৩০ বছর বয়সের পর থেকে হরমোন লেভেল কমতে থাকে। একইসঙ্গে কোলাজেন, ইলাস্টিন, হায়ালুরনিক এসিড, ভিটামিন, স্কিনের টিস্যু ভালো রাখার যত উপাদান সবকিছু উৎপাদনের পরিমাণও কমে যায়। কোলাজেনের উৎপাদন যত কমতে থাকে, তত কোষের গঠন দুর্বল হয়। চামড়া পাতলা হয়ে কুঁচকে যায়। এক কথায়, এজিং এর সাইন দেখা দিতে থাকে। তাই ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত রাখার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে শুরু থেকেই। রেগুলার কিছু স্কিন কেয়ার রুটিন আছে যেগুলো ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে। ৩০ বছর বয়সের পর থেকে এ রুটিনগুলো মেনে চলা একরকম আবশ্যক হয়েই দাঁড়ায়। কীভাবে এই বয়সে ত্বকের যত্ন নিবেন জেনে নিন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে-
৩০ বছর বয়সের পর দিনের স্কিন কেয়ার রুটিন
ত্বক সুরক্ষার প্রথম ধাপ শুরু হয় দিনের শুরু থেকে। তাই সেভাবেই স্কিন কেয়ার ভাগ করে নিতে হবে। দিনের স্কিন কেয়ারের মধ্যে যা যা থাকবে-
ক্লেনজিং
ত্বক ভালো রাখতে সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে নিয়মিত ক্লেনজিং করা। আর এই ক্লেনজিং করতে হবে সকাল ও রাতে। ত্বকের ধরন বুঝে এমন ফেইসওয়াশ বেছে নিতে হবে যেটাতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন- ভিটামিন এ, বি ২, বি ১২ ও ই এর উপস্থিতি থাকে।
টোনিং
স্কিন কেয়ারে টোনার খুব জরুরি একটি উপাদান। পোরস টাইট করতে, ইমপিউরিটিস দূর করতে, সর্বোপরি স্কিনকে রিব্যালেন্স করতে টোনিং করা খুবই জরুরি। ত্বকের pH লেভেল রিব্যালেন্স করতেও সাহায্য করে টোনার। ক্লেনজিং এর পর টোনার ব্যবহার করা উচিত। দিনে একবার টোনার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।
সিরাম/অ্যাম্পুল
সিরাম মূলত হাইলি কনসেনট্রেটেড পাওয়ারফুল ইনগ্রেডিয়েন্টগুলোকে অনেক লাইট বা থিন ফর্মুলার আকারে তৈরি করা। সিরাম আমাদের স্কিনের একদম ভেতরের লেয়ার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে বেশ কয়েকটি সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়। যেমন- স্পট বা পিগমেন্টেশনের সমস্যা, সান ট্যান, ব্রণের দাগ, আন ইভেন স্কিনটোন, রিংকেলসের সমস্যা। এক কথায় অ্যান্টি এজিং রুখে দেওয়ার জন্য সিরাম বেশ কার্যকর একটি উপাদান। চাইলে দিনে দুইবার সিরাম ব্যবহার করা যায়। তবে দিনে যদি নাও করা হয় রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই সিরাম ব্যবহার করতে হবে।
অ্যাম্পুল সিরামের মতই আরও একটি ট্রিটমেন্ট। আপনি চাইলে সিরাম অথবা অ্যাম্পুলের যে কোনো একটির অল্টারনেটিভ হিসেবে অন্যটি ব্যবহার করতে পারেন।
ময়েশ্চারাইজিং
ময়েশ্চারাইজারের মধ্যে সিরামাইডস অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আরও ভেঙে বললে উদ্ভিদ থেকে পাওয়া সিরামিড অর্থাৎ ফাইটোসিরামিডগুলো থাকলে বেশি ভালো। এগুলো প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া ওয়াক্সি লিপিড যেগুলো ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখে। ত্বকের জন্য যখন ময়েশ্চার বেছে নিচ্ছেন তখন এই উপাদানগুলো আছে কিনা দেখে নিন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের ত্বকে অয়েল প্রোডাকশন কমতে থাকে। তখন স্কিন ধীরে ধীরে ড্রাই হতে থাকে। এতে তেমন দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। নিয়মিতভাবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে শুষ্কভাব কম হবে।
সানস্ক্রিন
সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির প্রভাবে আমাদের ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশন দিন দিন কমতে থাকে, ফলে কম বয়সেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যায়। এছাড়া র্যাশ, রেডনেস, স্কিনে ইরিটেশন হওয়া, স্কিন টোনের তারতম্য, মেলাজমা বা মেসতার মত সমস্যাও দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যার সমাধান করতে স্কিন প্রোটেকশন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে সানস্ক্রিন। বাইরে বের হলে তো অবশ্যই, ঘরেও সূর্যের আলোর ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন ব্যবহার আবশ্যক।
৩০ বছর বয়সের পর রাতের স্কিন কেয়ার রুটিন
সারাদিনে স্কিনের জন্য যে কেয়ারগুলো মেনে চললেন সেগুলো রাতেও করতে হবে। রাতে শুধু সানস্ক্রিনের ব্যবহার হবে না।
আই ক্রিম
চেহারায় সবচেয়ে বড় সেনসিটিভ জায়গা চোখের আশেপাশের অংশ। বয়স বাড়ছে এটা কিন্তু চোখের আশপাশ দেখলেই বোঝা যায়। অথচ স্কিন কেয়ারে অনেক কিছু ব্যবহার করা হলেও আলাদা করে চোখের যত্ন নেওয়ার কথা তেমন কেউ ভাবেন না। মুখের ত্বকের চেয়ে চোখের ত্বক ১০ গুণ বেশি পাতলা হয়। আর তাই যত্নটাও নিতে হয় সেভাবেই। বয়স ত্রিশের কোঠা পার করলেই কিন্তু তার লক্ষণ সবার আগে পরিলক্ষিত হয় চোখের মাধ্যমেই। যত্ন না নেওয়া হলে চোখের ফাইন লাইন (fine line), রিঙ্কেল (wrinkle), পাফিনেস (puffiness), ডার্ক সার্কেল (dark circle) ইত্যাদি খুব দ্রুত দেখা যায়। তাই আই ক্রিম ব্যবহার করা জরুরি।
আই ক্রিমগুলোতে ময়েশ্চারাইজারের মতো প্রায় সব উপাদানই থাকে, তবে রাসায়নিকের পরিমাণ কিছুটা কম থাকে। কিছুটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ক্রিম চোখের আশেপাশের অংশে ম্যাসাজ করুন। এতে মুখের মাসল আরও শক্ত হবে এবং কোলাজেন উৎপাদন বাড়াবে। ফাইন লাইন, রিঙ্কেল, ডার্ক সার্কেল কমে গিয়ে চোখ হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়।
নাইট ময়েশ্চারাইজার/স্লিপিং মাস্ক
ত্বকের দীপ্তি ধরে রাখার জন্য নাইট ময়েশ্চারাইজার কিন্তু বেশ কার্যকর। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই নাইট ক্রিম ব্যবহার করুন। চাইলে স্লিপিং মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন। ক্লেনজিং ও টোনিং এর পর নাইট ক্রিমের বদলে ঘুমানোর আগে এই মাস্ক মুখে লাগাতে হয়। সারা রাত মাস্ক স্কিনে কাজ করে। সকালে উঠে মাস্ক ধুয়ে ফেলতে হয়। সপ্তাহে ১/২ বার রাতে স্লিপিং মাস্ক ব্যবহার করা যায়।
সাপ্তাহিক স্কিন কেয়ার
দিনে ও রাতের স্কিন কেয়ারে নিয়মিত কিছু রুটিন থাকে যা মেনে চলতে হয়। এছাড়া সাপ্তাহিক কিছু স্কিন কেয়ার আছে যেগুলো নিয়মিতভাবে মেনে চললেও স্কিনের জন্য বেনিফিটেড হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটো বিষয় হচ্ছে মাস্ক ও স্ক্রাব।
মাস্ক
সপ্তাহে এক বা দুইবার হালকা ওজনের মাস্ক ব্যবহার করা বেশ ভালো একটি আইডিয়া। এতে ত্বকের সফটনেস টিকে থাকে। ত্বকের ধরন বুঝে ক্লে, জেল মাস্ক, শিট মাস্কের মধ্য থেকে নিজেরটা বেছে নিতে হবে। ৩০ এর পর উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য এই মাস্কগুলো বেশ কার্যকর।
স্ক্রাব
স্ক্রাবিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা মৃতকোষ দূর করে ত্বক সজীব রাখে। সপ্তাহে ২/৩ বার স্ক্রাব করলেই যথেষ্ট। যদি ত্বকে মৃতকোষের উপস্থিতি কম মনে হয় তাহলে মাইল্ড স্ক্রাব ব্যবহার করা উচিত। যদি ত্বকে পিম্পল বা র্যাশ থাকে, তাহলে স্ক্রাবিং করা উচিত নয়। এক্ষেত্রেও আগে ত্বকের ধরন বুঝতে হবে, এরপর বেছে নিতে হবে স্ক্রাবিং পদ্ধতি।
সব বয়সীদের জন্যই ত্বকের নিয়মিত যত্ন নেওয়া উচিত। তবে বয়স ৩০ পার হয়ে গেলে তখন ত্বকের প্রয়োজন হয় এক্সট্রা কেয়ারের। আর এ জন্য নিজেকে আগে সচেতন হতে হবে। ত্বকের ধরন বুঝে দিনে ও রাতে আলাদা আলাদাভাবে যত্ন নিতে হবে। অথেনটিক প্রোডাক্টস কিনতে চাইলে সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবিঃ সাজগোজ