সাজগোজের ইনবক্সে ও কমেন্ট সেকশনে এই ধরনের প্রশ্ন আমরা প্রায়ই দেখে থাকি; ‘চুল একদম পাতলা হয়ে গেছে, কোনো বাউন্স নেই! চুল ঘন করতে কোনো প্রোডাক্ট আছে কি?’ ‘আগে চুল অনেক ঘন ছিল কিন্তু এখন সেই ভলিউম আর নেই, এই সমস্যার সল্যুশন হবে কীভাবে?’ ‘চুল খুবই নিষ্প্রাণ দেখায় আর ফ্ল্যাট হয়ে থাকে, কী করলে চুল বাউন্সি আর ঘন দেখাবে?’ ‘পাতলা চুলে ভলিউম ও বাউন্সিভাব কীভাবে ফিরে পাবো?‘
এই প্রশ্নগুলো থেকে আপনার হেয়ার প্রবলেমটাও রিলেট করতে পারছেন কি? জেনেটিক্যালি অনেকের চুল থিন ও ফ্ল্যাট হয়ে থাকে। অনেকের আবার প্রোপার টেককেয়ারের অভাবে বা অযত্নে চুল পাতলা হয়ে যায়। ভলিউম না থাকার কারণে ঠিকমতো হেয়ার স্টাইলিং করা যায় না। কী মুশকিল! আবার না বেঁধে খোলা রাখলেও চুল একদম ফ্ল্যাট ও লাইফলেস দেখায়, তাই না? আমি জানি, অনেকেই এই প্রবলেমটি ফেইস করছেন। পাতলা চুলে ভলিউম ও বাউন্সিভাব ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী টিপস ও ট্রিকস সম্পর্কে আজ আপনাদের জানাবো। তাহলে দেরি না করে আগে জেনে নেওয়া যাক এই হেয়ার প্রবলেমের জন্য দায়ী ফ্যাক্টরগুলো কী কী।
চুল কেন পাতলা হয়ে যায় সেটা জানেন কি?
জেনেটিক্যালি যাদের চুল পাতলা, তাদের বিষয়টা আলাদা। কিন্তু এছাড়াও বেশ কিছু কারণ আছে, যেগুলো চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী। চলুন সেই কারণগুলো সম্পর্কে জেনে নেই। যেকোনো প্রবলেমের সল্যুশন পাওয়ার আগে এর সাথে কোন কোন ফ্যাক্টরগুলো রিলেটেড, সেগুলো জানা খুবই জরুরী। তাই সল্যুশন খোঁজার আগে প্রবলেম কেন হচ্ছে, সেটা জানতে হবে!
১) হেলদি লাইফস্টাইল মেনে না চলা
আনহেলদি লাইফস্টাইলের সাথে হেয়ার প্রবলেম বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে। অতিরিক্ত জাঙ্কফুড খাওয়া, ঠিকমতো না ঘুমানো, রেগুলার লাইফের স্ট্রেস ইত্যাদি কারণে আপনার ত্বক ও চুলে বেশ খারাপ একটা প্রভাব পরে। আপনি যখনই নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হবেন, দেখবেন স্কিন ও হেয়ারের প্রবলেমগুলো অনেকটাই কমে এসেছে।
২) পুষ্টির ঘাটতি
চুল এক ধরনের মৃত কোষ, সেইজন্যই আমরা চুল কাটলে ব্যথা পাই না। শরীরের সব চাহিদা মিটিয়ে নিউট্রিয়েন্ট এই কোষগুলোতে পৌঁছে। আপনার শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে চুলেও সেই প্রভাবটা পরবে। তাই প্রোপারলি হেলদি ডায়েট চার্ট ফলো করলে আপনার চুল হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। চুল পড়ে টাক হয়ে যাচ্ছি, চুল একদম পাতলা হয়ে গেছে, চুলের আগা ফেটে যাচ্ছে- এই ধরনের সমস্যা যারা ফেইস করছেন, নিজের ফুড ইনটেকের দিকে একটু লক্ষ্য করুন তো!
৩) হিট প্রোটেক্টর অ্যাপ্লাই না করেই চুলে তাপ দেওয়া
চুলের স্টাইলিংয়ের জন্য তো ব্লো ড্রাইয়ার আর স্ট্রেইটনার প্রায়ই ইউজ করা হয়, কিন্তু এর আগে হিট প্রোটেক্টর অ্যাপ্লাই করছেন তো? চুলে সরাসরি তাপ দিলে চুলের ময়েশ্চার ব্যারিয়ার ড্যামেজ হয়ে যায়। তাই চুল খুব তাড়াতাড়ি ড্রাই ও ফ্রিজি হয়ে যায়। সেই সাথে চুলের আগা ফাটা ও পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়।
৪) অদক্ষ হাতে চুলে ব্লিচ ও কালার করানো
অতিরিক্ত ব্লিচ করা হলে সেটা কিন্তু চুলের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে! অদক্ষ হাতে চুলে ব্লিচ ও কালার করালে চুলের অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে। চুলের প্রধান উপাদান কেরাটিন প্রোটিন এতে ড্যামেজ হয়, চুল মলিন ও শুষ্ক দেখায়, চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায় এবং চুল পাতলা হয়ে যায়।
৫) অযত্ন ও সঠিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার না করা
ব্যস্ত জীবনে অনেকেই ঠিকমতো চুলের যত্ন নিতে পারে না। হেয়ার টাইপ ও কনসার্ন বুঝে রাইট হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট সিলেক্ট করাও জরুরী, যেটা অনেকেই স্কিপ করে যান। চুল পড়ে পাতলা হয়ে যাওয়ার জন্য এটি একটি বড় কারণ। অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা, নিয়মিত ট্রিম না করানো, ভুল হেয়ার ব্রাশের ব্যবহার, ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ানো, ঠিকমতো স্ক্যাল্প ক্লিন না করা এই ধরনের ভুলগুলোর জন্য চুলের সমস্যা আরও বেড়ে যায়!
পাতলা চুলে ভলিউম ও বাউন্সিভাব কীভাবে ফিরে পাবেন?
আচ্ছা, চুলের যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই গেছে! পাতলা চুলে ভলিউম ও বাউন্সিভাব কীভাবে ফিরে পাবেন, সেই টিপস ও ট্রিকসগুলো এখন আমরা জানবো। চুল পাতলা হওয়ার কারণে ঠিকমতো স্টাইলিং করা যায় না, তাই না? কীভাবে হেয়ার সেট করলে চুল ঘন দেখাবে, সেই টিপসও থাকছে আপনাদের জন্য।
১/ চুলে ভলিউম আনতে ন্যাচারাল সল্যুশন
অ্যালোভেরা ও আমলার হেয়ার প্যাক
যারা পাতলা চুল নিয়ে সমস্যায় আছেন, তাদের জন্য অ্যালোভেরা ও আমলার হেয়ার প্যাক ম্যাজিকের মত কাজ করবে। কীভাবে প্যাকটি রেডি করবেন সেটা দেখে নিন।
যা যা লাগবে-
- আমলা পাউডার
- অ্যালোভেরা জেল
- গ্রিন টি লিকার
সবগুলো উপাদান একসাথে মিক্স করে চুলের গোড়া থেকে লেন্থ পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এবার বাতাসে চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। চুলে বাউন্সিভাব ফিরে আসবে খুব সহজেই!
