হাইজিন শব্দটি শুনলেই শুরুতেই কী ভাবনায় আসে বলুন তো? নিজেকে ও নিজের ব্যবহার করা প্রতিটি জিনিস পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। একজন অভিভাবক হিসেবে আপনি হয়তো সহজেই বিষয়টি বুঝতে পারছেন কিন্তু একজন টিনেজ বয়সীর জন্য হাইজিনের প্রতিটি বিষয় নতুন। টিনেজ সন্তানকে গুড হাইজিন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়াও কিন্তু প্যারেন্টিং এর একটি পার্ট। আপনি হয়তো সন্তানকে ছোট থেকেই নানা বিষয় সম্পর্কে জানিয়েছেন, শিখিয়েছেন, কিন্তু টিনেজ বয়সে এসে প্রথমবারের মতো হাইজিন মেনটেইন করে ইন্ডিপেন্ডেন্টলি কাজ করা কিন্তু প্রতিটি সন্তানের জন্যই নতুন।কেমন হওয়া উচিত টিনেজারদের হাইজিন মেনটেইন রুটিন? আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো এ বিষয়েই।
টিনেজারদের হাইজিন মেনটেইন রুটিন কেন জরুরি?
আমাদের শরীর যদি নিয়মিত ক্লিন না করা হয়, তাহলে শরীরে থাকা বিভিন্ন জার্ম থেকে নানা রোগ হতে পারে। হাইজিন মেনটেইন করা না হলে দাঁতে ক্যাভিটি, স্কিন ইনফেকশনসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। হাইজিন মেনটেইন করা মানেই আমাদের শরীর পরিষ্কার রয়েছে। গুড হাইজিন মানুষের সঙ্গে সহজে কথা বলতে সাহায্য করে। মুখ থেকে দুর্গন্ধ বা শরীর থেকে ব্যাড স্মেল আসলে কখনোই অন্যের সঙ্গে ইজি হয়ে কথা বলা যায় না। এতে সোস্যাল রিজেকশন বেড়ে যায়। প্রোপার হাইজিন মেনটেইন করলে নিজের প্রতি কেয়ার যেমন করা হয়, তেমন নিজেকে ভ্যালুও দেওয়া হয়। সব কাজে কনফিডেন্সও বাড়ে।
বেশিরভাগ সময় শিশু কিশোররা বড়দের দেখেই সব শেখে। হাইজিনও এর ব্যতিক্রম নয়। যদি আপনি নিজে একটি প্রোপার রুটিন মেনে চলেন, আপনার সন্তানও সেটাই শিখবে। আর যখন সন্তান টিনেজ বয়সে পৌঁছে যাবে তখন অভিভাবক হিসেবে আপনাকেই খেয়াল রাখতে হবে সে সেগুলো যথাযথভাবে মেনে চলছে কিনা।
কেমন হওয়া উচিত হাইজিন মেনটেইন রুটিন?
