সবই ঠিকঠাক চলছে, স্কিনটাও বেশ ভালোই আছে। কিন্তু যেই কোনো একটা স্পেশাল অকেশন সামনে আসবে, তখনই যেন স্কিনে পিম্পলগুলো হুট করে হাজির হয়ে যাবে! এই জিনিসটা তো কম বেশী আমাদের সবার সাথেই হয়েছে, তাই না? স্পেশাল দিনে যদি মুখে পিম্পল থাকে, তখন দেখতেও ভালো লাগে না। আর মনটাও খারাপ হয়ে যায়। তখন কী করবেন? হাইড করবেন নাকি একেবারে দূর করতে চাইবেন এই পিম্পলগুলো? ইয়েস! মেকআপ এর মাধ্যমে তো পিম্পল হাইড করাই যায়! সেই টেকনিক তো আজ বলবোই। সাথে সাথে মেকআপ ছাড়াও কীভাবে পিম্পল হাইড বা দূর করতে পারবেন সেটাও জানাবো। তো আর দেরি কিসের? চলুন জেনে নেই, মেকআপ দিয়ে ও মেকআপ ছাড়াই পিম্পল হাইড করার টিপস ও ট্রিকস!
ব্রণ বা পিম্পল হওয়ার কারন জানেন কি?
পিম্পল, ব্রণ বা একনে হচ্ছে আপনার ত্বকে হওয়া ছোট ধরনের ফুসকুড়ি বা গোটা। সিবাসিয়াস গ্রন্থিগুলি থেকে অতিরিক্ত সিবাম অয়েল প্রডিউস হবার ফলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এটি আপনার ত্বকের পোরগুলোকে ক্লগ করে দেয় যা পরে ত্বকের উপরে পিম্পল হিসেবে দেখা দেয়।
পিম্পল মূলত হরমোনাল ইমব্যালেন্স এর কারনে হয়ে থাকে। এই কারনে ম্যাক্সিমাম মেয়েদের পিরিয়ড এবং প্রেগন্যান্সির সময়ে পিম্পল বেশি হতে দেখা যায়। এছাড়াও স্কিনে পিম্পল হবার বেশ কিছু কারন রয়েছে। যেমন-
১. স্কিন ভালোভাবে ক্লিন না করা
২. ক্ষতিকর কেমিক্যাল বেইজড প্রোডাক্টের ব্যবহার
৩. স্কিনে ময়েশ্চারাইজেশনের অভাব
৪. প্রচুর পরিমানে জাংক ফুড খাওয়া
৫. স্ট্রেস ও রাতে কম ঘুমানো
৬. মেকআপ সঠিকভাবে রিমুভ না করা
৭. পানি কম পরিমানে পান করা
স্কিনে কী কী ধরনের পিম্পল হয়ে থাকে?
১. হোয়াইটহেডস
হ্যাঁ, হোয়াইটহেডসও এক ধরনের পিম্পল! হোয়াইটহেডস মূলত এক ধরনের ফুসকুড়ি, যা স্কিনের আপার ব্যারিয়ারের নিচে অবস্থান করে। কপাল, থুঁতনি এবং নাকে হোয়াইটহেডস হতে দেখা যায়।
২. ব্ল্যাকহেডস
ব্ল্যাকহেডস ও এক ধরনের ছোট পিম্পল, যেটা আমাদের নাকে ও টি-জোনে দেখা যায়। কালচে দানাদার ধরনের হয়ে থাকে, এটা ময়লা জমে এবং ডেড স্কিন সেলস ক্লিন না করার জন্য হয়। অয়েলি স্কিনে ব্ল্যাকহেডস বেশি হয়ে থাকে।
৩. সিস্টিক একনে
এই ধরনের পিম্পল অনেক বেশী পেইনফুল হয় এবং এগুলো সারানোর জন্য স্কিন স্পেশালিষ্ট বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
৪. Papules
Papules ছোট এবং সলিড ধরনের পিম্পল, শক্ত হয়ে থাকে স্কিনে! এগুলোতে সাধারণত হালকা গোলাপিভাব দেখা যায়।
৫. Pustules
Pustules হচ্ছে পিম্পলের আরেকটি ধরন। এগুলো আমাদের স্কিনে অনেক বেশী দেখা যায়। এগুলোর ভেতরে পূঁজ থাকে, ব্যথা হতে পারে এবং দেখতে লালচে ধরনের হয়।
৬. নডিউলস
Nodules কিছুটা Papules এর মতই হয়ে থাকে। তবে সাইজে একটু বড় এবং ব্যথাযুক্ত হয়।
কীভাবে মেকআপের সাহায্যে পিম্পল হাইড করবেন?
