার দিয়ে ম্যাসাজ করা যাবে না। আই ক্রিম চাইলে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এতে করে, আই ক্রিম অ্যাপ্লাই করার সময় চোখে ঠান্ডা এবং রিল্যাক্সিং ফিল হবে।
৬. ত্বকে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ময়েশ্চারাইজার :
আমাদের চেহারার আসল গ্লো ফুটে ওঠে তখনই, যখন আমাদের স্কিন হাইড্রেটেড এবং ময়েশ্চারাইজড থাকে। তাই ময়েশ্চারাইজার আমাদের জন্য খুব খুব ইম্পরট্যান্ট। স্কিন কেয়ারের অন্য সকল প্রোডাক্ট স্কিপ করে গেলেও ময়েশ্চারাইজার একদমই মাস্ট, সে আপনার স্কিন অয়েলি হোক বা ড্রাই। ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার আপনার স্কিনকে নারিশ করে, হাইড্রেটেড আর সফট রাখে। তাই নিজের জন্য সঠিক ময়শ্চারাইজার খুঁজে নেওয়া খুবই জরুরী। আপনার পছন্দসই অল্প একটু ময়েশ্চারাইজার নিয়ে পুরো ফেইসে হালকা হাতে লাগিয়ে নিন।
৭. ফেসিয়াল অয়েল :
ফেসিয়াল অয়েল স্কিনকে রিপেয়ার করার জন্য খুবই ভালো কাজ করে। কারন, এতে রিচ ন্যাচারাল ভিটামিনস থাকে। আর আগেই বলেছি, ফেসিয়াল অয়েলের মলিকিউলস আকারে বড় হয়। তাই, এটা স্কিনে একটা লেয়ার ক্রিয়েট করে। এজন্য, ফেসিয়াল অয়েল সবার শেষের দিকে ব্যবহার করাই বেষ্ট। ত্বকের ধরন বুঝে তারপর এ ধরনের অয়েল ইউজ করবেন। সেনসিটিভ স্কিন হলে এটি বাদ দিতে হবে বা প্যাচ টেস্ট করে ব্যবহার করতে হবে।
৮. সানস্ক্রিন :
ত্বকে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট লেয়ারিং এর শেষ ধাপ হল সানস্ক্রিন অ্যাপ্লিকেশন। দিনের বেলার জন্য সানস্ক্রিন ইজ আ মাস্ট, সেটা হোক শীত বা গ্রীষ্ম। কারন, সানস্ক্রিন আপনার স্কিনকে সূর্যের UVB এবং UVA রশ্মির ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। সানস্ক্রিনে থাকা SPF আমাদের স্কিনের উপর সান এর বিরুদ্ধে প্রোটেকটিভ লেয়ার ক্রিয়েট করে। যার ফলে আমাদের স্কিন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা পায়। তাই সবসময় এটা লাস্টে ব্যবহার করাই ভালো।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
১. স্কিন কেয়ারের জন্য এই ৮ টি ধাপ যে দিনে এবং রাতে করতে হবে এমনটা নয়। যেমন, সানস্ক্রিন রাতে ব্যবহারের কোনো দরকার নেই। আবার দিনের বেলা আই ক্রিম, ফেসিয়াল অয়েল এগুলো না লাগানোই ভালো।
২. প্রত্যেকটা প্রোডাক্ট স্কিনে লাগানোর পরে সেটা স্কিনে অ্যাবজর্ব হতে সময় লাগে। তাই চটপট একটার পর একটা না লাগিয়ে প্রত্যেকটা প্রোডাক্ট লাগানোর পরে ২/১ মিনিট সময় দিন। এরপর পরবর্তী প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করুন।
৩. এখানে এতগুলো প্রোডাক্ট এর কথা বললাম দেখে অনেকেই ভাবতে পারেন, এত্তকিছু লাগাতে হবে??!! আসলে, আপনার স্কিন! তাই আপনার স্কিনের প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি প্রোডাক্ট সিলেক্ট করবেন। তবে, আমি শুধু বলেছি কোনটার পর কোনটা লেয়ারিং করবেন এই বিষয়ে।
এই তো জেনে নিলেন, ৮ টি সঠিক ধাপে কিভাবে আপনার ত্বকে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট লেয়ারিং করবেন। আশা করছি, আপনাদের অনেক বেশী হেল্প হবে। আপনি চাইলে অনলাইনে অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। তাছাড়া, সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপে নিজে গিয়েও কিনতে পারেন, যা যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক