আচ্ছা বলুন তো? “মেকআপ” শব্দটি শুনলে প্রথমেই মাথায় কী আসে? প্রাইমার, ফাউন্ডেশন, কন্সিলার, ফেইস পাউডার, ব্লাশ, বঞ্জার, হাইলাইটার, আই শ্যাডো, লিপস্টিক এমন আরও কত কত প্রোডাক্ট এর নাম! তাই না? এগুলোর পাশাপাশি মাইসেলার ওয়াটার, ফেসিয়াল ওয়াইপস, ক্লিনজিং অয়েল এমন সব প্রোডাক্টের নাম যদি আপনার মাথায় না আসে তবে, আজকের লেখাটি আপনার জন্যেই। মেকআপ তোলার সহজ উপায় জানা আছে কি?
মেকআপ করতে ভালোবাসি আমরা অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে, মেকআপ করার প্রসেস বা নিয়ম নিয়ে জানেন না এমন মানুষের সংখ্যাও খুব কম। কিন্তু সঠিকভাবে মেকআপ তোলার প্রসেসটা কী, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানি না আমরা অনেকেই। আর এই ব্যাপারে তুলনামূলক কম আগ্রহ থাকার কারণে, না বুঝেই আমরা অনেকে স্কিনের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলি। যারা স্কিন কেয়ারে সচেতন তারা নিশ্চই বুঝতে পারছেন, কেন এমনটা বলা! আর যারা এখনও জানেন না, চিন্তার কোন কারণ নেই! আজকে শুরুতেই জেনে নিবো, সঠিকভাবে মেকআপ তোলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। পাশাপাশি জানবো স্টেপ বাই স্টেপ মেকআপ তোলার সহজ উপায় নিয়েও।
সঠিকভাবে মেকআপ না উঠালে স্কিনের কী কী সমস্যা হতে পারে?
পোরস ক্লগ হয়ে একনে, ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস বেড়ে যায়
আমাদের প্রত্যেকের ফেইসেই রয়েছে অসংখ্য অসংখ্য পোরস বা রোমকূপ। একটু স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তা করে দেখুন তো? কোন কারণে যদি মেকআপ পার্টিক্যালস-গুলো ফেইসে থেকে যায় এতে কী হতে পারে? খুব সহজেই কিন্তু এটি আমাদের স্কিনের পোরস ক্লগ করে ফেলবে। এর ফলে, আমাদের স্কিনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে, স্কিনে একনে, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস এর মত সমস্যা দেখা দেয়।
স্কিন ব্রেক আউটস এর মত সমস্যা দেখা দেয়
আমরা যারা মেকআপ করি, প্রায়ই বলতে শোনা যায় আমাদের স্কিনে ব্রেক আউটস এর মত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর অন্যতম কারণ সঠিকভাবে সঠিক সময়ে স্কিন কেয়ার না করা। আর যারা মেকআপ করেন তাদের ক্ষেত্রে প্রোপারলি মেকআপ রিমুভ করা স্কিন কেয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
অকালেই দেখা দিতে পারে রিংকেলস এবং ফাইন লাইনস
২৫ থেকে ৩০ বছর থেকে স্বাভাবিকভাবেই ফেইসে দেখা দেয় রিংকেলস এবং ফাইন লাইনস এর মত প্রবলেম। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যারা টিনেজার কিন্তু এখন থেকেই স্কিনে বয়সের ছাপ দেখা দিচ্ছে! টিনেজাররা নরমালি মেকআপ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু মেকআপ প্রপারলি রিমুভ করার বেলায় রাজ্যের অনীহা। অথচ মুখে রিংকেলস এবং ফাইন লাইনস দেখা দেয়ার বড় একটি কারণ সঠিকভাবে মেকআপ না উঠানো।
স্কিনে রাফনেস বা ড্রাইনেস দেখা দিতে পারে
মেকআপ করা হলে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সেটি আমাদের মুখে থাকেই। এসময় মেকআপ আমাদের স্কিনের ময়েশ্চার আস্তে আস্তে শুষে নিতে থাকে। তাই মেকআপ করার আগে আমরা বলে থাকি স্কিনকে আগে হাইড্রেটেড করে নিতে, যেন একটি ভালো সময় পর্যন্ত আমাদের স্কিনের ময়েশ্চার লেভেল ঠিক থাকে। তার মানে যখনই আপনি কোন কারণে মেকআপ সঠিক ভাবে তুলছেন না, এটি আপনার ময়েশ্চার শুষে নিতে নিতে একটা সময় স্কিনকে ড্রাই বা রাফ করে ফেলে। এবং এ থেকেই শুরু হয় স্কিনের পরবর্তী নানা সমস্যা।
ফেইসে এবং চোখের আশেপাশে ইরিটেশন ফিল হতে পারে
নিজেকে সুন্দর দেখাতে চোখে আই লাইনার, মাশকারা, আই শ্যাডো কত কিছুই না অ্যাপ্লাই করি। অথচ এই প্রোডাক্টগুলোই ঠিক সময় ঠিক মত ক্লিন না করা হলে, চোখের আশেপাশে জ্বালাপোড়া বা স্কিন ইরিটেশন দেখা দিতে পারে। এছাড়াও লিপস ড্রাই হয়ে যাওয়া, আইব্রো বা আই ল্যাশ পড়ে যাওয়ার মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
আচ্ছা! সঠিক ভাবে মেকআপ না উঠালে স্কিনের কী কী সমস্যা হতে পারে এ ব্যাপারেতো অনেক কিছুই জেনে নিলাম। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে সঠিক ভাবে মেকআপ তোলার সঠিক উপায় কী? চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক স্টেপ বাই স্টেপ মেকআপ তোলার নিয়ম নিয়ে।
স্টেপ বাই স্টেপ সঠিক ভাবে মেকআপ তোলার সহজ উপায়!
