ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি গাজর ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা করে। চুলের যত্নেও গাজর অতুলনীয়। এই কথা শুনে নিশ্চয়ই অনেকেই গাজর খাওয়া শুরু করেছেন। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। ইদানীং দেখছি ত্বক ও চুলের যত্নে ক্যারোট সিড অয়েল খুব ব্যবহার হচ্ছে। তবে এই ক্যারোট সিডস থেকে অয়েল তৈরি করা বেশ কষ্টসাধ্য।তবে ক্যারোট অয়েল কিন্তু খুব সহজেই তৈরি করা যায়।
ক্যারোট অয়েল! অবাক হচ্ছেন শুনে? হ্যাঁ, গাজরের তেল। অনেকের কাছে পরিচিত হতে পারে। আবার অনেকের কাছে একদমই অজানা। নানা রকম এসেনশিয়াল অয়েল যেমন ব্যবহার করেন ক্যারোট অয়েলও তেমনই একটি তেল। গাজরের সকল পুষ্টিগুণ ও নির্যাস দিয়েই এটি তৈরি করা হয়। গাজরের তেল আপনার ত্বক ও চুলের জন্য খুবই কার্যকরী। নানারকম ফেইসপ্যাক ও হেয়ার মাস্কে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। আজ আপনাদের জানাব এই যাদুকরী গুণসম্পন্ন তেল কী করে ঘরে বসে তৈরি করবেন ও ব্যবহার করবেন।
অনেকেই তো বলে গাজর স্কিনের জন্য খুব ভাল। কিন্তু কেন? তাকে কি কখনও প্রশ্ন করেছেন? তাই আগে জেনে নিই গাজর কেন ত্বক ও চুলের জন্য এতোটা উপকারী। গাজর অনেক রকম পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে আছে ভিটামিন এ, সি এবং ই, বিটা-ক্যারোটিন ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ভিটামিন এ এবং ই আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট একসাথে কন্ডিশনিং প্রোপার্টিজ দেয়। বডির স্কিন ও স্কাল্প ময়েশ্চারাইজ করে স্কিনকে হেলদি করে। তাছাড়া ক্যারোট অয়েল আরো নানারকম কাজ করে।
- ত্বকে বয়সের ছাপ কমায়।
- ত্বক ও স্কাল্পে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে।
- ড্যামেজড স্কিনকে পুনরায় ঠিক করে।
- নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- চুলকে খুবই সফট করে।
- চুলকে মজবুত করে ব্রেকেজ কমায়।
- নানারকম দূষণ, ধুলোবালি, সুর্য্যের ক্ষতিকর রশ্মি, বিভিন্ন ক্যামিকেল থেকে চুল ও ত্বকের প্রোটেক্টর হিসেবে কাজ করে।
[picture]
এমন উপকারী তেলটি যদি বাসায় বানানো যায় তাহলে কেমন হয়?
- ২টি গাজর
- তেল ( অলিভ, কোকোনাট, সিসাম অয়েল) – যেকোন একটি আপনার পছন্দ মতো
- হ্যান্ড গ্রেটার
- ছাঁকনি
- কাঁচের বোতল
যেভাবে বানাবেন
(১) গাজর ধুয়ে নিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন যাতে একদম পানি না থাকে।
(২) এবার হ্যান্ড গ্রেটারে গাজর গ্রেট করে নিন। গ্রেট করা গাজর একটি হাঁড়িতে নিয়ে তাতে তেল দিন। তেল এমনভাবে দিবেন যাতে গাজর তেলে ডুবে থাকে।
(৩) অল্প আঁচে গরম করতে থাকুন। তেল গরম হয়ে আসলে চুলার আঁচ একদম কমিয়ে দিন। তা না হলে গাজর পুড়ে যাবে।
(৪) এখন একদম অল্প আঁচে চুলায় রেখে দিন। একটা সময় পর দেখবেন তেলের রঙ ধীরে ধীরে কমলা হয়ে আসছে। এর মানে হলো গাজরের পুষ্টিগুণ তেলে ছড়িয়ে পড়ছে।
(৫) এরপর আরো কিছুক্ষণ রেখে নামিয়ে নিন।
(৬) এবার ছাঁকনির সাহায্যে গাজর ছেঁকে তেল আলাদা করে নিন। এই তেল কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করুন।
ত্বকে যেভাবে ব্যবহার করবেন
- সরাসরি
৩ থেকে ৪ ফোঁটা ক্যারোট অয়েল নিয়ে সরাসরি মুখে ম্যাসাজ করুন। রাতে ঘুমানোর আগে লাগালেই ভালো। এটি মুখের ফাইন লাইন ও বলিরেখা দূর করে।
- ক্যারোট শ্যাম্পু বার
হ্যাঁ আপনি ঠিকই শুনছেন। নাম শ্যাম্পু বার হলেও এটি মূলত মুখে ব্যবহার করবেন। কয়েক ফোঁটা ক্যারোট অয়েল, দুধ ও মধু মিশিয়ে মিশ্রণটি বানিয়ে নিন। এরপর আইস বক্সে রেখে জমিয়ে নিই। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল ক্যারোট শ্যাম্পু বার। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করবে ও গাজরের নির্যাস ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল ও ফর্সা করবে।
- ক্যারোট অয়েল লোশন
আপনি প্রতিদিন যে লোশন ব্যবহার করেন তাতে ৪ থেকে ৫ ফোঁটা ক্যারোট অয়েল মিশিয়ে নিন। এবার পুরো শরীরে লাগিয়ে নিন। দেখবেন ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা দূর হয়ে ত্বককে ফর্সা করবে। তাছাড়া শীতে ত্বকের শুষ্কতা দূর করবে।
চুলে ক্যারোট অয়েলের ব্যবহার
একটি বাটিতে অল্প নারিকেল তেল, সমপরিমাণ অলিভ অয়েল ও ক্যারোট অয়েল মিশিয়ে গরম করে নিন। এবার এই তেল মাথায় ৫ মিনিট ম্যাসাজ করে পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে নিন। আপনি চাইলে শুধুমাত্র ক্যারোট অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। এটি মাথার ত্বক ও চুল ময়েশ্চারাইজ করে, রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে সাথে সাথে চুলকে করে গোঁড়া থেকে মজবুত।
আমি এই তেলের উপকারিতা পেয়েছি। ব্যবহার করেই দেখুন, ত্বক ও চুলের পার্থক্য আপনি নিজেই টের পাবেন। তবে আপনার ত্বক যদি সেন্সিটিভ হয় তাহলে ব্যবহারের আগে অল্প করে টেস্ট করে দেখুন।
লিখেছেন – শাবনাজ বেনজীর