পেট ফেঁপে থাকা আমাদের খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। বিশেষ করে খাদ্য তালিকা উনিশ থেকে বিশ হলেই আমরা গ্যাসের অস্থিরতায় ভুগতে থাকি। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হলে এবং হজমে সমস্যা হলে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয় যার কারণেই পেট ফেঁপে থাকে। কখনো কখনো এর সঙ্গে পেটে ব্যথাও থাকতে পারে। এই সমস্যার নিরাময়ে ওষুধ না খেয়ে শুরুতে ঘরোয়া কিছু সমাধান গ্রহণ করাই ভালো। আসুন জেনে নেই কী কী উপায়ে পেট ফাঁপা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায়
১) আদা
হজম সমস্যা দ্রুত দূর করতে আদার জুড়ি নেই। আর বদহজম দূর হয়ে গেলে আপনাআপনিই পেটে ফাঁপার সমস্যা কমে যায়। প্রতিদিন খাবার পর এক টুকরা আদা চিবিয়ে খেলে পেটে আর গ্যাসের সম্যসা করবে না। আর পেট ফাঁপলে আদা কুচি করে সামান্য লবণ মাখিয়ে খেয়ে নিতে পারেন অথবা আদা ছেঁচে লবণ দিয়ে আদার রস পান করে নিতে পারেন। এছাড়াও আদা চা তৈরি করে পান করুন সকাল বিকাল। এতে করে পেট ফাঁপা অনেকটা উপশম হয়ে যাবে।
২) টমেটো
এই সমস্যা হ্রাসের জন্য টমেটো খুব চমৎকার কাজ করে। টমেটো পটাশিয়াম (Potassium) সমৃদ্ধ, যা শরীরে সোডিয়ামের মাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে, এর ফলে পেট ফাঁপা হ্রাস পায়।
৩) শসা
শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে অনেক বেশি কার্যকরী খাদ্য। এতে রয়েছে ফ্লেভোনয়েড (Flavonoid) ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি (Anti-inflammatory) উপাদান যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমায়।
৪) দই
দই অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে, যা ডাইজেস্টিভ ট্র্যাককে অধিক কার্যকরভাবে কাজ করে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে আমাদের পেট ফাঁপা হওয়ার প্রবণতা কমে যায় ও গ্যাস হওয়ার ঝামেলা দূর হয়।
৫) পেঁপে
পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া (Papaya) নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলেও গ্যাসের সমস্যা কমে।
৬) ঠাণ্ডা দুধ
পাকস্থলির গ্যাসট্রিক এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয় ঠাণ্ডা দুধ। এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ পান করলে অ্যাসিডিটি দূরে থাকে।
৭) কলা
কলা পাকস্থলির অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। এতে করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। সারাদিনে অন্তত দুটি কলা খান। পেট পরিষ্কার রাখতে কলা বেশ উপকারী।
৮) কাঁচা হলুদ
কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খাওয়া পেট ফাঁপার সব চাইতে দ্রুত এবং কার্যকরী উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম। যদি কাঁচা খেতে না পারেন তাহলে আদার মতো হলুদ ছেঁচে নিয়ে পানিতে জ্বাল দিয়ে চা তৈরি করে পান করে নিন।
৯) দারুচিনি
হজমের জন্য খুবই ভালো। এক গ্লাস পানিতে আধা চামচ দারুচিনির গুঁড়ো দিয়ে ফুটিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে গ্যাস দূরে থাকবে।
১০) জিরা
জিরা পেটের গ্যাস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত ফলপ্রদ। পাকস্থলীর এসিডকে নিরপেক্ষ করে পেটের ব্যথা দূর করতে এবং হজমক্রিয়ায় জিরা চমৎকার কাজ করে। এক গ্লাস পানিতে সামান্য জিরার গুঁড়া মিশিয়ে বা ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে প্রতিবেলা খাবার পর খেতে পারেন।