পিম্পল সম্পর্কে তো অনেক জ্ঞান নেওয়া হলো! এবার আসি আসল ব্যাপারে। জরুরী মূহুর্তে মেকআপের মাধ্যমেই পিম্পল হাইড করা সবথেকে ইজি। তো চলুন জেনে নেই কীভাবে করবেন এই কাজটি।
১. কালার কারেক্টর
অনেক সময় স্কিনে পিম্পলের কারনে রেডনেস দেখা যায় বা পিম্পলগুলো রেড ধরনের হয়ে থাকে। তখন কালার কারেক্টর আপনাকে এই রেডনেস থেকে মুক্তি দেবে এবং পিম্পলগুলো হাইড করতে সাহায্য করবে। এজন্য আপনাকে বেছে নিতে হবে গ্রিন কালারের কারেক্টর। প্রাইমার লাগানোর পর ব্রাশে একটু গ্রিন কালারের কারেক্টর নিয়ে পিম্পলের উপরে লাগান এবং হালকা চেপে ব্লেন্ড করুন। তবে খেয়াল রাখবেন কারেক্টর যেন পিম্পলের উপরেই বসে, ছড়িয়ে যেন না যায়। এরপর ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিলেই কাজ শেষ, পিম্পলে হাইড হয়ে গেলো নিমিষেই!
২. কন্সিলার
দাগ, ডার্ক সার্কেল, পিম্পল, ব্লেমিশ, আন-ইভেন স্কিনটোন ইত্যাদি হাইড করতে কন্সিলারের জুড়ি নেই। এই জন্য মেকআপের এই আইটেমটি সবার এত পছন্দের! কন্সিলার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন – ক্রিম কন্সিলার, লিকুইড কন্সিলার, স্টিক কন্সিলার ইত্যাদি। চটজলদি পিম্পল হাইড করতে কন্সিলার বেশ কাজে দেয়। একটু খানি কন্সিলার নিয়ে পিম্পলের উপরে লাগিয়ে ব্রাশ বা ভেজা বিউটি স্পঞ্জের সাহায্যে ব্লেন্ড করে নিলেই হলো!
মেকআপ ছাড়াই পিম্পল হাইড করার টিপস ও ট্রিকস
মেকআপের মাধ্যমে তো পিম্পল হাইড করার পদ্ধতি জেনে নিলেন। এখন অনেকেই আছেন, মেকআপ করতে পছন্দ করেন না বা পিম্পলগুলো দূর করেই ফেলতে চান! তাদের জন্যেও রয়েছে কিছু কার্যকরী টিপস।
১. আইস কিউব
মেকআপ ছাড়াই পিম্পল হাইড করার টিপস এর সবথেকে সিম্পল ওয়ে হচ্ছে আইস কিউব ব্যবহার করা। আইস কিউব আমাদের রক্তের শিরার উপরে প্রেশার বাড়ায়, যার ফলে কিছু সময়ের জন্য পিম্পলের আকার কমে আসে। এজন্য এক টুকরো আইস কিউব নিয়ে একটা পাতলা নরম কাপড়ে মুড়ে নিন। এটি কয়েক মিনিট ধরে পিম্পলের উপরে লাগান। বেশি ঘষাঘষি করা যাবে না!
২. একনে ও স্পট ট্রিটমেন্ট প্রোডাক্ট
একনে-প্রন স্কিনের জন্য স্পেশাল কিছু প্রোডাক্ট পাওয়া যায়, সেগুলো পিম্পল কমাতে ভালোই কাজে দেয়। কারন এতে salicylic acid, benzoyl peroxide, sulfur, topical retinoids ইত্যাদির মত পিম্পল ফাইটিং ইনগ্রিডিয়েন্টস রয়েছে। এই ধরনের ট্রিটমেন্ট জাতীয় প্রোডাক্ট পিম্পলের রেডনেস এবং পেইন কমায়। এটা শুধুমাত্র papules এবং pustules ধরনের পিম্পলের জন্য কাজ করে। সিস্টিক পিম্পল বা Nodules এর জন্য এটি তেমন কোনো কাজের নয়। অনেকেই জানেন না যে, ব্রণের উপর টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল লাগিয়ে রাখলে ব্রণ খুব দ্রুত শুকিয়ে যায় আর স্পট হওয়ারও চান্স থাকে না। এটাও আপনার জন্য খুব ভালো অপশন।
৩. ময়েশ্চারাইজার বা ক্রিম
বাজারে বেশ কিছু ধরনের ময়েশ্চারাইজার রয়েছে যেগুলো ভালো কভারেজ দেয় বা স্মুথ ফিনিশিং দেয়। ফেইসকে ব্রাইট একটা লুক দিয়ে ন্যাচারাল স্কিনটোনকে আরেকটু এনহ্যান্স করে। এই ধরনের ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার একাধারে স্কিনে ময়েশ্চারাইজেশন দেবে এবং টিন্টেড হওয়ার ফলে পিম্পল হাইড করতেও সাহায্য করবে।