মেকআপ তুলতেও আবার স্টেপ!! কী? অনেকেই এমনটা ভাবছেন তাই না? মেকআপ করার ক্ষেত্রে যেমন স্পেসিফিক কিছু নিয়ম মানতে হয়, তেমনি মেকআপ তোলার ক্ষেত্রেও কিছু স্টেপ রয়েছে। হেলদি স্কিন পেতে যা ফলো করা অত্যন্ত জরুরী। মেকআপ তোলার সহজ উপায় জেনে নিন তবে।
স্টেপ ১ঃ মাইসেলার ওয়াটার বা ক্লিনজিং অয়েল এর সাথে ফেসিয়াল ওয়াইপস বা কটন প্যাড এর ব্যবহার
মেকআপ তোলার শুরুতেই স্কিন টাইপ অনুযায়ী মাইসেলার ওয়াটার বা ক্লিনজিং অয়েল নিয়ে মুখে ম্যাসাজ করে নিতে হবে।
• যাদের অয়েলি বা কম্বিনেশন টাইপ স্কিন তারা মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহার করবেন।
• আর যাদের ড্রাই স্কিন বা নরমাল স্কিন তারা ক্লিনজিং অয়েল ব্যবহার করবেন।
মার্কেটে এখন অনেক ধরণের মাইসেলার ওয়াটার বা ক্লিনজিং অয়েল পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না, এই প্রোডাক্টগুলো কী কাজে ব্যবহিত হয়। আমাদের মুখের মেকআপ এর পার্টিক্যালগুলোকে ইনিশিয়াল স্টেজে ভেঙ্গে দিতে হেল্প করে মাইসেলার ওয়াটার বা ক্লিনজিং অয়েল।
এই স্টেপটি ফলো করার সময় অবশ্যই একটি ভালো মানের ফেসিয়াল ওয়াইপস বা কটন প্যাড ব্যবহার করতে হবে। কোন ভাবেই শক্ত কোন টিস্যু বা কাপড় ব্যবহার করবেন না। আমাদের স্কিন যেহেতু খুবই সেন্সিটিভ একটি জায়গা তাই এতে স্কিনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এবং একটি ফেসিয়াল ওয়াইপস বা কটন প্যাড একবারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
স্টেপ ২ঃ স্কিন টাইপ অনুযায়ী ব্যবহার করুন একটি ভালো ক্লিনজার বা ফেইস ওয়াশ
মাইসেলার ওয়াটার বা ক্লিনজিং অয়েল এর সাথে ফেসিয়াল ওয়াইপস বা কটন প্যাড দিয়ে প্রথম স্টেপ-এ মেকআপ তোলা হয়ে গেলে, সেকেন্ড স্টেপ-এ একটি ভালো ক্লিনজার বা ফেইস ওয়াশ দিয়ে ফেইসটাকে অবশ্যই ভালোভাবে ক্লিন করে নিতে হবে। আমরা অনেকেই স্কিন এর ধরণ অনুযায়ী ক্লিনজার বাছাই করি না। এতে প্রোডাক্টটি আমাদের স্কিনকে যেমন স্যুট করে না, তেমনি প্রপার সল্যুশনও দিতে পারে না।
• যাদের স্কিন অয়েলি এবং কম্বিনেশন টাইপ তারা অবশ্যই চেষ্টা করবেন, ফোম বেসড বা জেল বেসড ক্লিনজার সিলেক্ট করতে।
• আর যাদের স্কিন টাইপ ড্রাই তারা সিলেক্ট করবেন ক্রিম বেসড কোনো ক্লিনজার।
স্টেপ ৩ঃ ফেইস টাওয়াল বা ফেইস টিস্যু দিয়ে চেপে চেপে ফেইসটাকে মুছে নিন
ক্লিনজার দিয়ে ফেইসটাকে ভালোভাবে ক্লিন করার পর, এবার ফেইটাকে ভালোভাবে মুছে নেয়ার পালা। অনেকেই হয়তো ভাবছেন, এতে আবার নতুন কিছু জানার কী আছে! আমরা অনেকেই ফেইস মুছার সময় যে ভুলটি করে থাকি তা হল, খুব রাফভাবে কোন টাওয়াল বা খসখসে কাপড় ব্যবহার করি। অথচ এটি একদমই ভুল।
• ফেইসটাকে প্রপারলি মুছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে ফেসিয়াল কোনো নরম টাওয়াল বা ফেইস টিস্যু, যা শুধু ফেইস মুছার জন্যেই ব্যবহার করা হবে।
• এবং অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, কোনো ভাবেই টেনে টেনে মুখ মুছবেন না! ফেইস টাওয়াল বা ফেইস টিস্যু দিয়ে চেপে চেপে ফেইসটাকে মুছে নিতে হবে।
স্টেপ ৪ঃ ত্বকের পি.এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে টোনার অ্যাপ্লাই করে নিন
ত্বককে ক্লিন বা পরিষ্কার করতে টোনার মাস্ট। ফেইসটাকে ভাল ভাবে মুছেই কটন প্যাডে টোনার নিয়ে ড্যাব ড্যাব করে পুরো ফেইস-এ টোনার অ্যাপ্লাই করে নিন। ভাবছেন কেন?
- টোনার ত্বক পরিষ্কার ও টানটান করা ছাড়াও ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে।
- ক্লিনজার ব্যবহার করার পর আমাদের ফেইসের পি.এইচ এর ভারসাম্য হারিয়ে যায়। এই টোনার ত্বকের এই পি.এইচ ব্যাল্যান্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- পাশাপাশি পরবর্তী স্কিন কেয়ারের জন্যে স্কিনকে প্রিপেয়ার করে। এর ফলে সহজেই স্কিনে অন্যান্য প্রোডাক্টগুলো মানিয়ে যায়।
- এছাড়াও ফেইসকে রাখে হাইড্রেটেড।
স্টেপ ৫ঃ স্টেপগুলো শেষ করুন ভালো একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে
সব সময়ই ময়েশ্চারাইজার স্কিন কেয়ার স্টেপের শেষে অ্যাপ্লাই করতে হবে। আমাদের শরীরের সতেজতার জন্য যেমন খাদ্য প্রয়োজন, ঠিক তেমনি স্কিনকে সতেজ রাখতে ময়েশ্চারাইজার দরকার। তাই অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করতে ভুল করবেন না।
এইতো জেনে নিলাম, মেকআপ প্রপারলি উঠানোর একদম সহজ এবং সহজ উপায় নিয়ে। অনেকেই “ডাবল ক্লিনজিং” কথাটির সাথে পরিচিত। আবার অনেকেই এ ব্যপারে কিছুই জানেন না! মূলত প্রথমে ফেইসকে মাইসেলার ওয়াটার বা ক্লিনজিং অয়েল দিয়ে ক্লিন করতে হবে। এবং এর পর ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে। এই দুটি স্টেপকেই আমরা “ডাবল ক্লিনজিং” বলে থাকি। এখন নিশ্চই বুঝতে পারছেন মেকআপ করার পাশাপাশি মেকআপ সঠিক ভাবে তোলার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। অনেকেই কমপ্লেইন করে থাকেন তাদের স্কিনে প্রপারলি মেকআপ বসছে না! এর আরেকটি কারণও কিন্তু, মুখের মেকআপ ঠিকভাবে রিমুভ না করা। কারণ এর ফলে, স্কিনের ক্ষতি হয় বলেই পরে মেকআপ স্কিনে বসতে চায় না! তাই মেকআপ ভারী হোক বা হালকা সঠিকভাবে মেকআপ তুলতে ভুলবেন না।
অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। বিউটি রিলেটেড যেকোনো সাজেশনের জন্য সাজগোজ সবসময়ই আপনার পাশে আছে।
ছবি- সাজগোজ