সত্যি করে বলুন তো, যেদিন চুল দেখতে সুন্দর লাগে, সেদিন নিজেকে অন্যদিনের চাইতে একটু বেশিই কনফিডেন্ট মনে হয় না? আমরা প্রত্যেকেই চাই যেন আমাদের চুল সবসময় হেলদি ও স্ট্রং থাকে। তাই চুল ভালো রাখতে আমাদের এফোর্টেরও যেন কোনো শেষ নেই! স্পেশালি হেয়ার গ্রোথ নিয়ে আমরা সবসময় অনেক বেশি কনসার্নড থাকি। কিন্তু হেয়ার গ্রোথ স্টেজ অর্থাৎ হেয়ার গ্রোথ কীভাবে হয়, তা আমাদের বেশিরভাগেরই অজানা!
হেয়ার গ্রোথ হচ্ছে একটি ন্যাচারাল প্রসেস, যেটির ৪টি ডিফারেন্ট স্টেজ রয়েছে। এই স্টেজগুলোর প্রতিটির নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। আজকের এই লেখায় আমি হেয়ার গ্রোথের ৪টি স্টেজ সম্পর্কে ডিসকাস করবো। সাথে আরও থাকবে চুল হেলদি রাখার কিছু সুপার ইফেক্টিভ টিপস। তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক!
আমাদের হেয়ার স্ট্রাকচার কেমন হয়?
হেয়ার গ্রোথের স্টেজগুলো ভালোভাবে বুঝতে হলে আমাদের সবার আগে জানতে হবে আমাদের হেয়ার স্ট্রাকচার বা চুলের গঠন সম্পর্কে। আমাদের চুল কেরাটিন নামের এক ধরণের প্রোটিন থেকে তৈরি হয়৷ চুলের বাইরের যে অংশটি সবাই দেখতে পান, সেটিকে শ্যাফট বলা হয়৷ আর চুলের গোড়াতে থাকে ফলিকল। এই হেয়ার ফলিকল থেকেই মেইনলি হেয়ার গ্রোথ হয়ে থাকে।
এবার আসি চুলের মেইন স্ট্রাকচার নিয়ে। সাধারণত চুলের ৩টি অংশ থাকে।
- কর্টেক্স
- কিউটিকল
- মেডুলা
এগুলোর মধ্যে মূল অংশ হচ্ছে কর্টেক্স। কর্টেক্সের কারণে চুলের ইলাস্টিসিটি স্বাভাবিক থাকে। কর্টেক্সে থাকা মেলানিনের কারণেই আমাদের চুলে ডিফারেন্ট কালার দেখা যায়, অর্থাৎ কারও চুল কালো হয়, আবার কারও চুল ব্রাউন হয়। কর্টেক্স ছাড়াও চুলের আরো দু’টি অংশ হলো মেডুলা ও কিউটিকল। এগুলোর মধ্যে মেডুলার অবস্থান সবচেয়ে ভেতরের দিকে। আর কিউটিকল হলো চুলের বাইরের দিকে থাকা পাতলা একটি লেয়ার, যেটি হেয়ার গ্রোথে সাহায্য করার পাশাপাশি প্রোটেকটিভ লেয়ার হিসেবেও বিশেষ কার্যকরী।
হেয়ার গ্রোথের ৪টি স্টেজ
এবার আপনাদের জানাবো হেয়ার গ্রোথের ৪টি স্টেজ সম্পর্কে। এগুলোর মধ্যে প্রথম ৩টি স্টেজ হলো অ্যানাজেন, ক্যাটাজেন ও টেলোজেন, যেগুলো হেয়ার গ্রোথের সাথে সরাসরি রিলেটেড। আর লাস্ট স্টেজ, অর্থাৎ অ্যাক্সোজেন স্টেজে পুরানো চুল ঝরে গিয়ে নতুন চুল গজানো শুরু হয়৷ চলুন এই স্টেজগুলো নিয়ে আরেকটু ডিটেইলে জেনে নেওয়া যাক।
স্টেজ ১: অ্যানাজেন
অ্যানাজেন হচ্ছে হেয়ার গ্রোথের প্রথম স্টেজ। এটি গ্রোথ স্টেজ বা অ্যাকটিভ স্টেজ নামেও পরিচিত৷ হয়তো জেনে অবাক হবেন যে আমাদের মাথায় থাকা বেশিরভাগ চুলই এই অ্যানাজেন স্টেজে রয়েছে!
- এই স্টেজটি ৩ থেকে ৫ বছর সময় ধরে চলে অর্থাৎ এই স্টেজে থাকা একেকটি চুল ৩ থেকে ৫ বছর সময় ধরে বড় হতে থাকে
- এশিয়ানদের ক্ষেত্রে এই স্টেজের সময়কাল ক্ষেত্রবিশেষে ৭ বছরও হয়ে
- তবে আইব্রো অথবা পিউবিক হেয়ারের ক্ষেত্রে অ্যানাজেন স্টেজের সময়কাল কিন্তু এতটা দীর্ঘ হয় না
- এই স্টেজে হেয়ার ফলিকল থেকে ধীরে ধীরে হেয়ার গ্রো করা শুরু করে এবং তারপর এই গ্রোথ চলতে থাকে
- অ্যানাজেন স্টেজে থাকা অবস্থায় প্রতিমাসে চুল হাফ ইঞ্চি করে বড় হয়
স্টেজ ২: ক্যাটাজেন
অ্যানাজেন স্টেজ শেষ হওয়ার পর ক্যাটাজেন নামের হেয়ার গ্রোথ স্টেজ স্টার্ট হয়। এই স্টেজটিকে ট্রানজিশন স্টেজ নামেও ডাকা হয়। ক্যাটাজেন স্টেজটি অ্যানাজেনের মতো এত লম্বা নয়৷
- ক্যাটাজেন স্টেজের সময়কাল মাত্র ১০ দিনের মতো
- এই স্টেজে ফলিকল সংকুচিত হয়ে হেয়ার সেপারেট হয়ে যায়
- এই ধাপে হেয়ার গ্রোথ স্লো হয়ে যায়
স্টেজ ৩: টেলোজেন
এরপরই আসে টেলোজেন স্টেজ, এই হেয়ার গ্রোথ স্টেজকে রেস্টিং স্টেজও বলা হয়ে থাকে। এই স্টেজে জেনারেলি যে হেয়ার ফলিকলগুলো থেকে ক্যাটাজেন স্টেজে চুল সেপারেট হয়ে যায়, সেই একই ফলিকলে নতুন হেয়ার গ্রো করতে শুরু করে।
- এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই স্টেজে এসে হেয়ার গ্রোথ অফ হয়ে যায়, কিন্তু চুল পড়ে যায় না
- ৩ মাসের মতো স্থায়ী থাকে এই ফেজ
স্টেজ ৪: অ্যাক্সোজেন
অ্যাক্সোজেন স্টেজে এসে টেলোজেন স্টেজে থাকা চুলগুলো পড়ে যেতে শুরু করে। তাই এই স্টেজে এসে আপনারা চুল আঁচড়াতে গেলে অথবা শাওয়ারের সময় চুল পড়া নজরে আসবে। তবে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কেননা, নতুন চুল গজাবে বলেই এ চুলগুলো পড়ে যায়।
- নরমালি এই স্টেজে একজন মানুষের প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পড়ে থাকে
- ২ থেকে ৫ মাস পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে এই ধাপ
- তারপর আবার আস্তে আস্তে নতুন হেয়ার গ্রো করা শুরু করে
বলা হয়ে থাকে, ডেইলি ৫০-১০০টা চুল পড়া স্বাভাবিক। মূলত এভাবেই আমাদের হেয়ার গ্রোথের সাইকেলটি রান করে থাকে। আশা করি হেয়ার গ্রোথের ৪টি স্টেজ সম্পর্কে আপনাদের আর কোনো কনফিউশন নেই।
চুল হেলদি রাখবেন কীভাবে?
হেয়ার গ্রোথ কীভাবে হয় সেটি তো জেনে নিলেন। এবার চুল হেলদি রাখার উপায়গুলো জানা যাক। ব্যস্ত জীবনে আমাদের দরকার ইজি ও শর্টকাট সল্যুশন, তাই না? চলুন তাহলে জেনে নেই।
১) রেগুলার ডায়েটে চুলের জন্য পুষ্টিকর উপাদানগুলো অ্যাড করুন। চুল হেলদি রাখতে ও গ্রোথ বাড়াতে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। এর পাশাপাশি প্রতিদিনের খাবারে যেন ভিটামিন সি, ডি, আয়রন, জিংক ইত্যাদি উপাদান অবশ্যই প্রেজেন্ট থাকে তা নিশ্চিত করুন।
২) চুলের ধরন বুঝে সঠিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস ইউজ করুন। রেগুলার বেসিসে শ্যাম্পু ব্যবহার করলে প্যারাবেন ফ্রি, সালফেট ফ্রি, মাইল্ড বা হারবাল শ্যাম্পু বেছে নিন।
৩) পাশাপাশি সপ্তাহে এক বা দুইবার স্ক্যাল্পে অয়েল ম্যাসাজ করা, হেয়ার মাস্ক অ্যাপ্লাই করা এগুলোও জরুরী। হেয়ার ফলের প্রবলেম থাকলে Hawaa Hair Fall Avenger Oil ট্রাই করতে পারেন। এতে আছে নারকেল তেল, অনিয়ন অয়েল, মেথি, অলিভ অয়েল, কালোজিরা সহ আরও অনেক উপাদান যা চুলের গোড়া মজবুত করে।
৩) শ্যাম্পু করার সময় চুলে গরম পানি সরাসরি ব্যবহার না করাই ভালো। আর শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুল কখনোই আঁচড়াতে যাবেন না, কেননা এতে হেয়ার ড্যামেজের চান্স থাকে।
৪) যখন বিভিন্ন হেয়ার স্টাইলিং টুলস, যেমন- হেয়ার স্ট্রেইটনার বা কার্লার ইউজ করবেন, তখন একটি ভালো কোয়ালিটির হিট প্রোটেকটর স্প্রে বা সিরাম ইউজ করতে ভুলবেন না!
৫) চুল হেলদি রাখতে টিপস হিসেবে সবার শেষে বলবো যতটুকু সম্ভব স্ট্রেস ফ্রি থাকতে। কারণ যত বেশি স্ট্রেস ফ্রি থাকবেন, হেয়ার লস তত কম হবে। হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করার ট্রাই করুন, বেনিফিট পাবেনই!
অথেনটিক প্রোডাক্ট কোথায় পাবেন?
হেয়ার কেয়ারের অথেনটিক প্রোডাক্টের জন্য আমার সবচেয়ে ট্রাস্টেড প্লেস হলো সাজগোজ। সাজগোজে আপনারা পেয়ে যাবেন চুলের ধরন অনুযায়ী বেস্ট কোয়ালিটির হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস। তাই সাজগোজের ওয়েবসাইট বা ফিজিক্যাল শোরুমে ভিজিট করতে ভুলবেন না কিন্তু!
আশা করি আজকের লেখাটি হেল্পফুল ছিলো। মেকআপ আইটেমস, বেবি কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস সবই পেয়ে যাবেন সাজগোজে। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ণ মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক