বয়স ত্রিশ পার করলেই আস্তে আস্তে মুখে বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করে। চোখের চারপাশে, কপালে, মুখে স্মাইল লাইনের আবির্ভাব শুরু হয়ে যায়। কেননা ৩০ এর পরে শরীরে নিজে থেকে কোলাজেন, ইলাস্টিসিটি এবং প্রোটিন উৎপাদন অনেকাংশে কমতে থাকে। যে কারনে এই সময় থেকেই ধীরে ধীরে চোখের চারপাশ কুঁচকে যেতে থাকে যেটাকে বলা হয় “ক্রো’স ফীট”। মুখের রিংকেল দূর করতে অনেক ধরনের ক্রিম বাজারে পাওয়া যায়, পাশাপাশি সার্জারির মত অপশনও রয়েছে।
কিন্তু এগুলোর বাইরে যে অপশনটি একদম সহজ, কার্যকরী এবং এতে কোন ধরনের খরচ আপনাকে করতে হবে না; সেটা হল ফেসিয়াল এক্সারসাইজ। চলুন আজ তাহলে আলোচনা করা যাক মুখের রিংকেল দূর করতে সহজ কিছু ফেসিয়াল এক্সারসাইজ; যেগুলির সাহায্যে আপনি ঘরে বসেই নিজে নিজে ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে ফেলতে পারবেন।
মুখের রিংকেল দূর করতে সহজ কিছু ফেসিয়াল এক্সারসাইজ
আজকে আমি মুখের রিংকেল দূর করতে সহজ কিন্তু খুবই কার্যকরী কিছু ফেসিয়াল এক্সারসাইজ সম্পর্কে আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
স্মাইল লাইন বা লাফ লাইন
প্রথমেই কথা বলব স্মাইল লাইন নিয়ে। স্মাইল লাইন যে শুধুমাত্র ঠোঁটের চারপাশে পড়ে তা কিন্তু না; স্মাইল লাইন চোখের চারপাশেও পড়ে। এগুলো কমাতে যেসব এক্সারসাইজ করতে পারেন সেগুলো নিচে বর্ণনা করা হল।
এক্সারসাইজ ১
- তর্জনীর সাহায্যে ঠোঁটের দুই কর্নার হালকা ভাবে চেপে ধরুন।
- রেস্টিং পজিশন থেকে কোয়ার্টার ইঞ্চি পরিমান উপরের দিকে তুলে ধরুন।
- এবার আঙ্গুলে চাপ ঠিক রেখে; চাপের বিপরীতে ঠোঁটের দুই কর্নার একটি আরেকটির উপর চেপে ধরুন।
- এভাবে ৫-১০ সেকেন্ড ধরে থাকুন; এরপর বিরতি দিয়ে আবার করুন।
- ১৫-২০ বার এই প্রসেস ফলো করতে পারেন।
এক্সারসাইজ ২
মুখের চিক মাসল বলিরেখা কমাতে এবং মুখের ত্বক টাইট রাখতে এবং স্কিন লিফটিং করতে ভীষণ ভাবে সাহায্য করে। সেই সাথে লাফ লাইন ও কমিয়ে আনে।
- তর্জনীর টিপ এর সাহায্যে মুখের স্মাইল লাইনে চেপে ধরুন হালকা ভাবে।
- আঙ্গুলের চাপ ধরে রাখা অবস্থায় ঠোঁট দুটি আলাদা করে হাসার চেষ্টা করুন; যতটা প্রসারিত করে সম্ভব, হাসুন।
- এভাবে ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। বিরতি দিন আবার শুরু করুন।
- ১৫-৩০ বার রিপিট করুন।
এক্সারসাইজ ৩
স্মাইল লাইন কমাতে স্মাইল কিন্তু অনেক সাহায্য করে, তবে সেটা করতে হবে এক্সারসাইজের মাধ্যমে।
- ঠোঁট দুটোকে একটু ফাঁক করে ঠোঁটের কর্নার দুটোকে তর্জনীর সাহায্যে চেপে মুখের পেছনের দিকে টেনে ধরুন। খুব জোরে নয় , হালকা ভাবে কিন্তু বেশ ফার্মলি।
- ঠোঁট দুটিকে প্যারালালি রেখে আঙ্গুলের সাহায্যে যতদুর সম্ভব পেছনে টেনে নিন।
- ১০ সেকেন্ড ধরে রেখে এরপর ছেড়ে দিন, বিরতি দিয়ে আবার শুরু করুন।
- এভাবে ১৫-৩০ বার প্রসেসটি ফলো করতে পারেন।
এক্সারসাইজ ৪
বিশাল হাসিও কিন্তু মুখের চারপাশের মাসল শক্ত রাখতে এবং স্মাইল লাইনের রিংকেল কমাতে সাহায্য করে। তবে সেই হাসিটা হতে হবে একটু অন্যভাবে, বুঝিয়ে বলছি।
