আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজের ভিড়ে অনেক কষ্টই চাপা পড়ে যায় । কিছু সমস্যা আছে কাউকে বলা যায় না, কিন্তু যে কোন পেশার মানুষকেই বাঁচতে হলে জানতে হবে। তেমনই একটি অতি পরিচিত রোগ নিয়ে আজ আলোচনা করা যাক। রোগটির নাম-সিফিলিস। সিফিলিস বা উপদংশ রোগটি আসলে কি, কেন হয়, চলুন তা নিয়ে জেনে নিই বিশদভাবে।
সিফিলিস বা উপদংশ কি?
সিফিলিস বা উপদংশ একটি যৌন রোগ যা ফিরিঙ্গি বা গর্মি রোগ নামেও পরিচিত। এটি একটি সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ। Treponema Palllidum এর সংক্রমণে এই রোগ হয়।
সিফিলিস হওয়ার কারণ
এটি প্রধানত যৌন রোগ। তবে জন্মের সময় মা থেকে সন্তানের-ও হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের লালার মাধ্যমে, রক্ত বা সুঁই -এধরনের জিনিস দ্বারাও ছড়ায়।
সিফিলিস বা উপদংশ হওয়ার লক্ষণসমূহ
৪ ধাপে ভাগ করা যায়। এখানে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
০১. প্রাইমারিঃ যৌন সংস্রবের ৩ থেকে ৯০দিন ( গড়ে ২১ দিন ) এর মধ্যে চামড়ায় ক্ষত সৃষ্টি হয়। যাকে chancre বলা হয় ।এটি একটি, দৃঢ়, ব্যথাহীন,চুলকানি বিহীন ক্ষত। তা থেকে পরবর্তীতে macule , papule এবং শেষে ulcer হয়।এটি নারী-পুরুষ উভয়ের হতে পারে। সাধারণত ৩ থেকে ৬ সপ্তাহ থাকে। নারীর জরায়ু ,পুরুষের যৌনাঙ্গে এবং হোমো সেক্সুয়াল পুরুষদের পায়ুপথে-ও হতে পারে।এমন কি যৌনাঙ্গের বাইরেও হতে পারে। মা থেকে সন্তান এর হতে পারে । জ্বর, rash, যকৃত ও প্লীহা বড় হতে পারে।
০২. সেকেন্ডারিঃ ৪ সেথেকে ১০ সপ্তাহ পরে হাত, পা এর তালু ,বুকে ,পিঠে লালচে- গোলাপি চুলকানি বিহীন rash হয়। এর সাথে জ্বর, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা থাকতে পারে। ওজন কমে যেতে পারে, চুল পড়ে। ৩ থেকে ৬ সপ্তাহে এটি ভালো হয়ে যেতে পারে। ২৫% ক্ষেত্রে এই লক্ষণ সমূহ পুনরায় দেখা দিতে পারে ।
০৩. সুপ্ত সুপ্তাবস্থার প্রথম দিকে এটি তীব্র সংক্রামক এবং ভয়ের বিষয় যে আক্রান্ত ব্যক্তির কোন লক্ষণ থাকে না যা দেখে সাবধান হওয়া যাবে। জন্মের সময় বা গর্ভে থাকাকালেও এটি হতে পারে ।
০৪. টারশীয়ারিঃ প্রাথমিক ভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এক তৃতীয়াংশের ৩ থেকে ১৫ বছর পর Gummatous syphilis, Neurosyphilis, Cardiovascular syphilis হতে পারে।
সিফিলিস বা উপদংশ সনাক্ত করার উপায়
রক্ত পরীক্ষা , অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে জীবাণু পরীক্ষা। তবে রক্তের মাধ্যমে কোন ধাপে আছে তা বোঝা যায় না। রক্ত পরীক্ষার মধ্যে বর্তমানে যেগুলো প্রচলিত সেগুলো হচ্ছে-
• TREPONEMAL PALLIDUM PARTICLE AGGLUTINATION (TPHA) Test
• FLUORESCENT TREPONEMAL ANTIBODY ABSORPTION Test
• (FTA-Abs) Test
• VDRL (VENERAL DISEASE RESEARCH LABORATORY) Test
তবে শেষের পরীক্ষাটি থেকে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া DIRECT FLUORESCENT ANTIBODY Test, NUCLEIC ACID AMPLIFICATION Test ও করা হয়।
প্রতিরোধের উপায়
এর কোন প্রচলিত VACCINE নেই। তাছাড়া যৌন মিলনে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েও সব সময় এড়ানো যায় না ।
• অবাধ যৌন মিলন না করে সুস্থ জীবন যাপন করাই প্রতিরোধের উপায়। কনডম এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিরাপদ যা আমরা সবাই জানি।
• পুরনো সুঁই ব্যবহার করা যাবে না।
• এছাড়া গর্ভধারিণী মা কে ANTINATAL VISIT এর জন্যে নিয়মিত হাসপাতালে নিতে হবে।