আমরা অনেকই বাজারের তৈরি হারবাল তেল ব্যবহারের চেয়ে ঘরে তৈরি হারবাল তেল ব্যবহার করতে পছন্দ করি।কিন্তু আমরা আদৌ কি সঠিক নিয়মে হারবাল তেল তৈরি করতে পারি!
ঘরে হারবাল তেল তৈরির সময় প্রায়ই একটা সাধারণ ঘটনা ঘটে তা হল, তেলটা পুড়ে যায়। আমরা সঠিক নিয়মে তেলটাকে জ্বাল দিতে পারি না বলেই তেলটার অবস্থা এমন হয়। উপরন্তু কি হয় তেল নষ্ট হয়ে তেলের কার্যকারিতা হারায় এবং টাকাটাও যায় জলে। তবে চলুন, আপনাদের শিখিয়ে দেই কীভাবে পারফেক্ট উপায়ে হারবাল তেল তৈরি করতে হয়। এখানে আমি আমার পছন্দ মতো উপকরণ দিয়ে তেল বানানোর পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছি। আপনারা চাইলে আপনাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে তেলটা বানাতে পারেন।
[picture]
তেল তৈরির উপকরণ এবং এর কার্যকারিতা:
(১) লেবুর রস ৪০ মি.লি.। লেবুর রস খুশকি দূর করে। গরমকালে মাথা ঘেমে মাথার ত্বকের পোরস খুলে যায়, লেবুর রস খুলে যাওয়া সেসব পোরস বন্ধ করে চুল পড়া বন্ধ করে ।
(২) গোলাপ ফুল ১টি। গোলাপ ফুলের রস মাথা ঠাণ্ডা রাখে। গরমকালে ঘামের ফলে যে র্যাশ হয় তা দূর করে।
(৩) জবা ফুল ৪ টি । চুল পড়া বন্ধ করে, চুল ঘন ও কালো করে ।
(৪) কারি পাতা ৩০ গ্রাম। মাথার ত্বকের ইনফেকশন দূর করে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেয়।
(৫) পানি ১০০ মিলি।
(৬) কর্পূর ৫ গ্রাম। মাথার ত্বকের ইনফেকশন দূর করে , চুলের গোড়া মজবুত করে ।
(৭) ভিটামিন ই ক্যাপসুল ২টি ৪০০ মি. গ্রাম ।
(৮) নারিকেল তেল ১৩০ মি. লি.।
(৯) তিলের তেল ২০ মি.গ্রাম। চুল ঘন করে ও মজবুত করে।
যেভাবে বানাবেন:
গোলাপ ফুলের শুধু পাতাগুলো নেবেন। জবা ফুলের ডালটা ফেলে বাকি সব নেবেন। জবা ফুলের রেণু কখনোই ফেলবেন না। জবা ফুলের রেণু চুল গজাতে অনেক কার্যকরী। তেল, ভিটামিন ই, কর্পূর বাদে সকল উপকরণ পানির সাথে ব্লেন্ড করুন। ব্লেন্ড হয়ে গেলে মিশ্রণটি পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে ছেঁকে জুসটা বের করে নিন। এমনভাবে ছাঁকবেন যেন জুসটিতে কোন কঠিন বস্তু না থাকে। এবার যে কড়াইতে তেল জ্বাল দিবেন সে কড়াইতে নারিকেল তেল এবং তিলের তেল ঢালুন এবং মেশান। এরপর যে জুসটি তৈরি করেছেন তা তেলের মাঝে ধীরে ধীরে ঢালুন। খেয়াল রাখবেন জুস তেলের মাঝে ঢালার সময় কখনোই কোন কিছু দিয়ে নাড়বেন না। এটাই তেল তৈরির গোপন রহস্য!
তেলের মাঝে জুস ঢালা হয়ে গেলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুণ জুস তেলের নিচে জমা হওয়ার জন্য এবং তেলটা স্থির হওয়ার জন্য। এবার তেলসহ কড়াইটি খুব ধীরে চুলার উপর বসান। আবারও বলছি সব সময় খেয়াল রাখবেন তেলসহ জুসটি কখনোই নাড়ানো যাবে না। এবার তেলটাকে একদম অল্প আঁচে জ্বাল দিন।
অনেকে একটা কাজ করেন তেল জ্বাল দেয়ার সময় চামচ দিয়ে মিশ্রণটি বারবার নাড়ান। কিন্তু এ কাজ কখন-ই করা যাবে না। একদম অল্প আঁচে জ্বাল দেবেন, জ্বালটাকে বাড়ানো যাবে না। জ্বাল হতে হতে একসময় লক্ষ্য করবেন তেলের উপরে জুসের ময়লাসহ বুদবুদ হয়েছে । নিচের ছবিতে লক্ষ্য করুন।
এভাবে জ্বাল হতে হতে এক সময় লক্ষ্য করবেন যে তেলের উপর জুসের ময়লাগুলো জমে কালো হয়ে গেছে। এবং মাঝখানে তেল আর তেলের নিচে জুসগুলোর খাদ জমেছে। অর্থাৎ জুসের সমস্ত নির্যাসগুলো তেলের সাথে মিশে গিয়ে জুসের বাড়তি অংশ জমে উপরে চলে এসেছে। এমন অবস্থা হলেই বুঝবেন আপনার তেলটি তৈরি হয়ে গেছে। নিচের ছবিতে দেখুন।
এবার তেলের উপরে জমা খাদগুলো চামচ দিয়ে তুলে ফেলে দিন। তেলটাকে চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন।
এবার তেলের মাঝে কর্পূর দিয়ে দিন মেল্ট হবার জন্য। তেলটা ঠান্ডা হলে একটি পরিষ্কার বোতলে ঢালুন এবং তেলের মাঝে ভিটামিন ই ক্যাপ মেশান। ভিটামিন ই ক্যাপ কখনোই গরম থাকতে মেশাবেন না , এতে ভিটামিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে। এভাবেই পারফেক্ট উপায়ে হারবাল তেল তৈরি করা যায়। তবে তেল তৈরির প্রতিটি পর্যায়ে মনে রাখবেন তেলটাকে কখনোই নাড়ানো যাবে না।এমনটি করলে তেল নষ্ট হয়ে যাবে। এর কারণ হলো জুসসহ যখন তেলটাকে জ্বাল দেওয়া হয় তখন শুধুমাত্র জুসটা গরম হয় এবং নির্যাস বের হয়ে তেলের সাথে মেশে। তেলটাকে পুড়তে দেয় না।
যারা সাধারণত ঘরে হারবাল তেল তৈরি করেন তারা এবার এই পদ্ধতিটা অনুসরণ করুন পার্থক্যটা নিজেই বুঝতে পারবেন আশা করি।
লিখেছেন – জোহরা হোসেন