‘বাইরে বের হলেই চুল ঘেমে বাজে অবস্থা হয়ে যায়! সেই সাথে চুল হয়ে ওঠে রাফ ও ফ্রিজি, বেড়ে যায় হেয়ারফল। কীভাবে এই প্রবলেমগুলো দূর করা যায়?’ গরমকালে চুলের এই সমস্যাগুলো খুব কমন। এই সিজনে স্ক্যাল্প ঘেমে যাওয়া তো আর বন্ধ করা যাবে না। তবে একটু চেষ্টা করলে এবং যত্ন নিলে রাফনেস ও ফ্রিজিনেস দূর করে চুল সিল্কি ও শাইনি করে তোলা সম্ভব। কীভাবে গরমে চুলের যত্ন নিলে হেলদি ও শাইনি হেয়ার পাওয়া যাবে সেটাই জানাবো আজ।
কীভাবে গরমে চুলের যত্ন নেওয়া যায়?
কমবেশি সবাই কীভাবে গরমে চুলের যত্ন নিলে চুল ভালো থাকবে তা নিয়ে ভাবেন। কারণ এ সময়ে স্ক্যাল্প প্রচুর ঘামে, চুল রাফ হয়ে যায়, বেড়ে যায় হেয়ারফল। এই সিজনে চুল হেলদি ও শাইনি রাখার জন্য যা যা করতে হবে-
১) শ্যাম্পু করা
আমাদের দেশের আবহাওয়াতে স্ক্যাল্প এমনিতেই বেশি ঘামে বলে গ্রিজিনেসের প্রবলেম দেখা দেয়। আর গরমের সময় বাইরের ধুলোবালি চুলে খুব সহজেই আটকে যায়। যার কারণে চুল হয়ে ওঠে রাফ ও ফ্রিজি। তাই সব সময় স্ক্যাল্প ও হেয়ার ক্লিন রাখা জরুরি। এজন্য রেগুলার হেয়ার কেয়ার করতে হবে, সেই সাথে ইউজ করতে হবে চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু। সাধারণত সপ্তাহে ৩/৪ দিন শ্যাম্পু করা হয়। তবে যাদের স্ক্যাল্প বেশি ঘামে তারা রেগুলার মাইল্ড শ্যাম্পু ইউজ করতে পারেন। এতে স্ক্যাল্প তো ক্লিন থাকবেই, সেই সাথে চুল হয়ে উঠবে সিল্কি ও শাইনি।
২) কন্ডিশনার ব্যবহার করা
গরমে চুলের একটি কমন প্রবলেম কি বলুন তো? চুল রাফ হয়ে জট লেগে যাওয়া। এর কারণ হচ্ছে চুল ময়েশ্চারাইজড থাকে না। তাই চুলের ন্যাচারাল অয়েল ও ময়েশ্চার রিস্টোর করতে হেয়ার ওয়াশ করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। কন্ডিশনিং করলে হেয়ার নারিশড থাকে, চুলে জট কম লাগে, ফ্রিজিনেস এবং চুলের আগা ফাটার সমস্যা কমে। শুধু গরমকালেই নয়, চুলের যত্নে এই প্রোডাক্টটি সারা বছরই ব্যবহার করতে পারেন।
৩) অয়েল ট্রিটমেন্ট নেয়া
অনেকেই স্ক্যাল্প ঘামে বলে তেল দিতে চান না। অথচ গরমে চুলের যত্ন নিতে অয়েল ম্যাসাজ খুবই ইম্পরট্যান্ট। ম্যাসাজ করলে স্ক্যাল্পে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে এবং হেয়ার গ্রোথ বুস্ট হয়। গরমকালে সূর্যরশ্মির প্রভাবে স্ক্যাল্প ড্রাই হয়ে যায়, যার কারণে চুল হয়ে পড়ে ড্যামেজ। অয়েল ট্রিটমেন্ট এই ড্রাইনেস কমিয়ে চুলে নারিশমেন্ট ফিরিয়ে আনতে হেল্প করে। চুলের জন্য আমরা সাধারণত দুই ধরনের তেল ইউজ করি।
১) ময়েশ্চারাইজিং অয়েলঃ এই অয়েলগুলো চুলের বাইরের লেয়ারকে পেনিট্রেট করে ভেতরের লেয়ারে ইজিলি এক্সেস করতে পারে। হেয়ার শ্যাফটের ময়েশ্চার ধরে রাখতে এবং চুলের আগা ফাটার সমস্যা দূর করতে এই অয়েলগুলো বেশ কার্যকর। কোকোনাট, অলিভ, অ্যাভোকাডো অয়েলগুলো ময়েশ্চারাইজিং অয়েল।
২) সিলিং অয়েলঃ এই অয়েলগুলো হেয়ার স্ট্র্যান্ডে ময়েশ্চার লক করে রাখে। ক্যাস্টর, জোজোবা, গ্রেপসিড, আমন্ড ইত্যাদি সিলিং অয়েল।
যেভাবে ব্যবহার করবেনঃ হেয়ার লেন্থ অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজিং ও সিলিং থেকে দুই ধরনের অয়েল মিক্সড করে নিন। এবার স্ক্যাল্পে ও হেয়ারে ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনিং করতে ভুলবেন না যেন!
৪) মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করা
গরমকালে চিরুনিও যে আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় একটি জিনিস হয়ে উঠতে পারে সেটা কি জানেন? এই সিজনে চুল দ্রুত রাফ হয়ে যায়। আর এই রাফনেস থেকে চুলে জট লাগে। তখন চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানোর সময় চুল ছিঁড়ে যায়। এ সমস্যা সমাধানে ডিট্যাঙ্গলার ব্রাশ বা মোটা দাঁতের কাঠের চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন।
৫) ডিপ কন্ডিশনিং করা
গরমে ফ্রিজি হেয়ার প্রবলেম সল্যুশনে ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক বেশ কার্যকর। হেয়ার ব্রেকেজ প্রিভেন্ট করতে, চুলের নারিশমেন্ট ফিরিয়ে আনতেও এটি হেল্প করে। সপ্তাহে অন্তত ১ দিন ডিপ কন্ডিশনিং করুন। শিয়া বাটার, আরগান অয়েল আছে এমন মাস্ক ব্যবহার করা ভালো।
৬) পর্যাপ্ত পানি ও সবজি খাওয়া
গরমে চুলের যত্ন নিতে শুধু হেয়ার কেয়ার রুটিন ফলো করলেই হবে না, সেই সাথে প্রচুর পানি ও সবজি-ফলমূল খেতে হবে। কম পানির কারণে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে। এতে শুধু স্কিনই ড্যামেজ হবে তাই নয়, বরং হেয়ার লস ও ড্রাই স্ক্যাল্পের প্রবলেমও হতে পারে। তাই হেয়ার গ্রোথ প্রোমোট করতে সঠিক খাবার খাওয়া এবং পানি পান করা খুবই জরুরি।
৭) চুল ঢেকে রাখা
ডিরেক্ট সানলাইটের কারণে হেয়ার ড্যামেজ হতে পারে। তাই বাইরে যাওয়ার সময় চেষ্টা করুন স্কার্ফ বা ওড়না দিয়ে চুল ঢেকে যেতে। এতে বাইরের ধুলোবালি থেকে চুলও সুরক্ষিত থাকবে। অর্থাৎ স্কার্ফ ব্যবহারে আপনি দুইভাবেই বেনিফিট পাচ্ছেন।
গরমে চুলের যত্নে কয়েকটি হেয়ার মাস্ক
সামার সিজনে চুল ভালো রাখতে তেল, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার সবই ইউজ করতে হবে। তবে সেই সাথে ঘরে বানানো হেয়ার মাস্ক লাগানোর কথা ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না। এই সিজনে ইউজ করতে পারবেন এমন কয়েকটি বেনিফিসিয়াল মাস্কের কথা চলুন জেনে নেই-
DIY অ্যালোভেরা হেয়ার প্যাক
যা যা লাগবে
- অ্যালোভেরা জেল ১ বা ১/২ কাপ (চুলের লেন্থ অনুযায়ী)
- কোকোনাট অয়েল ২ টেবিল চামচ
ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো ভালোভাবে মিক্স করে স্ক্যাল্পে ও হেয়ারে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। অ্যালোভেরাতে আছে প্রচুর পরিমাণ পানি এবং হেয়ার নারিশিং এনজাইম। এতে থাকা ভিটামিন সি, ই, বি-১২, ফলিক অ্যাসিডের কারণে চুল থাকে নারিশড। কোকোনাট অয়েলে আছে ন্যাচারাল ময়েশ্চার প্রোপার্টিজ, যা চুলের গোড়া মজবুত করার পাশাপাশি ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং হেয়ার ব্রেকেজ প্রিভেন্ট করে।
DIY বানানা হেয়ার প্যাক
যা যা লাগবে
- পাকা কলা ১/২টি
- মধু ১ টেবিল চামচ
- ডিম ১টি
ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো ভালোভাবে মিক্স করে নিন। এবার স্ক্যাল্পে ও পুরো চুলে অ্যাপ্লাই করে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে চুল ধুয়ে ফেলুন। কলাতে আছে পটাশিয়াম, ন্যাচারাল অয়েল ও ভিটামিন- যা চুলকে সফট করে তোলে। কলায় আরও আছে সিলিকা নামে একটি মিনারেল যা কোলাজেন প্রোডিউস করতে হেল্প করে এবং ডালনেস কমিয়ে চুল কন্ডিশনড করে, নারিশড রাখে। মধুতে থাকা প্রোটিন, মিনারেল ও ভিটামিন হেয়ার ফলিকল স্ট্রং করে হেয়ার ফল রিডিউস করে। ডিমে থাকা কেরাটিন প্রোটিন ইনস্ট্যান্ট চুলের ফ্রিজিনেস দূর করে এবং হিউমিডিটি থেকে চুলকে সুরক্ষিত রাখে।
অনেকের কাছে এই প্যাক বানিয়ে ইউজ করা হ্যাসেল লাগতে পারে, আবার কারও হয়তো ডিমের কড়া গন্ধ ভালো লাগে না। তারা চাইলে স্কিন ক্যাফে বানানা শ্যাম্পু উইথ এগ প্রোটিন ইউজ করতে পারেন। বানানা ও এগ সমৃদ্ধ এই শ্যাম্পুটি ব্যবহারেও চুল থাকবে হেলদি ও শাইনি।
যারা ভাবছিলেন কীভাবে গরমে চুলের যত্ন নিলে চুল ভালো থাকবে, আশা করি তাদের কনফিউশন এখন কিছুটা হলেও ক্লিয়ার হয়েছে। প্রতি বছর সিজন চেঞ্জের সময় হেয়ার প্রবলেমগুলো খুব কমন। তাই একবার চুল রাফ বা আনম্যানেজেবল হয়ে গেলে একদম মন খারাপ করা যাবে না। হেয়ার কেয়ার রুটিন ফলো করলে অবশ্যই যে কোনো সিজনেই চুল ভালো রাখা সম্ভব। অথেনটিক হেয়ার ও স্কিন কেয়ার, মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ণ মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