৪. একনে প্যাচেস
একনে প্যাচের মাধ্যমে খুব ইজিলি পিম্পল থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এই একনে প্যাচগুলো hydrocolloid দিয়ে তৈরী, যা পিম্পলের জন্য বেশ কার্যকরী। এটা পিম্পলের ভেতরে থাকা পূঁজ শুষে নেয়, পিম্পলের সাইজ কমায় এবং স্কিন কন্ডিশন ইম্প্রুভ করতে সাহায্য করে।
৫. এক্সেসরিজ এবং হেয়ারস্টাইল
ব্যাপারটা বেশ মজার লাগবে শুনতে, তবে এটাই সত্যি যে এক্সেসরিজ বা হেয়ারস্টাইলের মাধ্যমেও পিম্পল হাইড করা সম্ভব! যেমন আপনার আইব্রো বা আই এরিয়াতে পিম্পল হলে সানগ্লাস ইউজ করতে পারেন। এটা দিনের বেলা ইজিলি আপনার পিম্পল হাইড করতে হেল্প করবে। এছাড়া চুলের ব্যাংগস কাটিং আপনার কপালে হওয়া পিম্পল হাইড করে দিতে পারবে।
একনে-প্রন স্কিনে মেকআপ করতে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন
মেকআপের মাধ্যমে পিম্পল হাইড করা যায় ঠিকই। তবে এই মেকআপের কারনেও কিন্তু অনেকের পিম্পল হচ্ছে। একে acne cosmetica বলা হয়। আর একনে-প্রণ স্কিন খুব সহজেই সেনসিটিভ হয়ে যেতে পারে। মেকআপ ব্যবহারের ফলে অনেক সময় ইরিটেশন, বার্নিং, ইচিং দেখা যায়। যার ফলে স্কিন কন্ডিশন আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই মেকআপ ব্যবহারের আগে কিছু বিষয়ে কেয়ারফুল হওয়া উচিত।
১. সেইফ মেকআপ প্রোডাক্টস
হার্শ কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ইউজ করার ফলে স্কিনে ব্রেকআউট হতে পারে। তাই মেকআপ প্রোডাক্টস কেনার আগে অবশ্যই দেখে নিবেন সেগুলো allergy-tested and non-comedogenic কি না। এছাড়াও লেবেল এবং এক্সপায়ারি ডেট দেখে কিনবেন। কারন এক্সপায়ার্ড মেকআপ স্কিনের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
২. মেকআপ রিমুভিং
আমরা অনেকেই এই কাজটা করি যে, মেকআপ সুন্দর করে করলাম। কিন্তু দিনশেষে মেকআপ নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি বা মেকআপ সঠিকভাবে ক্লিন করি না। যার ফলে স্কিনে অনেক বেশি পিম্পল দেখতে পাই। এই জন্য মেকআপ রিমুভ করাটা খুবই ইম্পরট্যান্ট। এজন্য একটা ভালো মানের মেকআপ রিমুভার ব্যবহার করবেন। ডাবল ক্লেনজিং করলে ফেইস গভীর থেকে ক্লিন হবে। মেকআপ রিমুভ করার পর অবশ্যই ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ক্লিন করে নিবেন, টোনার অ্যাপ্লাই করে তারপর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
৩. মেকআপ টুলস ক্লিন করা
অপরিষ্কার মেকআপ ব্রাশ এবং স্পঞ্জ কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল! তাই কখনোই মেকআপ টুলস অপরিষ্কার অবস্থায় ফেলে রাখবেন না এবং সেই মেকআপ টুলস দিয়ে পরবর্তীতে মেকআপ অ্যাপ্লাই করবেন না। প্রতিবার মেকআপ অ্যাপ্লিকেশন এর পর মেকআপ টুলস ক্লিন এবং ড্রাই করে রাখবেন।
তো এই ছিলো, মেকআপের সাহায্যে এবং মেকআপ ছাড়াই পিম্পল হাইড করার কিছু টিপস এন্ড ট্রিকস। আশা করছি, যাদের ফেইসে পিম্পল আছে বা একনে ব্রেকআউটসের টেন্ডেন্সি আছে, তাদের অনেক বেশি হেল্প হবে। সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। আর অনলাইনে আপনার সেলফ কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। ভালো থাকুন।
ছবি- সাজগোজ