১১) লবঙ্গ
২/৩টি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চুষলে একদিকে বুক জ্বালা, বমিবমি ভাব, গ্যাস দূর হয়। সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
১২) রসুন
৩-৪ টি রসুনের কোয়া ছেঁচে ২ কাপ পানিতে ৫ মিনিট ফুটিয়ে তৈরি করে ফেলুন রসুনের চা। বেশ দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান পাবেন।
১৩) এলাচ
লবঙ্গের মতো এলাচ গুঁড়ো খেলে এই সমস্যা দূর হয়।
১৪) পুদিনা পাতার পানি
পুদিনা পাতা আপনার অম্লতা, গ্যাস ও বমিবমি ভাব থেকে সাথেসাথে মুক্তি দিবে। এক কাপ পানিতে কয়েকটি পুদিনা পাতা দিয়ে সিদ্ধ করুন। এটি দিনে ২/৩ বার পান করতে পারেন। স্বাদ বাড়াতে এতে মধু যোগ করতে পারেন।
১৫) মৌরির পানি
মৌরি ভিজিয়ে সেই পানি খেলে গ্যাস থাকে না।
১৬) আলু
আলু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে থাকে। গ্যাসের প্রভাব কমাতে আলুর রস বা জুস খুব উপকারী। কয়েকটি ছোট আকারের আলু পিষে অথবা ব্লেন্ড করে পানিতে খানিকটা মধু এবং লবণ দিয়ে দুপুরে খাওয়ার আগে খেলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।
১৭) পানি
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এটি শুধু আপনার গ্যাস্টিকের সমস্যা কমাবে না আরো অনেক রোগের হাত থেকে মুক্তি দিবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।
শিশুদের পেট ফাঁপা
পেট ফাঁপা থেকে কিন্তু শিশুরাও রেহায় পায় না। বুকের দুধ খাওয়ানোর ত্রুটির কারণে অনেক সময় শিশুর পেটে গ্যাস হয়। অনেক সময় ফিডারে করে দুধ খেতে গিয়ে কিংবা ঢোক গিলার সময় শিশুর পেটে বাতাস প্রবেশ করতে পারে এভাবেও শিশুর পেটে গ্যাস হয়। নবজাতক শিশুর পেটের গ্যাস বা বাতাস কমাতে খাওয়ার পরপরই বাতাস বের করে দিতে হবে। দুধ খাওয়ানোর পর মায়ের ঘাড়ের বাঁ পাশে বা ডান পাশে নিয়ে শিশুর পিঠের ওপর থেকে নিচের দিকে হাত বুলিয়ে দিতে হবে, এতে বাতাস বের হয়ে যায়।
ছয় মাস বয়সের পর শিশুদের বুকের দুধের পাশাপাশি বাইরের খাবার দেওয়া হয়। এতেও অনেক সময় পেটে গ্যাস হতে পারে। শিশুদের বাড়তি খাবারে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি দিয়ে খিচুড়ি এবং মাছ-মাংস, ফল ও ডিম থাকে। অনেক সময় খিচুড়িতে এসবের পরিমাণ বেশি হলে গ্যাস হওয়ার ঝুঁকি থাকে আবার ডালেও গ্যাস হতে পারে। তাই বাড়তি খাবার দেওয়ার সময় খাবারের দিকে নজর রাখা উচিত। যেমন-খিচুড়িতে শাক ও ডালের পরিমাণ কম দিয়ে কাঁচা কলা বা কাঁচা পেঁপের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া। ফলমূল নরম টুকরো করে দিন বা জুস করে খাওয়ান, এতে হজমের সুবিধা হবে ও শিশুর পেটে গ্যাস তৈরির প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে।
যদি দেখেন এসব পদ্ধতি অনুসরণের পরেও শিশুর পেট ফাঁপা কমছে না, শিশু অতিরিক্ত কান্না করছে, পেট শক্ত হয়ে গেছে, সেই সাথে বমি হচ্ছে, গায়ে জ্বর অনুভূত হচ্ছে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ জানার আগে শিশুকে কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়ানো কখনোই উচিত নয়।
জেনে নিলেন পেট ফাঁপা হলে কিভাবে ঘরে বসেই সমাধান করা সম্ভব। এই সবকিছুর পরও যদি এই সমস্যা দূর না হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ছবি- সংগৃহীত: ক্যাপসিটিলো.কম; বাংলানিউজ২৪; সমকাল.কম, grindreliefn.com/