- দুই দাঁতের পাটি একসাথে মিলিয়ে যতটা সম্ভব প্রসারিত করে হাসার চেষ্টা করুন। সর্বোচ্চ পজিশনে নিয়ে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এই হাসি।
- বিরতি দিয়ে ১৫-৩০ বার করুন।
চোখের চারপাশের লাইন কমানোর এক্সারসাইজ
চোখের চারপাশের ত্বক মুখের অন্যান্য অংশের চেয়ে অনেক বেশি পাতলা হওয়ার কারনে; এজিং এর ফার্স্ট সাইন গুলো এই অংশে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। মুখের এই অংশের রিংকেল কমাতে নিচের ব্যায়াম দুটি করতে পারেন।
এক্সারসাইজ ১
মুখের জ বোণকে খুব ফার্ম রেখে চোখ কে বাম থেকে ডানে, ডান থেকে বামে, উপর থেকে নিচে, নিচ থেকে উপরে করতে থাকুন প্রত্যেক দিকে ৫-৬ বার। তবে খুব জোরে নয়; মডারেটলি।
এক্সারসাইজ ২
- চোখের চারপাশের মাসল কে টানটান রাখতে এবং ফাইন লাইন কমাতে আপনার বুড়ো আঙ্গুল কে চোখের আউটার কর্নারে রাখুন এবং বাকি আঙ্গুল গুলোকে কপালে রাখুন।
- এবার চোখ বন্ধ করে কিছুটা স্কুইজ করে রাখুন। সেই সাথে বুড়ো আঙ্গুল দুটিকে হালকা চাপের মাধ্যমে মুখের পেছনে এবং উপরের দিকে ম্যাসাজের মত টান দিন। মনে রাখবেন; এখানে কোনভাবেই ম্যাসাজ করা যাবেনা।
- এই পজিশনকে ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রেখে বিরতি দিয়ে আবার শুরু করুন।
- এই প্রসেস ১৫-২০ বার ফলো করতে পারেন।
কপালের রিংকেল দূর করতে এক্সারসাইজ
যদিও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে; কপালের রিংকেল আনহেলদি ডায়েট এবং স্ট্রেসের কারনে দেখা দেয়। তাই এক্সারসাইজের পাশাপাশি লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনাটাও জরুরি।
এক্সারসাইজ ১
- দুই হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দুটিকে দুই চোখের ভ্রু এর উপরে রেখে বাকি আঙ্গুলগুলো কপালে এবং মাথার উপরিভাগে রাখুন।
- এবার মনে করুন আপনি কিছু একটা দেখে খুব সারপ্রাইজ হয়েছেন, এমন ভাবে চোখের ভ্রুকে উপর নিচ করতে থাকুন।
- এই সময় কোনভাবেই যেন কপালে ভাঁজ না পড়ে।
- ১০ সেকেন্ড ধরে রেখে বিরতি দিয়ে আবার শুরু করুন।
- ৫-১০ বার করতে পারেন।
এক্সারসাইজ ২
এটাকে বলে রাবার এক্সারসাইজ।
এই এক্সারসাইজ করার জন্য-
- প্রথমে দুই হাতের আঙ্গুল গুলোকে ইন্টারলক করে কপালের উপরে ঠিক হেয়ারলাইনের পিছনে শক্ত করে রাখুন।
- এবার কপাল একটু পিছনের দিকে টেনে ধরুন।
- দুই ঠোটকে ফাঁক করে ইংরেজি ‘ও’ আকৃতির শেপে আনুন এবং মুখ না নাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকুন ১০ সেকেন্ড।
- বিরতি দিয়ে দিয়ে ২০ বার করতে পারেন।
মনে রাখবেন, কোন এক্সারসাইজ একদিনে বা এক সপ্তাহে ফল দেয় না। আবার ওভার এক্সারসাইজে হিতে বিপরীত হয়, তাই সেটাও করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই খেয়াল রাখতে হবে, মুখের ত্বক যেহেতু অনেক বেশি সেনসিটিভ তাই কোন ভাবেই এতে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা যাবে না বা নির্দেশিত সময়ের বেশি সময় ধরে এই এক্সারসাইজগুলো করা যাবে না। ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।
ছবি- সাটারস্টক