বানানা হেয়ার মাস্ক
আমাদের হাতের কাছেই এমন কিছু ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টস আছে, যা পাতলা চুলে ভলিউম ও বাউন্স এনে দিতে পারে নিমিষেই। দেখে নিন, শাইনি ও বাউন্সি চুলের জন্য বানানা হেয়ার মাস্ক কীভাবে ব্যবহার করতে হবে।
যা যা লাগবে-
- কলা
- ডিমের কুসুম
- অলিভ অয়েল
উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে চুলে অ্যাপ্লাই করে নিন। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্যস, সহজেই পেয়ে যাবেন ম্যাজিকাল ট্রান্সফরমেশন! চুল হয়ে উঠবে বাউন্সি ও শাইনি।
২/ হেয়ার কাট ও সিঁথির পজিশনে আনুন পরিবর্তন
পাতলা চুলের জন্য ভলিউম লেয়ার ও শর্ট লেয়ার কাট বেশ মানানসই। এতে চুল ঘন দেখায় আর ফ্ল্যাট ভাবটাও থাকে না। সামনে ব্যাংগস কাট দিতে পারেন। চুলের আগা পাতলা হয়ে গেলে সেটা কেটে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। হেয়ার কাটে একটু চেঞ্জ আনলে সেটা আপনার ওভারঅল লুকেও নতুনত্ব আনবে। আরেকটা বিষয়, একই সাইডে সিঁথি করতে করতে সেটা বেশ চওড়া হয়ে যায়। তাই সিঁথির পজিশন চেঞ্জ করতে পারেন। হাতের আঙ্গুল দিয়ে সামনের চুল সেট করে নিলে কিন্তু ফোলা ফোলা ভাব এসে যায়। সিঁথি না করতে চাইলে চুল পাফ করেও ফ্রন্ট হেয়ার সেটিং করতে পারেন।
৩/ হেয়ার স্টাইলিংয়ে আনুন নতুনত্ব
যারা পাতলা চুলে স্টাইলিং করতে গিয়ে সমস্যা ফেইস করেন, তাদের জন্য একটি দারুণ ট্রিকস শেয়ার করছি। রাতে ঘুমানোর আগে চুলের জট ছাড়িয়ে দুই দিকে বেনি করে বেঁধে নিন। সকালে উঠে পেয়ে যাবেন হিটলেস লুজ কার্লস! সকালে চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানোর দরকার নেই, হাত দিয়েই সেট করে নিন। বাউন্সি হেয়ারলুক পেয়ে যাবেন খুব সহজেই। যেকোনো অকেশনে বা পার্টি মেকওভারের সাথে হেয়ার ব্লো ড্রাই করে নিতে পারেন। নিচের দিকে চুলগুলো হেয়ার কার্লার দিয়ে কার্ল করে নিন। ব্যাককম্বিং করে নিয়ে হেয়ার পাফ করে ক্লিপ দিয়ে সামনের চুলগুলো আটকিয়ে নিলে দেখতে বেশ ভালো লাগে। তবে চুলে তাপ দেয়ার আগে হিট প্রোটেক্টর স্প্রে ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
৪/ হেয়ার কেয়ারে বেছে নিন রাইট প্রোডাক্ট
এখন মার্কেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভলিউম শ্যাম্পু পাওয়া যায়, সেগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন। এই শ্যাম্পুগুলো চুলের বাউন্সিভাব ফিরিয়ে আনে, তাই থিন ও ফ্ল্যাট হেয়ারের জন্য এগুলো রেকমেন্ড করা হয়। সপ্তাহে ২/৩ দিন নারকেল তেলের সাথে ক্যাস্টর অয়েল বা অ্যাভোকাডো অয়েল মিক্স করে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে। চুলে তেল দিয়ে ৩০-৪৫ মিনিট পরই শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। স্ক্যাল্পের ধরন ও চুলের প্রয়োজন বুঝে হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট সিলেক্ট করা উচিত।
তবে আপনার জন্য কোনো প্রোডাক্ট ওয়ার্কআউট না করলে, সেই প্রোডাক্টটি নকল বা খারাপ, এমনটি ভেবে বসবেন না! সব উপাদান সবাইকে স্যুট করে না। কোনো প্রোডাক্ট ইউজ করে যদি আপনার হেয়ার চিটচিটে হয়ে যায় বা মলিন দেখায় বা হেয়ার ফল বেড়ে যেয়ে চুল পাতলা হতে শুরু করে, তাহলে সেটি ব্যবহার করা অফ রাখুন।
তাহলে, পাতলা চুলে ভলিউম ও বাউন্সিভাব ফিরে পাওয়ার টিপস ও ট্রিকস জেনে নিলেন। সেই সাথে হেলদি লাইফ লিড করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, সময়মতো ঘুমানো এগুলো কিন্তু মাস্ট! আর চুলে কালার, রিবন্ডিং এগুলো করতে চাইলে দক্ষ হাতে করাতে হবে। আশা করছি, আজকের আর্টিকেল থেকে থিন ও ফ্ল্যাট হেয়ারের জন্য কার্যকরী সল্যুশন আপনারা পেয়েছেন।
অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে ভিজিট করুন শপ.সাজগোজ.কম, অ্যাপ ও ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার প্লেস করতে পারবেন। অনলাইনে অর্ডার করে বাসায় বসেই প্রোডাক্টগুলো হাতে পেয়ে যাবেন। আপনারা চাইলে সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক