একটি সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস অত্যন্ত বড় একটি জিনিস। বিশেষ করে ভালোবাসার সম্পর্কগুলোর মূল ভিত্তিটাই হচ্ছে বিশ্বাস। যদি বিশ্বাস একবার ভেঙ্গে যায়, তাহলে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে মোটামুটি যুদ্ধজয়ের সমান। আমাদের চারপাশে সাধারণত যে পরিবেশে আমরা চলাফেরা করি, সেই হিসেবে সম্পর্কের বিশ্বাস কোনভাবে ভাঙ্গলে সেই সম্পর্ক টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। এছাড়া বিশ্বাস ভাঙ্গার পরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দোটানায় পড়তে হয়। আদৌ কি তাকে আর ভালোবাসতে পারবেন? নাকি সম্পর্কের এখানেই ইতি? এই নানান দুশ্চিন্তা আপনাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে।
কিন্তু আপনি যদি সিদ্ধান্ত নেন যে বিশ্বাস ভাঙ্গার পর সম্পর্কের ভাঙ্গনটাকে মেরামত করবেন, তাহলে কিছু বিষয় মাথায় রেখে চললে আপনার সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে পারেন। তবে কীভাবে কী করবেন তা নির্ভর করছে আপনি কোন পরিস্থিতিতে আছেন সেটার উপর।
সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস পুনঃস্থাপনের উপায়
১. যদি আপনি কারো বিশ্বাস ভেঙ্গে থাকেন
যদি আপনি কারো বিশ্বাস ভেঙ্গে থাকেন তবে আপনার প্রথম কাজ হবে অনুতপ্ত হওয়া। এরপর নিজেকে ক্ষমা করুন। কারণ নিজের মধ্যে যদি অপরাধবোধ কাজ করতে থাকে তাহলে সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। অপরাধবোধ আপনার আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করবে। মনে রাখবেন, পৃথিবীতে কেউই সম্পূর্ণ নয়! মানুষ প্রতিনিয়তই ভুল করে। তাই সেটাকে অতীতের কাছে ঠেলে দিয়ে ভবিষ্যতে কী করবেন সেটা চিন্তা করুন।
যদি আপনি অপরাধবোধকে কাছে ঘেঁষতে দেন তাহলে আপনার অবচেতন মন আপনাকে বোঝাতে চাইবে আপনি সবার কাছে অবাঞ্চিত এবং মূল্যহীন। যা আপনার ভুল শুধরে নিজের উন্নতি করার ইচ্ছাটিকে নষ্ট করবে। তাই এই ধরণের চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলুন।
এরপর নিজেকে সত্যের মুখোমুখি করুন। সঙ্গীর বিশ্বাস ভেঙ্গে থাকলে তার কাছে সেটা স্বীকার করুন। মনে রাখবেন, অস্বীকার করলে সেটা আপনার সঙ্গীর আপনার সাথে থাকার ইচ্ছেটা নষ্ট করবে। বিশেষ করে যদি সত্যটা তার কাছে সম্পূর্নরূপে প্রকাশ হয়ে থাকে।
তাই যা ঘটেছে, যে ভুলটি আপনি করেছেন সেটা স্বীকার করুন। এছাড়া যদি এমন কিছু থেকে থাকে যেটা আপনার সঙ্গী জানার কোন সম্ভাবনা নেই সেটাও স্বীকার করুন। কারণ ভবিষ্যতে সেটা যদি প্রকাশ হয়, আপনি আরেকটা সুযোগ নাও পেতে পারেন।
এছাড়াও মনে রাখুন, আপনি সত্য স্বীকার করেছেন দেখে সবকিছু খুব সহজেই সমাধান হবে তা কিন্তু নয়! আপনার সঙ্গী আপনার উপর চিৎকার করবে, কান্নাকাটি করবে। এগুলো সহ্য করুন। ধৈর্য্যের পরিচয় দিন। তাকে ঠান্ডা মাথায় বোঝানোর চেষ্টা করুন। তর্ক করতে যাবেন না, এতে অবস্থা বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি হবে।
দোষ নিজের ঘাড়ে তুলে নিন। কোন কিছু কিংবা অন্য কারো উপর আলাদা করে দোষ দেখানোর প্রয়োজন নেই। ব্যাখ্যা করুন যে আপনি কী করেছেন এবং কেন করেছেন। আপনি যদি বোঝাতে না পারেন, তাহলে আপনার সঙ্গী আপনার অনুতাপটা দেখতে পাবে না। সুতরাং যে কারণে আপনি কাজটি করেছেন সেই কারণটা তাকে ব্যাখ্যা করুন। দরকার হলে তার কাছে সাহায্য চান।
সবশেষে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিজের আত্মসম্মান এক পাশে সরিয়ে রেখে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। সঙ্গীকে বোঝানোর চেষ্টা করুন সে আপনার জন্য কতটা জরুরী।
একটা কথা উল্লেখ্য, আপনার সঙ্গী আপনাকে ক্ষমা করলেও শুরু থেকে আপনাকে আবার বিশ্বাস করবে এটা ভাবার কারণ নেই। তাই আপনি তার বিশ্বাস অর্জনের জন্য যা যা করবেন বলে কথা দিয়েছেন সেগুলো সাবধানে করার চেষ্টা করবেন। দেখবেন আপনার উপর তার বিশ্বাস আস্তে আস্তে ফিরে আসবে।
২. যদি কেউ আপনার বিশ্বাস ভেঙ্গে থাকে
আপনি যেমন কারো বিশ্বাস ভাঙ্গছেন, মনে রাখবেন যে কোন কারণে সেই “কেউ” টা আপনিও হতে পারেন। খুব কাছের মানুষ যে কোন কারণে আপনার বিশ্বাস ভাঙ্গতে পারে। যদি কেউ আপনার বিশ্বাস ভেঙ্গে থাকে তাহলে সবার আগে চিন্তা করুন তার সাথে আপনার সম্পর্কটা কতটা গুরুত্ব পূর্ণ। যদি সেই প্রশ্নে সেই ব্যক্তি উতরে যায় তাহলে নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করুন –
- এই ব্যক্তি কী প্রথমবার আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে?
- যদি সে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তার কৃতকার্যের জন্য অনুতপ্ত হয়, আমি কী তাকে আবার বিশ্বাস করতে পারবো?
- আমি কী ক্ষমা করতে পারবো?
যতক্ষণ না উত্তরে সন্তুষ্ট হচ্ছেন ততক্ষণ প্রশ্নগুলো নিজেকে বার বার করুন।
যেই ব্যক্তি আপনার বিশ্বাস ভেঙ্গেছে তার সামনে আপনার যে ধরণের রি-অ্যাকশন (Reaction) দেখানো উচিৎ সেটা করুন। চিৎকার করুন, ঝগড়া করুন, কান্নাকাটি করুন। ভেতরের উত্তাপটা বের হয়ে যেতে দিন। কারণ রাগের মাথায় কোন কিছুই ঠিকভাবে চিন্তা করা যায় না। সুতরাং রাগ কমানো জরুরী।
আগেই বলেছি, কেউই পৃথিবীতে সম্পূর্ণ নয়। তাই কারো উপর আপনার আশা করার মাত্রাটা যদি তার তুলনায় বেশি হয়, তখন আশাভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই জন্য কারো উপর থেকে নিজের আশা করার মাত্রাটা অ্যাডজাস্ট (Adjust) করে নিন। বাস্তববাদী হোন, যে যা দিতে পারবে না তার কাছে সেটা আশা করতে যাবেন না।
যদি বিশ্বাসভঙ্গের পরও আপনাদের দুজনের সম্পর্ককে আরেকটি সুযোগ দিতে চান তাহলে সবার আগে তার সাথে আপনার চাওয়া নিয়ে আলোচনা করুন। তাকে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিন যে আপনি হয়তো এবার তাকে ক্ষমা করবেন। কিন্তু পরেরবার তার জন্য আর কোন সুযোগ থাকবে না। বিশ্বাসভঙ্গের ব্যাপারটা মেনে নেওয়া আপনার কাছে কতটা কঠিন ছিলো সেটা তাকে জানান।
সম্পর্কের প্রয়োজনীয় অনুভূতিগুলো স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ করুন। আপনার সম্পর্কের সঙ্গী হিসেবে সে যা পাওনা তা আদান প্রদান করুন। তাকে বোঝান কেন আপনি তার এত বড় ভুলের পরও তাকে আরেকটু সুযোগ দিয়েছেন।
সবশেষে, কখনো কোন কিছু নিয়ে তাড়াহুড়া করবেন না। যদি আপনি সাথে সাথে তাকে আবার বিশ্বাস করতে না পারেন সেটা তাকে সরাসরি বলুন। নিজেও সময় নিন, মানসিকভাবে স্থির হোন। তারপর যা করার করুন।
বিশ্বাস ভাঙ্গা কারোই কাম্য নয়! তাই কেউ যদি আপনাকে বিশ্বাস করে থাকে তার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার চেষ্টা করুন এবং তাকেও আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার জন্য অনুরোধ করুন। তাহলেই দেখবেন সুন্দর হয়ে উঠেছে আপনার চারপাশ।
আশা করি সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস পুনঃস্থাপন নিয়ে লেখা এই আর্টিকেলটা আপানদের জীবনে কাজে দিবে।
ছবি – সংগৃহীত: সাটারস্টক