একেক পরিবারে একেক ধরনের রুলস মেনে চলা হয়। তবে হাইজিনের ব্যাপারে কিছু রুলস একদম কমন। চলুন জেনে নেই টিনেজারদের জন্য হাইজিন রুটিন কেমন হওয়া উচিতঃ
১) প্রতিদিন গোসল করা
হাইজিন মেনটেইনের জন্য প্রতিদিন গোসল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে শরীরে ফ্রেশ স্মেল থাকবে। আর অবশ্যই পায়ের তালু ও আন্ডারআর্ম ভালো করে ক্লিন করতে হবে।
২) হেয়ার রিমুভ করা
টিনেজাররা যদি মনে করে হাইজেনিক থাকতে হাত, পা বা শরীরের অন্যান্য অংশের হেয়ার রিমুভ করলে ভালো লাগবে তবে সেটা করা যায়। বডি হেয়ার কিন্তু আনহাইজেনিক নয়। তাই এটা নিয়ে দ্বিধারও কিছু নেই। হাইজেনিক থাকতে হেয়ার রিমুভ করা বাধ্যতামূলক, মোটেও তা নয়। এটা সম্পূর্ণ নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে রেগুলার আন্ডারআর্ম ও প্রাইভেট পার্টের হেয়ার রিমুভ করা উচিত। কীভাবে করা যায় সেই বিষয়ে অভিভাবকের সাথে কথা বলে নেয়া যায়। হেয়ার রিমুভের জন্য কখনোই ক্রিম বা সাবান ছাড়া শেভ করা উচিত নয়। এতে ইরিটেশন হওয়া বা কেটে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এ থেকে হতে পারে ছোট ছোট রেড বাম্পস।
৩) ওরাল হাইজিন মেনটেইন করা
টিনেজ বয়সে পৌঁছানো মানে তার জগত ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। স্কুলের বন্ধুরা ছাড়াও নতুন নতুন অনেকের সঙ্গেই পরিচয় হচ্ছে। তাদের সাথে কথা বলার সময় যেন ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে অবশ্যই সেদিকে নজর দিতে হবে এখন থেকেই। এজন্য ওরাল হাইজিন মেনটেইন করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করা, ফ্লস ব্যবহার করতে হবে। মুখে যেন দুর্গন্ধ না হয় সেজন্য মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে, ডেন্টিস্টের কাছেও যেতে হবে নিয়মিত। নিঃশ্বাসকে রাখতে হবে সতেজ।
৪) ডিওডরেন্ট ব্যবহার করা
গুড স্মেল মানেই হাইজেনিক এমন নয়, তবে যদি স্মেল ব্যাড হয়, তাহলে অবশ্যই হাইজিন ইস্যু আছে। ঘেমে গিয়ে শরীর থেকে ব্যাড স্মেল আসার আগেই তাই গোসল করে নিতে হবে। এরপর চাইলে হালকা ফ্রেগ্রেন্সের পারফিউম বা ডিওডরেন্ট ব্যবহার করা যায়।
৫) নেইলস ট্রিম করা
শরীরের অন্যান্য পার্টসের মতো নখের যত্ন নেওয়াও জরুরি। নখের নিচে যেন কখনোই ময়লা না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি নখ কাটা বা কামড়ানো স্বভাব থাকে বন্ধ করতে হবে সেগুলোও। নখ ভালো রাখতে নিয়মিত ট্রিম করা জরুরি। মাসে দুই থেকে তিন বারের বেশি নেইল পলিশ না লাগানোই ভালো। এতে নখ হলুদ বা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
৬) পরিষ্কার পোশাক পরা
হাইজিন মেনটেইন করার পর যদি পোশাকই পরিষ্কার না থাকে তাহলে কিন্তু সব পরিশ্রমই বৃথা! পোশাক নিয়মিত ধোয়া না হলে কিন্তু এক সময় গন্ধ বের হয়। আর পরিষ্কার শরীরে সেসব পোশাক পরা মানে শরীরে সেই গন্ধ লেগে থাকা।
৭) চুল ধোয়া
প্রতিদিন চুল ধোয়ার ফলে চুলে ও স্ক্যাল্পে ন্যাচারাল অয়েল তৈরি হয় যা চুলকে হাইড্রেটেড রাখে। তাই নিয়মিত চুল ধোয়া জরুরি। তাই চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। কন্ডিশনার কিছুতেই মিস করা যাবে না। হেয়ার স্টাইল যেমনই হোক, সবার আগে চুল ক্লিন রাখা জরুরি। এছাড়া চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য নিয়মিত চুলে তেলও দিতে হবে।
৮) ফেইস ক্লিন রাখা
টিনেজ বয়সী অনেকেরই ভুল ধারণা থাকে যে ফেইসের তেমন আহামরি কোনো যত্ন লাগবে না। এজন্য ভালো কোনো ক্লেনজার বা ফেইস ওয়াশের বদলে সোপ ব্যবহার করেন অনেকে। আবার সারাদিন পর মেকআপ ক্লিন না করেই অনেকে ঘুমিয়ে যান। এগুলো স্কিনের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই বয়স থেকেই ত্বকের যত্ন নিতে হবে। স্কিনের ডার্ট ও ইমপিওরিটিস দূর করে স্কিনকে ক্লিন রাখবে ক্লেনজার এবং ময়েশ্চারাইজার স্কিনকে রাখবে সফট ও ময়েশ্চারাইজড। তাই স্কিন টাইপ অনুযায়ী বেছে নিতে হবে ক্লেনজার ও ময়েশ্চারাইজার।
৯) হেলদি অভ্যাস গড়ে তোলা
হাইজেনিক থাকার জন্য টিনেজারদের মাঝে হেলদি কিছু অভ্যাস গড়ে ওঠা জরুরি। যেমন- খাবার খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, নাকের ভেতর হাত না দেওয়া, নাক পরিষ্কার রাখা, টয়লেট শেষে প্রতিবার হাত ধোয়া, প্রতিবার হাঁচি দেওয়ার সময় হাত, টিস্যু বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে নেওয়া, যেখানে সেখানে থুতু না ফেলা, যে কোনো ধরনের আনহাইজেনিক জিনিস থেকে নিজেকে দূরে রাখা, পোশাকে ময়লা লাগলে ধুয়ে ফেলা ইত্যাদি।
১০) সন্তানকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানানো
টিনেজ বয়সীদের অনেক বিষয় নিয়েই বাবা-মা গ্রুমিং করেন। এর মধ্যে অনেকগুলোই হয় অপশনাল অথবা হেলথ রিলেটেড। আপনি চাইলে সন্তানের সঙ্গে হেয়ার স্টাইল, আইব্রো প্লাকিং, নেইল ট্রিম, ফেইস ওয়াশ, একনে ট্রিটমেন্ট, মেকআপ ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন। তাদেরকে বলতে পারেন প্রতিদিন কাপড় বদলানো, নিজের কাপড় নিজে গুছিয়ে রাখাও হেলদি হাইজিনের মধ্যেই পড়ে। আবার নিজের রুম গুছিয়ে রাখা, বিছানার চাদর বদলানো এসবও বেশ ভালো অভ্যাস।
১১) মেন্সট্রুয়েশন সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়া
যেসব টিনেজ মেয়েদের মেন্সট্রুয়েশন শুরু হয়েছে, তাদেরকে অবশ্যই বিভিন্ন হাইজিন প্রোডাক্ট যেমন- স্যানিটারি প্যাড অথবা মেন্সট্রুয়াল কাপ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানাতে হবে। পিরিয়ড কীভাবে ট্র্যাক করতে হয় সেটাও জানাতে হবে যেন ব্লিডিং হলে সে অপ্রস্তুত হয়ে না পড়ে।
১২) ফার্স্ট এইডের ব্যবহার শেখানো
ফার্স্ট এইড কিন্তু টিনেজারদের হাইজিন মেনটেইন রুটিনেরই একটি পার্ট। সন্তানকে শিখিয়ে দিন কোথাও কেটে গেলে সাবান ও পানি দিয়ে কাটা জায়গাটুকু কীভাবে ধুয়ে নিতে হয়, অ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার, ব্যান্ডেজ করা ইত্যাদি শিখিয়ে দিন। জানিয়ে রাখুন কখন, কোন সময় ডাক্তারকে ডাকতে হবে।
টিনেজ বয়সে হাইজিনের অনেক বিষয়ই একদম নতুন। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে পরে সে নিজেই সেগুলো মেনে চলতে পারবে। টিনেজারদের স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের বিভিন্ন প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন শপ.সাজগোজ.কম কমে। এছাড়া সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। সরাসরি টিনেজার সন্তানকে সাথে নিয়েও কিনে আনতে পারেন তার পছন্দের প্রোডাক্ট।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক